• কবিতা

    কবিতা- কুসংস্কারের সাতকাহন

    কুসংস্কারের সাতকাহন
    – শিলাবৃষ্টি

     

     

    আদিম মানুষ ছিল বনে
    বন মানুষের রূপে,
    মানুষ ছিল মহাসুখে,
    অরণ্যে আর ঝোপে।
    সেই মানুষই দিচ্ছে পাড়ি,
    গ্রহে-গ্রহান্তরে..
    তবু তো আজ ছেদ পড়েনি-
    নানান কুসংস্কারে।
    গুরুবারের বারবেলাতে-
    যাত্রা করা বারণ,
    সূর্যগ্রহণের মূলে নাকি-
    পৌরাণিক এক কারণ।
    যাত্রাকালে হাঁচি-সেতো …
    অশুভ এক দ্যোতক,
    ভুতে পাওয়া-সংস্কারের
    বিকৃত এক রূপক।
    আজও মানুষ মানুষকে দেয়-
    ‘ডাইনি’ আখ্যা!
    পুড়িয়ে মারে তাকেই আবার-
    নেই কোন ব্যাখ্যা।
    সাপে কাটা ছেলেটিকে
    ওঝার হাতে ছেড়ে,
    বিজ্ঞানেরই জারিজুরি
    ফেলছে দেখ ঝেড়ে।
    পরীক্ষাতে যাওয়ার আগে-
    ডিম দেখোনা কভু,
    প্রশ্নপত্রে দয়া তবে
    করবেন না প্রভু!
    উল্টো জুতো-পরিবারে
    কলহের এক কারণ,
    একটি শালিখ দেখা না কি…
    এক্কেবারে বারণ।
    বোকা বাক্সে-বাঁধাধরা
    অনেকগুলি আসন-
    খুললে পরেই শুনতে পাবে-
    জ্যোতিষীদের ভাষণ।
    হোম কর, যজ্ঞ কর,
    কেনো দামী রত্ন..
    না হলেই সর্বনাশ!
    পাবে না তাঁর যত্ন।
    কালো বেড়াল পথ কাটলে,
    আসবে বিপদ জেনো,
    একুশ শতকেও কুসংস্কার
    এই ভাবেতেই মেনো!
    রবিঠাকুরের “অচলায়তনে”-
    কুসংস্কারের রূপ..
    সবাই তোমরা দেখেছ বন্ধু,
    তাইতো হলেম চুপ।
    ইমেল, ইন্টারনেট,
    ল্যাপটপের এই যুগে..
    অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কারে
    আজও মানুষ ভোগে।

  • কবিতা

    কবিতা- আবার আষাঢ়

    আবার আষাঢ়
    শিলাবৃষ্টি

     

     

    আবার আষাঢ় এলি সেজে-
    বৃষ্টি সাথে নিয়ে,
    সারা উঠোন কোণে আমি
    ভিজবো একা গিয়ে।
    মেঘ তুমি আজ আকাশ ‘পরে
    হওনা গভীর কালো
    বিদ্যুৎ! সেই কালোর মাঝে
    ক্ষণে ক্ষণেই জ্বলো।
    জীমুত বাহ! গর্জ তুমি
    কেঁপে উঠুক ধরা !
    ফুলে ফেঁপে উঠুক নদী
    যতই থাকুক মরা।
    গাছ-গাছালি প্রাণ ফিরে পাক…
    শুকনো ওদের মুখ,
    আষাঢ় তোমার জলের ধারায়
    ভোলাও ওদের দুখ।
    রিম ঝিম ঝিম বুকের মাঝে
    নৃত্য শুরু আজ,
    বৃষ্টি এসে এক নিমেষে
    ভুলিয়ে দিল কাজ।

  • কবিতা

    কবিতা- জল টুপ টুপ বৃষ্টি কণা

    জল টুপ টুপ বৃষ্টি কণা
    – শিলাবৃষ্টি

     

     

    আবার আকাশ রইল মেঘে ছেয়ে
    জল টুপ টুপ বৃষ্টিকণার খেলা !
    পুরোনো দিন স্মৃতির সিঁড়ি বেয়ে
    আবার এসে ভিড় করেছে মেলা।

    কালো মেঘে কোথাও নেইতো আলো
    আমার পাশে আজকে সেও নেই,
    সারাটা দিন লাগছেনা আজ ভালো!
    হাত বাড়িয়ে জলের ফোঁটা ছুঁই।

    একটি বার এসেই দেখে যাও
    এই বরষায় তোমার প্রিয়তমা
    নদীর বুকে শুধুই শূণ্য নাও
    তার হৃদয়ে দুঃখ সাগর জমা।

    ওই ঝুপ ঝুপ প্রবল বারিধারা
    আমার উঠোন ভিজিয়ে বয়ে যায়;
    কাগজ দিয়ে নৌকা বানায় কারা
    কিশোর বেলার মধুর স্মৃতি হায় !

