• কবিতা

    কবিতা- যন্ত্রণা

    যন্ত্রণা
    -শম্পা সাহা

     

     

    ধীরে ধীরে স্বপ্নেরা হাত ছেড়ে দেয়,
    মেঘ ভাসে দূর ঘোলা জলে।
    চাঁদ উঁকি দিয়ে লুকোয় আবার,
    আবছায়া মেঘের আড়ালে।

    কথা ছিল দেখা হবে পূর্ণিমা রাতে,
    তাই চাঁদ ওঠে নিতো আর।
    আকাশের তারারাও লুকোয় যে মুখ,
    মন বলে, এখন আ়ঁধার।

    আঁধারের ছেলেখেলা স্বপ্নকে নিয়ে
    ভালোবাসা ঘোলা জলে ডুব,
    হৃদয়ের দরজায় বিরহের কড়া নাড়া
    ভালোবেসে যন্ত্রণা খুব।

  • কবিতা

    কবিতা- অপেক্ষা

    অপেক্ষা
    -শম্পা সাহা

     

     

    একটা চলন্ত বাসের পাশাপাশি সীটে , আমরা দুজন।
    টালমাটাল রাস্তার সীমানায় দাঁড়িয়ে রাগ, শোক, ক্ষোভ, দুঃখ, মান , অভিমান।
    হাত নাড়ে, অভিবাদন জানায় অনাগত দুঃখকে,

    যার প্রত‍্যুদ্গমনে অভিগত প্রয়াসী অনাগত দিন, অনাকাঙ্খিত আবেগের স্রোত।
    কতবার, কতবার চাই তোমার আঙ্গুল আমার কোমর ছুঁয়ে যাক,
    কতবার চাই অসাবধানে তোমার হাত আষ্টেপৃষ্ঠে ধরুক আমায়,
    কতবার কতবার চাই অভিমানের বরফ গলুক, গলতে থাকুক।
    এক সমুদ্র ভালোবাসা সাঁতরে ঠিক পৌঁছবো তোমার বুকে।
    কিন্তু বরফের গলবার নাম নেই,
    স্টপেজ একে একে চলে যায়, দূরে আরো দূরে, গন্তব্যহীনতার দিকে।
    আর আমি তোমার পাশে বসে ঝাঁকুনিতে অপেক্ষায়, একবার তোমার স্পর্শের।

  • কবিতা

    কবিতা- মন কেমন

    মন কেমন
    -শম্পা সাহা

     

     

    কখনো কখনো না চাইতেও মন খারাপটা চেপে বসে, জাঁকিয়ে।
    মনের কোণে ঝুলকালি জমতে জমতে পরতে পরতে পাহাড়।
    ধূসর ধোঁয়ারা কুন্ডলী পাকিয়ে উঠতে থাকে মনের আনাচ কানাচ দিয়ে।
    ছড়িয়ে পড়ে আমার ছোট্ট চিলেকোঠার ঘরে।
    যেখানে একটা ঘরছাড়া টিকটিকি, বেয়াক্কেলা মাকড়সা আর কালো কালো আরশোলাদের ছড়াছড়ি।
    মাঝে মাঝে শূঁড় নাড়িয়ে, জাগিয়ে দিয়ে যায়।
    আধো ঘুমে, আধো আঁধারে একা জেগে বসে থাকতে থাকতে ঝিমিয়ে পড়ি মন খারাপের গায়ে।
    বড় নাছোড়বান্দা এই ঝিমঝিমে ভাবখানা।
    বড় মনকেমন করা রোদ্দুর বাইরে আঁকিবুকি কাটে, এ ঘরে তাদের প্রবেশ নিষেধ।
    আলোদের আড়ি আর আঁধারের ভাবেই প্রতি দিন ও রাত্রি যাপন।
    বসন্ত মানে শুধু উৎসব নয় ,কখনো কখনো পালন করা এক নাছোড়বান্দা মনকেমন!

  • কবিতা

    কবিতা- আলিঙ্গন আজ

    আলিঙ্গন আজ
    -শম্পা সাহা

     

     

