-
কবিতা- ই বছর দূগ্গা পূজা
ই বছর দূগ্গা পূজা
– সত্য দেব পতিবামুন গাঁয়ের আটচালাতে মাইয়া ছেইলার ভীড় লাগ্যেছে বেদম!
বড় বড় ঢোল বাইজছে মাদৈল ধমসা কম,
শুনছি হোথায় বড় পূজা কতো লুকের মেলা-
লৈতন শাড়ি পৈরছে মেলাই চৈলছে সিঁন্দুর খেলা!
হাড়াম হামর বাগাল রাখাল মাথায় গামছা বাঁধা,
গলাঘরে বড় পরব উকেও লাগে চাঁদা!
মাস পুহালেই তিনশের চাল ঘরেক পাছেই দেই-
পরব পাল্যে পিঠা পানা আর মুঢ়ি খৈ…
হাঢ়াম গড়ম চাঁদাও দিল বামড়ে বঙার হাতে,
ঠাউকরাইনটা ফেসাদ কৈরছে গাঁয়ের ছ্যালার সাথে-
নাই বুঝি নাই জানি কিসে কিটা হৈল?
হামার মরদ কাজের থাইকে ঘরকে ঘুইরে আ্যলো…
মাসের শেষে তিন শের চাল আর তো দিবেক লাই,
ছাঁচের কোলে ডাঁড়ায় হাড়াম হামার পানে চায়!
ভরা ভাদর এই গেল আশিন হৈল শুরু…
ধান লাই চাল লাই গাছে উইঠছে গরু,
গলা ঘরে যাঁইয়ে শুনি কিসে কি টা হৈল;
গুলূন গুলা ঘরে বৈসাঁয় গাইল মন্দ দিল!
নাই বুইঝে নাই শুইনে আকুল হৈল বুক-
ছ্যেলা প্যেলায় কিটা খাবেক শুখাঁয় আছে মুখ।
গলার গাঁয়ে পুজার হিড়িক কুকুরে না খায় ভাত!
হামার হাঁড়ি উগ্যাড়ে তুলা ভোখে কৈরল্যো কাত;
হাজার হাজার জ্বলছে আলো বাবু পাড়ার বাঁধে!
হামার ঘরের আঁধার কুনে ভোকে ছ্যেলা কাঁদে-
দুগ্গা নকি সবার ঠাকুর বাবুর মুখের কথা…
পুজার চাঁদা দিতেই হবেক থাকতে হৈল্যে হেথা,
পেটের মাড়ি দিলাম তবু পুজার পেসাদ লাই;
তোদের দুগ্গা তোদের আছে হামদের কি তাই।
তোদের দুগ্গা খাচ্ছে কত মন্ডা মিঠাই ফল,
হামার দুগ্গা ভুখা থাকে খাঁয়ে বাঁধের জল!
তাহলে বল তোদের দুগ্গা কেমনে আমার মা?
হামার দুগ্গা উপাস করেই ঘুরছে খালি গা। -
কবিতা- এবার জেগে ওঠো
এবার জেগে ওঠো
-সত্যদেব পতিলেখার শব্দগুলো আজ দরজা বন্ধ করে দেওয়া শুরু করে
বিষাদময় নিঝুম শহর থেকে গ্রাম
হায়নার বিষাক্ত নখরে ফালা ফালা করছে শৈশব থেকে কৈশোর মন দেহ!
প্রতিবাদী মনে ভয়াল মুর্তিমান ছায়া
বিশ্বাসের দড়িতে স্বার্থপর আগুন;
যৌবনের মৌবন পুড়ে ছাই হয়
সকালের কাগজে
অসহিষ্ণুতা পৌরহিত্য করে সমাজের যজ্ঞ কুন্ডে
মেরুদন্ড আজ সর্পিল হয়ে থাকে
রাজনীতির অলিখিত চাপে
তবুও ঘুরে দাঁড়ানো প্রচেষ্টা করে
অপামরে জনস্রোত
ঘুম ভাঙে না কখনো গভীরে থাকা মাছের
কারণ তাদের চোখ খোলা সবসময়ই। -
কবিতা- মনের তৃষা…
মনের তৃষা…
-সত্যদেব পতিহঠাৎ করে সকালের শরৎ হাওয়াতে হেমন্তের পরিপাটি,
তুমি বসেছিলে খোলা জানালায় বেখেয়ালে…
আমার বারান্দার রৌদ্রছায়ে টাঙানো তোতোপাখি বেসুরো গানে মত্ত,
তোমার এলো চুলে ঝরে পড়ছে হেমন্ত শিশির মুক্তোর মতো তোমার কপোলে–
বিনিদ্র নিশা অবসানে ক্লান্ত সূখপাখি…
আমার হৃদয় মন্দিরে তোমার প্রেমের হোমাগ্নী,
প্রজ্বলিত প্রদীপের আলোকে তুমি ঊজ্বল জ্যোতিষ্কের ন্যায় দীপ্তমান..