    ফি বরষায় তোমার আসার আশায়
    পথ চেয়ে রয় দু’টি চোখের তারা,
    কদম কিশোর কোন সে বাটে যায়
    দু’ চোখে আজ বইছে অশ্রুধারা।

  • কবিতা

    কবিতা- অট্টালিকার আত্মকথন

    অট্টালিকার আত্মকথন
    – শিলাবৃষ্টি

     

     

    নিস্তব্ধ এই রাতে অতন্দ্র প্রহরী আমি,
    শতাব্দী হতে শতাব্দী; আজ অস্তগামী।
    কবে কখন কে প্রতিষ্ঠা করেছিল ভিত!
    স্মৃতিপটে নাই লেখা, যদিও বা কদাচিৎ…
    ফ্ল্যাশব্যাকে মাঝে মাঝে ফিরে আসে সম্বিৎ
    ভীষণ যন্ত্রণা হয় শিরায় শিরায়..
    বেদনা গভীর হয় হিয়ায় হিয়ায় ।
    একদা ছিলাম এক সেরা অট্টালিকা-
    প্রতিটি কড়িকাঠে তার ছিল জয়টীকা।
    অন্দর বাহিরে কত দাসদাসী ভরা…
    সৌন্দর্য সুষমা তার ছিল মনোহরা।
    উৎসব আনন্দে শত মানুষের ভিড়-
    সে গৃহ একদা ছিল শান্তির নীড়।
    মরাই ভরা ধান ছিল, ছিল পাকার ঘাট…
    ফুলে ভরা, ফলে ভরা আনন্দেরই হাট।
    অন্দরেতে দেবমন্দির- কতই ছিল নিয়ম,
    ঘরভর্তি লোকজনেতে করতো যে গমগম।
    গৃহকর্তা খোশমেজাজে সামলে নিত রাজ,
    ভাগচাষীর আনাগোনা সকাল থেকে সাঁঝ
    কাল কেটেছে তার নিয়মে…কিসের যেন পাপে,
    ধ্বংসলীলার মাতন আজি, কাহার অভিশাপে!
    চার শতাব্দী দাঁড়িয়ে আছি- জীর্ণতার এই প্রতীক;
    নব নব সৃষ্টিতে আজ ভরলো চতুর্দিক।
    বয়েস ভারে কুব্জ দেহ, কদর আমার নাই,
    নতুন নিয়ে মাতছে সবে! মূল্য কোথায় পাই!
    আমার ছায়ায় কোন কালেই হয়নি কারো ক্ষতি;
    সুখে থাকুক, ভালো থাকুক সন্তান সন্ততি।
    চার দিকেতে গজিয়ে ওঠা আগাছাদের মেলা,
    বিশাল বিশাল মহীরুহে করছে বাতাস খেলা;
    নাইকো মরাই, খড়ের গাদা- নাইকো পুকুর পাকা;
    নিঃঝুম এক যক্ষপুরী- দাঁড়িয়ে আমি একা!
    চারশো বছর বয়েস আমার- রোগ, ব্যাধি আর জরায়;
    হাতুড়ি, শাবল, গাঁইতির আশে রইনু প্রতীক্ষায়।

  • কবিতা

    কবিতা- অস্তিত্ব

    অস্তিত্ব
    – শিলাবৃষ্টি

     

     

    আমার মনের এক কোণে সে আছে
    কবে থেকে মনে নেই একটুও,
    আরও কতদিন থাকবে সে,
    তাও জানিনা!
    তবু বুঝতে পারি সে আছে –
    কামনা করি সে থাকবে,
    আমার জীবনের শেষ দিন …
    তখনও সে থাকবে।
    খুব ছোট্ট সে, কিন্তু খুব সুন্দর।
    জানা নেই তার নাম ধাম;
    নাম একটা আমিই দিয়েছি – “সুন্দর”।
    ‘সুন্দর’ কখনো কারো ক্ষতি করে না –
    যা কিছু খারাপ, তা অসুন্দর-ই করে।
    তাই সে শুধুই সুন্দর।

