-
কবিতা- এখনো হেঁটে যাই
এখনো হেঁটে যাই
-সত্য দেব পতিঐ যে দুর আকাশে জ্বলজ্বল করছে নক্ষত্ররাজি,
পৃথিবীর থেকে শত আলোকবর্ষ দূরে-
ওখানে আমার ভালো বাসার আতুর ঘর;
যেখানে হাজারো সুর্য অহর্নিশী সদাজাগ্রত।আমি এই মাটির পৃথিবীতে একলা দার্শনিক,
আমার ভালোবাসার বাগানে তোমার রোপিত গোলাপ,
অতন্দ্র প্রহরী হয়ে সেখানে আমিই বনমালী-
বিশ্বাসের মলয় বাতাসে রোজ সেখানে তোমার গন্ধ ছড়ায় মনের আঙিনায়,
একটা কালো ভ্রমর রোজনামচা করে ঐ ফুলে বসতে চায়-
আমি আধঘুম চোখে দেখি তোমাদের মিলন মহোৎসব;
বিভ্রান্তির দুপুরে যখন সুর্য মাথার ওপর করে জৈষ্ঠ্য তাপ বিকিরণ আমি ছায়া হয়ে দাঁড়াই,
তোমার শীতল মুখের একটু হাসি দেখে আমি প্রশান্তির হাসিতে ঝরে পড়ি অনায়াসে।আবার কোনো বর্ষালী বিকেলে যখন মুষলে বৃষ্টি পড়ে,
তোমার সবুজ কান্ড থেকে চুঁয়ে পড়ে জল আমার রুক্ষ মাটিতে…
তখনকার সিক্ততা আমাকে আপ্লুত করে-
আমি বুঝতে পারি ঐ জলে মিশে থাকা ভালোবাসার স্নিগ্ধতা।যখন শারতিক মেঘের ভেলায় চড়ে প্রেম খেলা করে আকাশে-
তখনো আমি তোমার কথা ভাবি আমার ভাঙা ঘরে বসে,
আসে বিকেল গড়িয়ে এলোকেশী সন্ধ্যার কোলে রাত্রি নিবীড়;
মনের দর্পণে ফুটেওঠে অতীতের স্বপ্নময় প্রতিচ্ছবি-
আপেক্ষিক দুরত্ব বেড়ে হয় যোজন…
একরাশ চাওয়া আর এক আকাশ স্বপ্নের ডালি হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়ি ভালোবাসার দরবারে,
সেই আদিকাল হোতেই হাঁটছি সারাটা পৃথিবী তোলপাড় করে এখনো আমার পথচলা শেষ হোলো না । -
কবিতা- এবং সময় ঘুরে দাঁড়ালো..!
এবং সময় ঘুরে দাঁড়ালো..!
-সত্য দেব পতিএখন প্রকৃতি বিরূপ,
সময়ের আবর্তে দিণমণি অস্তরাগের রং মেখে পশ্চিমের সাগর তটে মূহ্যমান,
পূবালী বাতাসে মাদুকরি করছে বাদলা বিকেল –
ঈশানী মেঘের গর্ভে টইটম্বুর জলকণা বৃষ্টি হয়ে ভুমিষ্ট হোতে চায় পৃথিবীতে…
জমাটি মেঘ প্রসব বেদনায় করছে আর্তনাদ।উন্মুক্ত প্রসবদ্বারে চাপানোর চেষ্টা বৈজ্ঞানিক বন্ধন-
খোলামুখ থেকে বেরিয়ে আসা জন্মান্ধ জাতকের ত্রাহিমাং চিৎকার;
কর্ণকুহরে জমায়িত অহংকারী আবর্জনার স্তুপ সেই আকুতি তোমাদের শুনতে দেয় না,
এই বধিরতা বিনষ্ট করেছে তোমাদের মানসিকতা –
নিজের কথা ভাবতে গিয়ে ভুলেছো জীবনের মূল্যবোধ,
নিজেকে সুখি করতে গিয়ে বিস্মৃতির অন্ধকারে ডুবে গেছে মূল্যায়নের আলোক সূর্য।সকলের সমস্ত দুরাচার সহ্য করতে গিয়ে ধরিত্রী এখন সহ্যগুণ হারিয়েছে,
অত্যাচার, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আবারো একবার মেরুদণ্ড সোজা করেছে;
তখন তোমাদের মনে উদ্রেক হচ্ছে জীবন বাঁচাতে শশব্যস্ত-
কি করে বাঁচাবে অমূল্য প্রাণ প্রকৃতির রোষানল হোতে!
