• অণু কবিতা

    অণু কবিতা- অন্য অনুভূতি।

    অন্য অনুভূতি
    -অমিতাভ সরকার

     

     

    একটু অনুপম লাগুক তোমাকে,
    একটু ছোঁয়া দিয়ে যাও।
    স্মৃতিতে থাকবে তুমি, যাব না ভুলে।

    কিশোরীর কথা আবার মনে করালে,
    ছুঁয়ে নয় ভিজিয়ে দিলে এবার, ভিজতে
    ভিজতে কাঁদতে থাকলাম।

    এত কোনো দুঃখ নয়, তোমার ধারার সাথে
    আনন্দাশ্রু বয়ে এক অনবদ্য আনন্দ নিকেতন তৈরি হল। সত্যিই অনুপম তুমি।

  • অণু কবিতা

    অণু কবিতা- সেরা

    সেরা
    -অমিতাভ সরকার

     

     

    সময় হয়তো শেষ হয়ে আসছে,
    দেখছো না প্রদীপের দপ দপ প্রজ্জলন!
    কিছু দিশা নিয়ে যাচ্ছে, দেখে নিতে চায় পৃথিবীর রূপ।
    তোমার রূপে মুগ্ধ হয়েছিল কবি, লিখেছিলো কতকিছু,

    কোনটা সেরা সে নিজেও জানে না।
    সেরা খুঁজতে খুঁজতে, খুঁজছে মেঘলা দিনে তোমার ঠোঁটে পড়া প্রথম বৃষ্টি ফোঁটা।

  • কবিতা

    কবিতা- বর্ষা- বৃষ্টি

    বর্ষা- বৃষ্টি
    -অমিতাভ সরকার

    বর্ষা কেন নামটি তোমার
    বৃষ্টি হলেও পারতো।
    মেঘের নাম নীরদ মালা
    চুপি চুপি দেখতো।

    নীল আকাশ দিনের বেলায়
    রাতের বেলাতেও তাই।
    দিনের বেলায় সূর্য কিরণ
    তারার দেখা নাই।

    ঝুপঝুপিয়ে বৃষ্টি নামে
    উল্কা সম ভাই।
    মেঘের দিশা যেদিকে
    বৃষ্টি সেদিকে ধায়।

    বর্ষা হওয়া, বৃষ্টি হওয়া;
    বুঝি নাকো তফাৎ।
    কথা বলার রকম ফেরে
    সৌন্দর্য করেছে মাত্।

    বর্ষা এলে হাসছে মানুষ-
    হাসছে পক্ষী, বৃক্ষ কুল।
    ভাসছে পাহাড়, ভাসছে নদী
    হাসছে দিঘী, শালুকফুল।

    মেঘের মেলায় পাগল হাওয়া
    উদাস তোমার মন।
    হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি ধরো
    খুঁজছো নিজের জন।

  • কবিতা

    কবিতা-অনুপমা চির বসন্তে

    অনুপমা চির বসন্তে
    -অমিতাভ সরকার

     

     

    অনুপমা এখনো আসে বারবার।

    তার ছবি বারবার মনে মনে আঁকা হয়।
    ভেজা চুলের গন্ধ, ঘাম শুকনো কামিজে ডিওড্রেন্টের আবেশ;

    মনে করায় বসন্তের হলুদ রোদ্দুর, নীল আকাশ, দুরন্ত চিল, দখিনা বাতাস।
    কোকিলের কুহু কুহু ডাক।

    কৌটো খুললে এখনো অনুভব করা, শেষ বসন্তে
    হাঁসফাঁস ভরা শ্বাস-প্রশ্বাস।

    পলাশের আকুতি কানে কানে বলে, যেতে না যাবার কথা।

    কৃষ্ণচূড়া এখন হাসে অনুপমার স্বেদবিন্দুতে ভেসে ওঠা প্রতিচ্ছবি দেখে।

    আর অনুপমা কি বলে! চোখে চোখে বলে তুমি ছাড়া বাঁচার রাস্তা নাই।

    অনুপমা আজও বেঁচে চির বসন্তের দেশে স্বাচ্ছন্দ্যে।

    আর সে যুগ যুগ ধরে ঢেউ গুনে চলেছে আরব সাগরের তীরে,

    আর শুধু বেলুয়ারীতে ঘর বাঁধার আশায়।

  • কবিতা

    কবিতা- যদি আসে

    যদি আসে
    -অমিতাভ সরকার

     

     

    কিশোরী বয়সের পূর্ণতার সময়ে যে কাগজের নৌকো ভাসিয়ে ছিলে আষাঢ়ের ধারায়,

    সে নৌকো আজও ভেসে চলেছে।

    না বলা কিছু শব্দ ছিল, কিছু ইঙ্গিত ছিল যেটা আজও কুরে কুরে খায়।

    আশেপাশে,আকাশে, বাতাসে ঘুরে বেড়ানো শব্দগুলো নিঃসঙ্গতা খোজেঁ বার বার।

    মনে করিয়ে দেয় আষাঢ়ের সেইদিন।

    মনে পড়ে অবসরে সেই ছেলেমানুষী!