    শত ব্যস্ততার মাঝে বুঝতে পারিনা
    তার উপস্থিতি।
    দিনের শেষে, যখন ধরা ঘুমের দেশে
    যখন আমি খোলা ছাদে চাঁদ ও তারার গল্প শুনি,
    তখনই বুঝি টের পাই তার – ‘অস্তিত্ব’।
    চুপি চুপি টোকা দেয় সে আমার মনের সেই ছোট্ট জানালাতে।
    মনের দরজা খুলে দিই শুধু তার জন্য
    শুধু তারই জন্য;
    আর তখনই পাই, তার অস্তিত্বের সাড়া।

    মনের দরজা খুলি আমি,
    স্মৃতির জানলা খোলে সে –
    জীবনের সব সুখ এনে দেয়,
    তাই থাকনা সে
    মনের এক কোণে।

  • কবিতা

    কবিতা- অকৃতজ্ঞ

    অকৃতজ্ঞ
    – শিলাবৃষ্টি

     

     

    খেলাঘর ভাঙলো এবার-
    গড়িয়ে গেল বেলা,
    যা চলে যা মুক্ত বিহগ-
    সাঙ্গ হল খেলা।
    বন্দী করে রেখেছিলাম
    পায়ে দিয়ে বেড়ি,
    আজীবনের তরে তোর-
    মনটা নেব কাড়ি।
    মিথ্যে ভাবনা, মিথ্যে এ ঘর,
    মিথ্যে হল স্বপ্ন,
    কম করিনি আদর সোহাগ
    কম করিনি যত্ন।
    তবুও তোর মন পাইনি-
    একটি দিনও পাখি;
    ছটফটিয়ে মরলিরে তুই-
    ভাসলো আমার আঁখি।
    দানাপানি ফল দিয়েছি-
    ভালোবাসার হাতে,
    প্রেমের মানে বুঝলিনা তুই –
    কাঁদালি দিন রাতে।
    মুক্ত আকাশ খুঁজলি যে তুই
    সবই আমার ভুল-
    হৃদয়-মাঝে জল ঢুকেছে
    নেই তল,নেই কূল।
    খাঁচার পাল্লা খুলে দিলাম,
    ঘুঁচিয়ে দিলাম বাঁধন,
    যেথায় খুশি বাসা বাঁধিস-
    যে হবে তোর আপন।

  • গল্প

    গল্প- আলো

    আলো
    – শিলাবৃষ্টি

     

     