হয়তো রাস্তার ধারে স্তুপীকৃত হবে বহুমূল্য সোনার এই দেহ,
ভক্ষ্য হবে মাংসাশী প্রাণীর,
সময় চক্র এখন তোমার বিপরীতে মৃত্যু ভয়ে
তটস্থ আজ সর্বশ্রেষ্ঠ বুদ্ধিমান জীব!
এখনো সময় আছে নিজেকে পৃথিবীর সাথে মিশিয়ে প্রকৃতিতে লীন হও
প্রকৃতি তার সমস্ত ভালো বাসা উজাড় করে দেবে তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ প্রিয় জীব মানুষের উপর। -
কবিতা- পথের আকাঙ্খা
পথের আকাঙ্খা
-সত্য দেব পতিআজো মনে পড়ে সেদিনের সন্ধ্যা,
মনের আকাশে ছড়ানো বিপ্লবের চন্দ্রালোক,
আপন মনে হেঁটেচলা লাল মেঠোপথ,
অদূরে পিচগলা রাস্তায় ঝলমলে বৈদ্যূতিক বাতি,
মেঠো পথের প্রাণপণ চেষ্টা সেই পথে মিশে যাবার।
অনাহুতের মতো সরীসৃপী চালে হেঁটে চলে দুরাশা
হয়তো একদিন আসবে সময়,
বুকের মধ্যে প্রবাহিত উষ্ণ বাতাস জ্বালিয়ে দিচ্ছে সমস্ত আশা,
সেই পথে হেঁটে চলা পথিকের কাছে রেখেছে নির্বাক প্রশ্ন!
শুনতে না চাওয়া উত্তর ছিল একাধিক।হঠাৎ করে ঈশানী মেঘের বজ্রনিনাদ শুনে ভীতসন্ত্রস্ত মেঠোপথ,
হয়তো বৃষ্টি ভেজা শরীর থেকে সমস্ত মাটি ধুয়ে গিয়ে অস্তিসার হবে নরম মেঠোপথ।
এবড়ো খেবড়ো অমসৃণ দেহ থেকে হারিয়ে যাবে স্বপ্ন দেখা হৃদয়,
দেহের অক্ষমতা বাধ্য করবে হাঁটা!
বুকের নিঃশ্বাসে বাড়বে গভীর তঞ্চকতার অবিশ্বাস ।সন্ধ্যা নামার আগেই নামলো কালবৈশাখী,
প্রবল বর্ষণে ধুয়ে মুছে দিল পরিপাটি সাজ ,
আর কখনও মিশতে পারবেনা পিচগলা রাস্তায়।
মায়াবী চাঁদের জোছনা ভাঙা ছোপ ছোপ দাগ পথের বুকে…
হৃদয়ের গভীরে নিস্তেজ স্বপ্ন বিলাস ভেঙে গেছে কালবৈশাখীর তান্ডবে।
অসীম মিলন স্পৃহা এখন রাতের নিস্তব্ধতা!! -
কবিতা- মধুমাসে বসে আছি আমি নিরালায়
মধুমাসে বসে আছি আমি নিরালায়
– সত্যদেব পতিসব জানি এটা বলতেই ভালো’ শুনতে একটু ছেঁকা লাগে,
সবকিছুই যদি জানা হয়ে যায় বুঝে যাবো সব আগেভাগে…
কোনটা আসল বাসন্তী রং কিইবা তার যাদু?
শিমুলের রং বেশি গাঢ়’ নাকি শুধু পলাশের রঙে কাবু!
