• কবিতা

    কবিতা- পৈশাচিক সমাজ

    পৈশাচিক সমাজ
    -শংকর হালদার

     

    অর্ধদগ্ধ সবুজের বিকৃত চেহারার ফাঁকে ফাঁকে
    গুটি গুটি পায়ে আলাপে রত
    সময়ের বোঝা কাঁধে ।

    উম্মুক্ত পরিবেশ আজ বিকলাঙ্গ রোগাক্রান্ত
    মহামারীর মতো চারিদিক থৈ থৈ,
    যেখানে কালো হাতের কালো সংবাদ
    গ্রাস করে নিষ্কলঙ্ক সবুজের ইতিহাস,
    যেখানে বর্ণহীন শব্দ, শব্দহীন বাক্য, বাক্যহীন ঞ্জান
    উগড়ে ফেলে সমাজের আনাচে কানাচে।
    আর ঝাঁঝালো ক্রিয়ায় নাভিশ্বাস ওঠে হরিৎ অরন্যে,
    মুক্তির চোখে দ্যাখো ধোঁয়া আর ধোঁয়াশা ।

    ম্রিয়মান জলধারা স্বৈরাচারীর সমাজ আবর্তন চক্রে…
    ধোকা খেতে খেতে ক্ষীণ আশায়
    এক বুক বালি নিয়ে প্রবাহমান।
    বোবা কান্না গোপন ।

    হাওয়ার বুকে বারুদের দৌড়াদৌড়ি
    নিশ্বাস যমের ঘুমন্ত প্রতিরূপ
    দখল করে অনায়াসে প্রতিটি ঘর -বাড়ি ।

    শমনের কাঠগড়ায় ভবিষ্যৎ প্রজন্ম
    ওতপ্রেতে পঙ্গুত্বের আঁতুড়ঘর,
    অস্তিত্ব বিনষ্টের ময়দানে “এ” প্রজন্মের সত্ত্বা…
    বিপন্ন বাজারে বিবর্ণ সংবাদ কড়া নাড়ে মুহু মুহু
    সময়ের ধারাপাত দীর্ঘশ্বাস ফেলে
    নিরক্ষরেখায় ঠেস দিয়ে।

    দৃঢ় হাতে দাঁড়ে পানি টেনে
    আলোয় উম্মোচন কর সেই দিন।

  • কবিতা

    প্রায়শ্চিত্ত

    প্রায়শ্চিত্ত
    – শংকর হালদার

     

    যুক্তি তক্কের ঊর্ধ্বে থাকে ওরা
    বিকিয়ে দিয়ে মনুষ্যত্ববোধ…
    হেলো গোরুর বল দেখায় বর্ণের হাতধরে
    স্রষ্টার আঘাত হেনে ।

    ন্যায়ের সামাজিকতাবোধ আজ ডুমুর ফুল
    কুসুম তার সুবাস হারিয়ে ফেলে অকুতোভয় দেখিয়ে,
    স্নিগ্ধ, মোহিত আলোর ফাঁকে কালশিটে আচরণ…
    মানুষ তো নয় হারেম, গোলাম, নির্বোধ…
    ওদের হাজার জনম, হাজার মরণ
    ভেবেও ভাবেনা, জেগেও জাগেনা ।

    শিক্ষা দীক্ষার ঘৃণ্য আঁতুড়ঘরের গন্ধ এখনও
    লেপে আছে গায়,
    শিক্ষার যন্ত্রণা ছড়িয়ে পড়ে সমাজের আপাদমস্তক,
    কলুষিত হতে থাকে বিদ্যার অঞ্জলি।

    সভ্য সমাজ বুকে অসভ্য তাণ্ডব
    পদদলিত হতে থাকে শিক্ষা ও শিক্ষার শিক্ষক,
    এটা কোন সমাজ, যেখানে বর্ণের মৃত্যুর
    ফরমান জারি…
    সেখানে বিগ্রহের খণ্ডাংশ ধূলোয় গড়াগড়ি যায়।

    বৈরাগী আইনের ছোবলে হোক
    মুখোশ ধারীর প্রায়শ্চিত্ত।

  • কবিতা

    কবিতা- নারী কথা

    নারী কথা
    -শংকর হালদার

     

    বেপরোয়া অন্ধগলির কোঠরে বর্ণময় নারী
    তৎসম শব্দের মতো মেলে ধরে ডানা,
    কত’না রুপে ধরা পড়ে লোভাতুর কামুক দৃষ্টির ক্ষত পাপড়ির গায়।
    অর্থহীন শব্দের মতো, গন্ধহীন কুসুমের মতো
    বহে বেড়ায় নিজেকে
    কয়েক’টা বাঁক ঘুরে ব্যাকরণগত শব্দের মতো
    ফেলে আসা বসন্ত পূর্ণাঙ্গতা পায়
    অনাবিল কাঙ্খিত চাদরে মুড়ে।
    কিন্তু, অজানা সংকেতে পথ চলে মায়াবী কাজল পড়ে
    ভ্রান্তির কীটগুলি বেয়ে বেড়ায় সংকীর্ণ রেখা ধরে,
    দিকভ্রষ্ট নাবিকের মতো ভুলে যায় আপন পরিচয়।

