• কবিতা

    বৃশ্চিক

    বৃশ্চিক
    -অযান্ত্রিক

     

    যতটা চেনার কথাছিলো,যতটা একসাথে হাঁটার কথাছিলো,
    পুরোটাই কি চিনেছি তোমায়,ততোটাই কি রেখেছি দেয়া কথা,
    বার বার জামার পকেটে পেনের কালির দাগ,
    আর আস্তিনে রক্তের হলদেটে ছোপ,শুধু পরিচয়ক ব্যস্ততা দেখায়।
    সুরঞ্জনা, ভালোবাসাটা যদি পাশে থাকা ছায়ার মতন হয়, তাই বা কম কি।

    গতকাল কিংবা দূরের কোনো কালচে শৈশবকে যখন দেখি,
    বিবেকের লাশকাটা ঘরে,যদিও ছুরি হাতে বুদ্ধিজীবী শল্য পরিচালক বলে,
    “শৈশবের তেমন কোনো স্মৃতি নেই যাকে ঠিক প্রেম বা ভালোবাসা বলে”
    অতিরিক্ত ক্ষুদাসার ভোগ করে, আমরা পরে আছি চামড়া বা পুরু শাঁসের বাকল,
    পঁচিশতম বেহায়া বসন্তের হাওয়ায়, ডুবন্ত সূর্যের আলো ছুঁয়ে যায় দিনের গোড়ালি,
    তখন মনে হয়, মানুষের ভালবাসার বড়ো প্রয়োজন, সুরঞ্জনা, বড়ো প্রয়োজন

    যতবার বোঝাতে চেয়েছি, শিশির ভেজা ঘাসের উপর হাঁটলে ভালোবাসা মাখা যায়,
    লাল মাটির রাস্তা ধরে সূর্যাস্তের দিকে সাইকেল নিয়ে এগিয়ে গেলে ভালোবাসা পাওয়া যায়,
    দুর্ভেদ্য কুয়াশার জাল সারা গায়ে মেখে রজনীগন্ধার আবদারে সাড়া দিলে ভালোবাসা হয়
    পুকুরের পার ঘেঁসে হেলে পরা নারকল গাছের পাতার জল ছোয়ার যে আকুতি তাওতো প্রেম,
    অথবা প্রথম বৃষ্টির জল, প্রথম শীতের হার কাঁপানো অনুভূতি, গরমের প্রথম দখিনা বাতাস,
    একটা একটা করে ঝরে পরা শাল গাছে ফুল, আর তাই নিয়ে কাঠবিড়ালীর আত্ম অভিসার।
    সব সব সব এএই ভালোবাসার জন্য সুরঞ্জনা,
    শুধু কার্যকর সাম্মুহিক প্রতিপক্ষের আড়ালে এই সব লুকিয়ে থাকে,
    বাস্তবতার নিরিখে বোধ করি মাথাটা নিরেট,তাই

    নিজেকে বড় প্রেমহীন মনে হয়।।

  • কবিতা

    স্থানচ্যুত

    স্থানচ্যুত
    -অযান্ত্রিক

     