কৃষ্ণ চুড়া লাল রং নিয়ে পাগড়ি সাজিয়ে রাখে,
কুড়চি বকুল ধবধবে সাদা, মুখ উচিয়ে দেখে-
শালবনে ঝরে লাল শাল্মলী পাপড়ি ঝরানো বেলা;
মহুয়া মাতাল গন্ধ ছড়ায় চৈতি ভোরের মেলা,
শত মধুকর করে মধু আহরণ পলাশ শিমুল শাখে…
গোবর পোকারা ছোটো খালেবিলে মুখ উঁচিয়ে দেখে!
এইতো জীবন এই বসন্ত এটাই তো মধুমাস-
ফোটে কতো ফুল অজানা নামের তারা করে ভালোবাসা চাষ। -
কবিতা- আজ এ বসন্তে…
আজ এ বসন্তে…
-নীল ধ্রুবতারা (সত্য দেব পতি)আমি বসন্ত বিলাপ শুনছি রাতের আকাশে,
একলা চাঁদ রাত জেগে আকাশে ভাসছে
রূপালী জোছনার আলিঙ্গনে।
পুবালী বাতাসে মাদুকরি করছে পশ্চিমের ধ্রুব;
দিনের আলোর ঝলকানিতে দেখেছি পলাশের রঙিন প্লাবন।
তোমার আসার পথে দৃষ্টি বিছিয়েছি সেই ঊষাকালে,
শিশির সিক্ত নগ্ন পায়ের চিহ্ন মিশে আসে বিকেলের পড়ন্ত উষ্ণ বেলাভূমিতে;
কথা ছিল তুমি আসছো ঠিক বসন্ত বিহারে-
তাইতো আজও আমি অপেক্ষা করছি নিশুতি নিঝুম রাতের যাপনে একলা মনে। -
কবিতা- আকাশের নিঃসঙ্গতা
আকাশের নিঃসঙ্গতা
– সত্য দেব পতিআকাশ বলে একলা আমি,
একবুক আশা নিয়ে নিস্তব্ধ বিরলে বসে আছি,হাজার মেঘ আর নক্ষত্রের মেলা বসে রোজ-
তবুও মন বড়ো নিঃসঙ্গ।দিনের দিবাকর আলো দেয় পৃথিবীতে,
আমার বুকে প্রবাহিত বাতাসে প্রাণবন্ত থাকে জগৎ,
তবুও আমি একলা নিতান্তই!
কেউ আমার সাথে কথা বলে না তাই আমি মূক বধির।যখন পূর্ণিমার চাঁদ তার স্নিগ্ধতাময় জোছনা দিয়ে সমস্ত কালিমা মোছায়,
তখনও আমি না চাওয়া মেঘের সাথে মেতে থাকি;
তবুও মনে হয় আমি নীরব-
আমার নীচের গাছে যখন পাখিরা করে কলরব,
তখনও আমি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।বয়ে চলা নদীর বুকে যখন ভাটিয়ালী তানে নৌকার দাড় বায় প্রেমিক মাঝি,
আমি শুধু তার প্রতিফলন দেখি,
কথা তো হয় না-
তাই আমি নিঃসঙ্গ বিরহী আকাশ । -
অণু কবিতা- অনুভবের কথা
অনুভবের কথা
-সত্য দেব পতিপদ্ম পাতায় জলের ফোঁটা মুক্তো হয়ে ভাসে,
তোমার লেখা কবিতা গুলো প্রাণের মতো হাসে;
কখনও হয় ভরা পুকুর শ্রাবন ডাকে মনে-
আবার কখন পলাশ শিমুল ডাক দেয় ফাগুনে…
কখন দেখি দাঁত ঠকঠক পৌষালী বয় পুবে,
জৈষ্ঠ্য দহন অগ্নীগড়ে আগুন লাগে ভবে!
কখন আবার স্বচ্ছ শরৎ কাশের ভেলা বায়-
নীল নীলীমায় আসে হেমন্ত শিশির ভেজা পায়। -
কবিতা- কেন?
কেন ?
– সত্যদেব পতিহাজার প্রশ্ন মনের জানলা খুলে উঁকি দেয়,সেদিন থেকে….