    লিপিবদ্ধ রীতি নীতি নিভৃতে অশ্রু ঝড়ায়
    আইনের সিংহাসন পেলেও
    ঘৃণ্য আঁতুড়ঘর এখনো ভোলেনি
    কলঙ্কের কালি লেপে এখনও পথ চলে
    গুটি গুটি পায়ে সীমানা থেকে সীমানার বাইরে
    বেপরোয়া পদক্ষেপে…

  • কবিতা

    কবিতা- হঠকারিতা

    হঠকারিতা
    -শংকর হালদার

     

    সবুজের বারান্দা জুড়ে নিঃশ্বাসের যাতায়াত
    মুক্ত বায়-এর অন্বেষণ সবুজের ভিড়ে
    মুক্ত আলো দেখি ঊর্ধ্ব করে শির,
    ষড় ঋতুর আনাগোনা গগন তলে
    ছন্দ ও লয়ের পাশাপাশি গল্পের মোড় ঘোরে
    নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে।
    গানের ভাষা, সুরের মূর্ছনা
    ঋতু ও সবুজের ক্ষমতায়ন,
    অরন্যে অরন্যে প্রাণের স্পন্দন
    ছন্দ খুঁজে পায় সবুজের দরবারে
    ঈর্শ্বার কলোরব, মিথ্যার হাতছানি
    স্যালুট জানায় নতশিরে।
    সবুজের পরম্পরা উম্মুক্ত করে নিজেকে
    কোনোরূপ শর্তবিনা,
    কিন্তু, জনগোষ্ঠী স্বার্থের পরকাষ্ঠা
    নাশের মালাজপে আপন লক্ষ্য পূরণে
    বিচ্ছেদের বারমাস্যা কিসের ভিত্তিতে
    জবাব চাই…

  • কবিতা

    কবিতা- মৃত্যু পথযাত্রী

    মৃত্যু পথযাত্রী
    -শংকর হালদার

    নীতিহীন গতিতে ছুটে চলেছি আমরা
    পালা অনুযায়ী প্রতিযোগির বেশে
    সচল স্রোতের মতো…
    কখনো সখনো বাঁক ঘুরি গভীর আশ্বাসে
    পথ প্রান্তে দৃঢ় রেখা টেনে…

    আঁচড় কেটে ভূমিতে অঙ্কুরিত জীব
    দখল করে ইতিহাসের পাতা
    প্রকৃতির কোনায় কোনায় জন্ম দেয়
    একরাশ জোছনা
    উম্মোচন ঘটে নব দিগন্তের।

    কালের চুম্বকে আড়ষ্ট হয় কক্ষপথ-
    থমকে যায় ইতিহাস,
    বিরতি চায় লেখনি, বিরতি চায় সৃষ্টির গতি
    বিরতি চায় শিরা উপশিরা,
    রুদ্ধ হয় কালের কপাট চিরতরে
    শিয়রে দাঁড়িয়ে থাকে বেহারা
    দোলনার প্রতীক্ষায় আমরা
    মৃত্যুপথযাত্রী…

  • কবিতা

    কালবৈশাখী

    কালবৈশাখী
    -শংকর হালদার

     

    আকাশ জুড়ে মেঘের ভেলা
    সূয্যি গেছে ডুবে ,
    গুরু গুরু মেঘের ধ্বনি
    বৃষ্টি বুঝি হবে ।

    বুকের মাঝে ভয়ের আভাষ
    মাটির কুঁড়ে ঘর,
    আসছে তেড়ে ফুলিয়ে কেশর
    বোশেখ মাসের ঝড় ।

    ঈশান কোনে পুঞ্জ মেঘ
    হাওয়ার মেজাজ ভারি ,
    পশু- পাখি আপন গৃহে
    নিমিষে দেয় পাড়ি ।

    ক্ষেত ছেড়ে ফিরছে কৃষাণ
    মেঘের জটা দেখে,
    তপ্ত হাওয়ায় হাঁপিয়ে প্রাণ
    মাঠ’কে ফেলে রেখে ।

    তিক্ত হাসি ঝড়ছে ঘাম
    বোশেখ মাসের রীতি ,
    কর্ম ফেলে প্রাণের আশায়
    গায় বর্ষার গীতি।

    মাঝে মাঝে মাঝ আকাশে
    তীর ধনুকের খেলা,
    ঈশান বলুন অগ্নি বলুন
    কাল বোশাখী বেলা ।

    রাখাল বালক খেলা রেখে
    ধেনু পিছে ধায় ,
    কালো মেঘে ভরলো সারা
    হায় হায় হায় ।

    মুখ লুকালো আলোর রাশি
    বিজলী কেবল হাসে,
    ধানের সিঁড়ি লোটায় মাথা
    ভাবনা শুধু ঘাসে।

    বর্জ্য রেখা ক্ষণে ক্ষণে
    চমক দিয়ে যায় ,
    নয়ন তারায় তোমায় দেখে
    সবে নিজেকে হারায় ।

