-
কবিতা- তোল রে! আওয়াজ তোল!
তোল রে! আওয়াজ তোল!
– শুভঙ্কর অধিকারীযে মেয়েটা ফিরল না আর
ফিরল ঘরে লাশ!
আর কতকাল দেখব এমন
সইব রে সন্ত্রাস!!হায়নার ঐ লোলুপ দৃষ্টি
আর কতকাল সইবি!
রাঙা চোখটা দমিয়ে দিতে
আওয়াজ কবে তুলবি??আর কতদিন মুখ ফিরিয়ে
রুমাল দিবি নাকে!
নিজের গায়ে পড়লে আঁচড়
ডাকবি তখন কাকে??ভয়ে ভয়ে আর কতদিন
গুটিয়ে থাকবি তোরা!
উচিত কথা বলার জন্য
কবে হবি রে মুখচোরা!!খিদে পেলেও সদ্যজাত
চিল চিৎকার করে!
কেমনে করে থাকিস তোরা
ঐ খাঁচার ভিতর পরে!!বিবেক তোকে দেয় না ছোবল,
দাবায় না তোর গলা!
ক্রোধের বারুদ জ্বলে না তোর
দেয় না কি চোখ জ্বালা!!নিজের না হোক নাইবা হোল
অন্য কারো বটে!
দু’চোখ দিয়ে দেখবি শুধু
কেউ আঁচড় যদি কাটে??নিজের হলেই তুলবি আওয়াজ
একাই যাবি রুখতে!
একা একা পারবি তখন
অশুভর সাথে লড়তে!!লাশ তো অনেক দেখলি তোরা
মুখটা এবার খোল!
দোষীর শাস্তির দাবিতে
তোল রে আওয়াজ তোল!!অন্ধকারকে ভয় যদি তোর
মনের মশাল জ্বাল!
ওরা যদি তরবারি হয়
তবে আমরা হব ঢাল!!প্রতিবাদের মশাল তোকেই
ধরতে হবে ভাই!
আজ যদি না জ্বলিস তবে
আর বাঁচার উপায় নাই!!সবাই যদি হয় সচেতন
হাতটা রাখি হাতে!
হিংস্র সব নেকড়েগুলো
পালাবে ভয়েতে!! -
কবিতা- আশায় মরে চাষা
আশায় মরে চাষা
-শুভঙ্কর অধিকারীবঞ্জর জমিতে কৃষক টেনেছে লাঙ্গল
একমেঘ বৃষ্টির আশায় বেঁধেছে বুক,
ক্লান্ত শরীর ঢলছে প্রখর রৌদ্রতাপে
নগ্ন তরু ছায়ে খুঁজছে মিয়ানো সুখ!পলাশ, শিমুল জ্বলছে চৈত্র দাবদাহে
অনশনও থিতিয়ে এল ধীরে ধীরে,
কালো সড়কেই থমকে স্বপ্ন আগামীর
বাঁচার আশা আশ্বাসের বাতাস ঘিরে!শিক্ষার ঝুলি আজ ভিক্ষার ঝুলি হয়ে
জীবিকার সন্ধান ক্ষমতার দ্বারে দ্বারে,
মেধাবী কি পাবে চাতক ঠোঁটে জল
ছাব্বিশের নতুন সূর্যকে ভর করে?মানব হৃদয়ে উঠুক কালবৈশখী এক ঝড়
ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাক জঞ্জাল, ধূলি!
