-
কবিতা- “তুই”
তুই
– সোমা বৈদ্যতুই যে আমার মেঘলা আকাশ
বৃষ্টিভেজা দিন
মাঝে মাঝে জল যে ঝড়াস খুব
যে ঝড়ের বেগ।
তুই যে আমার প্রভাত নিশি
আলোয় ভরা দিন।
তোর প্রেমের পরশে আমায়
বাঁচায় নিশিদিন
তুই যে আমার দূর আকাশে
পূর্ণিমার ঐ চাঁদ।
পূর্ণিমার ঐ তারা হয়ে বাড়াস
দুটি হাত।
তুই যে আমার নদীর জলে কূল
হারা তরী।
তুই যে আমার উদাস বাউল সুখের
ঠিকানা।
তুই যে আমার শূন্য বুকে ভরসারও
বকুল।
তাই তো তোকে ছন্দে লিখি সবাই
যাতে চিনুক। -
কবিতা- আমার একলা প্রহর
আমার একলা প্রহর
– সোমা বৈদ্যবিষন্নতায় ঘেরা আমার একলা ঘরের কোণ।
অপলক আঁখিতে চেয়ে থাকি দূর সীমানায়,
নিশ্চুপ নিঃস্তব্ধতায় জড়ানো আমার নীরব প্রকৃতি।
লাল রক্তাভায় ছেয়ে যাচ্ছে উত্তপ্ত সূর্য কিরণ,
যেন মনে হচ্ছে প্রতি পলকে হৃদয়ের রক্তক্ষরণ।
যেন সময়ের কাঁটায় দাঁড়িয়ে বিদায়ের অপেক্ষায়,
পাখিরাও সাঁঝ বেলায় ফিরছে তাদের
ছোট নীড়ে কিচিরমিচির ডাকে।
টলমল চোখের জল একাকী জানালার পাশে দাঁড়িয়ে হতাশা,
দখিণা বাতাস সেথায় রঙহীন শব্দহীন
এলোমেলো ছন্দের বাঁধন ছাড়া।
এলোমেলো শব্দের বাঁধন,
কখন বা আগোছালো অক্ষর সাজায়
মনখাতার অনুচ্চারিত কোণায়। -
কবিতা- তবুও বলো ভালোবাসি
তবুও বলো ভালোবাসি
-সোমা বৈদ্য
কতই তো বলো “ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি,
এক আকাশ ভালোবাসি”।অথচ জানোই না ‘ভালোবাসা কাকে বলে
ভালোবাসার গভীরতা কেমন হয়?কতটুকু বা চিনেছো ভালোবাসাকে
কতটুকুই’বা বুঝেছো ভালোবাসাকেকখনো দেখেছো হাসির আড়ালে লুকিয়ে থাকা চোখের জলকে
কখনো দেখেছো এক বুক কষ্ট’যন্ত্রনা লালিত হচ্ছে
পাহাড় সমান তোমার আড়ালে।কখনো দেখেছো রাগের মাঝে বিন্দু বিন্দু জমে থাকা অভিমান
নাকি কখনো বুঝেছো অভিমানের আড়ালে লাকুনো ভালোবাসা কে।তুমি তো ভালোবাসার মাঝেই শরীর খোঁজো
শরীরের ভাজে ভাজে উষ্ম ছোঁয়াকে ঠোঁটের রেখাকেই ভালোবাসা বলো।
তুমি তো জানই না ভালোবাসা কতটা প্রবিত্র মনের হয়।
কত প্রবিত্রতা আছে তার মাঝে।কখনো দেখেছো নীরবতার মাঝে লুকিয়ে থাকা ‘অপেক্ষার প্রহর কাটে।তা দেখোনি।
তবুও বলো, “ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাস।
আমার চোখে নাকি মায়া টান হাজারো ভাষা খুঁজে পাও।
অথচ জানোই না,
ঐ সাদা কালো চোখে কতটা মায়া মমতা আছে ভালোবাসার কত ভাষা আছে তাতে!তুমি তো ভালোবাসার মাঝে সময়ের পরিবর্তন খোঁজো,সময় কাটানোর যন্ত্র বোঝ,যোগ্যতা খোঁজো, শরীরের উপড়ে রুপে ঢাকা সৌন্দর্য দেখো।
কখনো দেখেছো শরীর ভেদ করে হৃদয়ের ভালোবাসা। না দেখোনি কখনো।
ঝড় ওঠার আগে প্রকৃতি টা দেখেছো কখনো?
