• কবিতা

    কবিতা-স্বপ্নময়ী- ২

    স্বপ্নময়ী– ২
    -তপন কুমার মাজি

     

    তুই আসবি বলে…
    প্রত্যাশার দোরে বসেছিল রাত
    চাতকের মতো,
    যে রাতের ভিতরে থাকে অন্য এক রাত
    যে রাতের বিছানায় ঘুমিয়ে থাকে অন্য এক স্বপ্ন,

    তুই আসবি বলে…
    জেগে ঘুমিয়ে ছিল অবদমন,
    যে মনের ভেতরে থাকে অন্য এক মন
    যে মনের কথা স্বপ্নময়ী ছাড়া জানে না কেউ,

    তুই আসবি বলে…
    টুকরো টুকরো ইচ্ছেগুলো ফুল ফুটিয়েছিল
    আমার মরা গাছে,
    ঠোঁটে ঠোঁট রেখে গন্ধ শুকেছিল আমার ঘুমন্ত জানালায়
    তোর চোখে চোখ রেখে হেসেছিল তারা
    আমার গোপন কথাদের নীল ইশারায়,

    কান্নাদের হাসতে দেখেছিলেম আমার স্বপ্নের চোখে
    যে স্বপ্নদের সাজিয়ে রেখেছিলেম আমি প্রাণের সাজিতে,
    চাঁদহীন শূন্য আকাশের মতো শুয়েছিল
    আমার স্বপ্নিল মনেরা
    তোর নিশিরাতের নির্জন বারান্দায়,

    তুই আসবি বলে…

  • কবিতা

    কবিতা- অভিলাষ

    অভিলাষ
    -তপন কুমার মাজি

     

    নিরুদ্দিষ্ট আকাশ হতে উড়ে এসে পাখিটা যখন বসে
    হৃদয়ের ডালে,
    সেই পল্লবিত পিঞ্জরে তখন সে খুঁজে পায় নিদেনপক্ষে
    একটি চিরস্থায়ী ঠিকানা।

    হয়তো দমকা হাওয়ায় উড়ে যেতে পারে সেই
    শান্তির নীড়
    ডাল মচকে ভেঙে পড়তে পারে আগামীর স্বপ্ন,
    নিভে যেতে পারে আশার আলো-
    তথাপি মন চাইলেও আকাশমুখো হতে পারে কী আর বন্দিনী,
    ভাল্লাগে কী ছন্নছাড়া জীবন ?
    ওড়া অপেক্ষা বাসা বাঁধার প্রয়োজনটাই তখন
    বেশি করে টোকা মারতে থাকে স্বপ্নের দরজায়,
    সবুজ মন অরণ্যের গহীনে বিলিয়ে দিয়ে খুঁজে নিতে চায়
    জীবনের মানে !

    প্রত্যাশার ঝুলিতে প্রার্থিত অভিলাষরূপে স্থিতি লাভ করে–
    অবাধ স্বাধীনতার বদলে সৃষ্টিশীলতার অনিঃশেষ
    প্রেষণা,
    দিশাহীন উচ্ছৃঙ্খল উড়ানের চাইতে আনন্দঘন
    প্রসব যন্ত্রণা !

  • কবিতা

    স্বপ্নময়ী

    স্বপ্নময়ী
    -তপন কুমার মাজি

     

    তোমার না চাওয়াদের মাঝেও ছিল অনেক চাওয়া
    তোমার না পাওয়াদের মাঝেও ছিল অনেক পাওয়া,
    যে চাওয়াগুলো জেনেছি তোমার কবিতার ছন্দে
    যে পাওয়াগুলো অনুভব করেছি তোমার কথার গন্ধে !
    অনেক চেষ্টা করেও পাইনি খুঁজে মিল কখনো
    তোমার গানে ও কবিতায়,
    তোমার চোখ ও মুখের ভাষায়–
    রাতের পর রাত জেগে শুধু হারিয়ে দিতে চেয়েছো আমায়
    অচেনা পথের অজানায়,
    তোমার নাটকীয় ভালোবাসায়–

    তোমার মুখ বলেছে এক কথা
    আর চোখ বলেছে অন্য কথা !