    বিস্মিত হতে হয় কি?

    কখনো কি ঝাপসা হয় চোখ? দীর্ঘশ্বাস পড়ে?

    কাগজের নৌকো কোনো এক দ্বীপে নোঙ্গর ফেলে অপেক্ষায় আছে যদি দুই যাত্রী আসে।

    নিয়ে যাবে যৌবনের মোহনায় ফিরিয়ে দিতে আষাঢ়ের দিন।

  • কবিতা

    কবিতা- যেথায় নেই মানা

    যেথায় নেই মানা
    -অমিতাভ সরকার

     

     

    কবিতার কি আছে কোন মানা?
    মন চাইলে ছোটায় তড়িৎ হানা।
    ইচ্ছে যখন, বসে রূপসী ঠোঁটে,
    মন খারাপ, সূর্য যখন পাটে।

    বৃষ্টি যখন অঝোর ধারায় পড়ে,
    আষাঢ় হাসে নরম চিবুক ধরে।
    হাত তুলে বৃষ্টি স্নানে ব্যস্ত,
    বেলি তখন গন্ধ সামালে ত্রস্ত।

    ইচ্ছে হলে তারার দেশে ছোটে,
    মন চাইলে চাঁদটা যখন ফোটে।
    উদাস হাওয়া লাজুক আঁচল খোঁজে,
    কবিতা তখন সলজ্জ মনের সাজে।

    নদী যখন ভাটার দিকে ছোটে,
    ভাটিয়ালি সুর উজান পালে বটে।
    প্রদীপ যখন সন্ধ্যা নিয়ে আসে,
    জোনাক জ্বলা বাবুই নীড়ে হাসে।

    ভিড়ের মাঝে তাকেই ঠিক চেনে,
    দুলতে দুলতে যখন চলে ট্রেনে।
    তার হাসি অনেক গল্প সাজায়,
    আনন্দ, দুঃখ, বিদ্বেষ কিনা বোঝায়!

    বর্ষা যখন করেছে ধরিত্রীকে সিক্ত,
    প্রেমের হাসি উড়িয়ে হও রিক্ত।
    হাসবে দিঘি, হাসবে কত শতদল,
    প্রেমের বাতাস করবে তখন দখল।

    কবিতা ছোটে হৃদয় উজার করে,
    মেঘের ভেলায় পাহাড় দেখার তরে।
    জোড়া টিয়ার শিরিষ গাছে বাসা,
    কবির চোখে বড়ই দেখতে খাসা।

  • কবিতা

    কবিতা- উষ্ণ মেঘ

    উষ্ণ মেঘ
    -অমিতাভ সরকার

     

     

    পাহাড়ি ঢালে টুসটুসে কমলালেবু,
    এলোচুলের হাওয়াতে যৌনতার আবাদ।
    ল্যান্ডরোভারের ঠাসাঠাসিতে উষ্ণতা বিক্রি হয়;
    এক গ্লাস গরম চায়ের ভাপের মত।
    ঝিরি ঝিরি ঝড়ার জলে মুখে সাবান আর মাথায় শ্যাম্পু, আঁচড়ান চুলে পরিপাটি।

    ঝকঝকে দাঁতে হৃদয়ের হাসি।
    পাহাড়ের ঝুলে থাকা বৃক্ষের পাশ দিয়ে কখন সখন গড়িয়ে পড়া নুড়ি পাথরের নৃত্য।
    অনতিদূরে সবুজের মাখামাখিতে ভরা চা গাছের ভান্ডার।
    হিমশীতল ঠান্ডায় ঠকঠক করতে করতে লিপস্টিক রঙিন মুখের বাষ্পে গুড়ি গুড়ি মেঘ জমে ।

    কিছুক্ষণ আগে দেখা সেনচল লেকের বুকে নিরোদ মালার মত।
    পাহাড়ি মেয়েটা বুঝতে পেরেছিল বুকের মধ্যে উষ্ণ মেঘ জমেছে।

    হাসতে হাসতে হাত ধরে পাহাড়ের ঢালের মাথা নিচু নিশ্চুপ ঘরে নিয়ে গেল।

  • কবিতা

    কবিতা- ভেটুল ঘাট ও তুমি

    ভেটুল ঘাট ও তুমি
    -অমিতাভ সরকার

     

     

    সময় যখন থমকে থাকে একলা ঘরে আমি,
    সেই সময় হাজির হয়ে বিরাজ করো তুমি।

    মন উড়ে যায় আমবাগানে ভেটুল গাছের পাশে,
    সেইখানেই ডোবায় নেমে বাসন মাজার আশে।

    একটা সময় স্নানের খেলায় মেতে থাকতে তুমি,
    কিশোর বয়স লজ্জা লজ্জা সম্ভ্রম থাকতো চুমি।

