• অণু গল্প

    ভালোবাসার দিন

    ভালোবাসার দিন
    -রিতম কর

     

     

    Whatsapp এ একগুচ্ছ শাড়ির ছবি পাঠিয়েছে দিতি।বিকেলের জন্য কোনটা পড়বে, অর্ঘকে বেছে দিতে হবে। বেচারা অর্ঘ! গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় বুঝেছে যেটাই বলবে, সেটাই খারিজ হবে। এদিকে না বেছে দিলে মহারানীর মুখ ভার! অতএব অর্ঘ’র জবাব লালটা পর।
    মেসেজ সিন হলেও no reply. ঘন্টাদুয়েক পরে টুংটাং। লাল শাড়ি পরা ছবি ‘কী, খুশি তো?’
    -পাগলী একটা….

    পার্ক স্ট্রিটের এক নামী রেস্তোরা কর্মী কৌশিকের আজকে দম ফেলার ফুরসৎ নেই, বিকেল হলেই ভরে উঠবে সমস্ত রেস্তোরাঁ। তার আগেই সবকিছু সাজিয়ে, গুছিয়ে বিলাসবহুল রেস্তোরাঁটিকে আরো মায়াবী করে তুলতে হবে। কিন্তু তাও তার মধ্যেই ম্যানেজারকে বলে দুপুরে ঘন্টা দেড়েকের ছুটি আদায় করেছে ও।প্ল্যানেটরিয়ামের গেটের কাছেই অপেক্ষা করবে রিয়া।তাই ও আগে ভাগেই মোড়ের মাথায় রতনের দোকানে দু’টো গোলাপের কথা বলে এসেছে,
    রতনের আজকে মন খুব ভালো, সকাল থেকেই দু’হাতে বিকোচ্ছে ছোট, বড়ো হরেক রকম লাল গোলাপ, আজকে রতনও ঠিক করেছে রিমিকে নিয়ে রাতের দিকে বাইরে খাবে কোথাও, রিমির অনেকদিনের ইচ্ছে….

    সকালে চায়ের কাপ হাতে টিভিটা খুলে বসতেই, গান শুরু হলো ‘পুরানো সেই দিনের কথা…’ মনোজবাবুর পাশেই এসে বসলো অনুরুপা….’হ্যাঁ, গো কীসব বলছে, আজ নাকি ভালোবাসার দিন! তোমার মনে আছে সেই আমাদের বাড়ির সামনের মাঠটায় খেলতে এসে তুমি কিভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে! আর দাদাকে দেখলেই ভোকাট্টা!’….হালকা হেসে বোঝালেন সবটাই মনে আছে মনোজবাবুর, সেই জন্যই তো নাতির কাছে জানতে পেরে অনুরুপার জন্য তিনিও চুপি চুপি সুচিত্রা মিত্র’র একটা ক্যাসেট এনে রেখেছেন, ওর জন্য আজকের উপহার….

    ভিক্টোরিয়ার সামনে দিয়ে বাসটা যেতেই বছর চল্লিশের অমিতের চোখে পড়লো কত যুবক, যুবতীর ভিড় আজকে এখানে, চারিদিকের দোকানগুলোও আজকে যেন একটু অন্যরকম সাজানো, সবাই হাসছে,ফটো তুলছে… চারিদিকে যেন এক না বলা উৎসব…এদের দেখে মনটা হঠাৎই বড্ড ভালো হয়ে গেল ওর। সকালেই বেরোনোর সময় স্বপ্না’র সাথে খানিক থটমট লেগেছে…রাতে ফিরেই মানাতে হবে, ম্যাডামকে. . আজকে রাগ করে থাকা যায় নাকি…!!

