-
কবিতা- প্রেম-কথা
প্রেম-কথা
-সুমিত মোদকসময় কি ভাবে চলে যায় জানে না প্রেমিক যুগল ;
নদির মতো গতি পরিবর্তন করা
খুই কঠিন হয়ে ওঠে ;তবুও তো স্বপ্ন দেখতে থাকে ভেসে থাকা
ছোট ছোট নৌকা গুলো ;যে দিন মাঝি হয়ে এপার থেকে ওপারে যাবো ;
ছুঁয়ে আসবো নিজেরই শিকড় ;
এখনও ঠিক ঠিক জানা হয়নি ঠিক কতটা
মাটির গভীরে ছড়িয়ে দিয়ে আছে ;সময় পেলেই অসময়ও ছুটে যায় নদীর কাছে ;
নিজস্ব প্রেম-কথা স্রোতে ভাসিয়ে দেবে বলে ;প্রেম জেগে থাকে বলেই বিকালের আলো
মায়াবী হয়ে যায় প্রতি বার , বার বার । -
কবিতা- অভিমুখ
অভিমুখ
-সুবিনয় হালদারপাইন গাছে আইন ঝুলে চোখ বুজিয়ে দোলে
খবর হলো মিথ্যে কথা আনন্দে বর্তমান ভয়ে ;
সবাই কেমন ভীড় করে সব দেখছে সদলবলে !ফুসুরফাসুর গুজুরগুজুর নানান মুখে ঘোরে
ঠিক ভুল বুঝিনে বাপু পট্টি খুলে শক্ত তুমি হলে,
শ’কৌরব থাকতো বেঁচে গৌরবে দীর্ঘায়ু ধরে !তুমি ভাবছ কেউ বোঝেনা গুলিয়ে দিলেই হলো
ঘোলা জলে সাঁতার কাটবে ওরা আমি শুধুই খাবো ;
লড়িয়ে দিয়ে বিলিয়ে দেবো কিলিয়ে নেবো অন্য পথে
আহাম্মক মূর্খ যারা তাদের কাছে এটাই অনেক !সেই ছকে ছকবাজিটা চলছিলো বেশ বেগে
হঠাৎ করে শনিরদশা ব্রহ্ম রূপে প্রজা-পতি এসে
অভি-মুখটা ঘুরিয়ে দিলো চোখ পাকিয়ে রেগে !মায়ায় ভরা এসংসারে আমিও তো মানুষ
জ্বালিয়ে দিয়ে উড়িয়ে দেবো জালিয়াতির ফানুস ;
একটু আধটু ভুলভ্রান্তি হয়েই থাকে সবার
তা বলে কী ছেড়ে দেবো পুরানো অভ্যাস ?এই-না বলে আওয়াজ তুলে হাঁক দিলেন তিনি
সবার সেরা সবুজ ঘেরা আমার মাতৃভূমি । -
কবিতা- শরীরী পলির ছড়ে ব্রজের বন্দিশ
শরীরী পলির ছড়ে ব্রজের বন্দিশ
-অসীম দাস
এখনও বিরহে টান , বানপ্রস্থে যাবো কেন ?
আয়ুর ধৈর্য্য কম , পুড়ে যায় দ্রুত ।
অথচ মনের বৃন্তে যৌবনের পাখা
চনমনে বনবন , হয় না বিচ্যুত ।
অপ্রেমের কুরুক্ষেত্রে নয়
এ ব্রজজন্মে এই সবে জন্মালাম যেন !শরীরী পলির চরে কোথা থেকে
এক অনির্বাণ নদী জেগে ওঠে ।
বিকেল বেঞ্চে বসা ম্যাড়মেড়ে মোহানার দল
— বেশ আছি লড়ঝড়ে , ভেবে
খোঁজে না অন্য কোনও বন্য হদিশ ।
আমার সুশ্রুত স্রোতে বালিয়াড়ি ডুবে গিয়ে
বারবার ‘ মধুকর ‘ ফোটে ।
সাতসুরে বাঁধা আছি , বেঁধেছো নীলাম্বরী
তুমি ছাড়া আমি কী লিখতে পারি
খাপছাড়া ডিএনএ’র এমন বন্দিশ ! -
কবিতা- তমসার ব্রীড়া
তমসার ব্রীড়া
-শুক্রাচার্য্য…চন্দ্রিমা প্লাবিত সলিলে চিত্তের তরণী
যত স্বপ্ন সে স্রোতে ভেসে যায়…
অলির গুঞ্জনে শরমের অভিষেকে
অপলক শির নিশিথের ন্যায়…
হিমিকার বিন্দুর মতো স্মৃতি যত
চিত্তের সায়াহ্নে মালা গেঁথে…
হৃদয়ের সোপান তলে জলধির তরঙ্গ
চিত্তের শ্বশ্মানে মৃত্যু বেঁধে…
চারুতার আমি কালিমাখা লজ্জা
অপছন্দের চেনা অচেনা লগ্নে…
কৌমুদী রজনী চলে গেল সেদিন
নির্ভুল রুদ্রাণী নিপুণ আচরণে…
ঝটিকার বারি চূর্ণ বিচূর্ণ করেছে
কত শত ভাবনা না জানি…
জন্ম অসমাপ্ত মৃত্যুর নাহি অন্তিম
কায়া শুধু চিতার ফুলদানি… -
কবিতা- নিজেই নিজের খোঁজে
নিজেই নিজের খোঁজে
-অসীম দাস
ফিরছি নিজের কাছে
আমায় ছেড়ে নড়ছে নোঙর ইচ্ছে খেলো মাছে ।মাছ খেয়েছে স্মৃতি
মাছের পেটে লুকিয়ে আছে নামের আগে ইতি ।কী যেন সেই নাম?