    সে যুগের উকিল বাবার বড় মেয়ে রেণুকার বিয়ে হয়েছিল বারো বছর বয়সে এক মস্ত জমিদার বাড়ীতে। প্রথম কন্যার বিয়েতে কোনো কার্পণ্য করেননি খগেন চন্দ্র। মেয়ে ছিল তাঁর নয়নের মনি। তাই সোনা দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছিলেন মেয়ের অঙ্গ। সাতনরি হারটা যে দেখলো মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকলো। লোকে বলাবলি করলো, – মুকুটটা ছাড়া কি দিতে বাকি রেখেছেনখগেন বাবু!
    নহবত বসিয়ে পাঁচ দিন ধরে লোক খাওয়ানো ! আবার জামাইকে হাতির পিঠে বরাসনে বসিয়ে শহরে ঘোরানো! একখানা বিয়েবাড়ি বটে ।
    জামাইও ছিল শিক্ষিত, সুপুরুষ। আইনের ছাত্র।
    ভট্টাচায্যি বাড়ির আদরের বধূ রেণুকার জীবন ভালোই কাটছিল । একে একে তিন সন্তানের জননী হয়েছে রেণুকা। বড় ছেলে অমিত ছোট ছেলে সুমিত আর মেয়ে সুমিত্রা। দুই দেওর, দুই জা আর তাদের সন্তানরা সবাই এক সংসারেই এখনো রান্না খাওয়া করে। এছাড়া ঝি চাকর ভাগচাষী তো আছেই। বিরাট বাড়ি। চারিধারে গাছগাছালি। দু’ খানা মস্ত পুকুর। বড় বড় ধানভর্তি মরাই। গোয়াল ভরা গরু, পুকুরে মাছ, গাছে গাছে আম, জাম নারকেল কিন্তু এ হেন অবস্থাপন্ন পরিবারেও অভাব দেখা দেয়!
    সারা দেশে যখন হঠাৎ নেমে এল মন্বন্তর, ছিয়াত্তরের সেই নিদারুণ দুর্ভিক্ষে দেশ সাংঘাতিক সমস্যার সম্মুখীন হ’ল। সারা বাংলায় তখন হাহাকার। কত মানুষ খেতে পাচ্ছেনা, দরিদ্র লোকেরা ফ্যান খেয়ে পেট ভরাচ্ছে। সরকার থেকে ত্রাণ আসছে চারিদিকে। চুরি ছিনতাই বেড়েই চলেছে। সে এক ভয়াবহ অবস্থা। আতঙ্কে মানুষ দিশেহারা। আর কলেরা বসন্ত তো লেগেই আছে। মানুষ মরছে দিনরাত।
    রেণুকার সংসারেও এমতাবস্থায় শ্বশুরমশায় বুঝে চলতে শুরু করলেন, শুরু হল নিকতি ধরে হিসেব। সব কিছু মেপে মেপে বের করে দেন ভাঁড়ার ঘর থেকে । তার বাইরে কোন কিছু চাইলেও পাওয়া যাবে না। তিন সন্তানকে নিয়ে একটু অসুবিধেতেই কাটাতে হচ্ছে; কত দিন এভাবে কাটাবে রেণুকা বুঝতে পারে না। অভাব কখনো দেখতে হয়নি তাকে। খুব অসুবিধায় দিন কাটলেও বাংলার এই পরিস্থিতিতে এত বড় একান্নবর্তী পরিবারে দু’ মুঠো ভাত মুড়ি জুটছে এই কতো না !
    সন্ধে থেকে সেদিন ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আকাশ কালো মেঘে আচ্ছন্ন। মাঝে মাঝে ভয়ংকর বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। রেণুকার চার বছরের মেয়ে আলোর আগের দিন থেকেই গা’টা মাঝে মাঝে গরম হচ্ছে। তাড়াতাড়ি খাওয়া দাওয়া সেরে নিতে চায় রেণুকা। কাজ সব শেষ হলে মেয়ের কাছে গিয়ে একটু বসবে। মনীন্দ্রকেও তাড়া দেয় সে।

    বোধহয় আজ অমাবস্যা তিথি। পাশের পাড়ার হরিখুড়ো, আর গোবিন্দর বৌ দুপুরে মারা গেছে “বলো হরি হরিবোল” ধ্বনি উঠলো। শ্মশানে যাচ্ছে ওরা। স্বামী মনীন্দ্র বোধহয় ঘুমিয়ে পড়েছেন পালঙ্কে। দুই ছেলে বাবার কাছেই শোয়। পাশের চৌকিতে মেয়ে নিয়ে রেণুকা। মেয়েটার গায়ে এখনো বেশ জ্বর। কাল হোমিওপ্যাথি ডাক্তার বাবুকে একবার দেখিয়ে নিতে হবে। দুই ছেলের পরে এই মেয়ে। চার বছর বয়স‌। সবাই বলে ও খুব সুন্দরী। ওর গায়ের রং খুব ফরসা বলে দাদু নাম দিয়েছেন আলো।
    সারাদিন বকবক করে বাড়ির সকলের মাথা খেয়ে নেয় যেন। দাদুর তো নাতনি অন্ত প্রাণ। কাল থেকে বাড়িটা বড্ড চুপচাপ। মেয়েটার মুখে আর কথা নেই। খুব শান্ত হয়ে গেছে। রেণুকা মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। বড় মায়া জড়ানো ওর মুখখানা ।
    আলো ঘুমিয়ে পড়েছে, কিন্তু সারাদিন এত খাটাখাটনির পরেও রেণুকার চোখে আজ ঘুম নেই …ঘরে রাখা হ্যারিকেনটায় বোধহয় তেল শেষ হয়ে আসছে। তিন চার বার দপ দপ করে নিভে গেল।
    উঃ কী অন্ধকার। রেণুকা অন্ধকারকে বড় ভয় পায়। বোধহয় বৃষ্টি শুরু হল। মেঘ ডাকছে। বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। এখন শ্বশুরের কাছে তেল চাইতেই বা কী ভাবে যাবে সে। বয়স্ক মানুষ ঘুমিয়ে পড়েছেন। রাতে আর বিরক্ত না করাই ভালো রেণুকা ঘুমানোর চেষ্টা করে, কখন ঘুমও ধরে যায়।

