• কবিতা

    কবিতা- অচেনা ত্রাস

    অচেনা ত্রাস
    – সীমা চক্রবর্তী

     

     

    এখন সময়টা যেন
    ধূসর মৃত্যুর মতো
    মলিন অজানা শোকে,
    অদৃশ্য প্রখর শক্তি
    প্রচন্ড আক্রোশ নিয়ে
    কাঁদাচ্ছে আবহকে।

    শরীরে পরলোকের ঘ্রাণ
    নিবন্ধে উত্তাল সাগর
    আতঙ্কের ভাঙছে ঢেউ,
    জনপথ ঘুমন্ত সরীসৃপ
    দিকবলয়ে শ্মশানের নীরবতা
    পথচারী নেই কেউ।

    এভাবে আর কতকাল
    অজানা অচেনা ত্রাস
    থাকবে টুটি চেপে,
    বিষাক্ত গরম জিহ্বায়
    সর্বত্র লেহন করে
    মৃত্যু গেছে মেপে।

    চিৎ হয়ে থাকা পৃথিবীটা
    অবাঞ্ছিত জঞ্জাল ঝেড়ে
    বুঝি পাশ ফেরে,
    এখানে বাতাসে পচে লাশ
    কাল নাগিনীর হলাহলে
    মহাকাল উল্লাসে ঘেরে।

  • কবিতা

    কবিতা- নিশ্চুপ

    নিশ্চুপ
    – সীমা চক্রবর্তী

     

     

    দিন আর রাত এখন, কেমন যেন চুপ,
    ছন্দ হীন, গন্ধ হীন, যেন পোড়া ধূপ।

    সাগরের জলে নেই সেই, আবেগ তোলা ঢেউ,
    সুনসান লোকালয় জনপদ, কোথা নেই কেউ।

    তারা জাগা নির্ঘুম রাত, লাগেনা ভালো আর,
    যেন সব আচমকা ঝড়ে, হয়ে গেছে ছারখার।

    নেই সেই ভালো লাগ, নেই হাওয়া’র মরমর,
    নদী তীরে ফাঁকা তরী, একা ধূ-ধূ বালুচর।

    ক্লান্ত মনে নেই সুর, মন-কেমনের গান,
    মরে গেছে ভালোবাসা, নীরব অভিমান।

    শিহরণ জাগা দিন, স্বপ্ন মাখা রাত,
    নেই তারা আর সাথে, জ্যোৎস্না ভেজা স্নাত।

    জানলা দিয়ে ডাক পাঠায়, রঙিন পলাশ মাস,
    বদ্ধ ঘরে প্রাণটা শুধুই, ফেলে দীর্ঘশ্বাস।

    কোথা সেই প্রিয়জন, শেষ গোধূলিতে,
    যেন একা বেঁচে আছি, এই মস্ত পৃথিবীতে।

  • কবিতা

    কবিতা- পৃথিবী ডাকে আমায়

    পৃথিবী ডাকে আমায়
    – সীমা চক্রবর্তী

     

    আমার জন্য থেকোনা পথ চেয়ে, আমি এখন অগ্নি বলয়ে,
    দুর্বার গতিতে চলেছি ছুটে, পৃথিবী পরিক্রমার উপলক্ষ হয়ে।

    অতলান্ত সাগর সাঁতরে চলেছি, হিমশৈল পেরোনোর মতি,
    হয়তো আর ক্রোশ খানেক পথ, তারপর নেবো চির বিরতি।

    সোনালী সময় কবেই চলে গেছে, ঘড়ির কাঁটায় লেগেছে রাগ,
    সূর্যাস্তের শেষ রক্তিমার কিনারে,রেখে গেছে ঝলসানো দাগ।

    ঠিকানা বিহীন জীবন ছুটছে,জানেনা দূরত্বের সঠিক মাপ
    দিশারির দেখা কল্পনা প্রসুপ্ত, মহাশূন্যে বিহ্বল ঝাঁপ।