খসে পড়ুক একে একে মুখের উপর থেকে
ভদ্রবেশী স্বার্থ লোলুপ মুখোশগুলি!! -
শখের কবি
শখের কবি
-শুভঙ্কর অধিকারীস্কুল ম্যাগাজিনে কবিতাটি
পাইনি সেদিন ঠাঁই;
কবি হবার শখটা পূরণ
আমার কপালে নাই!ভাবিনি আর আকাশ কুসুম
কলম রেখেছি তুলে;
ও পথে আর পা বাড়ানোর
ইচ্ছে রাখিনি ভুলে!তখন শুধুই খেলার মাঠ আর
তখন শুধুই পড়া;
কদিন পরেই মাধ্যমিক তাই
দাদার শাসন কড়া!ভাবিনি আর কলম খানি
আবার তুলতে হবে;
মনের গহীন কোণেতে কেউ
দাগটা কেটে যাবে।বৈশাখের সেই বিকেল বেলা
তোমার এলোকেশ;
আমার তখন সবে পনের
বোর্ড এক্সাম শেষ!##
প্রথম দেখার সেই স্মৃতিটা
আঁকরে থাকি ধরে;
আবার হাতে ডাইরি কলম
উঠল নতুন করে!!ভাঙ্গা মনের সাধ জাগল
ছন্দে আবার ঢেউ;
মনের কথা কলম জুড়ে
জানলো না তা কেউ!কলমে তখন শুধুই তুমি
তোমার আনাগোনা;
সবার মাঝেই তোমার ছবি
খুঁজ্জে কলমখানা!তুমি তখন কাল বৈশাখী
আমার কলম জুড়ে;
কুহু সুরে কোকিল যেন
আসছে ঘুরে ফিরে।সবুজ পার ঐ সাদা শাড়ি
তুমি স্কুলের পথে;
আসতে যেতে চোখাচোখি
হতো তোমার সাথে।ক্ষনিকের সেই ভালো লাগা
আঁকড়ে ধরলো বেশ;
আমার তখন সবে পনের
বোর্ড এক্সাম শেষ!###
আঁধার রাতে কলমের ডাক
হাতছানি দেয় রোজ;
কবির খাতায় নতুন রঙে
পেতাম যে তার খোঁজ।মনে তখন হাজার তুফান
তোমার ঠোঁটের হাসি;
কদমতলায় ছুটছে যে মন
বাজায় কালার বাঁশি।মনে তখন রুবি রাই আর
মনে নীলাঞ্জনা;
মনের সকল ইচ্ছে পাখি
মেলছে রঙিন ডানা।মনের সকল শখ আহ্লাদ
তুমি হৃদয় জুড়ে;
মনের সকল ইচ্ছে গুলো
উঠছে কলম ফুঁড়ে।কলমে তখন তোমার দুচোখ
স্বপ্ন আমার রাশি;
তোমার দু ঠোঁট হার মানাল
মোনালিসার হাসি।কলমে তখন তোমার রুপে
পূর্ণিমা চাঁদ ফিকে;
তোমার হাসিতে মূর্ছা গেছে
গোলাপ দিকে দিকে।কলমে তখন শুধুই তুমি
মনের বনে অলি;
শখের কবির তুমিই ছিলে
প্রথম কৃষ্ণকলি।ইচ্ছে নদীর বালু চরে
চোরা বালির ফাঁদে;
নির্বাক প্রেম আঁছড়ে পরে
গভীর গিরি খাদে।হাজার কবিতা বেকার যে আজ
ব্যর্থ সেই উদ্দেশ;
আমার তখন সবে পনের
বোর্ড এক্সাম শেষ। -
সেই শৈশব
“সেই শৈশব”
-শুভঙ্কর অধিকারীচল না সবাই আবার মিশি
শৈশবের ঐ দলে,
মায়ের হাতের আদর পেতে
আবার মায়ের কোলে।বাবা কাকার সেই বকুনি
কানমলা আর গাট্টা!
সে স্মৃতি আজ বন্ধ খাতায়
সেই হাসি সেই ঠাট্টা!সেই হইচই আর চেঁচামেচি
হরেক রকম খেলা,
হাত বাড়িয়ে ডাক দিয়ে যায়
আমার ছেলেবেলা!ইচ্ছে করে বায়না ধরে
হাত পা ছুঁড়ে কাঁদি!
