-
কবিতা- অবহেলার কবিতা
অবহেলার কবিতা
-কৃষ্ণ বর্মনসব অবহেলা শুধু তোমার জন্য নয়
কিছুটা না হয় নিজের জন্য তোলা থাক
সব অবহেলা যে ইচ্ছে করে আসে না
তা বুঝেও তোমার অভিমান একেবারেই অসঙ্গত
সে দাবী আমি করি না
শুধু এ টুকু জানি তোমার থেকে
নিজের জন্য অন্তত একশো শতাংশ বেশী অবহেলা
নিজের জন্য বরাদ্দ
তুমি কিছুটা বোঝো
কিছুটা বুঝতে পারো না
কারণ আমার সবটা আজও
তোমার কাছে খোলা পাতা নয়তোমার রাগ হতে পার
দুদিন বন্ধ রাখতে পারো নিজের ফোন
ভীষন অভিমানে গোপনে বইয়ে দিতে পারো অলকানন্দা
তবুও কিছু পাতা না পড়াই থাক
সবটা পড়ে ফেললেই তো বুঝে যাবে
সব অবহেলা অবহেলা নয়
অবলীলায় তা প্রেমের উপন্যাস হয়ে উঠতে পারে
উপন্যাস না হয় লিখুক অন্য কেউ
আমি যেন শুধু লিখতে পারি কবিতা
ইঙ্গিতে কিংবা ইষৎ ইশারায়
কিছুটা তোমার আর অনেকটা আমার জন্য
অবহেলায় -
কবিতা- বদলের গান
বদলের গান
-কৃষ্ণ বর্মনআজ তোমরা আঘাত হেনেছো
গতকালও তোমরা আঘাত হেনেছিলে
আগামীকাল তোমরাই আঘাত হানবে
এ সবটাই আমরা জানি
কালো কাপড়ের আড়ালে মুখগুলো
অন্ধকারেও স্পষ্ট চিনিতোমাদের অস্ত্র আছে
আমার আধা দেশবাসীর বস্ত্র নেই
অন্ন নেই মুখে
দেশ জুড়ে অশ্লীল মুজ্রা
মোসাহেবরাই শুধু সুখেতোমরা মত্ত ধর্ম নিয়ে
কর্মে হাহাকার
জনগনমন স্তব্ধ আজ
হায়নার চীৎকারআমরা তাই কথা বলি
মিছিলে তুলি স্লোগান
আঘাত যতই তীক্ষ্ণ হোক
গাইবই বদলের গান। -
কবিতা- নাগরিকত্ব
নাগরিকত্ব…
-কৃষ্ণ বর্মননগরে নগরে সীমারেখা
নাগরিকের সাথে নাগরিকের দূরত্ব
সে তো তোমাদেরই তৈরী করা
জাতির সাথে জাতির
ধর্মের সাথে ধর্মের বিরোধ
তোমরাই নিয়ন্ত্রন করো সুকৌশলেমানুষ বড্ড বোকা
অতি চালাক সাজতে গিয়ে
নিজেই তৈরী করে নিজের ফাঁসির দড়িভারত বাংলাদেশ পাকিস্তান ইস্রায়েল এভাবেই বেঁচে থাকে
আমরা শুধু মৃত্যুর প্রহর গুনি
একদিন নগর মিশে যাবে নগরে
আজও সেই মিথ্যে বাণী শুনি। -
কবিতা- নদীর ইতিকথা
নদীর ইতিকথা
– কৃষ্ণ বর্মননদীটির সাথে কথা হয় না আর
দাঁড়িয়ে থাকে না আর পথের বাঁকে বাঁকে
এখন মোড় ঘুরলেই মরুভূমির আলিঙ্গন
পূর্নিমার গভীর রাতে আসে না জোয়ার
দুঃখ ক্লান্তি হতাশাকে ফিরিয়ে নেয়না সাগর
নদী এখন নিরুদ্দেশভিতরের নদীও নিরাপদে নেই
ভাঙন শেষ হয়েছে বহু আগেই
এখন শুধু পলি জমে
হৃদয়ের মোহনায় ধূ ধূ বালিনদীর সাথে কথা হয়না আর
না ভিতরে, না বাইরে
এখন শূন্য অন্তঃসারনদীরা এখন এড়িয়ে যায়
নদীরা কথা বলে না
নদীরা নদীর মত চলে না -
কবিতা- মিথ্যে নও সবটা তুমি…
মিথ্যে নও সবটা তুমি…
কৃষ্ণ বর্মনতুমি যতই মিথ্যে হও
তোমার সব কিছু মিথ্যে হতে পারে না
তোমার অনুভব অনূভূতি আজও শাশ্বত
তোমার ফেলে যাওয়া স্মৃতি আজও সজীব
তোমার পড়ন্ত বিকেল নির্ঘুম রাত
মিথ্যে হয়ে যায়নি সবটা আজও
তোমার বেহিসেবী ভাবনায়
আজও থমকে যায় হাতের কাজওতুমি মিথ্যে বলেই
তোমার সত্যিগুলো বেশি করে ভাবি
তোমার কল্পনার বিলাসী খেয়াল
আমার খুশীর চাবি
তুমি মিথ্যে
আমি মিথোজীবি স্বপ্নের দোসর
সত্যের শিসমহল ভেঙে সেই যে গেলে
আজও নেই কোনো খবর -
কবিতা- আমিও বলতে পারি
আমিও বলতে পারি
– কৃষ্ণ বর্মনকিছু বলছি না বলে এই নয়
যে আমি বলতে পারিনা
আসলে আমি এখন কিছু বলতে চাইছি না
সব সময় আমাকে বলতেই হবে
এই রকম শিশু সুলভ মানসিকতা
