• কবিতা

    কবিতা- চাই একটু বিশ্রাম

    চাই একটু বিশ্রাম
    -সীমা চক্রবর্তী

     

     

    জানিনা আর কতদূর…
    আর কতটা হাঁটলে পাবো পথের ঠিকানা,
    হয়তো আনমনে সঠিক দিশা ভুলে
    অথবা বেভুলে হারিয়ে ফেলেছি সেই নদী মোহনা।
    এই হাঁটার শেষ আছে কি…?
    ক্লান্ত দুচোখ জুড়ে কত শতাব্দীর ঘুম জমে আছে,
    এখন প্রয়োজন একটু বিশ্রাম
    নিজেকে কত আর ঋণী করবো নিজেরই কাছে —
    সময়ের কাছে… অবিরাম…

    একদিন মৃত্যুর খেলা শেষ করে পৃথিবী সাজবে
    আকাশের গায়ে অভিমানী মেঘ মৃদু মন্দে বাজবে।
    হয়তো আমার দেখা হবে না আর
    দেখা পাবার কথাও না
    আমার জন্য আছে শুধু স্মৃতির মেঘমল্লার
    আর এক দিশাহীন পারাবার।
    নিরালায় একা রোদ্দুর উষ্ণ চুম্বন আঁকে চোখে
    আলগোছে জড়িয়ে নিবিড় হয় পরম সুখে,
    বোঝে কি আগ্নেয়গিরি জ্ব্বলে ওঠে অন্তরে?
    এই অসহ্য দহন অযথাই বাধার পাঁচিল গড়ে।
    ঘুমে ভেঙে আসা দু’চোখ খোঁজে মুহূর্তের আরাম
    পদতলে হাজার ক্ষত, এবার চাই একটু বিশ্রাম।

    সময়ের পাঁকে অসহায় জীবন
    রাখেনি হাঁটার হিসাব
    এভাবেই কি থেমে যাবে জীবনপঞ্জি….?
    প্রশ্নের পর প্রশ্ন জমেছে, নিরুদ্দেশে জবাব।
    আজ মনে হয় দীর্ঘ যুগ পেরিয়ে এসেও
    পাইনি কাঙ্ক্ষিত পথ, সুদূরপ্রসারী চলার বিরাম,
    জেনে বুঝে একটা ভুল অঙ্কে প্রাণপাত করেছি,
    পথের ঠিকানা তাই না পাওয়াই স্বাভাবিক
    একবার নয়, বারবার মরেছি…
    ভুলে ভরা জীবনে এখন চাই একটু বিশ্রাম।

  • কবিতা

    কবিতা- জীবন সাঁকো

    জীবন সাঁকো
    -সীমা চক্রবর্তী

     

     

    দুর্বল এক সাঁকোর প’রে,
    অনন্তকাল দাঁড়িয়ে আছি,
    পোক্ত জমি দূর – অস্ত,
    মৃত্যুর ঘ্রাণ কাছাকাছি।

    মাঝে মাঝেই দুলে ওঠে,
    নড়বড়ে এই সাঁকোর তল,
    পরলে জানি ডুবেই যাবো৷
    কাজল কালো অথৈ জল।

    আগু পিছু যেতে গেলেই,
    ছিঁড়বে সুতো কারণ ছাড়াই,
    অবুঝের মতো তবুও কেন,
    সাহারার খোঁজে হাত বাড়াই।

    ক্ষয় হচ্ছে সাঁকোর আয়ু,
    ক্ষীণ হচ্ছে মনের জোর,
    প্রতি মুহূর্তে আতঙ্কে বাঁচি,
    ছিঁড়লো বুঝি সাঁকোর ডোর।

  • কবিতা

    কবিতা- আমার নববর্ষ

    আমার নববর্ষ
    সীমা চক্রবর্তী

    যতবারই তুমি আমাকে ডেকেছো সময়ের ফাঁক ধরে,
    ততবারই আমি মৌন থেকেছি আমার বিজন ঘরে।
    পাওয়ার আমার যা ছিল বাকি
    সবেতেই দেখি রয়ে গেছে ফাঁকি,
    তবুও দেখো তোমার আকাশ রঙে রঙে আছে ভরে,
    দেয়াল জুড়ে তারই ছায়া আমার বিজন ঘরে।

    অবসরে তুমি নিজের মতো ঘোরো পাড়া বে- পাড়া,
    মুঠোর ফাঁকে ঝরুক সময়, নেই যে আমার তাড়া।
    এ মনে তোমার আঁকবো ছবি
    নই তো আমি তেমন কবি,
    এই আমি আজও আছি সেই আমি, পাও না তাই সারা
    তোমার বাঁশি হাঁপিয়ে মরুক, নেই যে আমার তাড়া।