    তোমার চওড়া বুকে আশ্রয় পেতে চেয়েছি, শ্বাস নিতে চেয়েছি প্রাণ ভরে।
    তোমার রোমশ বাহু ধীরে ধীরে বাঁধন শক্ত করেছে।
    প্রথম প্রথম শান্তি পেয়েছি, স্বস্তি পেয়েছি এক আড়াল পেয়ে।
    ঘন আবেশে, গাঢ় তপ্ত নিঃশ্বাসে শত শীতলতা ধীরে ধীরে হারিয়ে গেছে অমৃত ওমে।
    আলিঙ্গন আরো দৃঢ়, আরো গাঢ়, আরো তীব্র!
    বাহুর চাপ পিষে ফেলতে চাইছে আমাকে, মিশিয়ে ফেলতে চাইছে আমার স্বত্ত্বা।
    তোমাতে আমাতে আর কোনো ফারাক রাখতে চাও না।
    চাও, আমিও তুমি হয়ে উঠি। আমি আর আমি নই তোমার ছায়া হয়ে যাই।
    আজকাল বড় দম বন্ধ হয়ে আসে।
    আলিঙ্গন ফাঁস বলে মনে হয়।
    শ্বাস বায়ুর জন‍্য হাঁকড় পাকড় করতে থাকে আমার ফুসফুস,
    হৃদপিণ্ড বিদ্রোহ করে, বন্ধ হয়ে যেতে চায়।
    আমার পাঁজরে পাঁজরে আজ ভালোবাসার যন্ত্রণা,
    আলিঙ্গনের দুর্লঙ্ঘ আবন্ধন।
    এখন আর মুগ্ধতা নেই, মুখের দিকে চেয়ে বসে থাকা নেই, মুখোমুখি বসে শুধু চোখে চোখে নেই সেতু বন্ধন,
    আজকে ভালোবাসা মানে শুধুই যন্ত্রণা, আজ আলিঙ্গন মানে দম বন্ধ।

  • কবিতা

    কবিতা- মাতৃভাষা

    মাতৃভাষা
    -শম্পা সাহা

     

     

    ভাষায় জন‍্য রাখতে পারি জীবন বাজি
    ভাষার জন‍্য আজকে আমি মরতে রাজি।

    যে ভাষাতে ভাইকে ডাকি আদর করে
    যে ভাষাতে স্নেহ ছড়ায় সবার ঘরে।

    বাবার স্নেহ মায়ের মায়া যে ভাষাতেই ঝরে
    যে ভাষাতে শুনলে কথা মাকেই মনে পড়ে।

    মাতৃভাষা মানেই সে যে আমার পরিচয়
    একুশ মানে ভাষার লড়াই, মাতৃভাষার জয়।

    যে সব প্রাণের খোয়ার স্মৃতি একুশ মনে করায়,
    ভাষায় ভাষায় সেই লড়াইই মনে মনে ছড়ায়।

    নিজের ভাষায় মধুর স্বাদে জিভ জড়িয়ে থাকে,
    মাতৃভাষাই মায়ের মত আগলে বুকে রাখে।

  • অণু কবিতা

    অণু কবিতা- এই তো জীবন

    এই তো জীবন
    -শম্পা সাহা

     

     

    তুমি চলে যাবে জানতাম।
    এ তো সহজ কথা,
    বসন্ত কোথায় থাকে চিরকাল?
    পাতাঝরা ঘুরে ফিরে আসে, আসে দারুণ নিদাঘ।
    দাগ রেখে চলে যাওয়া, এই তো জীবন।
    এক বার দেখা হলে, ছেড়ে যাওয়া অবশ‍্যম্ভাবী,
    মিলনে বিচ্ছেদের ভয়, বিচ্ছেদে মিলনের অনাগত সুখ।

    ভয় কি বিস্মৃতির, স্মৃতিও তো জুড়ে আছে তারই আধখান।
    আজ যদি রুক্ষ, ঊষর ভূমি, কাল জেনো ফুলেল বাগান।

  • কবিতা,  স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার

    কবিতা- ভিক্ষা

    ।। অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার ।। 

     

    ভিক্ষা
    -শম্পা সাহা

     

     

    বরফের মত গলতে থাকা ধূমায়িত রাত্রি
    চাপচাপ বিষণ্ণতার জঙ্গলে বসে
    শুধু শ্বাপদের দীর্ঘশ্বাস
    বহুকাল রক্ত চেটে তাদের জিহ্বাও আজ আড়ষ্ট
    শিরায় উপশিরায় রক্তের ক্লেদ
    ধমনীতে আর শোধন হতে চায়না
    ব‍্যর্থ জালিকা দাবি তোলে রদ বদলের

    জঙ্গলের আইনেও চাইছে বদল বৈপ্লবিক কিছু শাকাশী
    রক্ত নয় হাতিয়ার শুধু ভালোবাসা
    তাতেই নাকি গলতে পারে জমে থাকা ক্ষত পুঁজ রক্ত শেষে
    ছেঁড়াকাটা লাশে মাছি বসে ডানা ঝাপটায়
    বড় ভালো আছি
    বড্ড বেশি রকম আছি ভালো
    এই বলে উড়ে চলে যায়
    নিথর সভ‍্যতার মরা মাছের মত স্থবির দৃষ্টি
    আর শীতল শোণিতে যদি কখনো প্লাবন আসে
    ফের যদি আগুন লাগে বিবেকের কোণে

    হয়তো সভ‍্যতায় প্রাণবায়ু ফিরলেও ফিরতে পারে
    না হলে
    শুধুই অপেক্ষা
    অথবা প্রাপ্তি ভিক্ষা কয়েক পলের!