দুপুর বেলায় খেলতে যাবার
গল্প নতুন ফাঁদি!হঠাৎ হঠাৎ মান অভিমান
তোর সাথে আজ আড়ি,
হঠাৎ আবার ভাব জমাতে
হাজির যে তোর বাড়ি!সবার সাথে চাই জমাতে
খোসমেজাজি গল্প,
জীবন খাতার পাতায় পাতায়
সময় যে খুব অল্প।সেই শৈশব আজও খুঁজি
পথের বাঁকে বাঁকে
সজল চোখে সেই শৈশব
অবাক হয়ে দেখে!ইটের ভাটা, চায়ের দোকান
এঁটো বাসন হাতে
শৈশব যে আজ বিকিয়ে যায়
গভীর কালো রাতে!আজ যে সবাই বন্দী দেখ ঐ
পায়রা খোপের ঘরে
শৈশব যে আজ হাফসে ওঠে
গুমরে কেঁদে মরে!বইয়ের বোঝায় নুইয়ে পড়ে
ঐ ছোট্ট দুটি কাঁধ
চার দেয়ালে আটকে তাদের
সখের সাধ আহ্লাদ!ইঁদুর দৌড়ে সামিল রে সব
ফুটলে মুখের বুলি
নইলে তুমি পিছিয়ে রবে
জুটবে পায়ের ধূলি।ভবিষ্যতে দেখতে আলো
ঐ ছোট্ট মাথায় ভার
জেতার লক্ষ্যে ছুটছে সবাই
কেউ মানছে নাকো হার!আজকে সবাই যে যার ঘরে
জীবন যে কংক্রিটে
সেরার সেরা হবার নেশায়
আটকেছে বিষ গিঁটে।স্মার্ট ফোন আজ গিলছে সময়
কাছের মানুষ দূরে
আষ্ঠেপিষ্টে গিলছে রে সব
সব যে এক এক করে!খেলার ও মাঠ কাঁদছে ওরে
কোথায় গেলি রে সব।
ভালোবাসার অভাব বোধে
ধুঁকছে কি শৈশব?মেলুক ওরা ইচ্ছে মতন
মেলুক্ ওদের ডানা,
ওদের মাঝেই লুকিয়ে আছে
সবার ষোলো আনা! -
বিচার
বিচার
-শুভঙ্কর অধিকারীভোটের দামামা বাজলো বুঝি
নেমে পরো সব মাঠে
মুখোশ সেঁটে কাদা ছোড়াছুড়ি
শুরু হোক ঘাটে ঘাটে!চোর নিয়ে সব মাতামাতি করে
করেন না টাকার খোঁজ
ভোট টা দিয়ে ভোটের দিনে
খেয়ে যান ভুরি ভোজ!কখনো সারদা কখনো নারদা
দেশ হলো তোলপাড়
রং পাল্টে গিরগিটি গুলো
পেয়ে গেল সব ছাড়!!জমানো সঞ্চয় ভাগা ভাগি করে
সকলে নিল যে লুটি
রাঘব বোয়াল গভীর তলেতে
কেবল বর্শি গেঁথেছে পুঁটি!কোটি কোটি টাকা চুরি হয়ে যায়
আসে না তবু যে ভোর
কানামাছি খেলে সি বি আই দল
সাধু সাজে সব চোর!আইন যেখানে আইনি কেতাবেই
গুমরে গুমরে মরে
চোর সেখানে নামাবলী গায়ে
নিত্য কীর্তন করে!ফেলুদা ব্যোমকেশ হার মানল
ধরতে চোরের টিকি
ছেঁড়া জালে আনাগোনা করে
মেরে যায় চোর উঁকি!আমজনতা মহা মূর্খের দল
সকলে পরায় টুপি
বাদুড়ের ঠোঁটে রক্তের স্বাদ
খেয়ে যায় চুপি চুপি!তোমায় চুষেছে আবারও চুষবে
হবে কঙ্কাল-সার
আমরা হলাম নেতাদের ফুটবল
পাব নাকো নিস্তার!টাকার হদিশ কেউ পাবে না
সর্ষের ভিতর ভূত
চাতক তুমি দিন গুনে যাও
ঘোলা জলে বুদবুদ!!তবুও আশা মনে সকল চাষার
হবে বিচার সকল পাপ
সুনামি কিংবা কালবৈশাখী ঝড়ে
ধুয়ে মুছে হবে সাফ!! -
দেশপ্রেম
দেশপ্রেম
–শুভঙ্কর অধিকারীকালো মেঘের আকাশে
বছরের ক’দিন উড়ছে সাধের তিরঙ্গাটা!