    সবকিছুরই মূলে ওই যে ভ্যালেন্টাইন্স ডে, ভালোবাসার দিন। নিন্দুকেরা বলে ভালোবাসার আবার আলাদা দিন লাগে নাকি! প্রত্যেকটা দিনই তো ভালোবাসা যায়…!! কিন্তু চারিদিকে যখন এত খারাপ, এত টানাপোড়েন তখন একটা দিনকে শুধু ভালোবাসার জন্য রাখলে ক্ষতি কি! শেষমেশ তো ভালো থাকা, ভালোবাসারই প্রচার করছি…
    কত প্রত্যাখ্যাত হৃদয় অভিমানে স্টেটাস দেবে আজকে,
    কিন্তু কিছুজন তো টিউশন এ পাশে বসা মেয়েটাকে বলতেও পারবে…
    হয়তো সামনেই পরীক্ষার চিন্তা, কিন্তু তার মাঝেও একটু টাটকা হাওয়া হয়তো আসবে যুবক মনে….শেষ হবে কত মান, অভিমানের পালা…
    দিনের শেষে কিছু বেশি রোজগারে রতনও হাসবে, মনোজবাবু ও চল্লিশ বছর আগের অনুরুপাকে আবার দেখতে পাবেন….কিছু মন ভাঙবে,আরো কিছু হারিয়ে যাওয়া কবিতা লেখা হবে…
    কিন্তু তাতে কি, সবটাই তো সেই ভালোবাসাকে ঘিরেই নাকি…

    ভালোবেসে সখী নিভৃত যতনে…

  • গল্প

    রিইউনিয়ন

    রিইউনিয়ন
    -রিতম কর

     

     

    সময়টা প্রায় দুপুর 12টা।সামনে একগাদা ফাইল,পেন,ল্যাপটপ,টিফিন বক্সে আধখাওয়া রুটি,জলের বোতল নিয়ে অফিসের কাজে ভীষণ ব্যস্ত।এরইমধ্যে একটা unknown no. থেকে call.খানিক বিরক্ত হয়েও ফোনটা receive করতেই-
    ―Hello,Ritam দা, আমি Kanchrapara College Phy Dept. থেকে বলছি..
    ―আরে,হ্যাঁ, বলো বলো..
    ― আগামী 20th Nov. সকাল 11টা থেকেআমাদের freshers-farewell-reunion program.তোমার নিমন্ত্রণ।অবশ্যই এসো,খুব ভালো লাগবে।
    ফোন রাখতেই এক অদ্ভুত শিহরণ।চার বছর আগে কলেজ ছাড়লেও এখনও প্রত্যেক বছর এই ফোন কলটার জন্য অপেক্ষা করে থাকি।last দু বছর জেঠুর অসুস্থতা,Job exam,আরো কিছু কারনে যেতে পারিনি।তাই এই বছর তো কোনোভাবেই miss করা যাবে না।কিন্তু এখন এতকিছু ভাবার সময় নেই।আজকের মধ্যে এই কাজটা নামাতেই হবে।তাই আপাতত phone silent রেখে আবার ঘাড় গুঁজে দিলাম computer screen-এ।বিকেলের মধ্যে ঝটপট কাজ শেষ করে ফোন on করতেই টুং টাং। Hi,Hlw,Happy New Year আটকে থাকা কলেজ গ্রুপটা তে একসাথে শ-দেড়েক মেসেজ।বুঝলাম ফোন গেছে সবার কাছেই।স্বাভাবিক ভাবেই সবাই খুব excited. আজকে আর শেষ বিকেলে ভিড় বাসে ঠেলাঠেলি করে বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে হলো না।ট্যাক্সিতে উঠে পিছনের সিটে গা এলিয়ে দিতেই চোখের সামনে ভেসে এলো একের পর এক ছবি।
    Fresher’s এই একটা শব্দই মুহূর্তে সমগ্র ডিপার্টমেন্ট এর মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট ছিলো।প্রথম বছর সেজেগুজে দূরু দূরু বুকে গিয়ে intro দেওয়া থেকে পরের বছর অনেক দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নেওয়া,পুরো ব্যাপারটা properly organise করা,gift কেনা, নানাভাবে ঘর সাজানো,তারই মাঝে আড্ডা,খাওদাওয়া,কোন নতুন মেয়ে এবারে এলো সেই খোঁজটাও টুক করে নিয়ে নেওয়া…এসবের মধ্যে দিয়ে কয়েকদিনেই দাদা-দিদি, স্যার,বন্ধুদের সাথে যে bonding টা তৈরি হয়েছিল সেটা অন্য level এর ছিলো।এরপর অনুষ্ঠানের দিন মাঞ্জা মেরে গিয়ে ফটো তোলার হিড়িক,অনুষ্ঠান সঞ্চালনা,নাচ,গিটারে গান,…শেষে বিরিয়ানির একটা এক্সট্রা প্যাকেট পেলে তো কোনো কথাই নেই..ওঠা-পরা মিলিয়ে সবটা একটা memorable journey,যেখানে জীবনের অন্যতম সেরা সময়টা কেটেছিলো।কলেজের সেই শেষ দিনটার কথা আজকে ভীষন মনে পড়ছে যেদিন শেষ গ্রুপফি fb তে পোস্ট করে লিখেছিলাম ‘প্রথম যখন কলেজে এলাম,ভাবলাম এ আবার কোন খাঁচায় এসে ঢুকলাম! কিন্তু যতদিনে স্বাধীনতা পেলাম,ততদিনে এই খাঁচাটাকে ভালোবেসে ফেলেছি’ আজকে আরো একবার সেই খাঁচাটার কাছাকাছি ফেরা….

