অণু কবিতা- বীজমন্ত্র

বীজমন্ত্র– সুজিত চট্টোপাধ্যায়     ভালো থেকো..বললেই কী ভালো থাকা যায়?শর্ত আছে না,ভালো রাখার শর্ত; পুরণ করেছিস?না? হায়, তবে হলো না।বীজ বপন কর, তবে তো ফসল,ভালোবাসার, ভালোরাখার আনন্দ ফসল।নে, এইবারে ভালো থাকএইভাবে আজীবন,ভালো রাখাই ভালো থাকার বীজমন্ত্র ।।

অণু কবিতা- জীবন যাদু

জীবন যাদু– দেসা মিশ্র     আকাশের গায়ে কালো ধোঁয়ার মত হাত যেন ছুটে আসে ফুলেদের দিকে,নিঃশ্বাস বন্ধ হয়।আগুনের রঙ আরো হিংস্র হয়ে পুড়িয়ে দেয় স্বপ্ন, – আগামীর ভোর।ঘুম ভেঙে শিশু দেখে আঁচলহীন জীবন।ঘাসের রঙ পাল্টে লাল। জীবনের চেয়ে বড় মঞ্চ নেই… যাদুরমেলায় ঘুরছি হর রোজ।দিনের শুরুতে আমরা সবাই রাজা দিন শেষে নিখুঁত ভিক্ষুক।

অণু কবিতা- যখন প্রতিবাদ

যখন প্রতিবাদ– সুজিত চট্টোপাধ্যায়     কপালে চিতা জ্বলছেবুকে পাথরের স্তুপ।এখানে সূর্য আগুন ঝরায়সমুদ্র এসিড।রোবসপিয়র এখনো জীবিতগিলোটিন পরাস্ত মিথ্যা চাতুরীর কাছে।প্রতিটি গৃহের কোনায় কোনায়দানা বাঁধছে যুদ্ধ।ইতিহাস ফিরে ফিরে আসেএবার পদপিষ্ট হও রোবসপিয়র,কিষাণ দল হাঁটছে, চোয়াল শক্ত করেভয় বেড়ালকে দেখিও, ওরা বাঘের বাচ্চা।

অণু কবিতা- হেমন্তের পাখি

হেমন্তের পাখি– অতীশ দীপঙ্কর     বসে আছি উত্তরের বাতাস আসবে ঘরে;নিশীথ নির্জনে শত নক্ষত্র আঁধার এখানে;পুষ্করণী চুম্বন করে মরা পাতার শব্দ নিয়েনিস্তব্ধতার মাঝে ঘুঙুরের শব্দে পাতা ঝরে!উড়ে যায় রাতপাখি মহা শূন্যে খুব ভোরেশুধু দেখি অমানিশার অন্ধকার চারিদিকে!খুঁজে চলি হিমেল বাতাস এ প্রান্তরে বসে–আলোক বিন্দু হতাশার সমুদ্র হতে বহু দূরে!

অণু কবিতা- জানালা

জানালা– সুজিত চট্টোপাধ্যায়     মন খারাপ হলেইজানালা কাছে ডেকে নেয়। হৃদয়ের কপাট খুলে দিয়ে বলেএই দ্যাখ, চলমান সুখ। চোখ থেকে মনের দুরত্ব কত!মন থেকে মস্তিষ্কের? কবি জানে, তবুও কে জানে কেনকবিতায় ফাঁক থেকেই যায়। আসলে কবি নয়, জানালা সব জানেঅনেক দূর পর্যন্ত, যতদূর মন যায়, যতদূর।

অণু কবিতা- কুঁড়ি ফুটেছে

কুঁড়ি ফুটেছে– অমিতাভ সরকার     মন চেয়েছে তোমার আমার,চুপ থাকলে কি আর হবে।ফুল ফুটেছে গাছ সেজেছে,আর প্রেম কি আড়ালে রবে? চন্দ্র কিরণে হাসির জোয়ার,তারারা মিটিমিটি হাসে।প্রেমের তরী পারে ভিড়েছে,ভাসবে সোহাগ রসে। ভাটিয়ালি সুরে নদী বয়ে যায়,ছাওনি ঢাকা তরী।দুজনের প্রেমে আকাশ দুলছে,চাঁদের আলোয় হেরি।

অণু কবিতা- পথের শিশু

পথের শিশু– সোম     কাঁদছে কত পথের শিশুঝরছে চোখে জল।একমুঠো ভাত পাবার আশায়জীবনটা নাজেহাল। ডাস্টবিনেতে খাবার জোটেকুত্তার সাথে লোড়ে।শীতের রাতে ঘুম আসে নাছেঁড়া জামায় মুড়ে। স্বপ্ন ওদের চোখের পাতায়একমুঠো ভাত খাবার।দুঃখ চেপে হাসি মুখেদিন পেরিয়ে যাবার!

অণু কবিতা- স্নিগ্ধ

স্নিগ্ধ– রাজশ্রী রাহা চক্রবর্তী     সমুদ্র শান্ততবু উন্মাদ গভীর ভালবাসায়স্নিগ্ধ সমাহিততবুও উচ্ছাসে ভেঙে পড়েকিসের আশায়। গভীর অরণ্য যদিশান্ত থাকে নিভৃত স্বপনেঅনন্ত শান্তি তারজেগে ওঠে পাখির কুজনে। তেমনি শান্ত থাকঅস্ফুট কিছু আকুলতাকখনো তুমুল ঝড়েভাঙবেই তার নীরবতা।

অণু কবিতা- কাঁটাতার

কাঁটাতার -জিৎ সাহ      অযাচিত অনুপ্রবেশে ছিঁড়ে যায় তন মন,জানি না, কি কারন !বারে বারে বিচলিত হয় উতলা প্রায় মম হৃদয়।ছিঁড়ে যায় তানপুরা, হারিয়ে যায় সুর।ছিঁড়ে যায়ইতস্তত স্মৃতিরা সব উদ্ভ্রান্ত উল্কাপিন্ডের ন্যায় ধায়!–এই বুঝি পথ হারায়।হয়তো বা কৃষ্ণ গহ্বরে হায় !তবুওহাতড়ায় দুর্ভেদ্য আঁধারে জানি না কিসের অভিপ্রায়।

অণু কবিতা- হাস্যকর

হাস্যকর– শম্পা সাহা     বছরের চারটে দিন নারী শক্তির জাগরণআবাহন আত্মশুদ্ধি মন্ত্রোচ্চারণপরিণতি বিসর্জননোংরা পূঁতিগন্ধময় ক্লেদাক্ত জলেধুয়ে যায় রং গলে যায় মাটিখড়ের কাঠামো দাঁত বের করে হাসেআঙ্গুল তোলে সেই সমাজের দিকেযাদের সারা বছর ধর্ষণ নারী নির্যাতনভিড়ে অথবা ফাঁকা পেয়েশারীরিক বা মানসিক নিষ্পেষণতারপরে হাস্যকর এইবার্ষিকী শারদীয়া মাতৃ পূজন!