    সূর্যের ছায়াপথে মিশে যেতে নেই আর আজ কোনো মানা,
    অনাহুতের মতো তৃষ্ণার্ত মন, মুহূর্তের সাথে মেলছে ডানা।

    আমার কথা ভেবো নাকো আর, পৃথিবীর ডাকে দিয়েছি সারা,
    মায়াবী জালে আর রবনা বাঁধা, তুমি আমি আজ ভিন্ন ধারা।

  • কবিতা

    কবিতা- শেষ লিপি

    শেষ লিপি
    – সীমা চক্রবর্তী

     

     

    মরণের ওপারে গেলে তুমি চলে, আমি র’নু এপারে
    শেষ কবে দিয়েছিলে দেখা, ভুলে গেছি একেবারে।

    অলস দুপুরে আমি ছিনু একা তরু পাতা ছায়া তলে
    বুঝতে পারিনি কখন তুমি এসে ফিরে গেছো চলে।

    যাওয়ার সময় বাতাসের হাতে পাঠালে পত্র খানি
    সযত্নে বাঁধা হলুদ ফিতায় খাম তার আসমানি।

    মুক্তাক্ষরে সে খামের ওপর নামটি আমার লেখা
    সেই চেনা সুবাস সাথে যেন এক ফোঁটা অশ্রু রেখা।

    বলোনি যা মুখে, পত্রে কি সেসব না-বলা গোপন কথা
    না কি বঞ্চনা আর গভীর ব্যথার অব্যক্ত মর্ম গাথা ?

    খুলতে পারিনি সে লিপিকা, ভয় জাগে মনে পাছে
    হয়তো লেখার প্রতিটি ছত্রে, আমার নামটি জড়িয়ে আছে।

    যাবার সময় একবার যদি ভুলেও ডাকতে আমায়
    দেখতে ঠিক পাশটি তে আমি মিশেছি তোমার ছায়ায়।

    আজ যতই ডাকি এপার হতে জানি আর ফিরবে না
    তোমার তরী আমার কূলে আর কখনো ভিড়বে না।

    তাই তোমার শেষ পত্রখানি রেখেছি বুকের মাঝে
    হৃদয়ে পাবো তোমার পরশ, স্বর্গীয় সুখ লাজে।

    নাই বা পড়লাম তোমার লিপি, থাক্ না বন্ধ খামে
    ভেবেই সুখ শেষ লিপি তুমি লিখেছো আমার নামে।

  • কবিতা

    কবিতা- তাই তো একা রই

    তাই তো একা রই
    – সীমা চক্রবর্তী

     

     

    যবনিকা যখন টেনেছো অকালে, আমাকে করেছো দূর
    আর তো ফিরে পাবেনা আমায়, বুকে চুরান্ত ভাঙচুর।

    বর্ষার কত অঝোর ধারা ঝরেছে নিষ্প্রাণ নিথর চিত্তে,
    পাথর হয়েছে প্রতিটি মুহূর্ত, চেতনা বিহীন জীবন বৃত্তে।

    অভিমানী মনের প্রেম – সম্পদ, অযত্নে ভীষণ ফ্যাকাশে,
    অনন্ত কালের কৃষ্ণ – বারিদ, জমাট হয়েছে নীল আকাশে।

    আঁধারের রঙ নিয়ে আলোর নিচে বেশ তো ভালোই আছি
    আর তো কখনো পাবেনা আমায় হৃদয়ের কাছাকাছি।

    অনেক ব্যথাকে করব দিতে ভিজেছে আকাঙ্ক্ষার ফসল
    পাওয়া-না-পাওয়ার শেষ প্রান্তে র’য়ে গেছি আজও অবিচল।

    উড়িয়ে দিয়েছি সুখ-স্মৃতি ক্ণা, বিবর্ণ হাওয়ায়
    অনড় হৃদয়ে নিয়েছি শপথ, অন্য এক অরুণিমায়।

