-
কবিতা- তোমাকে চিনতে পারিনা আর
তোমাকে চিনতে পারিনা আর
– সমীর হালদারআয়নার সামনে দাঁড়ালে
আজকাল নিজেকে চিনতে পারিনা আর,
চিনতে পারিনা তোমাকেও।
তাকিয়ে থাকি নির্নিমেষ
নির্বাক কোনো চলচ্চিত্রের চরিত্র হয়ে,
অসংখ্য চলমান বিন্দুর মধ্যে…
প্রতিটা মুহূর্তে ক্ষত-বিক্ষত হতে হতে
নিজেকে ভেঙে চলি অবিরত
অণু থেকে পরমাণুতে,
ভেঙে চলি আমার অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ।
প্রকাণ্ড কোনো বৃত্তের পরিধিতে লুকিয়ে থাকা
অসংখ্য সূক্ষ বিন্দুর মধ্যে,
নিজেকে খুঁজে চলি প্রতিনিয়ত,
খুঁজে চলি তোমাকেও।
আয়নার সামনে দাঁড়ালে
নিজেকে ঠিকমতো চিনতে পারিনা আর,
চিনতে পারিনা তোমাকেও। -
অণু কবিতা- অসমাপ্ত রূপকথা
অসমাপ্ত রূপকথা
-সমীর হালদারকোন কোন গল্প
অসমাপ্ত-ই থেকে যায়।
ছুঁয়ে থাকে শাপমুক্তির স্বপ্ন….
কান্না ভেজা রাতের চাদরে মুখ ঢাকে
চিরকালীন চিরন্তন কিছু ক্ষত।
যন্ত্রণা মুক্তির আকুতি মিনতি নিয়ে।
ঝিঙে ফুলের হলুদ গন্ধে
ভারি হয়ে ওঠে ভোরের বাতাস।
ঠিক তখনই জন্ম নেয়
অসমাপ্ত কিছু রূপকথা। -
অণু কবিতা- ভালোবাসা হারিয়েছে পথ
ভালবাসা হারিয়েছে পথ
– সমীর হালদারপুঞ্জীভূত মেঘের উলম্ব স্তূপে
আকাশ ঢেকেছে আজ।
এখনই নামবে আঁধার পৃথিবীর বুকে…
সীমাহীন বিরহের অন্তহীন আঁচলে ঢাকা
এ কেমন প্রেম রেখে গেলে তুমি!
ভালবাসা আজ হারিয়েছে পথ
গহন রাতের কোন অন্ধকারে,
বিষাদের কালো মেঘে ঢাকা
স্বপ্নের বেলাভূমি। -
কবিতা- স্বপ্ন দেখার রাত ছিল!
স্বপ্ন দেখার রাত ছিল!
– সমীর হালদারএকটা পাখি লেজ দুলিয়ে সা-রে-গা-মা গাইছিল,
গানের তালে মনের প্রাণে মালতীলতা দুলছিল।আকাশে বেশ নীল ছিল, সূর্য্যিমামা হাসছিল,
আকাশজোড়া নীল চাদরে রামধনু এক আঁকছিল।নীল আকাশের বুক চিরে দিকবলাকা উড়ছিল,
হারিয়ে যাওয়া পল্লীসুরে রাখাল বাঁশি বাজছিল।খোকন সোনা একলা দাবায় মাটির পুতুল গড়ছিল,
পথের বাঁকে গাছের শাখে বৌ কথা কও ডাকছিল।ক্লান্ত চাষি দিনের শেষে বাড়ির পথে ফিরছিল,
দূর সীমানায় নদীর তীরে সূর্য তখন ডুবছিল।হঠাৎ দেখি ঈশান কোনে মেঘের ভেলা ভাসছিল,
আকাশ তখন মেঘের সাথে প্রেমের কথা বলছিল।মনমাতানো করুন শুরে বাউল মাঝি হাঁকছিল,
মনকেমনের সন্ধ্যা বেলায় আকাশটা বেশ ডাকছিল।ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি এলো গাছের পাতা দুলছিল,
আঁধার রাতে প্রদীপ জ্বেলে একফালি চাঁদ উঠছিল।তখন আমার আনমনা মন মায়ের কথা ভাবছিল,
শান্ত চাঁদের স্নিগ্ধ আলোয় ফুলের মতো হাসছিল।আদর মাখা মিষ্টি গলায় আমার কাছে ডাকছিল,
একলা থাকার গভীর রাতে আমায় ভালোবাসছিল।ঠিক মনে নেই কি ছিল! হয়তো মনের ভুল ছিল,
এসব কিছুই হয়নি সেদিন স্বপ্ন দেখার রাত ছিল! -
কবিতা- সময়ের খোঁজে
সময়ের খোঁজে
-সমীর হালদারপ্রদীপের তলায় চাপা ছিল যত সুখ।
রাতের আঁধারে দুহাতে মেখেছি কালী,
অখণ্ড রাতের অবসরে
ভুল ফুলে অনেক গেঁথেছি মালা !