    …আলো, আলো…ও মা আলো জ্বালো – ও বাবা…আলো … আলো … আলো কৈ … ও মা … আলো …
    চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায় রেণুকার।
    -কি হয়েছে মা, আলোটা নিভে গেছে। এই তো আমি।
    কিন্তু মেয়ে তো আর কথা বলছে না!
    – ওগো শুনছো। শোনো না, মেয়েটা আর নড়ছেনা… কথা বলছেনা। আলো জ্বালো না, একটা আলো জ্বালো না।
    মনীন্দ্রর ঘুম ভেঙে যায়। হাতড়ে হাতড়ে বেটারির প্রায় মশলা ফুরিয়ে যাওয়া টর্চটা ঘরের তাক থেকে বের করে।
    নাঃ ততক্ষণে সব শেষ। আলো স্থির হয়ে গেছে। চিৎকার করে আর্তনাদ করে ওঠে রেণুকা।
    আলো, আমার আলো সোনা, কথা বল মা, কথা বল। ওগো বলো  না আমার আলো নড়ছে না কেন? কথা বল মা।
    না না এ হতে পারেনা । কিছুতেই হতে পারেনা । আলো ও আলো ! আলো …

    ছিয়াত্তরের দুর্ভিক্ষের করাল গ্রাসের বলি হল এক চার বছরের শিশু। হা ঈশ্বর!
    অমাবস্যার ঘোর অন্ধকারে- ভয়ে “আলো” আলো” চিৎকার করতে করতে – হার্টফেল করল এক সদ্য ফোটা কুঁড়ি। সবাইকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করে আলো চলে গেল অন্যলোকে।

  • কবিতা

    কবিতা- আকাশের সেই তারাটা

    আকাশের সেই তারাটা
    – শিলাবৃষ্টি

     

     

    প্রতিদিন অন্ধকার রাতে ছাদে যাওয়া
    একটা অভ্যেসে দাঁড়িয়েছে।
    না গেলে ঘুম আসতেই চায় না।

    তাই রোজ যাই।
    সবাই যখন দিনের শেষে ঘুমের দেশে যায়
    তখনই আমার সময় হয়।
    কারো যেন হাতছানি পাই রোজ রাতে!

    খোলা আকাশের দিকে চোখ যায়
    আর সেই তারাটা –
    চোখের সামনে চলে আসে।
    মনে হয় যেন- সে আমারই অপেক্ষায় –
    এখনো জেগে বসে আছে।
    এত উজ্জ্বল তারা তখন…
    আকাশে আর একটাও থাকে না।

    মন বলে-“আমি এসে গেছি।”
    সাথে সাথে উওর পাই–
    ‘আমি অপেক্ষা করছি তোরই জন্য।’

    প্রতিদিন এভাবেই কথায় কথায়
    কেটে যায় প্রহর।
    একটা সময় চোখে ঘুম আসে।
    কেউ বুঝি শৈশবে শোনা
    সেই ঘুম পাড়ানি গান গেয়ে
    ঘুম এনে দেয় – দু’চোখের পাতায়।

    কে? কে তুমি?
    তবে কি তুমিই আমার মা?
    অনেকবার শোনা সেই কথাটা –
    বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয় -আরেকবার।

    – “তোর মা আকাশের তারা হয়ে গেছে।”

  • কবিতা

    কবিতা- শিশু শ্রমিক

    শিশু শ্রমিক
    – শিলাবৃষ্টি

     

     

    যে মেয়েটি আজ বাসন মাজে
    আপনার ঘরে,
    যে ছেলেটি ঐ মোট বইছে
    পথের ‘পরে;
    গাড়ির তলায় চিৎ হয়ে শুয়ে
    যে নাট বল্টু খোলে,
    কাঁপা কাঁপা হাতে কাপ ডিস আনে
    দোকানে -হোটেলে!
    সেই তো একটি শ্রমিক শিশু
    গরীব ভাইয়ের!
    সে আমাদের শিশু শ্রমিক
    ভারত মায়ের।

    যে বয়সে পায় অন্য শিশুরা
    মা’র স্নেহছায়া,
    বাবার আদরে যে বয়সে হয়-
    সব কিছু পাওয়া;
    যে বয়সে কেউ স্কুলে যায়
    চার চাকা চ’ড়ে…
    জন্মদিনের আতসবাজিতে
    পয়সারা পোড়ে…
    সে বয়সে হায় পায় না কেন
    পাঁচ কোটি শিশু;
    দুবেলা ভাত, চারটে রুটি
    রাস্তার যীশু?

