-
কবিতা- রেখে গেলাম
রেখে গেলাম
-অমিতাভ সরকারবাঁধন-হারা সৃষ্টি গুলো কোথায় যেন হারিয়ে ছিল।
বেড়ায় ঘেরা বাগানটাতে ওইগুলো সব লুকিয়ে ছিল।বেড়ার আগল খুলে দিলাম দেখ না তোরা সবাই মিলে।
কোথায় আছে সূর্য সকাল ভ্রমরগুলো নাচছে বিলে।প্রেমের হৃদয় উদাস ছিল মেঘলা দুপুরে জানলা পারে।
খানিক তুই সবুর কর প্রেমিক আসবে নদীর পাড়ে।বর্ষা মধুর সাঁঝের বেলা কেনা ছিল বেলির মালা।
কোন কারণে ছিটকে গেলি রেখে গেলাম ডাইরি খোলা। -
কবিতা- চলে যেতে যেতে
চলে যেতে যেতে
–অমিতাভ সরকারচলে যেতে হয়,
চলে যেতেই হবে।
তবুওতো রেখে যেতে হয় কিছু;–চারণ ভূমিতে চড়তে চড়তে কত না গ্রহণ করেছি। কিছু তো দিয়ে যেতে হবে, দিতে তো হবেই।
ম্লান হাসিটুকু রূপান্তরিত হোক, উদ্ভাসিত হোক সৃষ্টির আকুতি থেকে ঝরনার উচ্ছলিত স্রোতের মতো। তুমি দেখে হাসবে, বর্ণনা করবে। কত কথা হবে, কত আলোচিত হবে।
বর্ণালী, তোমাকে দেখে আমি ভূমধ্যসাগরে দ্বীপ খুঁজে পেয়েছিলাম। থমকে দাঁড়িয়ে আমি একটু আশ্বস্ত হয়েছিলাম। এইবার তোমাকে দেখবো, প্রাণ ভরে দেখবো। প্রকৃতির রূপ, রস, গন্ধ তোমার মধ্যে যা নিমজ্জিত, প্রাণ ভরে গ্রহণ করব।
ভূমধ্যসাগরে দিগন্ত থেকে ঊষার আলো দেখব, সূর্য প্রণাম করে দিন শুরু করব। তুমি পাশে থাকবে। নীল আকাশ, শঙ্খচিল, নীল জলের গন্ধ সাক্ষী থাকবে তোমার আমার হাতে হাত রাখার মুহূর্তের। তোমার আমার ওষ্ঠের মৃদু কম্পন দর্পণে আঁকা থাকবে।
চলে যেতে যেতে এই টুকু তোমাকে দিয়ে গেলাম, স্মৃতির কোটরে ধরে রেখো। নিঃস্ব হয়ে এসেছিলাম, নিঃস্ব হয়ে চলে গেলাম। -
কবিতা- তোমার প্রভা
তোমার প্রভা
-অমিতাভ সরকারদেখা হবে কিনা জানিনা;
তোমার প্রভা অন্তত মেখে থাকি কিছুক্ষণ।
রূপসী মুখ, নিরদ মালায় সাজান আস্তরণ।
যেন করেছ আমন্ত্রণ।আবার দেখা হবে কিনা জানিনা—-
বেঁচে থাক বসন্ত বিকেল, নদী নালা, বন পলাশ,
রাধাচূড়ার হাসি, কৃষ্ণ চূড়ার দোল উৎসব।আবার দেখা হবে কিনা জানিনা—-
ঝর্নার মধুর কোলাহল সেজেছে রামধনু রঙে,
বৃহস্পতি রঙ পাল্টাচ্ছে মুহুর্মুহু, ঘরে ফেরা গরুর দল ধুলো আবিরে সাজাচ্ছে চরাচর।আবার দেখা হবে কিনা জানিনা—–
তুমি বসে আছো আলের কিনারে, মেখে আছো অস্তাচলের রবির কিরণ, মনে হয় যেন নন্দলালের আঁকা ছবি।আবার দেখা হবে কিনা জানিনা;—
গোধূলির পরে সন্ধ্যে তারায় আকাশ সেজেছে,
ঘরে ঘরে শঙ্খ ধ্বনি, প্রফুল্ল আবেশে পৃথ্বী, তুলসী তলায় প্রজ্বলিত প্রদীপ। তুমি ধীর পায়ে মিলিয়ে গেলে।
দেখা হবে কিনা জানি না— -