    কখনো কখনো সময়োচিত অভাববোধ লিখে যায় তৃপ্তির প্রতিভাসে,
    সেতো কাব্য নয়,সেতো প্রতিভা নয়,অন্তলিন কিছু শব্দের উচ্চারণ
    একে একে গ্রাস করে নিঃস্বায়ওতা, নিজস্বতার নিপুণ নিরাময় অভিলাশে।
    চামড়ার আস্তরণ মনে হয় প্রেমিকের চিরনিদ্রার ,কবরের কয়েক মুঠো মাটি।
    নিলোফার তুমি কি এই জন্যেই ভালোবাসো মানুষ?
    যেভাবে অহমিক বিবেক হারিয়ে ফেলে দ্যুতি, নির্লজ্জ চক্ষুষ্মান চেয়ে থাকে,
    সূর্য ওঠে আবার ডুবে যায় নিঃসীমে কিন্তু সকাল হয়না রাতের আবছায়ায়।
    দুপুর গুলো বুকের বাম পাশে পদকের মতো বহন করে যায় মড়ক চিহ্ন,
    সকালটা সকাল মনে হয় না ,রাতটা রাত মনে হয় না, স্থান থেকেও স্থানচ্যুত।
    নিলোফার তুমি এর জন্যই ছিঁড়ে এসছো গর্ভ ফুল?
    স্বকীয়তা কাম্য বলছিল কোনো এক অবগুণ্ঠিত রমণী আসন্ধ্য মৈথুন শেষে,
    তার তৃষ্ণর্ত আলজিভ,তার মরাল গ্রীবা, পীন্নত বক্ষ চেয়েছিল যে উদ্দাম প্রকাশ,
    সেতো প্রেম নয়,সেতো ভালোবাসা নয়,শুধু তাল তাল মোহের আকুল স্রোত,
    আসমূদ্র মন্থন যদি অমৃতের লক্ষই হয়,তাহলে বেঁচে থাকাটাই মানে হীন,সুখহীন
    তুমি কি এএই জন্যই ছেড়ে এসেছিলে ধুধুপ্রান্তর ?
    তারচেয়ে ভ্রমরের জীবন ভালো,তারচেয়ে মৌলিকতা রক্ষায় প্রজাপতির জীবন ভালো,
    যাদের বইতে হয়না দুঃখের শ্রাব,মাখতে হয়না ক্লেদের অভ্যাস লব্ধ প্রণালিও ধারা,
    লিঙ্গের ভেদে পৌনপনিক আবেগের সম্পাতে ভারী হয় ওঠে না বসুধার দুগ্ধশীলা বুক।
    শুধু চিরন্তন বেঁচে থাকা,অমলিন প্রেমাবেগে উড়ে যাওয়া বাতাসের অচল খানি জুড়ে।
    নিলোফার এই জন্যেই কি তুমি সময়ের ব্যবধানে রক্তাক্ত?
    জানি না ,শুধু উত্তর খুজে যাই

  • কবিতা

    জলাভূমি

    জলাভূমি
    -অযান্ত্রিক

     


    মাঝে মাঝে ঘুম ভেঙে গেলে ,দেখি রাতের সদ্য কিশোরীর মতো হাসি,
    ছুঁতে চেয়ে আদর কাঙাল, মনে হয় যাই ,বিপত্নীক পুরুষের মত হেটে আসি।
    যতটা পায়ে হেঁটে পার হওয়া যায়, সেটাই সীমানা,ওপারে দৃষ্টিবর্জিত জলাভূমি,
    কতদিন যার দিকে ঘুমের মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে নিশ্চিন্তে নেমে গেছো তুমি।

     

    পায়ে ঠেকেছে নুনের পাথর,দেখেছো শিংওলা হরিণ স্বপ্ন চাটছে কিনারে,
    দূরে দুটো মাংসাশী চোখ লোভের আগুনে সেঁকে নিচ্ছে দাঁত চুপিসারে।
    ভীতুদের আঁতুর লাগা কানে ,পাখিদের শিস আর পালানোর আওয়াজ,
    তোমারও গায়ে কাঁটা, কপালে ঘাম,ভাগ্গিস অঘোরে ঘুমিয়েছিলে আজ।

     

    জানলায় মরা চাঁদের আলো,বিছানা ভাসালে, দপদপ করে কপালের শিরা
    ফোঁটা ফোঁটা অঘুমের শিশির জমে কপালে খেলে যায় ভয়ের জোনাকিরা।
    জ্বলে নেভে মুছে যায় বার বার বুকে নিয়ে মানবিক যেসব জলাভূমি,
    কতদিন যার দিকে ঘুমের মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে নিশ্চিন্তে নেমে গেছো তুমি।

     

    শরীরে শরীর লোভ,পোষমানা পিঁপড়ের মতো,গুড় চাটে, পাখা ওঠা ভয়,
    ছেনেছে নিয়ম মতো,বুক পেট চিবুক ,ভালোলাগার কেনা তরল সময়।
    মাঝে মাঝে ঘুম ভেঙ্গে যায় রাতে,ঘুমের মধ্যে ভেসে ওঠে মনের জলাভূমি,
    ওপারে শ্বাপদের ভয়ের এলাকা, মনের মধ্যে পার করছো একা জেগে তুমি।

  • কবিতা

    জ্ঞাপন

    জ্ঞাপন
    -অযান্ত্রিক

     


    হঠাৎ করে কবিতার ক্লাস শেষ হলে,
    কেঁপে যায় হাত সর্বনাশের ভাষায়।
    একে একে তারা ঝরা পাতাদের দলে,
    একলা গেলেন যীশু, বিষণ্ণ কুয়াশায়।