যেন চুপ চাপ নিঃতব্ধ কখন যে কাল বৈশাখী ঝড় উঠবে কেউ দেখেনি কখনো।ভালোবাসা টা ঠিক তেমনি কখনো যে মনের সাথে মনের মিলন ঘটে।কখন যে ভেঙে যায় অছিলায় কখন ঢেউ ওঠে মনের গভীরতায় ভেঙে যায় কুল কেউ তার খবর রাখোনি কখনো।
তবুও বলো,ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি।
ছোট্ট একটা শব্দ”ভালো আছি
কতবার’ই তো শুনেছো আমার মুখে।
কখনো দেখেছো, এই ভালো আছি শব্দের
আড়ালে টুকরো টুকরো স্বপ্ন গুলো কে
গুমরে গুমরে মরে যেতে?তবুও বলো “ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি,
আমৃত্যু কাল ভালোবাসি। -
কবিতা- হে বৈশাখ
হে বৈশাখ
-সোমা বৈদ্যহে বৈশাখ তোমার সৌন্দর্যে মেতে
রয়েছে প্রকৃতি নব সাজ সাজিয়েছে ধরণী।
আগমনী সুরে পাখিসব কুহুতানে
ছন্দ পাওয়া প্রাণ ছড়ানো
বাতাসের গা ঘেঁষে,হে বৈশাখ তোমার আগমনে প্রহর
মাপে আপামর।
তোমার হালকা বাতাসে ছুঁয়ে যাও
ঘর্মাক্ত জীবন,
ভিজিয়ে দাও একপশলা বৃষ্টিতে
তৃষ্ণার্ত মাটি গা।
মিটিয়ে নেওয়া ধরা বুকের উষ্ণাতা,হে বৈশাখ কোমল আলোয়
আলোকিত করো সকালের মিষ্টি
রোদেলা প্রহর।
ভরিয়ে দাও তোমার তৃপ্তিময়
শুভ্রতায়।
হে বৈশাখ তোমার বার্তা মানেই
ছন্দ তুলিতে আঁকা কাব্যের
আগমন,কোকিলের কুহুতান রাখালিয়া বাঁশি
মিষ্টি সুর।
বৈশাখ মানেই বাউলের একতারার
সুর বাঁধা মধুময় স্মৃতি মেলা,
শিমুল পলাশ কৃষ্ণচূড়া অশোকের
রঙিন বিহ্বল প্রজাপ্রতির রঙিন পাখনা।হে বৈশাখ তোমার আগমন মানেই
জোছনার আনাগোনা,
কলা পাতায় রঙিন আলপনা।
ঘূর্ণির ঝড়ের আড়ালে ঝরা পাতায়
পএ মোচন,
হে বৈশাখ,তুমি মানেই মিথ্যে
বিসর্জনে সত্যের জয় ।
বৈশাখ মানেই সাগর অরণ্যে দাঁড়িয়ে
মিলন বাঁশি সুরে কান পাতা। -
একটু ভালোবাসা দেবে
একটু ভালোবাসা দেবে
-সোমা বৈদ্যএই একটু ভালোবাসা দেবে আমায়?
আলো আঁধারে মিলে মিশে শুধু’ই
নীরবতা পালনে ব্যস্ত শহর।
এখন নির্জন পথে স্মৃতির সাথে পথ
চলছি একলা,
ভীষণ একাকী তোমাকে ছাড়া,
আমি তোমার নিঃস্তব্ধ নীরব শহরের
পথিক হতে চাই।এই একটু ভালোবাসা দেবে আমায়?
একটু যদি তোমায় পেতাম আলতো
করে ছুঁয়ে যেতাম।
তোমার একেকটা দীর্ঘশ্বাসের বকুল
হতাম,
তোমার বুকে অভিমানগুলো লিখে
দিতাম।
একটু যদি তোমায় পেতাম যত আছে
মনের ব্যাথা ভুলিয়ে দিতাম,এই একটু ভালোবাসা দেবে আমায়?
