-
কবিতা- যা ইচ্ছে তাই
যা ইচ্ছে তাই
– তমালী বন্দ্যোপাধ্যায়ইচ্ছে হলে বলবো কথা,
ইচ্ছে হলে বলবো না।
ইচ্ছে হলে খুলবো এ মন,
ইচ্ছে হলে খুলবো না।ইচ্ছে হলে বাসবো ভালো,
ইচ্ছে হলে বাসবো না।
ইচ্ছে হলে শুনবো কথা,
ইচ্ছে হলে শুনবো না।ইচ্ছে হলে লিখবো আমার-
মনের যত অনুভব।
ইচ্ছে হলে মুছে দেবো,
জমিয়ে রাখা স্মৃতি সব।ইচ্ছে হলে খুব চেঁচাবো,
বুঝবে তখন গলার জোর!
ইচ্ছে হলে চুপটি করে,
নিজের মনে, শান্ত স্বর।ইচ্ছে হলে সবার মাঝে,
খুঁজবে তোমায় দু’টি চোখ।
ইচ্ছে হলে সবার মাঝেও
একলা মনই সঙ্গী হোক।ইচ্ছে হলে যা খুশী তাই-
করবো আমি- আমার মন।
ইচ্ছেমত স্বাধীন হবো।
শুনবো না কোনো বারণ।চলবো আমার ইচ্ছেমত।
যতই তোমার রাগটি হোক।
ইচ্ছে আমার মনের সাথী,
যে যা বলে, বলুক লোক। -
কবিতা- সৃষ্টির ধারা
সৃষ্টির ধারা
-তমালী বন্দ্যোপাধ্যায়স্রষ্টা সুন্দর।
সুন্দর তাঁর সকল সৃষ্টি।
সুন্দর এই পৃথিবী, উদ্ভিদ, পশুপাখি, মানুষ।
তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ, কথা বলে।
তার শরীর আছে, মন আছে, প্রেম আছে।নারী-পুরুষের প্রেম।
কাছে আসা, ভালোবাসা, গর্ভধারণ, নতুন সৃষ্টি।
বয়ে চলে জীবনের ধারা।
বড় সুন্দর এই সৃষ্টির খেলা।
বড় স্বাভাবিক তার ছন্দ।
এর মাঝে কোন পাপ নেই।যদিও মানুষ উন্নত জীব।
নিজস্ব যা কিছু গোপনীয় রাখে।
ঘর বাঁধে তাই।
একটা নিরালা ঘরে…গোপনীয় স্নানঘর, নির্জন গোপনীয় শয়নের ঘর।
সভ্য মানুষ গোপনীয়তা খোঁজে।মন আছে তার।
তাই কখন বা মন ভাঙে, ভাঙে বিশ্বাস।
তার সাথে ভেঙে যায় সাজানো সে ঘর।যতই থাকুক এই কাটাকুটি খেলা।
তাও সে সারাটি জীবন ধরে খুঁজে চলে সম্পর্কের ঘ্রাণ আর ফিরে পেতে চায় এক স্থিতিশীল সংসার।
বয়ে চলে সৃষ্টির ধারা।। -
গল্প- মধুচন্দ্রিমা
মধুচন্দ্রিমা
-তমালী বন্দ্যোপাধ্যায়চলো রানী, অনেক তো সংসার করলে, আর কেন?চলো সংসার ছেড়ে পালাই। আগেকার দিনে বয়স বাড়লে বাণপ্রস্থে যেতো, চলো আমরাও এবার যাই, বলে সুশান্তবাবু তাকালেন রানীর দিকে। আজ চল্লিশ বছর ধরে সংসার করলে…ছেলেমেয়ে মানুষ করলে, বিয়ে দিলে…এমনকি নাতি নাতনিদেরও বড় করলে। কিন্তু বদলে কি পেলে রানী? যাদের জন্য করলে তারা তো ফিরেও তাকায় না তোমার দিকে…শুধু নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত। তোমার ওই আদরের ছেলে বছরে একবার নানা উপঢৌকন নিয়ে দেখা করতে আসে…আর তুমি তাতেই আহ্লাদিত। ঘরদোর গুছিয়ে, ওদের পছন্দের রান্নাবান্না করে, ওদের সেবাযত্নেই ব্যস্ত হয়ে যাও।