অনেক হয়েছে সর্বনাশের নিরবিচ্ছিন্ন অভিযান,
জীবনের অখণ্ড কালস্রোতে।
গোধূলি নেমেছে আজ ক্রমশ
ধূসর হতে থাকা এই পৃথিবীর বুকে।
তবে শুরু হোক এবার ঘরে ফেরা।
বৃষ্টিরাতের ক্লান্তিহীন ঝিঁঝিঁপোকাগুলো
বিদায় বেলার সাক্ষী হলো আজ।
মায়ামহলের বিষাদ সুরে ক্লান্তিহীন
হেঁটেছি আজ চির শান্তির পথে …
হেঁটেছি আজ সময়ের খোঁজে। -
কবিতা- প্রতীক্ষা
প্রতীক্ষা
– সমীর হালদারসেদিন নির্জন বসন্তের নিশীথে
ঘুমেরা তখন অজানা কোন দেশে।
হঠাৎ, ‘আপনি’ হয়ে ‘তুমি’
শুধু এক প্রগাঢ় দৃষ্টিপাত আর সবিশেষ মূর্ছা যাওয়া।
তারপর ……
উগ্র ঘ্রাণ..রূপের সুগন্ধ..রক্তের স্বাদ।
…ডাইনোসরের কামাতুর রাতের থাবা।
তারপর একরাশ লজ্জা আর এক অসহায় দৃষ্টিপাত।
আজ সে শ্রান্ত যুবতী
মাতৃত্বের অস্তিত্ব আজ তার দেহে,
কিন্তু নেই কোনও স্থায়ী ঠিকানা,
তাই অপেক্ষা আগামী দিনের।
প্রতীক্ষা আকাঙ্ক্ষিত সূর্যোদয়ের। -
কবিতা- তোমার জন্য
তোমার জন্য
– সমীর হালদারতোমার জন্য আঁকবো আকাশ
কিংবা বকের সারি,
তুমি চাইলে রামধনু রঙে
আমি রোদ্দুর হতে পারি।তোমার জন্য রাখবো তুলে
হাজার পদ্ম ফুল,
তুমি চাইলে দুই দুই চার হবে
ভেঙে যাবে সব ভুল।তোমার জন্য সন্ধ্যা প্রদীপ
মায়ের কুঁড়ে ঘরে,
তুমি চাইলেই জ্বলবে জোনাক
সূর্য্য ডোবার পরে।তোমার পাশে হাঁটতে রাজি
কাঁসাই নদীর তীরে,
তুমি চাইলেই হারিয়ে যাবো
হাজার তারার ভিড়ে! -
কবিতা- ছায়াসঙ্গী
ছায়াসঙ্গী
-সমীর হালদারযন্ত্রনার বুকে মাথা রেখে
অনেকটা পথ হেঁটে এসেছি।
অনেকটা বসন্ত…অনেক অভিমানে পুড়েছে
আমার একলা আকাশ;
মেঘলা দিনের বৃষ্টিভেজা পাখি।
আজ সময়ের বুকে মাথা রেখে হেঁটে চলেছি;
হেঁটে চলেছি মায়াহীন এক নতুন সভ্যতার পথে।
পিছনপানে তাকিয়ে দেখলাম
ঠিক আমার মতোই এক অবয়ব!
নিস্প্রাণ নির্বাক তাকিয়ে রইলাম।
জানতে চাইলাম, কে তুমি শব্দহীন এই জোছনায়?
মায়াহীন অন্য সভ্যতার পথে আমার সঙ্গী হয়েছ?
অখন্ড নীরবতায় উত্তর খুঁজে পেলাম।
বুঝলাম, মায়াহীন এই নতুন সভ্যতার পথে
আমার সঙ্গে আমি ছাড়া
আর কেউ নেই….কিছুই নেই। -
কবিতা- প্রাণ খুলে হাসনা
প্রাণ খুলে হাসনা
– সমীর হালদারবই-খাতা রাখ আজ,
কবিতায় নেই কাজ,
পাখি হয়ে মেলে দেনা পাখনা।মেঘ ছোটে আকাশে,
সুর ওঠে বাতাসে,
মজাটুকু আজ তোরা চাসনা?তবে কেন দূরে আজ?
ভুলে যানা সব লাজ,
কত ফুল ফুটে গাছে দ্যাখনা।শুভ কাজে মন দে,
বাকি সব বাদ দে,
দুঃখটা বুকে চেপে রাখনা।আজ আছি কাল নেই,
পিছু ফিরে লাভ নেই,
এক মুঠো খুশি আজ মাখনা।রাগারাগি আর নয়,
মন আর ভার নয়,
প্রাণ খুলে আজ শুধু হাসনা।আজ শুধু প্রাণ খুলে হাসনা।
-
কবিতা- অনুভব
অনুভব
-সমীর হালদারকে তুমি পিছন ডাকতে চাইছো?
তুমি তো আমার প্রথম প্রেম নীলাঞ্জনা নও
যেখানে আমার ভালোবাসা প্রথম প্রশয় খুঁজে পেয়েছিলো,
যার নির্বাক নীরবতার ব্যাখ্যা
আমি আজও খুঁজে পাইনি…খুঁজে পাইনি এক সমুদ্র নিস্তব্ধতার ব্যাখ্যা। তবে কি তুমি পাহাড়ের গা বেয়ে মেঘের মতো নেমে আসা
অনন্যসুলভ অন্য কোনো নীলাঞ্জনা?
তবে আমাকে ক্ষমা করো।
নিয়ন্ত্রিত জীবনের যাঁতাকলে
নিজেকে উল্লেখযোগ্যভাবে বদলে নিয়েছি,
আমাকে স্বার্থপর ভাবতেই পারো
স্বপ্ন-রঙিন কল্পনার সমুদ্রে ডুবতে চাইনা আর
নিগূঢ় ভালোবাসার ঘেরাটোপে নিজেকে বন্দি রাখতে চাইনা,
চাই না দুরূহ সম্পর্কের মায়াজালে নিজেকে জড়াতে,
নীলাঞ্জনা তুমি বরং অন্য রাতে স্বপ্ন হয়ে এসো।
সেখানে তোমার প্রশস্ত নগ্ন বুকে মাথা রেখে
সময় পেলে খুঁজে নেবো আমার মুক্তির পথ,
আমার নতুন পৃথিবী…
ক্ষনিকের জন্য খুঁজে নেবো আমার নিজের স্বর্গ।