তবু সবুজ, গেরুয়ার লড়াই অব্যাহত, ঐ যেমন চলে,
কেবল আমজনতা হচ্ছে পেষায়, দিবারাত্র অশোকচক্র তলে!এখন দেশের সকল নেতাজিরা
সেবার নামে কেবল রক্ত চোষার পেশা,
স্বজন পোষন খালি, হিতাহিত সব দিয়ে জলাঞ্জলি
চোখে মুখে ফুটছে কেবল, দেশটা ঝাঁঝরা করার নেশা!কারখানার সাইরেন হোল স্তব্ধ!
বছর ত্রিশেক ধরে একে একে সব অতল ঘুমে
মজদুর তুমি কর্মহীন হয়ে, তবুও স্বপ্ন কেন দেখো!
কেবল ভারী তালায় তোমার, আঁধার জীবন তরী আঁকো!বাজলো নাকি নির্বাচনের ঘণ্টা!
ঐ বুঝি আসছে তারা সুনামির ঢেউ হয়ে
জনতা সেবার প্রতিশ্রুতি, মুখস্থ ভাষণ আউরে দিতে
দেশ ভক্তের মুখোশ সেঁটে বুঝি ভোট ভিক্ষা চাইতে এলো দু’হাত পেতে!বীর সীমান্তের প্রহরী!
বৃথা তোমার দেশের তরে আত্ম বলিদান!
সকল দরিদ্র, মুচি, মেথর, ডোম এখনও ঘৃণার পাত্র!
নারী আজও হাতের পুতুল, আজও গণ্ডি রেখায় হারায় সন্মান!ভিড় করেছে দেশ প্রেমিকের দল
দিনে দিনে বাড়ছে কেবল তাদের কোলাহল!
ফেসবুক, হোয়াটসাপে ঝুড়ি, ঝুড়ি স্ট্যাটাস, পোস্টে,
সেলফি তুলে নাঙ্গা শিশুর সাথে, ভাগ নিয়েছে তাদের জীবন কষ্টে!বুজরুগিতে মাতছে গোটা দেশ
ঝারফুঁকে কি আজও মনে বিশ্বাস ধরো!
অস্ত্র হাতে মাঠে নেমে ঐ মন্দির বনাম মসজিদ
বীর শহীদের বলিদানের দেশকে কেন কালিমালিপ্ত করো!ধর্মের টনিক গিলে তুমি
বিবেকটাকে কবর দিলে নাকি?
কোরান, গীতা লাইব্রেরির ওই উঁচু তাকে তোলা
হাতে সময় থাকে যদি, তবে ধূলো ঝেড়ে তাতে একটু দিও উঁকি!দেশ সেবাতে এগিয়ে যদি এলে
হাতে রং বেরঙিন দলের ঝান্ডা ধরে কেন?
স্বদেশ প্রেমের যদি অনুরাগীই হবে মনে প্রাণে
তবু স্বার্থ বোঝায় লোলুপ চেরা জিভের লেহন যেন!বাজার হাটে বিকছে মেধা!
উৎকোচ আর তোষামোদে মুখটা ঢেকে,
তেলা মাথায় তেল বুলিয়ে চলে সে যে বুদ্ধিজীবী
জীব সেবাতে তাবর নেতার চরণ ধূলি একে একে নিচ্ছে চেখে!!জয় হিন্দ!!
বন্দে মাতরম!!
অস্থির শব্দরা কি পৌঁছালো?
নিস্তেজ রক্তের শিরায় শিরায়, দেশ ভক্তির টানে!
তোমার নিদ্রা হল কি ভঙ্গ! কাটেনি আরষ্ঠ, অলসতা ভাব,
কেবল ছুটি কাটানো দিনটা! দু’হাত ছড়িয়ে দিয়ে আকাশপানে!অকপট রৌদ্র কি পড়ল চোখে!
কষ্ট করে আর ও চোখ মেলো নাকো,
বেশ তো আছি সবাই মিলে গভীর ঘুমের দেশে!
কি লাভ তবে দুচোখ মেলে। তুমিও আয়েশ করে ঘুমিয়ে তবে থাকো!! -
উত্তরসূরী
উত্তরসূরী
-শুভঙ্কর অধিকারী
তোর ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর, চেয়েছি কেবল তোরই উত্তরণ!
তোর জন্য রেখে যেতে চেয়ে ছিলাম, এক সমুদ্র সুখের ঢেউ!