আর তোমার মেয়েটি তো আরো স্বার্থপর। নিজের সাজগোজ, বেড়ানো আর সংসার নিয়েই মহাব্যস্ত।মাসে একবার পদধূলি দিয়ে আমাদের ধন্য করে।কোথায় একটু আয়, বোস, গল্প কর…তা’না এসেই কতক্ষণে যাবে সেই চিন্তা। আধঘণ্টা বসেই উঠি উঠি।এখন সাথী হয়েছে আবার মোবাইল ফোন। এসে ওটার দিকেই তাকিয়ে থাকে। আর কথা মানে তো নিজের দুঃখের সাতকাহন…তোমার মাথাটা খারাপ করে দেয়। এই বুড়ো বয়সে যত্ত টেনশন! দূর দূর ছেলেমেয়ে না শত্রুরের দল!তোমার এত রাগ কেনো বলো তো? মাতৃসুলভ স্নেহ নিয়েই বলে ওঠে রানী।
কেন আমরা করি নি? আমরা সামলাই নি সব? চাকরী, ঘর সংসার, সন্তান পালন, বাবা-মায়ের দেখাশোনা। আর এরা দেখো নিজেরটা হলো… ব্যাস।
ভেতরে ভেতরে একটা ক্ষোভ ছিলোই সংসার জীবনে ক্লান্ত এই মানুষটার। এখনো এই বয়সে দোকানবাজার, ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস, ট্যাক্স জমা, বাড়ি সারানো -হাজারো কাজ সামলাতে আর চিন্তা করতে আর ভালো লাগে না। তারপর এই বাজারে জমা টাকার সামান্য সুদে সংসার চালানোও ঝক্কি।
রানী অবশ্য সংসারের খুঁটিনাটি কাজ নিয়ে সারাক্ষণই ব্যস্ত। শুধু শরীরটা খারাপ হলেই সমস্যা, নয়তো একা হাতে সব করতে ভালোবাসে রানী।সেদিন বাইরে থেকে ফিরে সুশান্তবাবু বললেন- চলো রানী, আমরা তপোবনে চলে যাই। গঙ্গার তীরে সাজানো গোছানো বৃদ্ধাশ্রম।
নিজের বাড়ি থাকতে, সংসার থাকতে বৃদ্ধাশ্রমে যাবো আমরা? কেন?
আর মায়ায় জড়িয়ো না রানী, চলো চলে যাই। দেখবে চিন্তাহীন জীবন ভালোই কাটবে। আমাদের যা গহনা, বাড়ি সম্পত্তি আছে, সব বেচে পাকাপাকি ভাবে চলে যাবো।
পরের দিন রানীকে প্রায় জোর করেই দেখাতে নিয়ে গেলেন তপোবন। ওখানে সুশান্তের এক বন্ধুও আছেন…বিপত্নীক… একসময়ে ব্যাঙ্কের ম্যানেজার ছিলেন তাপসবাবু।
তাপসবাবুই ঘুরিয়ে দেখালেন এই বৃদ্ধাশ্রমটি…বিরাট কেয়ারী করা বাগান, দেবদারু, পলাশ, শিমূল, কৃষ্ণচূড়া, নারকেল, আম ও আরো নানা ফলের গাছে ঘেরা কম্পাউন্ড। গঙ্গার ঠিক পাশে বেঞ্চ পাতা। এখানেই আবাসিকরা বসে হাওয়া খান, গল্পগুজব করেন। ভেতরে একটা মন্দির আর ধ্যান কক্ষ আছে। সকাল-সন্ধ্যা পূজা অর্চনা হয়। রানীর বেশ পছন্দই হলো।