দুর হতে দেখছি তোমার সাখ্য প্রেমের যজ্ঞাহুতি আমার অনিমেষ নয়নে…
একবার তোমার রূপবহ্নি আমাকে ঝলসে দিতে চাইলো তার বহ্নিমান শিখা দিয়ে পতঙ্গের মতো,
সকালের সূর্য্য তখনও সোনা ঝরাচ্ছিল তোমার আমার আননে…
চোখ পড়তেই সলাজে পালিয়ে যেতে চাইলে,
পারোনি যেতে আমার আকর্ষনের এতটাই তীব্রতা–
কথা হলো মননে, চিন্তায়,নয়নে…
তারপর থেকে সেই যে কাছে আসা-
রইলো না কোনো সময় জ্ঞান;
অবাদ বিচরণে লিপ্ত দুজনেই উভয়ের হৃদয় প্রকোষ্ঠে,
হয়তো এরই নাম ভালোবাসা!
নাকি সময় কাটানোর সহজ উপায় মাত্র….
নয়তো এটাই নিছক মনের তৃষা? -
কবিতা- কে কার নিয়তি?
কে কার নিয়তি?
-সত্যদেব পতিআষাঢ়ী বিকেলের পুবালী বাতাস যখন ঈশানের বহে;
পুব আকাশে ওঠে গর্ভবতী মেঘ,
বাতাসের শনশনী থামলেই শুরু
প্রসব যন্ত্রণা-
দিন রাতের মিলন ক্ষেত্রে জন্মদেয় এক অভিনব ক্ষেত্রজ সন্তান!
যার নাম রাখে বৃষ্টি।তার জন্মের সময় মাতৃত্বের স্বাদ পায় নিকস কালো মেঘ;
পিতৃস্বরূপ তপনের উষ্ণতায় জলীয় পৌরুষ, স্হাপিত করে সে যখন অসীমের ওপারে-
তখনই জন্ম নেয় তাদের ক্ষেত্রজ সন্তান।শৈশবে দেখা হয়না তার জন্মদাতার সাথে,
কতো পাথর নুড়ি বইতে হয় কোনো খরতোয়ার বুকচিরে!
যখন সে পুর্ণ যৌবনা সাগরের বুকে বিজনে বিলাস করে-
তখন সময় হয় সুর্য স্নানের;
আবার ঈশানের যাত্রী হয়ে যেতে হয় অমোঘের পথে। -
কবিতা- নিশি তৃষ্ণা
নিশি তৃষ্ণা
– সত্য দেব পতিমনের আকাশে একটাই চাঁদ-
রাতের কুহেলীতে প্রণয় উল্লাস,
নিখিলে অখিলে আঁখ মিচলি…
তারকাদের ভিড়ে আকাশময় শুধুমাত্র একলা চাঁদের জোছনা ঝালর!
পুবালী বাতাস মনে শিহরণ তোলে;
বুকের সমুদ্র সৈকত থেকে উঠে আসে ভালোবাসার তুফান’
চঞ্চল বাউল বাতাসে ওড়ে বুকের আঁচল!
তৃষ্ণার্ত কাকের মতো একটা একটা নুড়ি ফেলে যাই ভালোবাসার কলসে-
তলানিতে জমা জল একদিন আসবে কলসের মুখে?
আঁজলা ভরে পান করবো পরম তৃপ্তি নিয়ে –
এ যেন তারই প্রতীক্ষা। -
কবিতা -জৈষ্ঠ্যের দখিণা বাতাস,
জৈষ্ঠ্যের দখিণা বাতাস,
-সত্য দেব পতিবিরামহীন বিরহী মনে বাসা বেঁধে আছে অতীত,
জৈষ্ঠ্যের রৌদ্র দহনে গলে পড়ছে বিশ্বাসের ঘৃত!