দেখতে চেয়েছি তোকে নক্ষত্রদের মাঝে জ্বলজ্বল করতে।
চাইনি কোনও দিন তুইও আমার মতন দাউ দাউ অগ্নিকুন্ড হোস!
বনস্পতির মত চেয়েছি আগলে রাখতে, ঝড় -ঝাপটা থেকে!
তোর সকল সাধ আহ্লাদ পূরণের আপ্রাণ চেষ্টা ছিল অবিরত!
সাধ্যের বাইরে ও রেখেছি পা, মধ্যবিত্তের চৌকাঠ ডিঙিয়ে!
আমার স্বপ্নের ঐ ব্যর্থতার আকাশে তুইই ছিলিস একফালি ভরসার চাঁদ!
চাইনি আপোষ করে কাটাস ভীতু, কাপুরুষ হয়ে
চেয়েছি কেবল দীপ্ত পুরুষের মতন শিরদাঁড়াটাকে শক্ত করে চল!আজ সময়ের স্রোতে বয়ে যাওয়া তিরিশ বছর পরে
পিতৃছায়ায় গড়া তোর ঐ দুচোখে নিজেকে দেখি।
তুইও যেন আমারই মতন কাঁধে নিয়ে বয়ে চলেছিস সেই দায়ভার।
চেষ্টা করছিস গড়ে তোলার নতুন এক উত্তরসূরীকে !! -
মেয়েটি বায়না করে ছিল
মেয়েটি বায়না করে ছিল
-শুভঙ্কর অধিকারীসদ্য যৌবনপ্রাপ্ত মেয়েটি
এখনও বাল্য সুলভ ভাবটি কাটেনি তার।
জল ফড়িং এর মত মাঝে মাঝে আনন্দে মেতে ওঠে
তার সঙ্গে গোটা বাড়ি যেন সে একাই মাতিয়ে রাখে
পৌষের শেষে যেদিন ওই নদীর চড়ে মেলা বসেছিল
সেই দিন মেয়েটি বায়না করে ছিল মেলায় যাবে!
দোলায় চড়বে, পাঁপড়, জিলিপি খাবে!!শীতের কুয়াশা ঠেলে নিষ্প্রভ সূর্য সেদিন
এক রাশি থেকে অন্য রাশিতে এগোচ্ছে একটু একটু করে
চারিদিকে যখন নতুন চালের গুড়ির পিঠে
খেতে সবাই ব্যস্ত, ঝোলা খেজুর গুড়ের সাথে
খুশির বার্তা নিয়ে আকাশে উড়ছে রং বেরঙের ঘুড়ি।
মেয়েটি তখন বায়না করে ছিল মেলায় যাবে!
দোলায় চড়বে, পাঁপড়, জিলিপি খাবে!!মহাপুণ্য লাভের উদ্দেশ্যে মকর স্নান ও সকলের সারা
লাল আভা ঐ পশ্চিমের আকাশে, সূর্য গিয়েছে ঢলে
মেয়েটি রঙিন প্রজাপতির মতন সেজেছিল সেদিন
যেন সদ্য গোলাপ যেন পাপড়ি মেলেছে বাগিচাতে
না কোনো ঔদ্ধত্যের পোষাক ছিল না সেদিন
রঙিন সালোয়ার,চাদর তার গায়, লাল ফিতেয় বাঁধা চুল
কালো কাজল টিপ কপালে, হাতে কাঁচের চুড়ি।
মেয়েটি বায়না করে ছিল মেলায় যাবে!
দোলায় চড়বে, পাঁপড়, জিলিপি খাবে!!সাঁঝের আকাশ এক পা দু পা করে কালো আঁধার পথে
শিশির বিন্দু উঠছে জেগে সবুজ ঘাসের আগায়।
মেয়েটি আপন উচ্ছ্বাসে মা, ঠাকুমার হাত ধরে
মনের বাসনা নিয়ে আলো আঁধারি মেঠো পথটি বেয়ে।
ঐ যে চোখ ধাঁধানো রকমারি আলোর আতশবাজি
ঐ যে বাউলের সুরে দোতারা বেজে উঠলো বুঝি।
দূরে ঐ নদীর চরে ভেসে আসে কিছু উন্মত্ত হায়নার উল্লাস
বাতাসে শীতের স্পর্শ তবু অবাধ্য মনে এগিয়ে চলা।
যে মেয়েটি বায়না করে ছিল মেলায় যাবে!