এখানকার ব্যবস্থা বেশ ভালো। আবাসিকদের দেখাশোনা করার জন্য অল্পবয়সী ছেলেমেয়ে রয়েছে। তাদের ব্যবহারও খুব সুন্দর। ডাক্তার আছেন. নিয়মিত পরীক্ষা করেন আবাসিকদের। এছাড়া এদের নিজস্ব হাসপাতালও আছে একটু দূরে।
রানী দেখলো এখানে অনেক স্বামী-স্ত্রী’ও থাকেন।তাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা। একটা গোটা বাড়ি শুধু বয়স্ক দম্পতিদের জন্য রয়েছে। ঘর, খাট, আলমারী, ফ্রিজ, টিভি, আসবাব দিয়ে সাজানো…ঠিক নিজের ঘরের মতই…তাই দক্ষিণাটাও একটু বেশী।
কাউকে এখনই বলার দরকার নেই। যা করবো চুপিচুপি। কারো মতামত নেবার প্রয়োজন নেই বললেন সুশান্তবাবু।
আস্তে আস্তে সব কাজ গুছিয়ে নিয়ে স্ত্রীর হাত ধরে উঠলেন তপোবনে। এখন থেকে খাওয়া-থাকা-চিকিৎসা নিশ্চিন্ত। মাঝেমাঝে এরা বেড়াতেও নিয়ে যায় কাছেপিঠে।
এদের কাছে ছেলেমেয়ের ফোন নাম্বার দিতে হয়েছে… যাতে এরা দরকারে যোগাযোগ করতে পারে।
ছেলেমেয়ে শুনে রীতিমত বিরক্ত। এমনটা ওরা ভাবেই নি। রানী ওদের বুঝিয়ে বললো- থাক মানুষটা একটু নিশ্চিন্ত। তোরা এখানে এসেই দেখা করে যাস।বানপ্রস্থে ভালোই কাটছে রানী-সুশান্তের। অন্য আবাসিকদের সাথে পরিচয়ও হয়েছে। সকালে বিকেলে মন্দিরে যান রানী। এককালের নাস্তিক সুশান্তবাবুও যেন এখন ঈশ্বরপ্রেমী হয়েছেন।সন্ধ্যারতির সময় চুপ করে ধ্যানকক্ষে গিয়ে বসেন তিনি। বেশ ভালোই লাগে তার।
সময়মত খাওয়া-বিশ্রাম, খোলা আকাশ, গঙ্গার হাওয়া, গল্পগুজব, তারপর মন্দিরে গিয়ে বসা….এইভাবে দিব্যি চলছিলো নিশ্চিন্ত জীবন। হঠাৎ একদিন সুশান্তবাবুর খেয়াল চাপলো বেড়াতে যাবেন। সঙ্গীসাথীও জুটিয়ে নিলেন কয়েকজনকে। ফোন করে সরকার ট্রাভেলসের অয়নকে ডেকে নিলেন। ওরা বুড়োবুড়িদের ট্যুরের ব্যবস্থা করেন। বেশ যত্ন সহকারে নিয়ে যান। সাথে ডক্টরও থাকেন।
কিন্তু এক্ষেত্রে তপোবনের অনুমতি লাগবে। কিন্তু তপোবন কর্তৃপক্ষ সব শুনে অরাজী হলেন আর বললেন বাড়ীর লোকের অনুমতি লাগবে।
সুশান্তবাবু রেগে গিয়ে বললেন- আমরা কি বাচ্চা যে আমরা বেড়াতে গেলে আমাদের বাচ্চার অনুমতি লাগবে? শুনে সবাই হাসলেন। সত্যিই বাচ্চারাই এখন অভিভাবক!