    20th Nov.
    যে আমি শ্রীমান রিতম কর,রোজ মায়ের হাঁকাহাঁকি তে ঘুম থেকে উঠে নাকে মুখে গুঁজেই অফিস ছুটতে হয়,সেই আমি আজ উত্তেজনায় সক্কাল সক্কাল উঠে পড়ে অফিস তো ডুব মেরেইছি, পারলে এখনই কলেজে গিয়ে হাজির হই।যেন শুরু থেকে কোনো moments miss না করি।এতদিন পর সিনিয়র,জুনিয়র সবার সাথে দেখা হবে সে কি কম চাড্ডিখানি কথা নাকি!
    স্নান করে অভ্যাস মতো ইস্ত্রি করা formal dress পড়তে গিয়েও T-Shirt আর জিন্সটাই চাপালাম।
    কলেজের গেট দিয়ে ঢুকেই থমকে দাঁড়ালাম একটু।ডানদিকের মাঠটায় হরেক রকম ফুল,তার মধ্যেই কেও একা, কেও বা জোড়ে, কিছুজন আবার গোল হয়ে খাবার দাবার নিয়ে বসে গল্পে,গানে এর ওর পিছনে লাগছে,হেসে গড়িয়ে পড়ছে…ভীষন চেনা কিছু দৃশ্য,প্রত্যেক বছর মুখগুলো পাল্টে পাল্টে গেলেও ঘটনাগুলো একই থাকে।
    সিঁড়ি দিয়ে তিনতলায় উঠতেই খুব চেনা একটা গন্ধ।দেয়ালে,দরজায় নতুন রং,আধুনিক projector, নানারকম মডেল এ ডিপার্টমেন্ট অনেক ধোপদুরস্ত হয়ে উঠলেও যে গন্ধটা বোধহয় একইরকম রয়ে গেছে।আর তার মধ্যেই সেজেগুজে ছুটে বেড়াচ্ছে কিছু অচেনা ছেলে মেয়ে।আমি যেতেই কয়েকজন একটা চেয়ার এ বসিয়ে দিলো।ওরা সবাই আজকে খুব ব্যস্ত।উৎসাহে ওদের মধ্যে যে কেও আজকে যেকোনো নামিদামি event manager কে নিশ্চিত হার মানিয়ে দেবে।
    প্রথমেই এলো পান্ডে দা, গুরুদেব আমাদের।এসেই এমনভাবে জড়িয়ে ধরে কথা বললো যেন তিন বছর নয়,তিন দিন পর দেখা, এখনো এতটাই সহজ।তারপর এলেন আমাদের H.O.D. ,Sir কে নমস্কার করে পরিচয় দিতেই চিনতে পারলেন দেখে ভালো লাগলো।। কিন্তু এদিকে আমাদের লাটসাহেব গুলোর পাত্তা নেই,কত্ত ব্যস্ত সব!(উত্তেজনায় মন কি আর এটা বোঝে যে আমিই নির্ধারিত সময়ের অনেক আগে এসে হাজির হয়েছি!) ঠিক সময়ে প্রথমেই এলো আমাদের সিদ্ধার্ত,প্রত্যেক বছরের মতো এবারের পাঞ্জাবি-টাঞ্জাবী পড়ে একেবারে জামাই জামাই লুকে।ওর সাথে সাথেই দেবনীল।ব্যাটা আরও সিরিয়াস হয়েছে মনে হচ্ছে,after all Phd করছে বলে কথা।কিন্তু ওর সেই চশমার ওপর দিয়ে তাকানোটা আরো ধারালো হয়েছে মনে হচ্ছে। এরপরেই পৃথা,আমাদের topper, ক্লাসে সবসময় চুপচাপ থাকা মেয়েটা এলহন স্কুল টিচার,চুপি চুপি আবার বিয়েও করে ফেলেছে।