ক্লান্তিময় দুপুরে দুরের গাছে ঘুঘুর ডাক-
বুকের অলিন্দে প্রবাহিত হয় উষ্ণ বাতাস।ভালোবাসার অলিন্দে বন্ধ হয়ে আছে বৈজ্য রক্ত,
রুগ্ন সময়ে অলীক বাস্তবের জীর্ণকায় ছবি-
অশান্ত বুকে বাড়ে হাহাকার ওঠে সামুদ্রিক তুফান;
মরু ঝড়ে বিদ্ধস্ত নিভূ দীপের গাঢ় অন্ধকার!
হারিয়ে যায় সবকিছু অসীম দিগন্তে।হারিয়ে যাওয়া ইচ্ছেগুলো পথ খোঁজে রাতের আঁধারে;
ধ্রুপদ সঙ্গীতের মূর্ছনায় শেষ হয় তন্দ্রা –
চোখ মেলে দেখি পুবাকাশে এখনো ধ্রুবের অবস্থান,
ঐসব নক্ষত্র পথ দেখায় দরিয়া নাবিককে।রাতের প্রহরে আমি নিদ্রাহীন বাস্তব,
ভোরের আলো কখন ফুটবে সেই অপেক্ষায় বসে থাকি!
নীল আকাশের নিস্প্রভচাঁদের জোছনা মাখি অঘোরে-
জোছনা স্নানে সিক্ত হয়না দেহ মন
রাতের যাপনে লেখা থাকে জৈষ্ঠ্যের দখিণা বাতাসের ইতিকথা। -
কবিতা- সন্দিহান
সন্দিহান
– সত্য দেব পতিঋতুরাজের রক্তিম আকাশের ভাসমান মেঘ,
পুবালী বাতাস বহে ফুলের সুবাস-
মেঘের পরতের ভাঁজে নীল খামে রাখা ভালো বাসা ;
কোথাও পর্বত কোথায় প্রেমিক যুগল ছবি।আমার মনের ক্যানভাস এখন শুভ্রতাময়-
জলরঙের বসন্ত বাহার উঁকি দেয় সেখানে,
লেখার কলম কাঠিতে কালি এখন অন্তিম!
তবুও বলতে হয় সবকিছুই যেন আনকোরা।বিভ্রান্তি ময় সময়ে এলোমেলো ধুলিঝড়,
অন্ধকার আকাশে উড়ন্ত বিহগা সারি-
ওরা প্রাণপণে ফিরতে চাইছে আপন কুলায় ;
নীভু আলোর জ্যোতি দুর গগনে আবছা সেই ছবি।অশরীরি আত্মার মতো বিচরণ করে মন,
একটু ভালোবাসার পরশ পেতে চায় হৃদয়-
বিশ্বাসের বাগানে ফুলের মোতাতে অলির সমাগম;
কারো অপেক্ষায় নিমীলিত চোখে বিশ্বাসে বসে থাকে পাগল মন’
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত করছে শুধু তারই সন্দিহান। -
স্বপ্ন দেখা চোখ
স্বপ্ন দেখা চোখ
– সত্য দেব পতিতোমার পাগল করা হাসি,
কোথাও তালপাতার বাঁশী –
কেউ চাঁদের হাটে ঘোরে,
কেউ বা অন্ধকারে মরে!
তোমার আলতা রাঙা পা
কারো শিশির ভেজা গা|কেউ স্বপ্ন দেখে দিনে-
কেউ ভালোবাসা কিনে;
কারো স্বপ্নগুলো কালো,
তুমি কারো চোখের আলো।কোনো শীতল রাতের কথা,
কারো শুনেই বুকে ব্যথা!
তোমার উঠোনে কারো ছাপ-
প্রেমিক পায় বড়ো সন্তাপ।তোমার ভাবনা গুলো ভেজা’
কেউ সেই ভাবনার রাজা-
তোমার ভুবনডাঙার মাঠ,
খোলা হাওয়া দেয় কপাট!তোমার আলতো বাঁধা খোপা-
যেন কদম ফুলের থোকা;
তোমার আগুন রাঙা শাড়ি’
দুরে কেউ যায় গড়াগড়ি।তোমার প্রসাধানের সাজ,
কারো কারো বুক হয় দরাজ-
তোমার কাজল কালো আঁখি;
কোনো হৃদয়ে মারে উঁকি।তোমার খোলা চুলের মেঘ’
বাড়ায় বুক হাপরে বেগ-
তোমার শাড়ির আঁচল ভাঁজ;
বোঝায় ভালো বাসার আন্দাজ। -
কবিতা কেন বলোতো?