    অযাচিত আঘাতে স্তব্ধ হিয়া, কু-মেরুর মতো শান্ত
    নেই – রাজ্যে আস্তানা দূরহ, বোকা মন যদি জানতো।

    জীবন এখন পুড়ে খাক্ হোক্, তবুও বিচলিত নই,
    আমার আমি কে বাসবো ভালো, তাই তো একা রই।

  • কবিতা

    কবিতা- জীবন একটা অঙ্ক

    জীবন একটা অঙ্ক
    -সীমা চক্রবর্তী

     

     

    জীবন একটা জটিল অঙ্ক
    চলতে চলতে কষছি মোরা
    দিন যাপনের প্রতিটি পাতায়,
    কখনো মিল, কখনো অমিল
    কখনো আবার শুধুই দেখি
    আপোষ ভরা সাদা খাতায়।
    যোগ বিয়োগের মাপকাঠিতে
    বোঝা না বোঝার সন্ধিক্ষণে,
    ভাজ্য আর ভাজক খেলা,
    আজ যে আপন, কাল সে পর
    থাকা না থাকার অলীক পথে
    আসা যাওয়ার নিত্য মেলা।
    লাভ ক্ষতির হিসেব নিকেশ
    অতীত অধুনার চৌকাঠ ছুঁয়ে
    ভবিষ্যতের খাঁচায় প্রবেশ,
    একটা অঙ্ক ভুলের মাশুল
    এপার ওপার ভাসিয়ে দিয়ে
    চলার পথ সেখানেই শেষ।

  • কবিতা

    কবিতা- রাজ-প্রাসাদ

    রাজ-প্রাসাদ
    -সীমা চক্রবর্তী

     

     

    এই তো সেই তোমার সাধের রাজপ্রাসাদ
    জ্যোৎস্না রাতে যার ছাদে আসতো নেমে চাঁদ।

    রেশমি ঐ পর্দা গুলো উঠতো হাওয়ায় দুলে
    যখন তুমি সিংহ-দুয়ার হটাৎ দিতে খুলে।

    হাজার আলোর ঝাড়বাতিটা উঠতো যখন জ্বলে
    সূর্যও যেন লজ্জা পেয়ে অস্তে যেতো ঢলে।

    শৌর্যে – বীর্যে যেথায় তুমি দম্ভে করতে রাজ
    শ্মশানের হু-হু বাতাস, খেলছে সেথায় আজ।

    ঠুংরি তালে, পায়ের বোলে হতে তুমি পাগল
    রঙিন কাচের পেয়ালা সুধায়, চলতো কোলাহল।

    সেই মদিরা নেশাই অজান্তে করলো তোমায় গ্রাস
    বুঝলে নাতো জীবনে কখন নামলো সর্বনাশ।

    যেমন ছিল তেমন সবই, শুধু নেই যে আজ তুমি
    ঘুমিয়ে আছো সমাধি তলে, রাজাসন ছেড়ে ভূমি।

    আজ পর্দাগুলো ছিঁড়ে গেছে, নিভেছে ঝাড়বাতি
    দিনের আলো দেয়না উঁকি, গুমরে কাঁদে রাতি।

    যেই প্রাসাদে ভালোবাসা বিকতো সোনার দামে
    চাপা যন্ত্রণার শ্যাওলা আজ সেই প্রাসাদ থামে।

  • কবিতা

    কবিতা- আর নয়

    আর নয় 

    -সীমা চক্রবর্তী

     

     