এরপর একে একে ল্যাদখোর চয়ন,অংকিতক্রিমিনাল বাণীদ্বীপ,সুজন মটু,দিতি… আরো অনেকেই।দীর্ঘদিনের অন্যভ্যাসের পরেও নামের সাথে ধাম গুলোও মনে আছে তাহলে। ও বাবা,এর মধ্যেই আবার শাড়ি-টারি পরে crush দিদিও হাজির with her same 440 volt smile. আর সবার শেষে এক মুখ দাড়ি নিয়ে গিটার কাঁধে অভিরূপ।হতচ্ছাড়াটা এবছরও পাঞ্জাবি না পড়ে সেই shirt, pant. এসেই এমন লম্পঝম্প জুড়লো,কারা যে নবীন আর কারা যে প্রাক্তন বোঝা দায়!
    আনন্দে ভাসছে সবাই..ভেসে যাচ্ছে সময়ের মতো,পরিবর্তনের মতো..
    যাই হোক মোটামুটি সবাই আসতেই মূল অনুষ্ঠান শুরু হলো।প্রথমেই স্যার,ম্যাডাম দের উপহার,বক্তব্য ..আর তারপরেই আমাদের পালা…ফটোফ্রেম আর একটা গোলাপ,,উপহার পেতে কার না ভালো লাগে,আর ইয়ে মানে,সেটা যদি কোনো সুন্দরী জুনিয়র এর হাত থেকে হয় তাহলে তো কোনো কথাই নেই। ধীরে ধীরে সময় গড়াতে লাগলো নাচে,গানে,আবৃত্তিতে..।এরই মাঝে হঠাৎ ছন্দপতন।গান গাইতে গাইতে অভির গিটার এর একটা তার গেলো পটাং করে ছিঁড়ে….যদিও তাতে থোড়াই কেয়ার,সবাই মিলে এমনিই গলা মিলিয়ে জমিয়ে দিলো।একে একে intro নেওয়া,শ খানেক ছবি তোলা,হাসি ম্যারমধ্যে দিয়ে শেষের দিকে এগোতে লাগলো সময়…কিন্তু আসল জিনিসই যে এখনও বাকি..বিরিয়ানি..🤤যত বিকেল এগোচ্ছে ততই মন কবিতা ছেড়ে বিরিয়ানির গন্ধে মাততে চাইছে।একবার শেষ হতেই ডার্ক রুমের সামনে লম্বা লাইন…প্যাকেট হাতে পেয়েই যে যেখানে পারলো নিয়ে বসে পড়লো.. কে যে দাদা আর কারা যে ভাই,বোঝার উপায় নাই!
    আমি সবে জম্পেশ করে আমার প্যাকেটটা নিয়ে বসেছি..ওরে,দেখি আমার লেগ পিস হুস করে হাওয়ায় উড়ে গেলো.. কিছু বোঝার আগেই তা দিয়ে ঢুকলো ওই পাজির পা ঝাড়া অভির মুখে..আমিও ছাড়বার পাত্র নাকি…আমিও হামলা করে বসিয়েছি ওরটাই খাবলা..হু হু…বিরিয়ানি পর্ব মিটলে আবার একবার আড্ডা জমলো অল্প কয়েকজনের,তৈরি হলো আরো কিছু স্মৃতি…….।।অনেক কিছুই তো হলো এবার যে থামতেই হয়…তাই আজকের মত না হয় এখানেই থামা যাক,ফিরে যাই আবার সেই রোজকার জীবনে…আবার কদিন মেসেজ ঢুকতে থাকুক ওই whatsapp গ্রুপটাতে…সঙ্গে আবার ও থাকুক আরো এক বছর পরের ওই ফোন কল টার মিষ্টি অপেক্ষা..