দোলায় চড়বে, পাঁপড়, জিলিপি খাবে!!দুর্ভেদ্য ভিড়, ঠেলা, গুঁতো,তবু এগিয়ে চলেছে মেলার মাঝে
হরেক মেলার দোকান ঘুরে, পাঁপড়, জিলিপি কিনে
মা, ঠাকুমার হাত ধরে এগোচ্ছিল নাগর দোলায় চড়বে বলে।
হঠাৎ বেখেয়ালে ভিড়ের মাঝে পড়লো ঘূর্ণিপাকে
শত শব্দের কোলাহলে ভিড়ের মাঝে হারালো মা, ঠাকুমাকে।
সজল চোখে ফুঁপিয়ে ওঠে ভয়ে, কানে কারও যাচ্ছে না হাঁক ডাক।
চিল, শকুনে ওৎপেতে যেন ছিল লোড শেডিং এর অপেক্ষায়,
মেয়েটির মুখটি চেপে ধরল একটি কালো হাত
টেনে হিঁচরে নিয়ে গেলো দূরের ঐ নদীর পাড়ে, অন্ধকারে।
সেই মেয়েটিকে, যে বায়না করে ছিল, মেলায় যাবে!
দোলায় চড়বে, পাঁপড়, জিলিপি খাবে!!তার সেই আর্তনাদ পৌঁছায়নি কারোর কানে
হিংস্র সেই পিশাচ গুলো একে একে খুবলে খেল যেন
ছিন্ন ভিন্ন হল সেই গোলাপের পাপড়ি গুলো!
কদর্য পায়ে থেঁতলে গেল সেই রঙিন প্রজাপতি!
টুকরো টুকরো হলো কাঁচের রঙিন চুড়ি!
পাঁপড়, জিলিপি ছড়িয়ে ছিটিয়ে চতুর্দিকে
রইল পরে বালির চরে রক্তমাখা নিথর দেহের সাথে।
সেই মেয়েটি যে বায়না করে ছিল মেলায় যাবে!
দোলায় চড়বে, পাঁপড়, জিলিপি খাবে!!পরদিন কনকনে মাঘের প্রথম কুয়াশাচ্ছন্ন প্রাতে
মেয়েটি চললো বাঁশের দোলায় চড়ে শ্মশান ঘাটে।
আনন্দ উচ্ছল মুখ তার আজ বিকৃত, পাংশুবর্ণ,
সদা হাস্য ঠোঁট দুটি তার আজ রক্ত জমাট
পাঁপড়,জিলিপির খাবার কথা আর বলবে না।
মেলায় যাবার সে সাধ পূর্ণ হয়েছে মেয়েটির
যে মেয়েটি বায়না করে ছিল মেলায় যাবে!
দোলায় চড়বে, পাঁপড়, জিলিপি খাবে!!এই ভাবেই কি এক এক করে ফুলের মতো মেয়ে গুলো
ঐ অন্ধকারে নর পিশাচের হাতে শিকার হতে দেখব।
এর পর আমার ঘরের কেউ, নয় তো আপনার কেউ
নাকি প্রতীক্ষা করব ভগবানের সেই অলৌকিক বিচারের!
শেষ সিদ্ধান্ত টা যে আমাকে আপনাকে নিতেই হবে
কঠিন হাতে তাদের একে একে নির্মূল যে করতেই হবে
নইলে আজ রাতেও হয়তো শুনবো কোনও মেয়ের আর্তনাদ!
সেই মেয়েটি, যে বায়না করে ছিল, মেলায় যাবে!
দোলায় চড়বে, পাঁপড়, জিলিপি খাবে!!!!!! -
রাজযোটক
রাজযোটক
-শুভঙ্কর অধিকারীউটকো ছোড়া ভ্যাবলাকন্ত
দেখতে যাচ্ছে মেয়ে।
পাড়ার লোকে অবাক হয়ে,
দেখতে থাকে চেয়ে!সঙ্গে যাচ্ছে বাবা, কাকা,
বাবুয়ানার সাজে।
ভ্যাবলার আজ ভীষণ তারা,
দেখাশোনার কাজে!মখমল ধুতি কোঁচা মেরে
গায়েতে রঙিন কুর্তি!