ইতিই শুধু যাচ্ছে বোঝা, নাম গায়ে চুনকাম ।কোথায় যাবো এবার ?
পরিচিতির প্রমাণ দেবার সাধ্য যে নেই আমার ।উৎস ফেরায় মুখ
মাঝনদীতে কাটছি সাঁতার সাগর দেবে সুখ।সুখ পাওয়া কী সোজা?
আগুন জলের সন্ধি তলায় প্রেম হারিয়ে খোঁজা ।খুঁজছি অন্ধকারে
নিজের কাছে ফিরবো বলেও হারাই বারেবারে । -
কবিতা- ঠোঁটকাটা
ঠোঁটকাটা
-সুবিনয় হালদারসব জিনিস দেখতে পাওয়া
সব জিনিস শুনতে পাওয়া
নিজেকে নিজে এক-বুক নদী কষ্টে হাবুডুবু খাওয়ার সামিল !
সেই সঙ্গে শত্রুর সংখ্যা অহেতুক বৃদ্ধিতে জীবন্ত আত্মাকে চক্রবূহ্যে ঘেরাটোপে আবদ্ধ করে,
নিজেকে কাঁটাতারে টুকরো-টুকরো ক্ষতবিক্ষত রক্তক্ষরণে ভাসানো !
বিশেষ করে যদি আপনি সব কিছু বুঝতে পারেন-
ধরে ফেলতে পারা- অনুভব করতে পারার বিলুপ্তপ্রায় শ্রেণীর অংশ হয়ে থাকেন,
তাহলে আপনার কপালে দুঃখ ছাড়া আর কিছুই নেই-
এই বলে দিলুম ।
এরপরও যদি আপনি ঠোঁটকাটা হন
সবার সামনে সত্য বিবেককে মান্যতা দিয়ে অকপট ভাবে ভাব-ভালোবাসা দেখিয়ে কণ্ঠ চর্চা করেন-,
তাহলে জানবেন আপনার মহাপ্রস্থানের দিন আগত !
এর জন্য অবশ্যই আপনার জন্য একটা পুরস্কার জুটবে-
তা হলো- তিরস্কার কিংবা উপহাস !
সে আপনি মানুন আর নাই মানুন ।
তাই আগ-বাড়িয়ে প্রতিকূলগামী না হয়ে অনুকূল-গামী হয়ে মচ্ছবে সামিল হোন আর কৃষ্ণ ভজন করুন ;
দেখবেন মানসিক শান্তি পাবেন
“যে তৃষা জাগিলে তোমারে হারাবো সে তৃষা আমার জাগায়না,
যে ভালোবাসার তোমারে ভুলিবো সে ভালোবাসায় ভোলায়না “ -
কবিতা- মাটির সুর
মাটির সুর
-সুমিত মোদকনতুন করে শুরু করাটা মোটেই সহজ নয় ;
একটা একটা করে পুরানো সকল স্মৃতি মুছে ফেলে ,
আল্পনা দেওয়া উঠান জুড়ে ;দিগভ্রান্ত পাখি আকাশ পথে উড়তে উড়তে
নেমে আসে মাটির কাছাকাছি ;
তার পর খুঁটে খুঁটে তুলে নেয় শস্য দানা ;
মাদি ছাগলের পিঠে চড়ে কিছুক্ষণ রোদ্দুর
মেখে নেয় সারা শরীরে ;আলপথে কৃষকের পদ চিহ্ন থেকে যায় ;
সে পথেই এগিয়ে চলতে হবে সামনে ,
দিগন্ত রেখার দিকে ;
এক এক করে যখন সকলের ভুলে যাও চেনা মুখ ,
ঠিক তখনই ভেঙে পড়া কাকতাড়ুয়া
বড় বড় চোখ তুলে থাকিয়ে থাকে আকাশের দিকে ;এই বুঝি কুয়াশা নেমে আসবে আবাদি জমি জুড়ে ;
হৃদয়ের অলিন্দ জুড়ে ;
তবুও তো কেউ কেউ এখনও মেঠো সুর তোলে ;