  • অণু গল্প

    অন্য মা

    অন্য মা
    রিতম কর

    প্রাসাদপম হাওড়া স্টেশন থেকে কয়েকশো মিটারের দূরত্বে বস্তির মধ্যে ছোট্ট লখাই কে নিয়ে ছোট্ট জগৎ মিনতির।কেও জানেনা লখাই এর বাবার খবর,লখাই পেটে থাকার সময় রোজ রাতে ছাইপাশ গিলে এসে মারধোর করতো মিনতিকে।কিন্তু ছেলে বিয়োনোর পর হঠাৎ একদিন থেকে একদম হাফিস, কেও জানেনা লোকটার খবর।সেই থেকে দুঃখকেই বুকে তুলে নিয়েছে সে।আজ একটু বাড়তি ইনকাম হওয়ায় সামান্য মাংসের ঝোল ভাত দেখে ছ’বছরের লখাইএর মুখে যে নিষ্পাপ হাসি…ওহ,ওই হাসিটুকু দেখার জন্যই তো নিজের মতো করে সে খুঁজে নিয়েছে বাঁচার পথ।তাই সে দিনে লেবু বেচে আর রাতে খদ্দের এলে ফেরায় না।ইস্টিশন এর কয়েকজন কুলি মালবাহক তার বাঁধা।হোক পাপ…যখন খেতে না পেয়ে মরতে বসেছিলো তখন তো কোনো শালা খোঁজ নেয়নি।আর এসব এলাকায় কেও কারোর দিন গুজরানে নজর দেয় না।এতে নিজের ২৪বছরের শরীরটাও জুড়ালো আর পয়সাও হলো।দেহ এবং লেবু বেচেও যে ঝকঝকে টিন কেনা অসাধ্য,এক বাবুর দয়ায় সেটাও তো হয়েছে।লখাই এখন প্ল্যাটফর্মের ইস্কুলে যায়।কি এক এন.জি.ও না কি থেকে যেন ওদের ওখানে ফিরি তে পড়ায়,ওখানকার দিদিমনিরা বলে,লখাই এর মাথা ভালো,ওর কিছু একটা হবে।এই কিছু হওয়ার জন্যই তো এত কিছু ওর।এই পয়সাতেই তো সে লখাইকে পড়াতে পারছে,এক-দুটো জামাকাপড়।মাথায় লাগাবার একটু গন্ধ তেল,এক টুকরো সাবান….তাহলে তার দোষটা কিসের…সে খুব ভালো করেই বোঝে অন্যরা জীবন-যাপন করে আর তারা বেঁচে থাকে,আর সেই আবর্জনার স্তুপে বেঁচে থাকার মধ্যেও একমাত্র আলো তার ছোট্ট লখাই।

  • অণু কবিতা

    প্রেমকবি

    প্রেমকবি
    -রিতম কর

     

     