ভ্যাবলার তাই মুখে হাসি,
মনেতে ভীষণ ফুর্তি!শাম্পু দেয়া চুলের বাহার
উত্তম কুমার ছাটে
নধর শরীর দুলকি দোলে
জোরসে যদি হাঁটে!ভ্যাবলাকান্ত একটু শান্ত,
ক্যাবলা সে নয় মোটে।
হাসতে শুরু করলে রে ভাই,
হাসির ফোয়ার ছোটে!অজ পাড়াতে বাড়ি মেয়ের,
নামটি যে তার খুন্তি।
পাত্র দেখেও জুটছে না তার,
শয়ে’ র উপর গুনতি!নাদুস নাদুস চেহারাও তার,
একটু বটে কালো।
হাসির ব্যামো তারও তবে,
মনটা ভীষণ ভালো!অবশেষে সবাই হাজির,
খুঁজে মেয়ের বাড়ি।
আদর আপ্যায়নের মাঝে,
জমলো মজা ভারি!ভ্যাবলা খেলো খাবলা মেরে,
গোটা কয়েক মিষ্টি।
খেতে খেতেই খুন্তির সাথে,
হল বিনিময় দৃষ্টি!খুন্তি হাসে, ভ্যাবলা হাসে,
হাসছে গোটা গুষ্ঠি।
ব্রাহ্মণ বলে ‘রাজযোটক এযে’,
দেখে তাদের কুষ্ঠি! -
যৌবনের হাতছানি
যৌবনের হাতছানি
-শুভঙ্কর অধিকারীনা, আর পারি না আগের মত দৌড় ঝাঁপির জীবন,
চলন্ত ট্রেনে, বাসে ওঠা নামা হয়না আগের মতন!
পেশির জোর নেইকো যে আজ রক্তও গেছে জমে,
সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে বার্ধক্য এসেছে নেমে!মাসে দুবার সেলুন যাওয়া রাখতে চুলের বাহার!
রকমারি পারফিউমে মম্ তখন সারা শরীর আমার!
সে সব যেন আজ সবই অতীত মাথায় পরেছে টাক,
যৌবন আজ স্মৃতির পাতায় শরীরে বার্ধ্যকের ছাপ!স্টাইলে হিরো চোখে সানগ্লাস ঠোঁটে রোমান্টিক গান,
নারী মহলে সুপুরুষ যে তখন জ্বলন্ত সিগারেটে সুখটান!
চোখে এখন আবছা সবই কানেও শুনি কম!
বার্ধক্যের দ্বারে হাতছানি দেয় যৌবনের সেই উদ্দাম!দুর্গম পথ শুধু অভিযানে ডাকে অ্যাডভেঞ্চারের নেশা চোখে
রক্ত তখন ফোটে টগবগিয়ে প্রতিটা চ্যালেঞ্জের মুখে!
সে রক্তে আজ প্রেশার বেশি হাঁটলে ও হাঁপিয়ে উঠি,
বার্ধক্যের ভরে শরীর নুঁয়েছে সঙ্গী হয়েছে লাঠি!!প্রাইভেট সংস্থাতেই জীবিকা শুরু চল্লিশটা বছর করেছি পার!
এরই মাঝে বিয়ে, বৌ ছেলেমেয়ে নাতিপুতি নিয়ে স্বপ্নের সংসার!
আমার মিসেস সেই লাজুক রূপসী এখনো সে করে যতন,
বার্ধক্য তাকে যেন ছুঁতে পারেনি আছে সেই আগেরই মতন!রোগ ব্যাধিতে হাঁপিয়ে উঠেছি বদ্ধ যে আপন ঘরে!
যৌবন তবুও হাত নেড়ে ডাকে জানালার ওই পাড়ে!
বার্ধক্য আজ জীবনের রং চেনালো চেনালো যে তার রূপ!
বার্ধক্য মানে সংসারের বোঝা যেন আবর্জনার স্তূপ!