  • কবিতা,  স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার

    কবিতা- বরং তুমি হও

    ।। অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার।।

     

    বরং তুমি হও
    -শম্পা সাহা

     

     

    একটা মন ভালো করা গান লিখতে
    এতো কসরৎ?
    ধুর!তাহলে তোমার কবি হয়ে কাজ নেই

    তুমি না হয় চাষী হও
    মাটির বুক খুঁড়ে
    গরম ভাতের গন্ধ খুঁজে আনো
    দুয়েক জনের পেটে সেই অদম‍্য মোচড়
    যা স্নায়ু অবশ করে দেয়
    ঘুমিয়ে থাক সে শত্রু কিছুক্ষণ

    তুমি না হয় নাবিক হও
    পথহারা পথিকের দল
    যারা মাঝ সমুদ্রে দিশাহারা
    তাদের দেখিও পথ
    পৌঁছে দিও প্রেয়সীর কাছে
    তাদের চোখে ঝরুক আনন্দাশ্রু

    তুমি না হয় সৈনিক হও
    অদম‍্য সীমানা পাড়ের লোভী থাবার হাত থেকে রক্ষা কোরো
    দেশমাতৃকার বুকের আঁচল
    হাসি ফুটুক মায়ের মুখে

    শেষমেষ তুমি বিপ্লবী হতেও পারো
    না হয় এক জবরজং চাপিয়ে দেওয়া সভ‍্যতার স্থবির চাকা
    তোমার জন‍্যই আবার নড়ে এগোক
    সত‍্যিকারের মানবিকতার পথে

    কিন্তু তুমি কবি হয়ো না
    যদি না লিখতে পারো এক মন ভালো করা গান
    তোমার কলমের নিব পিষে ফেল
    যেমন ফাঁসির ঘোষণার পরের বরাদ্দ
    তুমি বরং হাতে অস্ত্রই তুলে নাও
    ওতেই তোমায় মানায় বেশ!

  • কবিতা,  স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার

    কবিতা- একদিন

    ।। অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার।। 

     

    একদিন
    -শম্পা সাহা

     

     

    একলা হাঁটতে ক্লান্ত লাগলে যখনই একটু বসতে চেয়েছি
    ছায়ারা সরে গেছে দূরে
    প্রত‍্যাখ‍্যাত প্রেমিকার মত
    অথবা বেকার যুবকের মত ভবঘুরে ক্লান্তিরা
    আবার ডানা মুড়ে আমারই আঙ্গিনায় বসত করে

    রোদের ঝিকিমিকি চেয়ে হাড় হিম হয়ে যাওয়া রাতের একঘেয়ে কান্নায়
    না জানি কত খেদ মিশে ছিল
    একটা জোনাকিও ভুল করে জানালা পেরিয়ে
    ঘরে ঘুরে ফিরে বেড়াতে আসেনি

    লক্ষ্মী প‍্যাঁচাও খিদে পেলে ইঁদুর শিকার ধরে
    তীব্র নখরে ঠোঁটে লেগে থাকে তার
    রক্ত মাংস ক্লেদ
    খেদ হীন ডুমুরের ডালে বসে প্রতিকী লক্ষ্মী
    লেখা থাকে না তার গায়ে কোনো মৃত্যুর ইতিহাস
    বিশ্বাসে বিষ আছে জেনে সভ‍্যতা আজ নীলকন্ঠ রূপ
    তবুও ক্লান্ত আত্মা এই আশায় একদিন ভবিষ্যতে দেখবে বিবেক জাগরুক।

  • কবিতা,  স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার

    কবিতা- আশা-দূরাগত

    ।। অমরনাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার ।।

    আশা-দূরাগত
    -শম্পা সাহা

    বৃষ্টি ভেজা শিউলির নামে তোমার নাম রেখেছি
    তুমি কে?
    বি.এ পাশ বেকার ছেলেটার কাছে তুমি একটা চাকরি হতে পারো
    গায়ের রং কালো বলে বার বার প্রত‍্যাখ‍্যাত মেয়েটার কাছে তুমি একটা ভালো সম্বন্ধ হতে পারো
    তিনদিন খায়নি যে ভিখিরি তার কাছে তুমি একবাটি ভাত হতে পারো
    ছেড়ে যাওয়া প্রেমিকের কাছে
    প্রাক্তন প্রেয়সীর চিঠি হতে পারো
    অথবা যুদ্ধে জর্জরিত দুই দেশের অতি সাধারণ নাগরিকের কাছে
    হতে পারো সন্ধির শ্বেতপত্র
    যারা ধর্মের নামে দেশছাড়া তাদের কাছে এক ধর্মহীন দেশ হতে পারো
    তুমি যা খুশি হতে পারো,
    যা কিছু ভালো যা কিছু মঙ্গলকর তুমি সব সব হতে পারো
    তাইতো আমি তোমায় আমার সবচেয়ে প্রিয় বৃষ্টি ভেজা শিউলির নাম দিলাম
    কেউ কেউ তোমাকে আশাও বলে
    যার দূরাগত আলোর দিকে তাকিয়ে প্রতিটা মানুষ
    আজও বেঁচে আছে আর বেঁচে থাকবে চিরটাকাল।

You cannot copy content of this page