    তুমি আমার পরীক্ষা নিয়েছো ছেঁড়া খাতার ভাঙাগড়ায়
    আর আমাকে নিয়ে মনগড়া খেলেছো খামখেয়ালীপনায়,
    খেলেছো লুকোচুরি খেলেছো কানামাছি
    করেছো নজরবন্দি করেছো কারসাজি !
    প্রাণটাকে মেরেছো খেলাচ্ছলে
    মনটাকে মেড়েছো পায়ে পায়ে,

    জানি স্বপ্নময়ী,
    তুমি যা ভেবেছো তা সবই ছেলেমানুষিকতায়,
    যা করেছো তা সময় কাটানোরই আছিলায়…

  • কবিতা

    শান্ত উপত্যকা

    শান্ত উপত্যকা
    -তপন কুমার মাজি

     

    মাটির গভীরে বিস্তৃত যার শিকড়
    ডাল ভাঙলেই কী থমকে যায় তার গতি,
    স্তব্ধ হয়ে যায় স্পন্দন !
    প্রাণকে ছুঁয়েছে যে মূলত্রাণ
    ঝড় ছিঁড়ে দিতে পারে না কখনো মাটির সাথে তার দৃঢ় বন্ধনকে !

    ঘরের সমস্ত দরজা বন্ধ থাকলেও
    প্রেমের পসরা নিয়ে ভালোবাসার প্রবেশ ঘটে অবাধে
    হৃদয়ের অবারিত দ্বারে !

    নিষেধের নোঙরে যৌবনতরী বাঁধা থাকলেও
    জোয়ারের জলে ভাসতে ভাসতে খুঁজে নেয় সে জীবনমোহনার শান্ত উপত্যকা !

  • অণু কবিতা

    হিসেব

    হিসেব
    -তপন কুমার মাজি

     

    কর্ষিত হচ্ছে মানবমাটি লক্ষ লক্ষ বুলেটে,
    বারুদবীজ হচ্ছে‌ বোনা মগজের গিঁঠে গিঁঠে !

    আসছে টাকা হাওয়ায় ভেসে,
    উড়ছে টাকা হাওয়ায়,
    মাটি কামড়াচ্ছে ভুখা মানুষ
    চরমতম ক্ষিধায় !

    পাল্টে যাওয়ার সংবিধানে যাচ্ছে পাল্টে
    ক্ষমতার সীমারেখা,
    ঘুর্ণায়মান পৃথিবীর সাথে ঘুরে যাচ্ছে
    ইতিহাসেরও চাকা!

    ঘুরতে ঘুরতে সুতোটা যেদিন হয়ে যাবে ঢিলে,
    সেদিন টুকরো টুকরো হয়ে যাবে সবই হিসেবের গরমিলে!

  • কবিতা

    শান্তিনদীর ঠিকানা

    শান্তিনদীর ঠিকানা
    -তপন কুমার মাজি

     

    অ-খেলা খেলতে বল না আমায়
    বিবর্ণ হতে পারবো না আমি,
    রূপান্তরিত কিম্বা পরিবর্তনশীল রঙে নয়
    পারতো একমুঠো মৌলিক রং এনে ছড়িয়ে দাও ফ্যাকাশে জীবনের আনাচে-কানাচে,

    হিজিবিজি রংগুলো ফিকে হতে হতে ফাঁকা হয়ে যায় বলে
    স্বপ্নিলের পোক্ত রং মেখে বর্ণিল হতে চাই আমি,
    কাঁচা রঙে আঁকা জীবনের সাদা-কালো ছবিদের দিতে ঢেকে–

    আমি অ-খেলা খেলে হাতটাকে কাঁপাতে চাই না,
    চাই না বাঁকাতে জীবনের সহজতাকে।

    ফুলেল ফাগুনের প্রাক্কালে বিকৃত যদি হয়েও যায় কখনো এই মানবরূপ…
    অনুতপ্ত চোখের অঝোর শ্রাবণে ধুয়ে নিতে পারবো কি কখনো সেই ক্লেদাক্ত ?

    রক্তখেলা যদি খেলতেই হয়
    তাহলে জীবনকে ছিনিয়ে নয়
    নিজেরই প্রাণকে সঁপে দিয়ে লিখে নেবো রক্তলেখায়
    মরণখেলার যাবতীয় হিসেব,
    সমষ্টির চেতনায় ব্যক্তিকে রাঙাতে শিখে নেবো পাঠ
    শহীদদের ধারাপাতে,

    ইতিহাস খুঁড়ে খুঁজে নেবো শান্তিনদীর প্রকৃত ঠিকানা,
    খুঁজে নেব মিলন যজ্ঞের শ্রেষ্ঠ মানবতন্ত্র–
    যেখানে অবক্ষয়ীরা অনায়াসে খুঁজে পায়
    জীবনের মূল স্রোতে ফেরার শাশ্বত মন্ত্র !

You cannot copy content of this page