অবশেষে ঠিক হলো সব। কিন্তু ট্যুর অপারেটর পাহাড় ছাড়া সমতলে বা সমুদ্রে নিয়ে যেতে রাজী। কিন্তু সুশান্তবাবু পাহাড়েই যাবেন। ওনার বহুদিনের ইচ্ছে…বউকে নিয়ে মধুচন্দ্রিমায় যাবেন পাহাড়ে। কিন্তু সে তো আর হয়নি। এখন তো বিয়ের আগেই হাফ হানিমুন হয়ে যায়। আর তারা তখন বিয়ের পরেও গুরুজনদের বলতে পারেননি লজ্জায়। রানীকে তো প্রথমেই শাশুড়ি শুনিয়ে রেখেছিলেন- আমরা বাড়ির গুরুজনদের সামনে বরের সাথে কথাই বলতাম না…মানে হাবেভাবে বুঝিয়েছিলেন তোমরাও তাই করো।
একটুআধটু একসাথে কোথাও বেড়োলেই ওনাদের মুখভার হতো…অশান্তি হতো। পরে ছেলেমেয়ে নিয়ে বেড়াতে গেলেও… দু’জনে একলা কোথাও কোনদিন যাওয়া হয়নি। সে যাক্…সেদিন আর নেই। চেষ্টা করলেও সেই বয়স আর সেই সময়টা আজ আর ফিরবে না।
তারপর সেই দিন…অয়ন ওদের অযোধ্যা পাহাড়ে নিয়ে যাবে ঠিক হলো…”রাজ হিল কটেজে “ওরা থাকবেন।আনন্দে আগের রাতে ঘুমোতেই পারলেন না সুশান্তবাবু।
পরেরদিন খুব সকালে গাড়ি ছাড়লো। অয়ন মজা করে বললো–এটা “হানিমুন কাপল স্পেশাল”। সবাই মজা করে হেসে উঠলো।বড় চমৎকার জায়গা এই হিল রিসর্ট। গাছগাছালিতে ভরা…পলাশের লাল রঙে আগুন লেগেছে। পাহাড়ের পিছনে অস্ত যাচ্ছে দিবাকর। আর অস্তরাগের লালিমা রানীর গালে। একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকেন সুশান্ত। রানী বোধহয় লজ্জা পেলো- মুখটা আরক্ত হলো। যেন সেই পাশে বসে থাকা নতুন বধূর লজ্জাবনত মুখ। হাত ধরলেন সুশান্ত, বললেন- এ আমার অনেকদিনের শখ…শুধু তোমাকে নিয়ে…তুমি আর আমি।
রানী হাসলো…বললো, এবার খুশীতো আমার রাজাবাবু?
দিবাকর এবার ওদের একা থাকতে দিয়ে অস্তাচলে গেলো। কটেজের বারান্দায় তখন যেন নব্য দুই তরুণ-তরুণী আর তাদের প্রথম মধুচন্দ্রিমা যাপন। -
কবিতা- তোর জন্য
তোর জন্য
-তমালী বন্দ্যোপাধ্যায়শুধু তোর জন্যই বেঁচে চলেছি একটা জীবন।
সব কিছু… সব কিছু মিথ্যে,তুচ্ছ জেনেও,
বেঁচে আছি শুধু তোর জন্য।
চরাচরে মিশে যাওয়া দিনান্তের দিকে তাকিয়ে থাকি।
চুকে যায় জীবনের সব লেনদেন।
কত পথ হেঁটে, রোদ-ঝড়-বৃষ্টিতে ভিজে,
বারবার নতজানু হই জীবনের কাছে।
আলো আঁধারিতে আবছায়া পথ
হারিয়ে যায় জীবনের বাঁকে।
ক্লান্ত শব্দেরা লুকিয়েছে ফাটলের ফাঁকে।
মরা নদী শুকিয়েছে-
ভাবি ফিরবোনা আর।
শুকনো নদীখাত ধরে হাঁটি।
মনে দাবানল জ্বলে।
তাও ফিরে আসি,মৃত দিন ঠেলে,
তোর জন্য…শুধু তোর জন্য।। -
কবিতা- প্রতিবাদের চিহ্ন
প্রতিবাদের চিহ্ন
– তমালী বন্দ্যোপাধ্যায়আমার হাতটা বাড়াতে চাইনা
ক্ষমতার দিকে।
মুছেও ফেলতে চাইনা আমি
প্রতিবাদের চিহ্নটিকে।নতমস্তকে ভিক্ষার নই প্রত্যাশী
এখনো মেরুদন্ড তাই সোজা।
ধ্বংসের পথ সামনেই আছে জেনো।
বুলেটে, বোমায় হিসেব যায় না বোঝা।চাইনা বাঁচতে শামুকের আবরণে।
চাইনা মুখোশ আঁটা দেশপ্রেমিক হতে।
গুনতে চাইনা আর মানুষের শবদেহ।
বারুদে,গন্ধে,মাটির রক্তক্ষতে।। -
কবিতা- রঙ নিও প্রিয়
রঙ নিও প্রিয়
– তমালী বন্দ্যোপাধ্যায়জীবনের থেকে কিছু রঙ নিও প্রিয়।
ধূসর আর কালো রঙ ছুঁড়ে ফেলে দিও।সাদা রঙ দিয়ে তুমি মনখানি এঁকো।
সবুজকে সাথী করে তারুণ্যে থেকো।রঙ যদি কম পড়ে ফুল থেকে নিও।
পাখীদের মত তুমি নিজেকে রাঙিও।হরিণের মত তুমি মায়া চোখ এঁকো।
লজ্জাকে তুমি যেন লাল রঙে ঢেকো।আত্মা স্বচ্ছ হোক নীলিমার নীলে।
মন গভীরতা পাক সুগভীর ঝিলে।মনে বুঝি আজ নিলে পান্না সবুজ?