     

    সেই ছেলেটার প্রশ্ন গুলোয় জমা নালিশ,
    উত্তর খুজে পাবেও না কলকাতা।
    অমলকান্তির রোদ্দুরে ভেজা বালিশ,
    একলব্যের এখনো নীরেট মাথা।

     

    হাঁটতে হাঁটতে চেষ্টা করেছি জাগার,
    তীর নিশানা মাছের চোখটা বোজা।
    বিনা নক্ষত্রে আকাশ মনিও উজাড়,
    আজকে লেখা কঠিন যদিও বলেছিলে তুমি সোজা।

     

    আকাশে ছোয়ার সাধ্য আমার কোথায়,
    আবছা ধোঁয়ায়, শব্দের খই, হরিধ্বনি শোনে।
    শব্দ বুদ্ধ মিশে গেছে ঠান্ডা সভ্যতায়,
    কবিতার ক্লাস শুধু,ছেড়ে যাওয়া পায়ের ছাপ গোনে।

     

    আধাঁরের মাঝে মশাল কলম লিখবেনা আগুনে কালি,
    কুয়াশার চাদরে উলঙ্গ রাজা শিখবেনা সত্যি বাঁচা।
    তোষামোদী খাতা ভর্তি নামে ,তবু কিছু আছে খালি,
    কবিতা বাড়ির দেয়ালে দ্যাখো বনেদি পরগাছা।

     

    আগুনে বাঁচার নিয়ম আছেই, রোজ চলাচল পথে,
    কাছ থেকে নয়,দূরের থেকেই, পারলে শিখিয়ে দিও।
    ছাত হীনতায় কাঁপছে কলম ,কাঁপছে কবিতা স্রোতে ,
    খাতার পাতায় বেঁচে থাক ঘ্রাণ,নীরেন্দ্রনাথীও।

  • কবিতা

    বিকাল করে আড়ি

    বিকাল করে আড়ি
    -অযান্ত্রিক

     


    চাহিদা যখন ব্যাকুল তখন অনেক দূরে ঘর,
    ওপাশ ফিরে শুয়ে শুয়ে কেঁদে উঠলো স্বর।
    “সকাল গুলো,মুখ দেখে না বিকাল করে আড়ি”,
    অতৃপ্তির মোহর গুনে রোজ বসতি ছাড়ি।

     

    পিত্তলী মুখ ভাবনা অসুখ ,ধুলোর মতো ছোটে,
    বহুদিন তো ঠোঁট পরেনা, তৃষ্ণার্ত দুই ঠোঁটে।
    ঘরেতে তার তাপ প্রবাহ ,মাথার কাছে খোলা,
    সংসারী সুর কণ্ঠেতে তার নিয়ত হরবোলা।

     

    মেঘ ছলছল ঢুলছে চোখে শীত জমানো ভয়,
    বুকের কানাচ দেয়াল জুড়ে প্রেমের নামে ক্ষয়।
    থাকবো বেঁচে থাকবো সুখে কাজটা কঠিন ভারী,
    “সকাল তার মুখ দেখে না বিকাল করে আড়ি।”

     

    টুকরো, টুকরো নামছে আকাশ নিচুর থেকে নিচু,
    মুখ ঢেকে দেয় সংসারী মেঘ বলতে পারেনা কিছু।
    মস্তবড় ঘুন সীমানা চাহিদা দিলে ডুব,
    থাকবো বেঁচে থাকবো সুখে কাজটা কঠিন খুব।

     

    মুচড়ে দিলে ,উপরে দিলে, হামলে পরে পায়,
    অমান্য করা লোকলজ্জা বিবিধ অন্যায়।
    ইচ্ছে গুলো ঘুমিয়ে থাকে জাগে না সরাসরি,
    “সকাল তার মুখ দেখে না বিকাল করে আড়ি”