    কখনো তুমি দূরে সরে গেছো, আবার এসেছো ফিরে,
    উদাস এ’নয়ন দেখেও দেখেনি, থেকেছে আপন নীড়ে।
    ক্লান্ত তুমি মানোনি তো হার
    গুটিগুটি পায়ে ফিরেছো আবার,
    কখনো আবার গিয়েছো মিশে হাজার রঙের ভীড়ে,
    অনুরাগী এ মন সব রং মুঝে থেকেছে আপন নীড়ে।

    এভাবেই তুমি বারবার আসো বারবার ফিরে যাও
    আশ্বাস রেখে আমার এ মন বারবার ছুঁতে চাও।
    যা গেছে তা যাক না চলে
    কি হবে মিথ্যে আক্ষেপে ঢলে,
    স্মৃতির জটে জড়িয়ে অতীত কি এমন সুখ পাও…
    কায়া বিহীন ছায়াকে কেন যে বারবার ছুঁতে চাও!

  • কবিতা

    কবিতা- এমন হলে মন্দ কি

    এমন হলে মন্দ কি
    – সীমা চক্রবর্তী

    আঁধার মাখা, রাতের নীড়ে
    জ্যোৎস্না নাচে আমায় ঘিরে।
    নতুন করে হয় যদি ফের
    দু’চোখ ভরা ঘুমের ঢের,
    নিঃশব্দে যদি স্বপ্ন ঢোকে
    প্লিজ তাকে দিওনা বকে।
    যদি এমনই হয় প্রতিটি দিন
    সবই বেঢপ… তুলনাহীন,
    মন্দ কি….. ?

    মন্দ কি, এই মনে যদি
    আঁকা থাকে নষ্ট নদী।
    কালো জলে নৌকা ভাঙা
    মেঘে ঢাকা সূর্য রাঙা,
    ভাসেনা জলে প্রতিচ্ছায়া
    নীরস নিরেট উধাও মায়া।
    অদৃশ্য কাঁটা গাঁথছে বুকে
    দুরমুশে নাহয় পেরেক ঠুকে,
    ঘাত – আঘাতে…..

    ঘাত-আঘাতে জীবন দাগে
    মরচে রঙের কলঙ্ক লাগে।
    বৃষ্টি তাকে দেয় না ধুয়ে
    কার্ণিশ ঘেঁষে গড়ায় চুয়ে।
    অদেখা চোখ, হিংসুটে মন
    এদের নিয়ে খুব জ্বালাতন।
    বেড়েই চলে দিন প্রতিদিন
    মুফ্তে চায় খয়রাতি ঋণ।
    খুব বেহায়া…..

    খুব বেহায়া আঁধার পাখি
    রাত্রি জাগা নিলাজ আঁখি।
    ঘাসের আগা শিশির ভেজা
    অশ্রু মেঘ জমছে পেঁজা।
    বন্ধ্যা রাত চাঁদ উদাসীন
    সম্পর্করা আজ হৃদয়হীন।
    আসা যাওয়ার এইযে খেলায়
    জুটলে সঙ্গী এই অবেলায়,
    মন্দ কি….?

  • কবিতা

    কবিতা- একটা সুদিনের অপেক্ষায়

    একটা সুদিনের অপেক্ষায়
    – সীমা চক্রবর্তী

     

     

    এই পৃথিবী বড় ব্যস্ত, ব্যস্ত এই দূর্লভ সময়
    ব্যস্ততা ভীষণই ছোঁয়াচে বোধহয়…..
    আমার চারপাশে হুহু করে সব ছুটছে অবিরত
    চাক-ভাঙা আক্রোশী মধুপের মতো ….
    আমি একা রয়ে গেছি
    খোলস বন্দী ব্যস্ত পৃথিবীর এক কোণায়,
    সু-দিনের আশায়
    একটা পর্ণমোচী অরণ্য…
    একটা রোদ্দুর ধোয়া উজ্জ্বল দিনের জন্য…

    স্বচ্ছ তোয়া আকাশের গায়ে ছড়িয়েছি
    কৌশিকী কানাড়া, বন্দিশের আলাপন….
    কৃষ্ণগহ্বরে ডুবিয়েছি ভালো থাকার মিথ্যে বিজ্ঞাপন,
    সদ্য স্নাত স্বর্গীয় পরিমলের মতো….
    অথচ মানুষ মগ্ন নিজের ব্যস্ততা নিয়ে,
    ব্যস্ত সময় যাচ্ছে চলে ফাঁকি দিয়ে….
    বিবর্ণ প্রজাপতির কাজ কি ফাল্গুনী হাওয়ায়,
    চেনা পথ এভাবেই জটিল হচ্ছে গোলকধাঁধায়…
    আর আমি এখনো একটা সু-দিনের অপেক্ষায়….

