-
ঘোলাপ্রেম
ঘোলাপ্রেম
-নীলোৎপল সিকদার
তোমার রৌদ্র পথে, পথ হেঁটে
তোমার পায়ে পায়ে এতটা পথ এসে,
আমার ছায়া মিশে গেছে
তোমার ছায়ার মাঝে,
আমি হারিয়েছি নিজেকে
তোমার চতুর ঘোলাপ্রেমে।তোমার মনের ঘুঘুফাঁদে
আটকে কাঁদে আমার স্বপ্ন,
কিশোরী চঞ্চল হাসি উড়ে গেছে
তোমার মনের সংকীর্ণ বাতাসে,
দুরত্বের সীমারেখা মুঁছে
কেন যে তোমার ফেনিল উচ্ছাসে
বোকার মত ভাসলাম!!আমি আবার বৃষ্টিজলে ধুয়ে
তোমার অনুরাগ ছলনা,
মোম আলোয় পুড়িয়ে
তোমার দেওয়া আঁধার,
নিজের ছায়ায় নিজে বাঁচতে চাই,
খসেপড়া চাঁদ কলঙ্ক ঢেকে
নিজেই নিজের হতে চাই। -
দেরী
দেরী
-নীলোৎপল সিকদার
সাপের মত আঁকাবাঁকা মেঠো পথ
বিস্তীর্ন সবুজ মাঠ পেরিয়ে দিগন্তে ধূসর…কৃষকের ঘামে ভেজা মাটি,
শ্রমে ফলানো ফসল,
এক চিলতে উঠোন জোড়া স্বপ্ন
অদৃষ্টের সাথে যুদ্ধ প্রতিনিয়ত…সুদিনের প্রতীক্ষায় বেলা যায়,
কেন যে আজও ভাগ্য তাদের বেঁকে রয়…বিজ্ঞানের যুগে যদিও দূরে গেছে অনাহার
তবুও দারিদ্রতা তাদের পিছু ছাড়েনি,
মানুষের সবগুলো অধিকার আজও সুদূরপরাহত…
দেরী হয় তাদের পিঁচুটি জমা ভাগ্য পরিবর্তনে…প্লাবন- খরা শুষে নেয় অবশিষ্ট আশা
অগনিত মানুষের ভীড়ে আজও তারা পরিপূর্ণ মানুষ নয়! -
বিষ
বিষ
-নীলোৎপল সিকদার
রাসপূর্ণিমার থৈথৈ জোছনায়
বিনোদিনী হাসি মুখ আরণ্যক
লুকোচুরি খেলায় দোলায় মন…ঝুম বৃষ্টি দিনে মন ভেজানো বৃষ্টিজল
ভেসে যায় কাগজের নৌকা হেলেদুলে
দাদরী সুরে ডাকে আয় বৃষ্টি ভিজি…শরতের কাশ বনে সাদা ফুল
শুভ্র মধুরিমা জড়িয়ে ডাকে,
চল হারিয়ে যাই শঙ্খদ্বীপে…
হেমন্তের মৌন শিশিরের মত ঝরে ধ্রুপদী তান…শীতের জড়তা কেটে ফাগুন বেলায়
কোকিলের গানে হারিয়ে গেছে
বিগত প্রমোদ বেলা,
পাখি পাখা ঝাপটায় স্মৃতি বিষ পানে,
ছেড়ে যাওয়ার আগে সে বোঝেনি… -
বৃত্তবন্দি
বৃত্তবন্দি
-নীলোৎপল সিকদার
মোচড়ানো সময়ের পথে এগিয়ে যাই
নির্মোহ পথ টেনে টেনে নিয়ে চলে
বৃত্তবন্দি জীবনের আয়োজনে…পোষাকের আবরণে ঢেকে থাকে ঘাম,
রুক্ষতার পাথর ঘায়ে মৌন নন্দন মন কানন,
আকন্ঠ পিপসায় কাঁকর জলে ভিজাই
গলায় জমে থাকা শুষ্কতা…কাপুরুষের মত জনারণ্যে ঘাপটি মেরে থাকে
অচেনা হৃদয় অনুভূতির প্রণয়,
হয়তো কোন এক গোধূলীর আকাশে
নগ্ন পাখায় সুদর্শণ হয়ে মেলে দিতে পালক ঢাকা দেহ… -
প্রবীন
প্রবীণ
-নীলোৎপল সিকদার
কত কাল ধরে প্রবাহিত এ জগত সিস্টেম!