বহু আগেই আমি বিসর্জন দিয়েছিতোমরা যা ভাবছো তা একদম ঠিক নয়
সৃষ্টি কর্তা আমাকে বাকশক্তি দিয়েই পাঠিয়েছেন
কিন্তু কখন বলতে হবে তেমন কোনো নির্দেশ দেননি
সতরাং বলাটা আমার উপর নির্ভরশীল
আমার নীরবতায় তোমারা বিরক্ত হতে পারো
আমাকে ভীত ভাবতে পারো
তাতে আমি বিচলিত নইআমি জানি আমাকে কখন বলতে হবে
কি বলতে হবে
আমার ব্যাপারে না ভেবে
নিজের ব্যাপারে ভেবে দেখো
ভেবে দেখো তোমাদের কিছু বলার আছে কিনা
সময় সুযোগ বুঝে আমি আমার কথা ঠিকই বলবো। -
কবিতা- পার্শ্ব
পার্শ্ব
– কৃষ্ণ বর্মনপাশে থাকে যারা
চিরকাল পাশেই থাকে তাঁরা
পিষে যেতে যেতে পার্শ্বীয় চাপে দুমরে মুচড়ে যেতে যেতে
অস্তিত্ব সংকটের মুখোমুখি হলেও
সম মান সম সম্মান তাঁদের প্রাপ্য নয়-অজুহাতটা বেশ ভালো
কিন্তু সেই অজুহাত তাঁরা মানবে কেন
অজুহাত যত দৃঢ় হোক
প্রতিরোধ প্রতিবাদের জন্যও আরও দৃঢ় দু’টো হাত আছে তাঁদেরকাপুরুষরা রাতের অন্ধকারকেই বেশী পছন্দ করে
দিনের আলোর পাশাপাশি তো পার্শ্বরা হাঁটে -
কবিতা- যুদ্ধ চলছে..
যুদ্ধ চলছে..
-কৃষ্ণ বর্মনওদের বলে দেওয়া হয়েছে যুদ্ধ করতে হবে
কিন্তু যুদ্ধ কাদের বিরুদ্ধে?
যুদ্ধটা কেন?
এসবের ওরা কিছুই জানে না!
এটাই নিয়ম,
ওদের জানানো হয় না কোনো দিন
ওরা শুধু জানে যুদ্ধ করতে হবে.যুদ্ধ চলছে..
আদি মধ্য অন্ত ছাড়াই
যুদ্ধ চলছে
কার্য কারণ বারণ ছাড়াই
যুদ্ধ চলছে
সকাল বিকাল রাত্রি
যুদ্ধ চলছে
নিরাপদ নেই যাত্রিওরা জানে না
ওদের জানানো হয় না
ওদের জানতে নেই
কেন কখন কাদের বিরুদ্ধে
যুদ্ধ— -
কবিতা- কি আর বলবো
কি আর বলবো……
-কৃষ্ণ বর্মন….যাকে বলতে চেয়েছিলাম
যাকে বলবো ভেবেছিলাম
এতদিন সে কিছুই শুনতে চায়নি
কিছু বলতে গেলেই জুটেছে বদনাম
বরং না চাইলেও তাঁর কথাকে শুধু আমি নয়
সবাইকেই শুনতে হয়েছে বিনা প্রশ্নেএকবার জোর করে বলার দুঃসাহস দেখাতে গিয়ে
শুধু অপমান অপবাদ হজম নয়
আমার জুটেছিল অপরাধীর তকমা
পাশের পাড়ার অমুক দিদিমনিকে পেতে হয়েছে
চরিত্রহীনের শংসাপত্র
আমার দেশেরই তমুক বাবুকে বলা হয়েছে
বিদেশী বিবাদকামীর দালাল
এরকম আরও অনেকে বলতে চেয়ে
চোপ থাকার ধমক শুনেছে তাঁর কাছ থেকে
যাকে আমিও কিছু বলতে চেয়েছিলামতিনি সব দেখেন
সব জানেন
সবই নাকি তাঁর শোনা
তবুও আজও তিনি আমার বা আমার মত হতভাগ্যের
হদিশ খুঁজে পাননি
আমি কিছু বললেও
শুনতে পাননি
আসলে এতদিন কিছু শুনতেই চাননিএখন যতই আমার বা আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে
হাত জোড় করে তিনি বলেন–
“আমাকে বলো।যার যা বলার শুধু আমাকেই বলো।”
এখন যখন আমার কাছে আর কিছুই বলার নেই
ভয় বা শ্রদ্ধা যাই থাকুক
তখন ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে
কি আর বলবো। -
কবিতা – আমার আরও সাহস চাই
আমার আরও সাহস চাই…
কৃষ্ণ বর্মন...আমার আরও সাহস দরকার
আমার মা আমাকে যে সাহস দিয়েছে
আমার বাবা আমাকে যা সাহস দিয়েছে
আমার শিক্ষক আমাকে যে সাহস দিয়েছে
এমন কি আমার প্রেমিকা আমাকে যে সাহস দিয়েছে
সব সাহস এক করেও কোথায় জানি
খামতি রয়ে যাচ্ছেআসলে সবার সাহসে চলতে চলতে
বোধহয় নিজের সাহসটাই ভুলে যাচ্ছি
এবার একটু নিজের সাহসেও চলতে চাই
আর সাহস করে বলতে চাই
তোমাদের সবার সাহস পেলেও
আমার আরও সাহস চাই।