    আর নয় মোমবাতি মিছিল
    নয় আর স্লোগান
    অনেক হয়েছে বাক্ ফাট্টাই আর
    পথে পথে অভিযান।
    আইনও আজ বিকায় হাটে
    বিপুল মূল্য ধরে
    অর্থের এই নোংরা খেলায়
    নারীই অপমানে মরে।
    নপুংসক এই শয়তানরা শুধু
    করে যাবে ধর্ষণ
    নারী কি শুধুই দেখে যাবে
    আর সয়ে যাবে নির্যাতন ?
    যে মোমবাতি হাতে এতো দিন
    সবাই হেঁটেছি মিছিলে
    এসো আজ সবাই সেই বাতিতেই
    দেই ধর্ষকদের জ্বেলে।
    নির্লজ্জ এই সমাজ-কীটদের
    পুড়িয়েই করবো শেষ
    তবেই বাঁচবে নারীর সম্মান
    মুক্ত হবে ক্লেশ।

  • কবিতা

    কবিতা- ভিন্ন

    ভিন্ন
    – সীমা চক্রবর্তী

     

     

    তোমার আমার জীবন পথ হয়ে গেছে ভিন্ন,
    আমার চলার নতুন পথটা ভীষণ রকম বিষণ্ণ।
    স্বপ্নগুলো এক ছিলো যে, একটুও নয় অমিল,
    তোমার স্বপ্ন পূরণ হলেও, আমারটা বড়ই গোঁজামিল।
    তোমার আমার ইচ্ছেগুলোর, ছিলো একই আবদার,
    দু’জনারই ছিল সমান ভাগ, দু’জনেই হকদার।
    তোমার ইচ্ছে উড়ান দিলো, রইলাম আমি পরে,
    আমার ইচ্ছে বিরস মনে, গেলো কখন ঝরে।
    আমার মনের ইচ্ছেগুলোর এমন কি ছিল দাবী
    একা বসে অবসরে আজ এই কথাটাই ভাবি।
    তোমার আমার দু’জনেরই, আকাশটা ছিল নীল,
    তোমার আকাশে সূর্য চন্দ্র, আমার কৃষ্ণ মেঘের মিছিল।
    বৃষ্টি নামায় তোমার আকাশ দূর দিগন্ত জুড়ে
    আমার আকাশ প্রখর তাপে কালো হয়েছে পুড়ে।
    হাতটা যখন থাকতো ধরা তোমার নরম হাতে,
    শূন্যটাকেও যেত ছোঁয়া, রোদ বিছানো প্রাতে।
    তোমার ছাদ তেমনই আছে আগের মতোই খোলা,
    আমার ছাদ শ্যাওলা পিছিল, কেমন যেন ঘোলা।
    জানি না এসব সত্যি কিনা, কেবলই মনে হয়,
    জীবন যুদ্ধে হেরে গেছি আমি, তোমার নিশ্চিত জয়।

  • কবিতা

    কবিতা- তোমার অবহেলা

    তোমার অবহেলা
    – সীমা চক্রবর্তী

     

     

    এখনো বয়ে যাই তোমার আদর মাখা ভালোবাসার চিহ্ন,
    তবু পারিনা জুড়তে তোমার দেওয়া হৃদয়ের শত ছিন্ন।

    নিরাশার মেঘ স্বপ্নের বুক ছুঁয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে বিবেক
    নগ্ন চোখের হাহাকার ঘিরে মৃত্যুর কটু গন্ধ অনেক।

    চুপকথার শিশির ভেজা মনে, জ্বলে দাবানলের আগুন
    স্মৃতির কুঞ্চিত গলিপথে, নির্দ্বিধায় পলাতক ফাগুন।

    রাত জাগা তারারা পাঠায় বৈতরণী পারের ঠিকানা,
    বিকর্ষণের টানে হলদেটে হয়ে গেছে শেষ পরোয়ানা।

    প্রবল শূন্যতার মাঝে একাকীত্বের উন্নাসিক অহংকার,
    ঘোলা জলে বিম্বিত চাঁদের আলো হয়তো বা মনের বিকার।

    মিশে গেছি আজ কালান্তক দিনাতিপাতে অবলীলায়,
    বাস্তব অবাস্তবের মানদণ্ডে মরচে জমছে হৃদ-শিলায়।

You cannot copy content of this page