আমরা মানুষেরা ভাবি
অনাদি অনন্ত সময়ে শোয়ারী হয়ে
এক সুশৃংখল ধারায় বয়ে যাচ্ছে,
আসলেই কি সুশৃংখল- সুগঠিত!
না আমাদের অক্ষমতা অসহায়ত্ব আড়াল করতে
আমরা সুশৃংখল ভাবি–সুন্দর বলি!অথবা আমাদের সুন্দর ভাবনা
আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি
জগতকে সুন্দর ভাবে দেখে
তাই জগত সুন্দর সুশৃংখল!তবু তো থেকে যায় আরো কত বিমূর্ত প্রশ্ন
প্রকাশ করার সাহসের অভাবে গভীর–গোপনে
চিরদিন অন্ধকার অন্তরালে!বলা হয় প্রাচীন এক ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন
সুনিপুন বিস্ময়কর এ সিস্টেম!
সেই থেকে চলছে এ সিস্টেমে জগত…কোন ভুল কোন ক্রুটি বিচ্যুতি নেই সে ঈশ্বরের
তবে মানুষ সবাই শুভ বোধের নয় কেন?
কেন সব মানুষ–মানুষ হলেও
ভালো মনের মানুষ নয়?বলা হয় জগতের অসাম্য অব্যবস্থা এর জন্য দায়ি,
অথচ সেই প্রাচীন ঈশ্বর সর্বশক্তিমান
তাহলে কেন তিনি এ বদলাতে পারেন না?
আদেও কি তিনি পারেন?
না আমরা বলি তিনি পারেন!কি জানি হয়তো পারেন
বাস্তবতা হচ্ছে আজও পারেননি বা করেননি,
জগতের আরাধ্য সর্বশক্তিমান প্রবীণ ঈশ্বর…আগামীতে দুঃখ দুর্দশা দূর করে
মানুষের জন্য বাসযোগ্য একটি নতুন পৃথিবী গড়বেন
আমি সে সোনালী দিনের শুভ প্রত্যাশায় প্রার্থণা করি..যেখানে থাকবে না কোন অসাম্য অব্যবস্থা,
মানুষে মানুষে ভেদাভেদ হানাহানি আর রক্তপাত,
সে পৃথিবীর সব মানুষ হবে শুভবোধে তাড়িত সুন্দর মনের… -
আরশি
আরশি
-নীলোৎপল সিকদার
নিরাভরণ জীবনে নিরামীষ দিন
বৈষ্ণব বাতাসে উড়ু উড়ু মন,
চন্দ্র বুক জোছনা ঢাকা নীলাভ আকাশ,
আরশিতে নেই সেই সোনা মুখ
লুট হয়ে গেছে স্বপ্নের রৌদ্র…এক ঘেয়ে ঘুঘু ডাকা ঝিমুনী দুপুর,
সময়ের ভূগোল জুড়ে রুদ্র তাপ
জ্বলে যায় হিয়া- নিদ্রাহীন বিদ্রুপ…আর কত গচ্ছিত আবেগ চুরি হবে
উন্মাদনাহীন নির্লিপ্ততায়!
হারিয়ে তো গেছে সব
আছে শুধু জমানো মৌনতা…আরশি খানা ভাঙ্গা–দিশেহারা প্রতিবিম্ব,
কেউ আসতে চেয়ে–আরশিতে মুখ রাখতে চেয়ে,
পিছল পথে পা কেটে ফিরে গেছে উল্টো রথে…আমার আরশিখানা ভাঙ্গা…
-
আহত
আহত
-নীলোৎপল সিকদার
করতলে সাজানো রৌদ্র দিনের আহত স্বপ্ন–মুঠো বন্দী,
সূর্য আলো চাঁদের ক্যানভাসে জমায়ে
একটি জোছনায় গড়া সেতু
দুরন্ত দুঃসাহসে আঁকতে
আজও আকাঙ্খায় ছটফটায়…যে দিনগুলি সালোয়ার কামিজের প্রান্ত বেয়ে
মাটিতে লুটিয়ে-ধূলিতে গেছে ঢেকে,
যে দিনগুলি শাড়ীর আঁচলে পাল উড়িয়ে
নতুন নৌকা ভাসিয়ে স্রোতেরটানে
চলে গেছে সুদূরে-ধূসর ধোঁয়ায় মিশে,
শ্যাওলা রঙে সে দিনগুলি চাঁদের বুকে আঁকতে
নিদারুণ কাতরায়…মন চায় আজও জোছনা পিলারে গড়তে
একটি অপূর্ব সেতু…
জোছনার নরম আলোর ধাপে ধাপে
পা রেখে একবার
যদি কেউ ফিরে এসে বলে
আছো তো ভালো!