    এলোমেলো ভিতর বাহির
    প্রকৃতি থেকে মন,
    তারি মাঝে লুকায়ে থাকে
    স্বপ্ন আর জীবন ।

  • কবিতা

    ন্যায়-অন্যায়

    ন্যায়-অন্যায়
    -শংকর হালদার

     

    শোণিত রসে মাসে’র স্বাদ
    লেলিহান শিখার মতো লকলক করে
    পঞ্চইন্দ্রিয়ের এক ইন্দ্রিয়,
    বাকি চার হানা দেয় সম্মুখে, পশ্চাতে
    ও উভয় পার্শ্বে ।

    শিরায় শিরায় মোহিনী শিহরণ ।
    দ্রৌপদীর বসন এখন খন্ডে খন্ডে বিভক্ত ।

    নিভৃতে কাঁদে বিলুপ্ত কৃষ্ণ
    ইচ্ছা অনিচ্ছার সন্ধিক্ষণে ।

    সমাজের কানায় কানায় উঁকি দেয় দুঃশাসন
    তৃষ্ণার অভিলাষ দেহ জুড়ে ।

    বিবর্ণ ধ্বজা বর্ণের জলছবি আঁকে
    নিমিত্ত হলেও উল্লাসের জাল বোনে
    অমর পাঠশালা ভেবে ।
    শিক্ষার ধারাপাত এখনও অষ্পষ্ট মৃদু আলোয়
    ন্যায়ের সুরজ ফোটে চেতনার আঙিনায়,
    এখনও চন্দ্র ওঠে তার প্রভাকে নিয়ে
    জোয়ার আসে তটিনী’কে ভালোবেসে ।

  • কবিতা

    আঁধারে আলো

    আঁধারে আলো
    -শংকর হালদার

     

    বোধের বিবেক যখন,
    অমাবস্যার কাঁটাতারে প্রায় প্রাণহীন
    তখন মনুষ্যত্বের পোকাগুলি ডানা পেয়ে
    রোগ ছড়ায় মশার মতো গ্রাম থেকে শহরে ।
    ফাগুনের বুকফাটা হাসির রেস
    ঢেকে দেয় পথাশ্রিতর আকুল স্বর ।

    অবাধ সংসার, বাতাসের আবদার
    পুঁটলি, ঝোলা যার নিত্য সঙ্গী
    পাংশুর কোলাকুলি মাতিয়ে রেখেছে
    অগাধ আলোর মাঝে অবাঞ্ছিতদের ।

    রদ-বদল ঋতুর এক এক তীব্র রোষ
    সভ্য অসভ্য সমাজ ধারার…
    অপরিবর্তিত নিগূঢ় রস মিলে মিশে একাকার,
    সৃষ্টি ভেজা কুয়াশার চাদর
    ভীষ্মের শরশয্যা রিক্ত প্রাণ ।

    মুখে ভাষার বন্যা
    কালো হাতের আবদার হাঁপিয়ে তোলে
    নিঃস্ব প্রাণের প্রাণ বায়ু ।

    স্বাধীন হাতে কাগজের টুকরো
    তাকে রেখেছে বেজায় খুশি
    আলো ছায়ার সন্ধিক্ষণে ।

  • কবিতা

    মান-অভিমান

    মান-অভিমান
    -শংকর হালদার

     

    ছুঁড়ে দাও রাতের শূন্যতা… ভীরু চোখে
    কমল ঠোঁটের ফাঁকে লুকানো যত অভিমান
    ঢেলে দাও চিবুকে,
    বলা ও না বলা যত আবর্জনা
    ছুঁড়ে দাও আমার গহ্বরে ।
    যত আগাছা জন্মেছিল গোলাপের আবডালে
    দিয়ে যাও আমার শয্যায়
    দু’হাত ভোরে মেখে নেব আমার শরীরে ।
    দ্বিধাহীন রুচিতে
    অন্ত্যমিল ছন্দ ও লয়ের পাশাপাশি
    দৃঢ় হোক হৃদয়ের মূল,
    আমার শাখায় জন্ম নিও নব চেতনায়
    বিরহের কালো ছায়া পিছু রেখে,
    মেলে ধরো নব প্রভাতে নবীন আভায়
    আমার আঙিনায় ।

  • অণু কবিতা

    মধ্যরাতের কবি

    মধ্যরাতের কবি
    -শংকর হালদার

     

    মায়াবী কাজল আঁচল মোড়কে মুড়ে
    সৃজনের ভাষা খোঁজে মধ্যরাতের কবি ।
    নিশীথের সংলাপ, মিছিলের রেষারেষি
    প্রকৃতির রদ-বদল,
    সাতকথার আর্জিতে কলম নিবের আলিঙ্গন।
    সৃজন তরঙ্গ উপচে পড়ে নগ্ন বারান্দায় ,
    ঝিঁঝির আর্তনাদ, তমসার বৈরাগ্য চেতনার উম্মেষ ,
    গা ভাষায় কলমের কালির বমিতে ।
    যামিনীর উদযাপন, তন্দ্রার অঞ্জলি লেখনির ভূমিতে ,
    একে একে জন্ম নেয় মধ্যরাতে কবির হাত ধরে ।

You cannot copy content of this page