তোমার একলা ঘরের সঙ্গী হতাম।
ভোরে ফোটা ফুলগুলো’ও অপেক্ষারত
প্রথম সূর্যের আলোর ভ্রমরেরাও করে
আনাগোনা,
আমারো দিশাহীন সেই অপেক্ষার প্রহর
গোনা।
বড্ড এক ঘেয়ে বন্দী ঘরে জীবন কাটছে
আমার,
আমিও যে তোমায় ছাড়া ভীষণ একলা।
একটু ভালোবেসে দেখো বদলে নেবো
ঠিক তোমার মনের মতোই,এই একটু ভালোবাসা দেবে আমায়?
পুর্ণিমা রাতে আকাশের বুকে নিঃস্তব্ধ
চাঁদটা বড্ড একলা।
সেও বুঝি অপেক্ষা করছে অন্য কারো,
গোধুলি বেলার ঘরটা একলা নিজেকে
যেন হারিয়ে ফেলি তারই মাঝে।
সত্যি আমি তোমায় ছাড়া ভীষণ একলা,
একটু আমায় ছুঁয়ে দেখো যেন চাতক
পাখির প্রাণ ফিরে পাবে।
এই একটু ভালোবাসা দেবে আমায়।। -
দুর্নীতিতে ভরা পৃথিবী
দুর্নীতিতে ভরা পৃথিবী
-সোমা বৈদ্যদুর্নীতিতে ভরা এই পৃথিবী মাংসাশী
নরপশুর ছোবলে উদ্ধত কিশোরীর শরীর,
আজও পুরুষ শাষিত সমাজে নিরীহ নারী পদদলিত।
ভোরের মিষ্টি বাসন্তী হাওয়া সেথায় আজ’ও প্রেমহীন,
নববধূ সাঝে আজ আর সন্ধ্যাদীপ জ্বালে না কেউ।
কতদিন যে মুক্ত বাতাস বয় না ওঠে
না শুকতারা আকাশের বুকে,
নির্বিকার দু’টি চোখের আড়ালে ক্ষত-বিক্ষত জীর্ণ শরীর।
কর্ণ কুহূরে ভেসে আসে আজও পরাজয়ের ধ্বনি,
স্বাধীন মাতৃভূমিতে লেগেছে অসহায়
নির্দোষ মানুষের রক্তের ছাপ কলঙ্কিত হচ্ছে এই মাতৃভুমি।
লজ্জাই নতশির এই বুঝি পাপের
কু-ফল দিনরজনী কাটে নিদ্রাহীন স্বপ্নহীন,
শেষ কি হবে এই দুর্নীতি চাতুরীদের সংকট
পরাজিত কি হবে জীবনের গ্লানি। -
রাত জাগা প্রহরী
রাত জাগা প্রহরী
-সোমা বৈদ্যসোনা রবির মিষ্টি আলোয় পাহাড় বেয়ে
ঝর্ণা ঝরে সবুজ গ্রাম বন্দরে।
ভোরের ঐ দোয়েল ফিঙে উদাস সুরে গায় দূরে,মন ভেসে যায় দূর আকাশে,হালকা বাতাস যায় ছুঁয়ে।
আয় ছুটে আয় জানলা খুলে রাতের স্বপ্ন মুছে ফেলে,নিবিড় গভীর রাত্রি শেষে চল ছুটে যাই, তোর ঐ দেশে।
দরজা খুলে যখন দেখি ভোর হতে আর অনেক বাকি,রাত জাগার ঐ পাখির মত প্রহর গুনি
অবশেষে,সূর্য এবার উঠলো বুঝি।
সবুজ ঘাসে মুক্ত ঝরে,মাঝি পাল তুললো বুঝি,
ঐ শোনা যায় কুহুতানে মিষ্টি সুরে কোকিল
ডাকে বসন্তের ডালে।ঘরে আমার থাকে না মন,যায় ছুটে সে সুদূর দেশে,
হঠাৎ দেখি নীরব সবই তুমিও আছো বুঝি ঘুমিয়ে।
আমি শুধু একাই আছি,নীরব আঁধাররাতের প্রহরী হয়ে,
-
আমার প্রকৃতি
আমার প্রকৃতি
-সোমা বৈদ্যতুমি সবুজের বনে ঘেরা মাঠ ঘাট।
তুমি ঋতুতে ঋতুতে চিরসবুজ এই গ্রামান্তরে,
তোমার আবহাওয়ার সাথেই প্রতিটা ক্ষণ,আমার প্রকৃতির মন,
তুমি কবিদের অনুভূতি কবিতার পাঠের অংশ তুমি নিরালা নিঝ্ঝুম।