তোমার সৌন্দর্য্য আমায় পাগল করেছে যখন প্রথম দেখলাম আমার মনের ক্যানভাসে ,
কিন্তু তুমি কি ভালো বেসেছ আমায় কনোদিন ও তোমার স্বারস্বত্য দিয়ে?
জানি না!
কতোবার জানতে চেয়েছি,আর তুমি এড়িয়ে গেছো বার বার সেই শৈশব থেকেই ;
উত্তর আজও আমার কাছে দক্ষিণ হয়েই রইলো।
তোমার পাগল করা রুপ,মাতাল করা হাসি, হরিনীর মতো কাজল নয়ন,বর্ষার মেঘের মতো কেশরাশী-
আজও আমায় উড়িয়ে নিয়ে যায়
পাহাড় থেকে সাগরে।
বুকের মধ্যে কালবৈশাখীর তান্ডব হয়,
আমার মনের সাজানো বাগানের সুন্দরতা ফ্যাকাসে হয় একলহমায়-
কিন্তু বলতে পারিনি তোমাকে কখনো,
তোমার প্রেমের স্বপ্নীল স্মৃতি আমার মনের খাতায় খোদিত।
সেখানে শুধুই তুমি, কবিতা –
আজ জীবন সায়াহ্নে রাতের আগমনি সুর ধ্বনিত হয়,আমার ছেঁড়া তারের মুর্ছনায়…
নদীর জলের মতো মোহনায় এসে শান্ত মন…
তবুও মনে হয় একবার যদি বলতে পারতাম, আজো ভালো বাসি ঠিক আগের মতোই. .
সাহস হয়না!
যদি আজও উওর না পাই তো-
কিসের উন্মাদনা ,কেন এই অভিপ্রায়?
আজও অজানা…
কবিতা তুমি কি ভালো বাসো তোমার অন্তরের ভালো বাসা দিয়ে? -
কবিতা- সৃষ্টি
সৃষ্টি
– সত্য দেব পতিঅশান্ত ঝর্ণা যখন পাহাড়ের গায়ে, আগুন লাগিয়ে সমভুমিকে আঘাত করে –
শান্ত মেদিনীর বুকে তখন শুরু হয় ভালোবাসার অনাবিল স্রোত;
পাহাড়ের ক্রন্দন রোল
ঢাকা পড়ে যায়,
ভূমিগত হরিৎক্ষেত্রের সবুজায়নে।
দুই তীরে গড়ে জীবনের ইতিহাস,
কতো গ্রাম প্রান্তর শহর নগর…
প্রাণোচ্ছল কোলাহল নদীর পাড়
নগরায়ন আর শিল্প ভাবনা আসে
ঐ নদীর প্রবাহ ধারা দেখে,
নদী ভুলে যায় পাহাড় কাটার কষ্ট!
সামনের পথে এগিয়ে চলে মহাসাগরের মিলন পিপাসা নিয়ে-
এক বুক আশা নিয়ে নিস্তব্ধ হয়ে সমতলে
সৃষ্টি করে নবীন সভ্যতা। -
কবিতা- নীল পাখিটা একদিন
নীল পাখিটা একদিন
– সত্যদেব পতিদারুন লাগছে তোমায় যেন নীলআকাশের নীল পরী…
নীলীমার সাথে নবীন শশীর উদয় বলেই ভ্রম করি,
এলো চুলে দুর আকাশে হাসছে উমা কাটিয়ে ভয়-
হাতের কাঁকন বাজছে কিনি দু’হাতে শোভে শঙ্খ বলয়;
বাজে তারা কিনি রবে করছে যেন কিঙ্করি,
দরাজ কন্ঠে গাইছে গজল তান ধরেছে আশাবরী-
মুক্তো ঝরা হাসি যেন ডাকছে ময়ূর রব করি
ঝরছে মুক্তো ঠোঁটের ফাঁকে ঝরছে সোনার ফুলঝুরি,
নির্বাক ঐ চিত্র কলা লাগছে সখার সহচরী।