কেন বলোতো?
– সত্যদেব পতিসময় বলছে এক লহমা তাহাতে হও লীন…
বন্ধু বিহনে রহিব তেমনই,জল ছাড়া যেন মীন।
ঠিক এমনি করেই সুন্দর ভাবে তুমি বলেছিলে আমি ছাড়া তোমার নাকি বেঁচে থাকার কনো মানেই নেই ।
সেদিন ঐ কথা শোনার পর আমার মনের গহনে কোথাও যেন এক ফিনকি আলো দেখলাম,
জীবন খাতার সাদা পাতায় লেখা হলো ভালো বাসা।
বেশতো চলছিল দিব্ব্যি ছিলাম, কেন এলে তুমি এক সমুদ্র তুফানি ভালো বাসা নিয়ে?
আমার মনের বাগানে তোমার নিজের হাতে লাগানো মালতি আজ অনেক ফুল ফুটছে কিন্তু তার সুবাস নেই।
কেন জানো?
তুমি আসোনি বলে,
তোমায় নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল আমার মনের মধ্যে ।
যেদিন তুমি শেষবার এসেছিলে ঐ ষষ্টী বটের তলায়….
সেই বিকেলের পড়ন্ত রৌদ যখন তোমার মুখে পড়েছিল,
তখন তোমার রুপবন্হী ছিল বৈশাখের দুরন্ত দুপুর ।
সেই জলন্ত রুপেরছ্টা ঠিকরে পড়লো আমার হৃদয়ের মনিকোঠায়,আমি আপ্লুত হয়েছিলাম ,।
তোমার একটা কথায় সেদিন আমার সাজানো বাগানে এসেছিল দরন্ত কালবৈশাখী।
তোলপাড় হয়েছিল মহাসাগরীয় জলোচ্ছাসে।
আমার প্রেমের আঙিনায় সাধের সাজানো বাগান তছনছ করল আর নিভৃতে করলো নিঃশব্দ অশ্রুপাত।
তুমি বললে এবার ভুলে যেও।
পারলাম না তো …..
আজও সেই পথ চেয়ে বসে আছি তুমি আসবে বলেই।
আমার জীবন আকাশে এখনো দুর্যোগের ঘনঘটা,
তিল তিল করে প্রতি মুহুর্তে মৃত প্রায় হচ্ছে ভালো বাসা।
দাবানলের মতো লেলিহান শিখায় মনের আকাশে কালো ধোঁয়ার কুন্ডলী…
দিনের সুর্য যেন পড়ন্ত বিকেল,পুর্নিমার চাঁদের আলো জোনাকীর মতো টিমটিম করে।
জনকোলাহলে নিরবতা,দুচোখে প্রবহমান ঝর্না ধারা,
তবুও মন বলে একদিন ঠিক আসবে তুমি, তাই আজও আমি বসে রই বাতায়ন খুলে। -
কবিতা- তবে কি আবারও!
তবে কি আবারও!
– সত্য দেব পতিহয়তো আবার ফিরতে চাওয়ার বাসনা জাগ্রত মনের সোপানে,
নয়তো নিছক উদ্দিপনামনের সঙ্গোপনে –
নদীর জল হয়তো আবার নতুন করে শ্রাবণ ডাকছে অন্তরে!
ভালোবাসার নীল পাখিটার কাঁপন ধরলো পিঞ্জরে…
ভালবাসার মৃত্যু হবে গুম ঘরে কোনো চিলে কোঠায়;
প্রবীণ এসেছে দুয়ারে আবার ও কোনো অছিলায়।স্নিগ্ধতা যেন জৈষ্ঠ দহনে আধপোড়া,
স্মৃতির পরতে প্রেম রবে বাঁধা আলমোড়া-
সেদিন আকাশে চাঁদ ছড়াবে না জোছনা তার…
শুধু দেখা যাবে অস্তরাগের সমাহার।বুকভাঙা ঢেউ সারি তুলে যাবে অনাবিল,
তোমার আকাশে মেকি হাসি হবে চান্দ্রিল;
দুর আকাশে নীহারিকা হবে ঠিকানা-
মেঘের আড়ালে দেখো রবে কতো জালবোনা।