বিরহ দহনে পুড়ে পুড়ে একলা একা!
মন চায় আজও… -
অচেনা
অচেনা
-নীলোৎপল সিকদার
যে বাতাসের নাম ছিলো দখিণা সমীরণ,
যে ছায়া পথে হেঁটেছি এতটা কাল,
যাকে চিনেছি বলে ভেবেছি প্রতিদিন,
আজ যেন মনে হয় চিনিনি তাকে মোটেও!সমীরণ মৌসুমী শেষে চলে গেছে বয়ে,
ছায়া মিশে গেছে মানুষটির মন আঁধারে,
এখন শুধু রক্ত মাংসের ঘ্রাণ…লবঙ্গ গন্ধ কখন যে উড়ে গেলো বৃষ্টির পাখায়
পথে এলে বোঝা যায় এসেছি বড় ভুল পথে!কারো হাতের গোলাপ এতো ভারী হয়!
মেঘে মেঘে বেলা গেলে পাপড়ি শুকায়!কেউ কেউ জনম ভরে স্বার্থবাদী মানুষই থেকে যায়
নিঃস্বার্থ প্রেমিক হয়ে উঠতে পারে না,
সংস্কার আর প্রচলিত ধারনায় গড়া
দেওয়াল ভেঙ্গে বেরিয়ে আসতে পারে না,
কিছুতেই কামনার সীমা অতিক্রম করার সাহস পায় না ,
হায় চেনা পথের বাইরে দাঁড়াতে জানে না!শুধু যৌবনের উন্মাদনায় বলে ভালোবাসি…
মোহ কি কখনো প্রেম হয়!
কত দিনের চেনা চেনা মনে হওয়া মানুষটি
চিরদিন কাছে থেকেও অচেনাই থেকে যায়… -
বেনিয়া
বেনিয়া
-নীলোৎপল সিকদার
গনিকা প্রহরে চোখ থেকে ঢেলে দিলে কুম্ভীরাশ্রু
মেঘমালায় রেখে গেলে আহত স্মৃতি…ছেড়ে আসা নিহত সময় আঁধারে গেঁথে,
নপুংশক বেনিয়া ব্যবহারে সিঁদ কেটে
বেড়িয়ে গেলে চতুর চোরা পথে…ভ্রুন স্বপ্ন যতো উবে গেলো মন থেকে,
দ্বিখণ্ডিত হৃদয়ে রক্ত ঝরা বেদনা,
ন্যাড়া পথ বেয়ে চলে যায় বাউল গান
আর কি ফেরা হবে জীবনের কাছে- স্বপ্নের কাছে!খামচি মেরে নিয়ে যাওয়া পূণ্য তিথি
শীতল শশী আলোয় চেয়ে থাকে,
খুঁজে চলে পথের সাথীকে…মোচরানো সময় মুছে এসো সওদাগরী অতিথি!
নিয়ে তোমার পুষ্প রথ সাজিয়ে…
আবার শোনাতে জীবনের গান… -
একবার তাকালে
একবার তাকালে
-নীলোৎপল সিকদার
ওমন নরম পেলব আঁখি পল্লব তুলে তাকালে
চেরাপুঞ্জির অবিরাম বৃষ্টি থেমে যেতো,
উত্তর মেরুতে সূর্য প্রখর রৌদ্রে দুর্বিনীত হতো…শানবাঁধা বুকের হিমহিম বরফ গলে গলে
একটি আঁকাবাঁকা মৃদুমন্দ স্রোতের
অপূর্ব নদী কুলুকুলু রবে বয়ে যেতো…বসন চুরা কৃষ্ণ কানাই জলকেলিতে বিভোর হয়ে
মগ্ন মনে প্রেম নদীতে সাঁতার দিতো…একবার তাকিয়ে দেখো
গোবি হতে সাহারা মরুভূমি ফুলে ফুলে সেজে উঠবে,
আর গ্রামের বাঁশ বাগানের
মাথার উপর চাঁদ উঠে
অমল মধুর জোছনা হাসি হাসবে…সুহাসিনী মায়াবী চোখের পাতা তুললে
আরাম কেদারায় দুলে দুলে
ঠিক দেখো স্বর্গে যাবো…
ভ্রমর হয়ে অমরাবতী ফুল কাননের
ফুলের মধু পান করবো
একবার তাকাও…