কবিতা- বসন্ত গোধূলিতে
বসন্ত গোধূলিতে
-অমিতাভ সরকারসন্ধ্যেবেলায় প্রদীপ জ্বেলেছিলে তুলসী তলায়:—
কিছুক্ষণ আগে সন্ধ্যে নামা বিকেলে বেড়ার পাশে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছিলে,ঢলে পড়া রঙিন সূর্য, নীড়ে ফেরা পাখির দল, রঙিন প্রজাপতি, জলফড়িং,
পুকুর থেকে উঠে আসা হাঁসের দল, গাঁদা ফুলের মাথায় হাত বুলিয়ে গন্ধ শুঁকেছিলে।
ঘরে ফেরা দুধেল গাইবাছুর গোয়াল ঘরে বেঁধে ছিলে।
হঠাৎ দেখি নেমে পড়লে বাড়ির সামনের পুকুরে গা ধুতে।
শাড়ি সামলে গলা অবধি ডুবালে।
ভেজা কাপড়ে গামছা জড়িয়ে থপ থপ করে ঘরে ঢুকলে।
হালকা চাঁদের আলো হেসে উঠেছিল, তুমি লালপেড়ে শাড়ি পড়ে-
ঘোমটা মাথায় হাতে ধূপকাঠি ও প্রদীপ জ্বালিয়ে তুলসী তলায় এলে।
ধূপকাঠি ও প্রদীপ দেখালে। হাতজোড় করে প্রণাম করলে।প্রদীপের আলোয় তুমি প্রজ্বলিত হলে।
লাল টকটকে সিঁদুরের টিপে তুমি অনন্যা, অপরূপা, মনোমোহিনী, দখিনাবায়ে প্রেমময়ী।
-
অণু কবিতা- আর্তি
আর্তি
– অমিতাভ সরকারকল্পনার কবচ কুণ্ডলে
কেন বেঁধে দিলে?
আশ্চর্য প্রদীপ জ্বালিয়ে
মুছে ফেলো যত দুঃখ,
নাবালক শিশুর ফুলগুলো দিয়ে তৈরি হোক
নব প্রজন্ম।
নীতিমালার তলায় চাপা থাক শ্রমের লালসা।
বসন্তের কোকিল ডাকুক বিদ্যালয়ের শ্রেণী কক্ষে।ক্ষুধার অন্ন জুটুক ঘরে ঘরে নির্বিঘ্নে।
আর সভা নয় ফানুসের সাজে,
আশ্চর্য প্রদীপ জ্বলুক প্রতিবাদী ঝড়ে। -
কবিতা- প্রেমের ইতি
প্রেমের ইতি
-অমিতাভ সরকারপরিপাটি করে একটু ধরে রাখতে পারলে না।!
ফাগুন মাস উষ্ণ ভালোবাসার দিন,
কোকিলের কুহুতান; পলাশের রংয়ের সাথে তোমার ওষ্ঠ ভিজিয়ে গাইতে পারতে কোরাস।
কৃষ্ণচূড়া রাধাচূড়ার ঢলাঢলি দেখে তোমার মনটা ভিজে ওঠেনি।
দখিনা বাতাস তোমার হৃদয় কাঁপায়নি!
একগুচ্ছ অশোক হাতে নিয়ে তুমি প্রেমের কবিতা শোনাতে পারতে,
নিদেনপক্ষে বিকেলের রোদ মুখে নিয়ে প্রতিচ্ছবি দেখাতে পারতে।
কিছুই করলে না তুমি।
তোমার প্রেম গুনগুনিয়ে উঠলো না ভ্রমরের মত।
ফাল্গুনের প্রাক গোধূলিতে গোঠের রাখালের মত বাঁশি বাজাতে পারতে।নতুবা গোধূলির আকাশটাকে এঁকে উপহার দিতে পারতে।
ফাগুনের প্রেম নীরবে শেষ হয়ে গেল।
রক্ত গোলাপের পাপড়ি ঝরে গেল
তুমি কান্না শুনতে পেলে না। -
কবিতা- তোমার তরে
তোমার তরে
-অমিতাভ সরকারপলাশ নিবেদন করবো তোমার শ্রী চরণে,
ছিল মনে ইচ্ছে।
নিবেদন করে দেখলাম তোমার অবয়ব,
কি সুন্দর তুমি।
তুমি আমার প্রেয়সী হবে না! তুমি আমাকে জড়িয়ে রাখবে না!