তুমি চাষিদের মুখের হাসি রাখালিয়ার প্রাণের বাঁশি,
তুমি ভোরের কুয়াশায় ফুটে ওঠা সূর্যের হাসি।
তুমি কোকিলের কণ্ঠের মধুর সুর ভরিয়ে তোলো এই প্রকৃতি।
তুমি গোধূলি বেলায় রামধনুর সাতটি রঙ কল্পনায় বিভোর।
তুমি প্রেমিকের স্বপ্নে দেখা আঁকা ছবি নদীর বুকে বয়ে চলা ভাটিয়ালী সুর।
তুমি জীবন গড়ে তোলার ভীত,তুমিই জীবন সমাপন
তুমিই স্বপ্নে সাজানো প্রেমের সাহিত্য,তুমি গল্পের সমাপ্ত। -
মিছে মায়া
মিছে মায়া
-সোমা বৈদ্যআর কিছুটা দিন মনের মাঝে রাখবে তারে ।
এই তো সবে হৃদয় মন্দিরে দিলে ঠাঁই,
কেমন করেই বা থাকবে তোমায় বিনে একা গহিনে।
একা করে চলে গেলে কেই বা ডাকবে এত আপন করে মায়া ভরে?
কেই বা সাজাবে তার পৃথিবীটাকে এমন সাতটি রঙে,
কেই বা বাসবে এত ভালো হাজার ব্যস্ত তার মাঝে ও।
তুমি যদি এখন থাকতে তার সাথে তাহলে দেখতে
আকাশের বুকেও হাজারো নক্ষত্রের আলো,
কেমন ভাবে চাঁদের চারপাশ টা আলো কিত করেছে।
তুমি যদি থাকতে তার পাশে তোমার বুকে মাথা রেখে সেই আলোই হাজার স্বপ্ন বুনতো সেই চোখে,
কত কল্পনার সাগরে ভেসে যেতো এক সাথে।
সেই দুু’ চোখে ঘুম আসে না ভাবাই শুধু তাকে,
সময়টা যে বড্ড অভিমানী তাই তার থেকে তোমায় দূরে রাখে।
একটি বার যদি হাতটা ধরে তাকে নিতে তোমার সাথে,
তাহলে দেখতে তার বুকে তোমার জন্য কত স্বপ্ন বাঁধা আছে শুধুই তোমায় রাঙাতে।
তুমি শুধু মিথ্যে বলো তাকে ছাড়া তোমার নাকি দিনটা যায় বড্ড কষ্টে।
যদি সত্যি হয় তবে কেন রাখ তাকে এত দূরে গঙ্গার ওপারে, -
অনুভবে তুমি
অনুভবে তুমি
-সোমা বৈদ্যবন্ধু,তোমার মিষ্টি হাসির ঝলকেতে পূর্ণ আমার হৃদয়
অনুরাগী অনুভবে কতো রাত ভোর হয়।
ভোরের কুয়াশায় পড়েছে শিশির বিন্দু ঘাসের গায়,
মনে হয়,যেন মণি মুক্তোর মালা প্রকৃতি পরেছে পায়,
প্রভাতী কোকিলেরা মধুকন্ঠে সুরে বলে যায়,প্রিয় আছে অন্তর জুড়ে’ই।
দু’হাতে ঢাকি লজ্জায় আঁখি আবেশের ঘোরে হৃদয় স্পন্দন বারে বারে বলে শুধু তার নাম,
যেদিকে তাকাই ভাসে তার জলছবি চোখের পাতাতে,
অভিমানী মন হয় চঞ্চল চোখে জল ছল ছল ব্যাকুল হয় একটু তাকে ছুঁতে।
অপেক্ষারও ক্লান্ত দিন কাটে রাত হয় একলা ঘরে জানি না এ অপেক্ষা শেষ হবে কবে,
তোমার কন্ঠের সুর ভেসে বেড়ায় আকাশে বাতাসে,আজ কাল তারাও যেন হাসে আমায় দেখে।
মনে হয় ছুটে যাই বুকের মাঝে,মাথাটা রেখে বলি এটাই যে আমার শেষ ঠিকানা কখনো সরিয়ে দিও না তুমি,
তোমারই হাতের আবির রঙে রঙীন হতে চায় এ মন।