    আমি বেলা শেষে ভীন দেশী বেশে,ডাকবো নামটি ধরে।
    তুমি খুঁজে নিও,আর বুঝে নিও,একটু খেয়াল করে।
    আজ মৃগাঙ্গ ধরা দিল ওই,সোনালি ধানের ক্ষেতে।
    পিদিমের শিখা জ্বলে একাএকা,আতশ উঠেছে মেতে।
    নব অহনায় রূপোলি ডিঙায়,আসবে আমার কাছে?
    পুকুরের কাছে স্বপ্নে বানানো জলটুঙি রাখা আছে।
    ওহে অঙ্গনা,দিওনা যাতনা ফাগুনের ভরা কালে।
    কিংশুকে মোরা উপহার দেব,চুমে দেব কপালে।

  • কবিতা

    বিরহ বিকেলে

    বিরহ বিকেলে
    -রিতম কর

     

     

    বিরহ বিকেলে তপ্ত হৃদয়, মেঘ শামিয়ানা পেতে,
    পাওয়া না পাওয়ার ঘেরাটোপ ছেড়ে জীবন উঠেছে মেতে।
    কখনো হেরেছি ভীষণ কেঁদেছি, হয়েছে ভীষণ জ্বর।
    জন প্রাণহীন শূন্য মরুতে সবাই আপন, সবাই পর।
    তুমি শিল্পী আমি বণিক, তফাৎ অনেক ভাই।
    তোমার তুলিতে জীবন আছে, আমার অর্থে নাই।
    নিজেকে নিয়ে শুধু না ভেবে যদি বা নিতে খোঁজ,
    শুকনো নদীর মরা গাঙে জোয়ার আসত রোজ।
    বিদ্রুপ নয় সত্যি বলছি, জন্মেছি ঘোর অবেলায়।
    হার মানবোনা, জিতে যাব রোজ জীবন-মৃত‍্যু খেলায়।

  • কবিতা

    হেমলক বিষ

    হেমলক বিষ
    -রিতম কর

     

     

    রন্ধ্রে মিশেছে মোর হেমলক বিষ,
    আমি রুদ্ধ তাপস হয়েছি ছাই।
    আমি মনের জ্বরে হয়েছি লাশবন্দী,
    নরম পিয়াসী মনের সন্ধান চাই।
    তুমি বেঁধেছো মোরে চোরাবালি রূপে,
    নোনা জলের ঢেউয়ে ভেসে হয়েছি শেষ।
    তোমার অশনি সংকেত পুষে রাখা,
    সেতো আমার মজ্জাগত অভ‍্যেস।
    ভালোবাসি তোমায় অধিকার আছে তাই,
    ছুঁয়ে দিয়ে গাল দুটো একটা কথা বলার।
    আমি মালিক হতে চাই না তোমার,
    তবে আর্দ্র সে বাগানের মালি হতে চাই।
    প্রেমের খেলা শেষে যদি মরে যাই,
    তবুও বেঁচে থাকবে অমর লড়াই।
    যদি ভালোবাসা সত‍্যি খাঁটি হয়,
    কফিনের কাপড়ে লিখে যাব শুধু তোমাকে চাই।।

  • কবিতা

    কোলাজে প্রেম

    কোলাজে প্রেম
    -রিতম কর

    ঠিক এক বছর আগে তোকে যেদিন প্রথম দেখা,
    সেদিন রাতে ঘুম হয়নি আমার,স্বপ্নগুলো

    গীতবিতানে সাজিয়ে রেখে শুনেছিলাম জয় গোস্বামী,
    সেদিন তোকে বলিনি কিছুই, তুই যদি প্রশ্ন করতিস,

    এই ছেলেটা নাম কি রে তোর?
    আমি কি বলতাম! ফুসমন্তর?
    ধুর, ওরম আবার হয় নাকি…
    কয়েকদিনেই তোর মধ্যে হারিয়ে গেলাম কেমন কেমন,
    হতে পারে সেই অমিত আর লাবণ্য যেমন।
    আমি তোকে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় শোনালাম,
    তুই খোঁজ দিলি কিছু রাতজাগা পাখির দলের।
    বিকেল বেলা পাড়ার আড্ডা সেলফোনে মাতে,
    কিন্তু মন মোড়ের মাথায় মনখারাপেই দারুন মানায়।
    ততদিনে তোর জন্য লিখে ফেলেছি এক পৃথিবী।
    মায়ের চোখে চোখ পড়তেই,এক দৌড়ে হাজির ছাতে
    তখন অষ্টমী মন চুপিচুপি নতুন কোনো ছবিতে মাতে।
    একদিন সন্ধ্যে আলো গায়ে মেখে তোর সাথে সেই হঠাৎ দেখা,
    নীলাভ হাসির আবছায়াতে,অল্প একটু ছোঁয়া