তোমার শিল্পকলা, তোমার বিদ্যা, তোমার আদর
পেতে আমি উৎসুক।
তুমি আমাকে জড়িয়ে থাকো না প্রিয়া,
পছন্দের সব দেব।
পলাশ ছাড়াও বসন্তের আম্রমুকুল, যবের শিষ, টুসটুসে কুল, রাঙাআলু।
আর কি চাও তুমি? বসন্তের ফুল, দখিনা বাতাস, সেটাও বরাদ্দ।
শুধু একটু আদর করবে, মাথায় একটু হাত রেখে বিলি কাটবে।
মিষ্টি করে বলবে পাগল কোথাকার, বলবে,
আছি আমি সাথে। -
কবিতা- জীবন যাতনা
জীবন যাতনা
-অমিতাভ সরকারআমার যখন সময় হল,
তুমি গেলে পাটে।
সেইখানেতে সুখে থাকো,
এই ইচ্ছা বটে।কষ্ট ছিল -ভীষণ কষ্ট,
ছিলাম সামর্থহীন।
সুখ যখন স্বপ্ন দেখাল,
তুমি তখন বিবেকহীন।বসন্তের এই খুশির সময়,
পড়ছে মনে বেশি।
আঁকতে গিয়ে তোমার ছবি,
নেই তো সেই খুশি।রক্ত গোলাপ হাসছে দেখি,
নেই তাতে স্পৃহা।
প্রিয়া আমার কোন দেশেতে,
আনন্দ হারা হিয়া।সুখের মধ্যে দুঃখ বোধ,
সেটাও জীবন জ্বালা।
প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির রুপ সায়রে,
এইতো জীবন খেলা। -
কবিতা- মনের কবিতা
মনের কবিতা
– অমিতাভ সরকারঅনেকদিন সম্পর্ক নেই তোমার সাথে,
কবিতা হয়নি এ কারণে।
কিন্তু তোমার সেই নাকছাবিটা?
সে তো এখনো বিচ্ছুরণ ঘটায়
আমার দৃষ্টির সামনে।
রামধনু আঁকে, বসন্তের হাওয়া বয়ে যায় মনের মাঝে;—আমের মুকুল আসে, সজনে ফুল ফোটে, অনায়াসে তুমি আসো আমার কাছে,
তোমার মুখটা কবিতা হয়ে যায়।
কবিতা হয় সজনে ফুলের ঝুমকো।
সেই ঝুমকো আমি লালন করি।হৃদয়ে ধারণ করি, আর নিবেদন করি তোমাদের জন্য।
-
কবিতা- জন্মান্তরে ভালোবাসার
জন্মান্তরে ভালোবাসা
– অমিতাভ সরকারআমিতো লিখি না তোমার জন্য তবু কেন ভিড় করো, কেন এসে স্থান নাও কলমের অন্তরালে।
পৌষের হিমেল হাওয়া জড়িয়ে থাকে নলেন গুড়ের গন্ধ নিয়ে। চলে যেতে ইচ্ছে করে ছোটবেলায় ঠাকুমার কোলে বসে পিঠে খেতে।
মনে পড়ে পিসির ডাক, তুই দুধ পিঠে খেতে এলিনা তো এখনো? সেই কাল রাত থেকে ডাকছি।
পৌষের হিমেল সকালে হলুদ গন্ধ মেখে এখনো তুমি দেখা দাও সরষে ক্ষেতে কৈশোর উত্তীর্ণ সময়ের মতো। কত ভালোলাগা ছিল, কত ভালোবাসা নিয়ে বারবার তুমি ভেসে ওঠো এই ঝাপসা চোখে। কপোত-কপোতীর ডানা ঝাপটানো দেখি, মনে হয় যেন এইতো সেদিনের কথা। আমরাও তো ডানা ঝাপটিয়েছি।দাগ না লাগা লিপস্টিকের মত আজো তুমি রচনা করো শুষ্ক ঠোঁটে আলপনা। কি এক নিবিড় ভালোবাসা। তোমার সেই মোলায়েম গোলাপি ঠোঁটে শিরশিরে বাতাস বয়! জানি না, তবু কেন কলমের ডগায় এই অনুভুতি আসে। হয়তোবা সেই কৈশোরকে এখনো লালন করতে ইচ্ছে করে।
এখনো বলতে ইচ্ছে করে তুমি ভালো থেকো, অপেক্ষা করে থাকবো জন্মান্তরে যদি দেখা পাই। আবার সেই সূর্যমুখী সকালের মতো।