  • কবিতা

    কবিতা- এই শেষবার

    এই শেষবার
    -সীমা চক্রবর্তী

    একবার ডাক নামে শুধু ডেকেই দেখো….
    বিলাসিতার সব বৈভব ছেড়ে
    চলে আসবো অবলীলায়
    ঝড়ঝাপটা…খানাখন্দ বুনো কাঁটা পেরিয়ে পায়ে পায়ে….
    অতীতের ধানসিঁড়ি বেয়ে…
    নক্ষত্রের জল দুচোখে ভরে…
    তুমি এই হাত ধরে থেকো শক্ত করে।

    ইতিহাসের গন্ধ মাখা মিশরীয় প্রেমের উপকথায়
    আরক্ত মন ভিজিয়ে নেবো নীল নদের জলে
    তুমি শুধু ডাক দিও অবকাশের প্রতি পলে।
    সামাজিকতার জটিল সমীকরণে
    সুখ বুঝি আর গেলো না ধরা
    তবুও যতটুকু পেয়েছি আঁচলের গিঁটে বাঁধা
    বাকিটুকু না হয় থাকুক আনকোরা।

    শুধু একবার ছুঁয়ে দিয়ে দেখো….
    উত্তাল আবেগে ভাসবে হৃদয় ভাটিয়ালি সুরে
    জ্যোৎস্নার মশাল জ্বলবে দিগন্তের শরীর জুড়ে।
    তুমি দু’চোখের তৃষ্ণা মিটিয়ে নিও….
    হাসনুহানার নেশায় ভেজা ভেজা রাত
    ছুঁয়ে থাকার খুঁজবে অজুহাত।

    একবার শুধু ভালোবেসেই দেখো…..
    জীবনের এপার ওপার সব ভেঙে যাবে সুধা স্রোতে
    ভেসে যাবো তুমি আমি কোথা থেকে কোথা হতে….
    নিঃশেষে প্রেম লুটানোর একটা আধার চাই
    অনুভবে যেন তোমাকেই শত রূপে পাই…
    ভালোবাসার ফল্গুধারা বড় উদ্বুদ্ধ করে আমায়
    এতো প্রেম নিয়ে কি বেঁচে থাকা যায়?
    ভয় হয়…. যদি ঘটে পরমাদ
    প্রতিটি প্রতিশ্রুতি হয়ে যাবে বিস্বাদ।

    এই শেষবার……
    নাম ধরে ডেকে ছুঁয়ে দিও অকপটে
    দেখবে কেমন ভালোবাসার সুনামি আছড়ে পড়বে নিষিদ্ধ তটে
    যেখানে ইচ্ছেরা অস্তিত্ব খোঁজে নিয়মের নির্বন্ধ জটে।

  • কবিতা

    কবিতা- সমাজের কথকতা

    সমাজের কথকতা
    – সীমা চক্রবর্তী

     

     

    চেনা শহরটাও মাঝে মাঝে হয়ে যায় অচেনা,
    জীবনের পরিধিতে মন কুহকের চুপকথারা
    চোখ-ভুলানো হাসির আড়ালে লুকিয়ে রাখে কান্না।
    জীবন মানে একাঙ্ক নাটকের নিভৃত কথা,
    আলোর নিচে অন্ধকারে উল্টো নিয়মে অঙ্ক কষা
    যত হয় ভুল, তত আক্রোশ নেশা…

    দিন যাপনের পরিবৃত্তে নাছোড় ভাবনারা
    ভাঙছে আর গড়ছে,
    প্রতিটি মুহূর্তের সাথে লড়ছে…
    তীক্ষ্ম নখে আঁচড়াচ্ছে মন-উজানের সাতকাহন,
    ফসিল স্বপ্নের অপাংক্তেয় অধ্যায়ের রোজকার দহন…
    সময়ের যতই থাক নির্ভর পল্টন,
    দিনপঞ্জিতে শুধু একটা করে পাতা উল্টিয়ে যাবে,
    তবু পাল্টাতে পারবেনা আদিম মনস্ক সমাজের দেমাকি গঠন।

  • কবিতা

    কবিতা- অভিমানিনী

    অভিমানিনী
    -সীমা চক্রবর্তী

    ওপারের নরম ভোরাই আলো ক্রমশ গাঢ় হচ্ছিল,
    এপার থেকেই অনুভব করেছি আমি..
    মাঝখানে বন্ধ দরজা
    আর অসংখ্য পেরেকের সালতামামি।
    কানামাছি খেলতে খেলতে সে রঙ হয়েছে ফিকে,
    কে কতদিন পারে এভাবে থাকতে টিকে…