    বয়েসে এখন বরফ জমে, হারিয়ে গেছে সে মন,
    পাশের ঘরের বৌদি এসে মন মাতায় অনুক্ষণ।

    তবুও আজো সাঁতার কাটো বরফ জমা বুকে,
    এখনো তুমি বাসন মাজো ভেটুল গাছের ঘাটে।

    একলা ঘরের নীরবতা আর ভেঙো না তুমি,
    তোমার সুখেই সুখ থাকুক হৃদয় খানি চুমি।

  • কবিতা

    কবিতা- ঝাপসা চোখে

    ঝাপসা চোখে
    -অমিতাভ সরকার

     

     

    ভাগীরথীর জলে কত আলপনা আঁকা হল,
    পারে দাঁড়ানো মাঝির বৌয়ের বুকে ধড়াস ধড়াস শব্দ।
    আকাশে চিল মেঘের সঙ্গে খেলা করছে। দুরন্ত বাতাস বইছে।
    কবিতার ছন্দ মাঝির বউয়ের বুকের ধড়াস ধড়াস শব্দে গম্ভীর। কি হয়, কি হয়।
    বেপরোয়া পানকৌড়ি ডুবসাঁতার দিয়েই চলেছে।

    চাঁদনী রাত ছিল, ছই দেয়া ডিঙি ছিল। ঝিরি ঝিরি বাতাস ছিল।

    লজ্জা ভরা সোহাগ ছিল। চাঁদ শুধু হেসেছিল। কেন হেসেছিল জানা নাই–

    মোটামুটি একটা পরিবার ছিল। নাতিপুতি, নাতনিরা ছিল, বউ-জামাই ছিল।

    ছেলেমেয়েরা ছিল। হরিদ্বারের গঙ্গা।গোধূলির পর সাঁঝ- সন্ধ্যা।

    শঙ্খ ধ্বনিতে মুখরিত পার। গঙ্গা পুজো চলছে।

    পাতার ঠোঙ্গায় লক্ষ্যপ্রদীপ ভেসে চলেছে গঙ্গার বুকে।

    নাতির থলে থেকে বেরোল দুটো ঘট, নতুন কাপড়ে মোড়া।

    বাবা ও ঠাকুমার অস্থি ছিল ঘট দুটোতে একযুগ ধরে।

    এক কোমর গঙ্গার জলে নেমে করজোড়ে প্রণাম ক’রে ঘটদুটো ভাসিয়ে দিলো।

    পুরোহিতের কন্ঠে মন্ত্র উচ্চারিত হলো।

    মা ও ছেলে দুলতে দুলতে জড়াজড়ি করে অদৃশ্য হল।

    নাতি ঝাপসা চোখে শুধু অনুভবে তৃপ্তি পেল।

    দীর্ঘদিনের অমূল্য গচ্ছিত ধন গঙ্গাবক্ষে দিয়ে বুক হালকা হলো।

    ডাঙ্গায় উঠে দেখলো পরিবারের সকলের চোখে জল গড়িয়ে পড়ছে।

    গঙ্গাবক্ষে তখন প্রজ্জ্বলিত প্রদীপের আলপনা এগিয়ে চলেছে ধীর গতিতে।

    আকাশের তারারা হাসছে দুটো সঙ্গী পাবো বলে।

  • কবিতা

    কবিতা- কত কথা

    কত কথা
    -অমিতাভ সরকার

     

     

    আকাশের চাঁদ ঝুঁকতে ঝুঁকতে
    জানলার কাছে এসে বললো, লুকোচুরি খেলবি।

    মেঘ এসে বললো, শুরু করি।

    বাতাস চুপিচুপি বললে, ইয়াশ এর সাথে সহবাসের ইচ্ছে;

    যেখানে আছে দুর্বার গতি, ঝঞ্ঝা, জল তরঙ্গ থেকে জলোচ্ছ্বাস-

    বন্যা, তোলপাড়, ধ্বংস, মুহুর্তের মধ্যে রূপান্তর, লালসার শেষ পরিণতি।
    সহবাসের রাত পোহালেই উষা অবসানে নব সূর্য।

    ক্লান্তি ভেঙে কর্মযজ্ঞ, লালন পালন, হাহাকার ভুলে আবার হাসি।
    শুরু স্বপ্ন দেখা, রাত জাগা পাখির গান শোনা,
    বাতায়নে চোখ রেখে ঝরে পড়া তারা দেখা।

    জোৎস্নার আলোয় প্রেয়সীর সোহাগে পাশ ফিরে উষ্ণ প্রশ্বাসে ভেজা।

You cannot copy content of this page