  • কবিতা

    সময় ফারাক

    সময় ফারাক
    -অযান্ত্রিক

    বাঁশি শুনেছো নিলোফার, বাঁশি,
    যা অনেকদুরের,
    কোনো রাখল ,বা মাঠে কাজ করা কোনো লোক ,
    ক্লান্তির অপরাহ্নে বাজাত ,তার প্রেমিকার,বা প্রেয়সীর জন্যে।
    তারা আজ আর বাঁশিতে হাত লাগায় না,
    তারা কালিঝুলি মেখে ,
    শুধু কারখানার ভোঁ শোনার অপেক্ষায় থাকে।
    তারা পাথর গলিয়ে বানায় ইস্পাত, মোটরগাড়ি, জামা কাপড়,শাড়ি,
    তাদের আর বাঁশি বানায় না, বাঁশি বাজায় না।

    একদিন যাঁরা আঁধার পেরিয়াছিলো,
    কাঁধে কাঁধ রেখে লড়েছিলো,স্বাধীনতার জন্য ,দেশ গড়ার জন্য,
    তাদের উত্তরসূরীরা, এখন বাড়িতে তাম্রোপত্র সাজিয়ে রাখে দেয়ালে,
    রোজ ইঁটের পাঁজা মাথায় করে ঘাম ঝরিয়ে ,উঠে যায় ইমারতি শিল্পে।
    তারা আজ আর বিপ্লবের কথা বলে না
    তার বদলে গড়ে তোলে ঘরে ঘরে,অপ্রতিরোধ্য দুর্গ,
    যার ভিতরে আটকে রাখে বঞ্চনার কাহিনী, দারিদ্রের ছেড়া চাদর,
    অভাবের খুঁটিনাটি।

    একসময় যারা ভাষার মৌলিকতার জন্য গর্জে উঠেছিলো,
    বুক পেতে দিয়েছিলো তপ্ত সীসার ঝড়ের সামনে,
    উদ্ধার করেছিল ভাষার ,মায়ের আঁচলের ছায়ার চির কালীন বন্দোবস্ত,
    ভাষার উচ্চতর উপলব্ধিতে লিখে যেতো ,বুক ,মন কাঁপানো কবিতা,
    তাদের উত্তরসূরী বড় নির্বাক আজকাল,
    তারা অন্যের ভাষায় কথা বলতে সাচ্ছন্দ বোধ করে,
    যান্ত্রিক মাধ্যমে একের পর এক অবোধ্য জটিল কবিতা ছুঁড়ে দিতে থাকে।

    যাঁরা একদিন গাইতো, বাঁশি বাজাত, কবিতা লিখতো,
    তাদের উত্তরসূরীরা আজ অন্য রকম মানুষ,
    মানব জমিন যুদ্ধের অনভিজ্ঞ সৈনিক।
    ক্লান্তি তাদের বাঁশি বাজাতে দেয় না,
    তাদের কবিতা লিখতে দেয় না।
    মানুষ আর যন্ত্রের মাঝে ফারাকটা বড় ক্ষীণ,

  • কবিতা

    এই চাওয়া

    এই চাওয়া
    -অযান্ত্রিক

     

     

    বাঁচার জন্য আমায় কি শাস্তি দেবে দাও,মাথা পেতে আছি,
    শুধু ভালোবাসা দিও না নিলোফার,কষ্ট দাও যন্ত্রনা দাও,
    কান্না দাও, রক্তারক্তি, হানাহানির যুদ্ধের শেষে যদি ফের বাঁচি?
    অথবা মরে যাই, তাহলে চিতা কাঠের দামের মতো অগ্রিম দাও।

     

    ভালোবাসার জন্য, ছেড়ে এসেছি মায়ের কোল বাবার আদর,
    কোনো কিছুই আনিনি সঙ্গে করে, না জামা, না খাদ্য না পানীয়,
    কুয়াশার মাঠ, সকালের খেজুরে গাছ, বাঁশ বনের হৈমিক স্বাক্ষর।
    শুনেছিলাম প্রেমের শহরে পাওয়া যায় সব, ভুল, ঠিক টা জানিও।

     

    ভালবাসার জন্য ছেড়ে এসেছিলাম পরীর বাগান, শুড়িখানা,
    ছেড়ে এসেছিলাম মাতালের আনন্দ, মায়ের মাটির আঁচল,
    বিছানা বালিশ যতবার টেনে ধরেছে ততো বলছি যাবোনা।
    সেই না বলার অপরাধে আজ প্রেম নয়, শাস্তি দাও ওটাই আসল।

     