    কল কারখানায় খাটছে যারা
    সারা দিনরাত,
    তেলকালিতে হচ্ছে কঠিন
    কোমল দু’হাত…
    আইন যাদের করতে পারেনি
    বন্ধ কিছুই,
    অভিশাপের ঝাঁপি যাদের
    পিছু পিছুই..
    তারাই হল শ্রমিক-শিশু
    গরীব ভায়ের,
    তারাই কিন্তু শিশু- শ্রমিক
    ভারত মায়ের।।

  • কবিতা

    কবিতা- জন্মান্তর

    জন্মান্তর
    – শিলাবৃষ্টি

     

     

    বারংবার আঘাত হেনেছ তুমি…
    টলমল শব্দে তবু ভেঙে পড়িনি আমি ।
    কতবার হয়েছি স্তম্ভিত
    হয়েছি বাক রোহিত ……
    ভাবিনি কখনো এও হতে পারে জীবনে আবার!
    ভাবিনি নিঃশব্দে ইমারত গড়ব তোমার !
    বারবার হয়েছি মিথ্যের মুখোমুখি…
    কতবার খুলেছি তোমার রঙিন মুখোশ !
    তবু পারিনি চলে যেতে ।
    সবই জেনে, হায় সবই বুঝেও
    তোমার করুণার স্পর্শখানি চেয়ে
    দিয়েছি হাত পেতে।
    ক্ষণে ক্ষণে প্রশ্ন জাগে হৃদয় কোণে
    ‘ ভালোবাসা’র স্বরূপ তবে কি?
    উত্তর পেয়েছি মনে
    কবির গানে–“সে যে বড়ই যাতনাময়।”
    তবে কি সে শুধুই বেদনা দেয়?
    না না, কতবার পেয়েছি পরম লগন,
    হয়েছ জীবনে কাছের সুজন…
    লেগেছে সুখের পরশ।
    সব ভুলে তোমাতে করেছি সমর্পন
    আমার ভালোবাসা।

    কতবার বলেছিলে —
    তুমি ছিলে নাকি কোনো জনমে আমার।
    সেতো নেই স্মরণে !
    মনের দর্পণে একবার শুধু একবার
    দেখতে চাই সে মুখ-খানি ।
    বড় সাধ অন্তরে।
    সে সাধ পুরাই কেমনে!

    কোন্ সে জনমে বিদায় বেলার…
    স্মৃতিচিহ্ন কিছু ছিল কি আমার
    তব কাছে?
    দেখাও হে নাথ! একবার শুধু একবার।
    সেদিনের সেই বালিকা বেলার ছবিখানি।
    প্রতিদিন ঊষাকালে
    আনমনে যে মেয়েটি
    ছুটে যেত নদীতটে;
    ছুটে যেত পাহাড়ের কিনারায়।
    বাঁশির মধুর ধ্বনি তব…
    বার বার দিত তারে হাতছানি।
    ভোরের শিশিরস্নাত
    বকুল ফুলের মালাখানি…
    জড়িয়ে নিয়ে কোমল হাতে
    ছুটে যেত তব পানে……
    সেই ভালোবাসা আবার এলো যদি ফিরে
    কেন কেন কেন তা এ নামে ! এ রূপে !
    হা ঈশ্বর! আজ এজনমে-
    কোনভাবেই আর আমি নই তার
    সে নয় আমার।
    মাঝখানে কেন তবে এই খেলা?

    আমার ঠাকুর! ঈশ্বর মোর! জীবন দেবতা
    তোমার কাছে রব’না হাত পেতে,
    নিজেই নিজের ভাগ্য লিখন
    লিখব আঁধার রাতে।

    চলে যাই, চলে যাই প্রিয়!
    সুখের সাগরে ভাসাও ভেলা
    জীবন তো নয় শুধুই খেলা।

    শুধু বিদায় বেলায়
    অপরাধ মোর নিয়োনা মুখে।
    আজ আঁধার মেঘে সব কিছু যাক চুকে।
    শুধু পাগলা হাওয়ার বৃষ্টি দিনে
    একটিবারের তরে,
    মনের কোণে অতীত স্মৃতি
    রেখো যতন করে।
    এই জনমে তোমার উপর
    নেইতো কোনো জোর।
    তাই অন্তিমে আজ প্রার্থনা মোর –
    আর জনমে এসো বন্ধু,
    এসো প্রিয় সখা
    তোমার সনেই হয় যেন গো
    আমার প্রথম দেখা।।

You cannot copy content of this page