    আমার সমস্ত কালবেলা উথালপাতাল হয়ে যাওয়া

    এক আকাশ ভালোবাসতে চাওয়া….

    আজ এসে এই এতগুলো দিনে,ডানা মেলেছে ইচ্ছে ডানা,
    তোর কথা ওই ডাইরিটা জানে, কিন্তু সবাইকে যে বলতে মানা।
    আবার কোনোদিন পাঞ্জাবিতে রং লাগাবে নীলচে সাজ,
    সেদিন না হয় সাজিয়ে দেবো তোর সামনে আদর কোলাজ।

  • অণু গল্প

    জানালা

    জানালা

    -রিতম কর

     

     

    প্রত্যেক বাড়িতে বিশেষ একটা জানালা থাকে। না না,বিশেষ মানে আকারে বড়ো, সুন্দর সাজানো, মোটেই এরকম কিছু নয়। বাইরের মানুষের কাছে ওটা বাড়ির আর পাঁচটা জানালার মতোই খুব সাধারণ। কিন্তু বাড়ির ছেলেটার বা মেয়েটার কাছে ওই জায়গাটুকু বড্ড কাছের,বড্ড নিজের। কারণ জানালাটা অনেক গল্প জানে যে..! ছোটবেলায় মাকে লুকিয়ে দুধটুকু টুক করে বাইরে ফেলে দেওয়া বা বাইরের কৃষ্ণচূড়াটায় শালিক গুলোর কচাকচি শুনতে শুনতে শীতের ছোট্ট দুপুরটা পার করে ফেলা―ওটার পাশের ওই শ্যাওলা ধরা পাঁচিলটা টপকেই তো বন্ধুদের যত গোপন আনাগোনা।একটু বড় হতেই সামনের বাড়ির নীলাকেই নীলাঞ্জনা ভেবে- ‘মেরে সামনেওয়ালি খিড়কি পে এক চাঁদ কা টুকরা রেহেতা হ্যায়…’। ক্লাস টেনে প্রেমে আছাড় খেয়ে প্রথম মন ভাঙার সাক্ষীও তো ছিল ওই জানালাটাই!

    ছাদে গিয়ে মা বৃষ্টিতে ভিজতে দেয়নি তো কি! গ্রিলের ফাঁক দিয়ে বৃষ্টি নিজেই এসে ছুঁয়ে দিয়ে গেছে বারবার।পর্দার আড়ালে আলোর আনাগোনাটাকে মুঠোফোনে বন্দি করতে চেয়েছি কতবার। বাবা বকলে, মিষ্টি মেয়েটা রাগ করে বসে থেকেছে ওখানেই। ওখানেই গিটারে গানে, হেডফোন কানে কখনো হাসিয়েছে অনুপম, কখনো কাঁদিয়েছে অরিজিৎ। মাঝে মা একবার রাগ করে জানালাটা বন্ধ করতে বললেও হার মানতে হয়েছে জেদের কাছে।

    বয়সের হিসাবে এখন বড় হয়েছি বেশ কিছুটা, তাও ওই দিকে মুখ করে পড়তে বসা, কবিতা লেখা, গ্রিলের ফাঁক দিয়ে সকালের প্রথম রোদ এসে ঘুম ভাঙানোটা একইরকম রয়ে গেছে ওই জানালাটার জন্য―হ্যাঁ ওই গল্প জানালাটা….বাড়িতে থাকা ওই আনমনা নিজস্ব জানালাটা…।।

You cannot copy content of this page