    ভালবাসার শর্তে আমি চাই হাজার হাজার মানুষের জন্য খাদ্য,
    ভালোবাসার শর্তে আমি চাই লক্ষ লক্ষ দ্রৌপদীর জন্য বস্ত্র।
    ভালোবাসার জন্য আমি চাই হিংসাগ্রাসী প্রেম, নেশা আর নারীর মতো।
    এই চাহিদার জন্য আমায় কি শাস্তি দেবে দাও,নিলোফার আমি মাথা পেতে আছি

  • কবিতা

    সম্পাত

    সম্পাত
    -অযান্ত্রিক

     

     

    অনেক চোখের তারায় আমি আঁধার দেখেছি,অনির্বান
    অনেক হাসিতে রোদ্দুর, কুয়াশা, শীতের সকাল।
    চোখের কোন ভেজানো শিশিরে শুনেছি অভিসম্পাত, মৃত্যুহীনতার।
    তাই আজ আর মৃত্যুর ভয় নেই,
    একবার কৃষ্ণ দ্বাদশীর চাঁদে দেখেছিলাম রক্তিম শ্লেষ,
    দীর্ঘ রোগে ভোগা নদী আমার দিকে আঙ্গুল তুলে বলেছিলো,
    তোমার রক্তে লোহিত কণিকার মধ্যে মিশে যাবে বহুগামিতা,
    গণিকার তরল হাসি, ঠোঁটের কোণে জমানো লালসার হাতছানি,
    সারি সারি ধবল দাঁতের উপর সাজানো সতীত্বের চিতা,
    ভাঙা হাঁড়ি, ছেড়া তোষক, ছুঁড়ে দিয়ে যাবে আশ্রমিক চুম্বন,
    “কোনো ব্যাধি তোমাকে ছুঁতে পারবেনা,”

    একবার কিছু শ্মশান যাত্রী তুলে দিয়েছিলো আধঃপোড়া নাভিমূল সমেত মাটি,
    কপালে দিয়েছিল পোড়া চিতার কালো তিলক,
    বলেছিলো তোমার জন্ম হলো,
    এই জন্ম তোমায় বয়ে নিয়ে যেতে হবে শতাব্দীর পর শতাব্দী।
    তোমার হাতে ভেঙে যাবে শাঁখা, খুলে যাবে বেবুশশার বসন,
    উন্মুক্ত বক্ষ, স্তন।
    কিন্তু”তোমার কোনো পাপ হবে না”

    বসন্তের অমোঘ আবেগগ্রাসী বাতাস ছুঁয়ে যাওয়ার পর,
    অহংকারী রমণীর কণ্ঠহার হয়ে উঠবে তোমার শালিত পাঁজর।
    তোমাকে জড়িয়ে থাকবে আগুন তপ্ত নীল মৃত ভাবনার উপত্যকা,
    যুদ্ধ ক্লান্ত ছিন্ন ভিন্ন মাংসপেশী, লাল মাংসের মাঝে জেগে থাকবে ঘুণপোকা।
    “কোনো প্রেম তোমাকে ছোবে না, কোনো ক্ষয় তোমাকে স্পর্শ করবেনা”
    শারীরিক দ্বিধাবোধ জনিত ফাঁসি কাঠ তোমার ঠোঁটের উপর এঁকে যাবে স্নেহ চুম্বন।
    “তোমার কোনো মৃত্যু হবে না শুধু প্রতিবাদ হীনতায় বেঁচে যাবে সারাক্ষণ।“
    তাই আজ আর মৃত্যু ভয় নেই
    তাই আজ আর প্রেমের ক্ষয় নেই
    তাই আজ আর বাঁধনের আশ্রয় নেই।
    শুধু গত জন্মের দোষ খোঁজা ছাড়া

  • কবিতা

    কিন্তু এই আমি

    কিন্তু এই আমি
    -অযান্ত্রিক

    তোমারা কবিতা লেখো, রঙিন জামা পরে পার্কে, কবিসভায় যাও,
    সুদৃশ্য হোটেলে মোমবাতি আলোয় রাত্রি-আহার, প্রায় উন্মুক্তা সঙ্গিনী,
    চটুল নেশাকীর্ণ হাসিতে গিলে নেয় কবিতা বীর্য, জানি সেটাও।
    কিন্তু, এই আমি,
    সাতাশ লক্ষ শব্দের ধর্ষণের পরেও একটা পছন্দের শব্দ লিখতে পারিনি।