তাই প্রিয় আজ তুমি বড্ড অবুঝ!বাতাসের রঙ নেই,তাও সে সচল।
মন হোক ফুরফুরে, কাজে চঞ্চল।বিবেকের রঙ তুমি গেরুয়াই রেখো।
ত্যাগ আর সাহসে জীবনকে দেখো।সব রঙ নিয়ে তুমি ভালো থেকো প্রিয়।
ভালোবেসো,ভালোবেসো,ভালোবাসা নিও।। -
কবিতা- তোর সাথে
তোর সাথে
-তমালী বন্দ্যোপাধ্যায়ধরনা আমার হাত দু’টোকে তেমন জোরে।
হাতের আঙুল আঁকড়ে থাকুক আঙুল চেপে।বলনা রে তুই মনের কথা তেমনি করে।
মনের আগল দেনা খুলে তেমনি ভাবে।এখন আমার ইচ্ছেগুলো চাইছে পেতে তোরই ছোঁয়া।
চাইছে এ মন বৃষ্টি ভিজে, পার হয়ে যাই, আবছায়া পথ তোরই সাথে।চ’না রে তুই,যাই ছুটে ওই রাস্তা ধরে।
পলাশ,শিমুল,কৃষ্ণচূড়ার পাশটি দিয়ে।এখনো যে ইচ্ছে করে,চুপটি করে বসে থাকি।
মাথা রাখি তোরই কাঁধে।কেনো যে তুই বুঝিস না’রে কোনকিছুই।
জানিস আমি অগোছালো তেমনি আছি।
কথাগুলো বুকের ভেতর বাদল দিনের মেঘের মত,
কিছু আবেশ মনের কোনে মিশে আছে।
তাইতো আজো অভিমান আর রাগ করি যে মিছিমিছি।এখনো যে স্বপ্ন আঁকি চোখের পাতায়।
নে’না আমার স্বপ্নগুলো তোর মনের ওই স্বপ্নডিঙায়।
চ’না রে ফের দু’জন মিলে স্বপ্ন সাজাই।
মিথ্যে হওয়া স্বপ্নগুলো সত্যি করি।মিথ্যে হওয়া স্বপ্নগুলো সত্যি করি।।
-
জীবন
জীবন
-তমালী বন্দ্যোপাধ্যায়সকাল হলেই সূর্যোদয়। কমলা আলো মেখে দিনের শুরু।
তারপর পেরিয়ে যায় কত ঘন্টা-মিনিট-দিন-রাত্রি।
ঋতুরা বদলায়,বদলে যায় ক্যালেন্ডারের পাতা।
জীবন এঁকে চলে নানান রঙের ছবি।
মনের ক্যানভাসে লাল,নীল,হলদে,সবুজ,ধূসর, কালো–কত রঙের রঙ পেনসিলের আঁকিবুঁকি।
ছুটে চলা জীবনের এক অধ্যায়ের শেষে শুরু হয় নতুন আরেক অধ্যায়।
স্মৃতির ঝুলি থেকে বেরোয় নানান রঙের নানান গন্ধে ভরা স্মৃতি।
জীবন মানে প্রেম।
জীবন মানে উৎসব।
জীবন মানে রঙীন ফাগুন মন।যখন প্রথম প্রেম আসে জীবনে রঙীন মন তখন তোলপাড়।
রঙমিলান্তি মন তখন হাওয়ায় ভাসে।
সপ্তপর্ণীর ঘাট পেরিয়ে,ছাতিম ফুলের গন্ধ মেখে সে ছুটে যায় তোমার তটভূমিতে।
স্বপ্ন দেখে মন,অপেক্ষায় থাকে একবার শুধু একবার যদি তার নাম ধরে ডাকো।
যদি বাড়াও তোমার হাত,আলতো রোদের মত উষ্ণতায় জড়িয়ে ধরো।
মন জুড়ে তখন মুঠোভরা খুশী।