    অভিমানী হয়েছে মন
    তবুও বোধ করিনি প্রয়োজন,
    যদি খুলে ফেলি মাঝের আগল..
    যদি দু’চোখে ভরে নিই সে আলো
    তবে জনরব আঙুল তুলে প্রতিপন্ন করবে পাগল…
    বুঝতে চেয়ে ঝোলায় ভরেছি অভিমান,
    মুখ মুকুর ভেঙেছে খানখান…

    আগন্তুক হয়ে ভিড় করেছে অনাহুত ভাবনারা,
    তখনই শুনেছি প্রতীক্ষার কড়া নাড়া-
    শান্ত পিছল রূপালী আলোয়
    চাঁদ তার দলবল নিয়ে,
    নক্ষত্রপুঞ্জের রেশমী চাদর জড়িয়ে
    দাঁড়িয়ে ওপারে….
    আমি এপারে…
    মাঝখানে বন্ধ দরজা —
    মনের সাথে মনের ঝঞ্ঝাটময় তরজা–
    আর জমে ওঠা অভিমান,
    রোমন্থনের আটখান…
    ডায়েরির পাতায় নামে প্রতিশ্রুতির গ্লানি,
    ফিরে যেতে যেতে জ্যোৎস্নার রূপ সুধা
    মুছে হয় ম্লানই।

    এপারেও আছে কত কথা
    কত গল্প কাহিনি
    কলমের ডগায় তারা পরিপাটি রূপসী মোহিনী,
    জানিয়েছে কত ভুড়ি ভুড়ি ফরিয়াদ
    এবার তাদের মৃত্যু নির্ঘাত,
    আরও কিছু অভিমান জমলেই হবো অভিমানিনী….
    রুদ্ধ দরজাটা হবে অহল্যা —
    আর বিচ্ছিন্ন সময় হবে দ্বার রক্ষাকারিণী!

  • কবিতা

    কবিতা- সঙ্গীহীন

    সঙ্গীহীন
    – সীমা চক্রবর্তী

     

     

    ইচ্ছে ছিলো আরও কিছু পথ চলবো একসাথে
    আরও কিছু কথা’র হবে দেওয়া – নেওয়া,
    কেন থেমে যাবো মাঝপথে…
    কেন মৃত্যুর কাছে নতজানু হওয়া….!
    জানি..বড় দুর্গম এ পথ…জানিনা কতদূর আর
    বাঁকের মুখে নিথর তুমি, সইলো না ক্লান্তিভার।

    যে কাজল চোখে এতো আশ্বাস সেজেছিল
    কেন তাকে আজ করলে নীমিলিত,
    যে দেহে ছিলো এতো প্রাণ, আজ
    পথ-মাঝে অনাদরে অবহেলিত।
    যে হৃদয়ে ছিলো আস্ত পলাশের বন
    কন্ঠে ছিলো মৃত্যু জেতার শপথ
    সে হৃদয়ের স্বত্বে রক্তচোষা মাছি ভনভন।

    আজ তুমি নেই তাই একা পথে নেই উত্তাপ,
    মৃত্যুর কাছে ভিক্ষে চেয়ে
    তোমাকে ফেরানোর সাধ্য আমার নেই
    সফর সঙ্গী একজন…বেহুলা তো নই……
    সামনে অভেদ্য অন্ধকার চাপ চাপ।
    তবে জানি পথের শেষ পেয়ে যাবো ঠিকই
    শুধু এই নিঃসঙ্গতাকে বড় ভয়
    তোমার বিরহ আর কাহাতক সয়…
    পথের মতো এ ব্যথাও বুঝি শেষ হবার নয়…..

  • কবিতা

    কবিতা- তোমার-আমার

    তোমার-আমার
    – সীমা চক্রবর্তী

     

     

    তোমার জোনাক ভেজা হাসি,
    আমি মন – যমুনায় ভাসি।

    তোমার মদির কন্ঠ স্বরে,
    আমি পুড়ছি প্রবল জ্বরে।

    তোমার হংস মিথুন চালে,
    আমার রক্ত ছড়ায় গালে।

    তোমার শরীর উপচে সুখ,
    আমি শুষে নিতে উন্মুখ।

    তোমার বাউল নেশার ডাক,
    আমার নৌকা ভেসেই যাক।

    তোমার চোখে প্রেমের জল,
    আমার হৃদয় ছলাৎছল।

    তোমার নিপুণ অভিনয়,
    আমার সত্যি মনে হয়।

    তোমার প্রেম-নদী জেরবার,
    আমি মরছি ডুবে বারবার।

<p>You cannot copy content of this page</p>