    বন্ধুরা, তোমরা যারা আধুনিক কবি, তোমাদের কলমে অযুত শব্দের খনি,
    মনের মতো শব্দের কি সহজ ব্যবহার, সাজাও সনেটে। সাজাও পয়ারে,
    অথবা অমৃতাক্ষরে, সে সব কবিতার রথ হাততালি কুড়ায় মানুষের দরবারে।
    কিন্তু, এই আমি,
    শব্দের অনাহারে ভুগী, কলমে যক্ষার কাশি ওঠে, মনের মতো শব্দ খুঁজি, যখনি।

    বাসে ট্রামে রাস্তায় চিৎকার করে ছুড়ে দিতে পারি শব্দ “আকাশ বাতাস নদী নারী”
    কেউ বারণ করে না, কেউ শোনেও না সেই সব শব্দ, সেই সব বৃথা উচ্চারণে,
    চারপাশে বোদ্ধার চোখ, চেখে দেখে তোমাদেরই শব্দের নির্যাস আর কল্পনা গোনে।

    কিন্তু, এই আমি,
    সহস্র অযুত কোটি শব্দের ভীড়ে, মনের শব্দ “প্রতিবাদ”খুঁজলে, ফিরে পাই শব্দের মহামারী।

    যেখানে তোমাদের ভীড়ের কবি সভা, সেখানে পৌঁছে দিতে চাই কিছু নিরক্ষর লোক,
    যাদের জমি খয়রাত হয়েছে মহাজনের খাতায়, আঙুলের ছাপে, প্রেমিকার মতো,
    তোমাদের মহার্ঘ্য কবিতার উৎসবে শাসকের উত্তরীয় ঢেকে দেয় অগুনতি ক্ষত।
    মানুষের রক্তের মতো শব্দ “প্রতিবাদ” পানপাত্রের তলানিতে ডুবে থাকে মুক্তি আরোক।
    কিন্তু এই আমি,
    কলমের শুষ্ক প্রতিভাসে হারিয়ে যাই, আঁকড়ে ধরতে গেলে,
    বালির মতো, সরে সরে যায় মনের মতো স্রোত,
    নিস্তব্ধতা ছাড়া কিছুই থাকে না হাতে পারে।
    শুধু এক নির্বাক কলমের হাহাকার।

  • কবিতা

    নাবিক

    নাবিক
    -অযান্ত্রিক

    উন্মোচনের সন্ধী যখন তালাশ করে চিরুনী সুখ,
    তোমার দেয়া নকশী কাঁথা বার বার শুধু বদলায় মুখ।
    সকাল সকাল চায়ের কাপে,হাল্কা হাসি চোখের জল,
    দোহাই কলম, তরপে গেছি, মিষ্টি প্রেমের গল্প বল।

    একটা আশিক একখানা প্রেম ,একলা থাকা গেস্টহাউসে,
    হোকনা কিছু গল্প শুরু, খুনসুটি রাত থাক সবুজে।
    গল্প শুনে, চলকে গেলে, চায়ের কাপের দোষ দেবো না,
    একলা থাকা সবাই জানে,নিঃসঙ্গতা আর ভেবো না।

    হেডলাইটের আধার গুলোয় শ্যাওলা ধরা সব দেওয়ালে,
    চুপটি করে চিমটি কাটে তোমার গল্প শুনবে বলে।
    দূরে কোথাও নীল নদীটা বলে ওঠেও ছলাৎ ছল,
    পায়ে পড়ি ভাই বন্ধু কলম একটা প্রেমের গল্প বল।

    ভালো লাগার বদলাতে স্বাদ বিষের সাথেও ঘর করি,
    নিজের ঘরে দরজা চিনেও, অন্য ঘরের কড়া নারি।
    বলতে পারো ভীমরতি ভাই,আমি বলবো, তবে তাই হোক,
    বাড়তে থাকা তিক্ত ভিড়ে, খাটছে বেদম একখানা লোক।

    সব কলমেই কান্না দেখি,নয়ত বিষাদ , রুমাল গুলোয় রক্ত মাখা,
    বারুদ গন্ধে মাতাল বাতাস লণ্ঠনে রাত দেখছি একা।
    কাঁপতে থাকা হলদে শিখায় ভোট দিয়েছে জোনাকির দল,
    দোহাই নাবিক জাহাজ ঘোরা, মিস্টি প্রেমের দেশেই চল।

You cannot copy content of this page