এইভাবেই জীবনের সাথে শুধু ছুটে চলা।
এই গল্প শেষ হয়না,যেমন শেষ হয়না তোমার আমার স্বপ্ন দেখা।। -
তুমিই সেই পুরুষ
তুমিই সেই পুরুষ
-তমালী বন্দ্যোপাধ্যায়তুমিই সেই পুরুষ,
পর্বতের মত কঠিন,
কর্তব্যে অটল,
সীমান্তের পাহারায় প্রতিশ্রুত
তোমার পৌরুষ।তুমিই সেই পুরুষ,
মাঠে মাঠে রোদে পুড়ে,
জলে ভিজে,
বেঁচে থাকার অন্ন
তুলে দিচ্ছো আমাদের মুখে।তুমিই সেই পুরুষ,
কঠিন শ্রমের হাতে
গড়ে দিচ্ছো কত রাজপথ,
কত ইমারত, কত সেতু।তোমার মুষ্টিবদ্ধ শক্ত হাত আমাদের জন্য।
তোমার রক্ত মেশে বিদ্রোহে-বিপ্লবে-প্রতিবাদে।তুমিই সেই পুরুষ,
তোমারই হাত ছুঁয়ে দিলো আমার মুখ।
সেই হাতে কোন পাপ নেই।
তাই তোমার জন্য জীবন উপুড়
করে দিয়েছি, কত সহস্র দিন।তুমিই সেই পুরুষ,
ভালোবাসার জোরে বীজ বুনলে,
জন্ম হলো আগামীর।
তোমার প্রাণের ভালোবাসায়,
বাড়িয়ে তুললে তাকে।
তুমিই সার্থক পিতা।তুমিই সেই পুরুষ,
তোমারই ভালোবাসায় বেঁচে আছে
তোমার জন্মদাতা আর জন্মদাত্রী।
তুমিই বার্ধক্যে তাদের পরিত্রাতা।
তুমি প্রাণপণ তাদের ভালো রাখার চেষ্টা করো।
তুমি যে তাদের প্রাণের পুত্র।তুমিই সেই পুরুষ,
তোমার বন্ধুত্বের বাড়িয়ে দেওয়া
হাত ধরে আমি নিশ্চিন্ত।
তোমারই বিশ্বাস ছুঁয়ে ছুঁয়ে চলি।তুমিই সেই পুরুষ,
সব ঝড়ঝাপটা সামলে,
অনেক বসন্ত দিনে,তুমি থাকো পাশেপাশে,
ভালোবাসার মন নিয়ে।
তাই বারবার পেতে চাই তোমারই ভালোবাসা। -
যন্ত্রণা
যন্ত্রণা
-তমালী বন্দ্যোপাধ্যায়সুখ, আনন্দ বাড়াতে চাও?
সবার সঙ্গে ভাগ করে নাও।
সবার সঙ্গে মাতো আনন্দে আর হুল্লোড়ে।
দেখো তোমার সুখটি কেমন যায় বেড়ে!দুঃখ, বেদনা কমাতে চাও?
সেটাও তবে ভাগ করে নাও।
মনের কথা বলে তুমি হাল্কা হবে।
দুঃখ খানিক পালিয়ে যাবার পথটি পাবে।কিন্তু তোমার শরীরজুড়ে ছড়িয়ে পড়া যন্ত্রণা ?
বুঝিয়ে দেবে তুমি মানুষ,মোটেই তুমি যন্ত্র না।
শিরা ধমনী চুঁইয়ে পড়া ভীষণ সে এক যন্ত্রণা,
সেটা তোমার শুধুই একার,অন্য কারোর কক্ষনো না।হৃদয় ফুঁড়ে, মনটি জুড়ে ছড়িয়ে পড়া যন্ত্রণা ?
মনের ক্ষতের ভীষণ ব্যথা বুঝিয়ে দেবে,
এটাও তোমার, অন্য কারোর কক্ষনো না।ক্ষতবিক্ষত হতে থাকা,
সেই তুমি, একা, শুধুই একা।।