শুনিয়ে যায় মাটির সুর ,
আনন্দ উৎসব কথা ;ঘরে ঘরে নতুন চালের ঘ্রাণ ওঠে ;
শিশুরা মুখস্থ করে ধারাপাত , নামতা …এ সকল ছেড়ে , সুতি খালের ওপারে গিয়ে
পা ফেলাটা সহজ কাজ নয় ;
ওপারে অনেকটা জায়গা জুড়ে সবুজ ঘাস ;
সেখানেই ঘুড়ে বেড়ায় , উড়ে বেড়ায়
সেই পাখিটা ; -
কবিতা- টুকরো মনের অল্প কথা
টুকরো মনের অল্প কথা
-শুক্রাচার্য্যটুকরো পানার ফুল ফুটেছে ভর দুপুরে…
ঘাস ফুলেদের ঘুম ভেঙেছে রং নুপুরে…
টুকরো আলোর ঝিকির মিকির অল্প কথা…
আকাশ ছাড়া নীহার বুকে ভীষণ ব্যথা…
টুকরো আলোর খামখেয়ালে গানের তালে…
টুকরো নদীর উজান বেয়ে আকাশ চলে…
টুকরো আমি টুকরো তুমি টুকরো সবাই…
টুকরো কিছু আঁকড়ে ধরে বাঁচছি তো তাই…
টুকরো দিয়ে তৈরি করা অসীম ঘরে…
অনন্তকে রাখবো এনে বন্দী করে… -
কবিতা- বোধের ছায়া অশথ পাতায়
বোধের ছায়া অশথ পাতায়
-অসীম দাস
এ পথ ও পথ সে পথ ঘুরে
ঘুমের ঘুর্ণিপাকে ,
তাকিয়ে আছি ‘ বোধহয় ‘ চোখে
কালকে পাবো তাকে ।‘ তাকে’র মানে ‘ তুমি ‘ই কেন !
দৃশ্য হতে পারে ,
কিংবা গাভীন বোধের ছায়া
অশথ পাতার আড়ে ।সার বুঝেছি , সত্য না হোক
স্বপ্ন সুজন দামী ,
ভাটার শোকে উজিয়ে উড়ান
আসবে উজানগামী ।— উজান , উজান , উৎসে যাবো
সূর্য টলোমলো ,
আয়ুর আলো বিকেল ছুঁলো
সময় ফিরে চলো ।ফেরার নদী পেরিয়ে ফেরাও
আর এক জন্মদ্বীপে ,
নতুন জন্মে , নতুন দৃষ্টি
পাতবো নতুন ছিপে ! -
কবিতা- স্বামী
স্বামী
–প্রদীপ শর্ম্মা সরকারছাই ফেলতে ভাঙ্গা কুলো,
দাঁত তো নয় সাদা মূলো।
বেরোজগেরে ধম্মের ষাঁড়,
ফুটো নৌকোয় বাইছে দাঁড়।জড়দ্গব নারাণশিলা,
দুষ্টকোপী পাথর নীলা।
দুচক্ষের নষ্টবালু,
ভীমরতি বেশ আলুথালু।নীরেট মাথা গবেট ষণ্ড,
পত্নীপ্রিয় আকাট ভন্ড।
দৃষ্টিনিরোধ গন্ধমাতন,
নিমের ডালের কষ্ট দাঁতন।বংশীধারী কলির কেষ্ট,
মদমত্ত মাতাল শ্রেষ্ঠ।
চোরের সাক্ষী গাঁটকাটা,
যূপকাষ্ঠে বলির পাঁঠা।তামাদি এক সাবেক ঢেঁকি,
অবিশ্বাসী বেজায় মেকী।
ঘ্যানর ঘ্যানর সারাক্ষণ,
গায়ে এঁটুলি অনুক্ষণ।কথার ‘পরে কথা সাজায়,
পিরিং পিরিং সেতার বাজায়।
অকাজ পেলে বেজায় ফুর্তি,
টগবগিয়ে ঘোটক মূর্তি।প্যাচালপারা খেয়াল গান,
গিলতে হেথায় হোথায় যান।
ঠিক ধরেছ,ইনিই আমি,
হতভাগা মূর্ত স্বামী।