-
অণু গল্প- হেভেনিয়া
হেভেনিয়া
-শম্পা সাহাএকটা গোলাপি শহরের সরু মেঠো রাস্তা ধরে একটি মেয়ে একা হেঁটে চলেছে।হলদে গাছের মাথায় মাথায় সোনালী ফুল।চেনা নয় তবু সুন্দর।যা কিছু মন।ভালো করে তাই তো সুন্দর!তাই নয় কি?
গোলাপি কেন ?কারণ শহরের প্রতিটি বাড়ি ,রাস্তা, গম্বুজ, চার্চ, দোকান পাটে গোলাপি র উৎসব।অবাক লাগছে সুন্দর লাগছে ,নেশা ধরে যাচ্ছে।
মাথার উপরে চমকে তাকায়!আকাশ দেখি তো!নাঃ আকাশ এখানে নীল ই তবে স্বচ্ছ পরিস্কার, চাঁদটাও স্পর্শ। মেঠো হলদে পথ জ্যোৎস্না য় বড় মায়াময় রহস্য জনক।
বাড়ি ঘর গুলোও চেনা ধরনের নয়!স্বচ্ছ,যেন।কাঁচের তৈরি!ভেতরে মৃদু গোলাপি আলো আর সুগন্ধ বাতাস ,মনে হয় ওই সোনালী ফুল গুলোর।গন্ধটা অনেটা কাঁঠালি চাঁপার গন্ধের মত।সুন্দর কিন্তু নেশা ধরানো।
মানুষ জন রাস্তায় নেই, আকাশে চাঁদ।অদিতির বুঝতে অসুবিধা হলো না যে এটা রাত!কিন্তু সে এখানে এলো কি করে? কে নিয়ে এলো তাকে?
ওর পরনে রাত পোশাক।কাকতালীয় ভাবে এটাও একটা গোলাপি স্বচ্ছ গাউন।এটা বাপী ওর সতেরো বছরের জন্মদিনে এনে দিয়েছিল।
ক্লান্ত হয়ে বসলো একটা গাছে হেলান দিয়ে।একটু জল।পেলে মন্দ হতো না।ওমা!এই তো এক বোতল জল!হ্যাঁ জল ই তো।গোলাপি বোতলে সুগন্ধি জল।ভয়ে ভয়ে অদিতি নাকের কাছে নিয়ে শুঁকে দেখে।গোলাম জলের মত গন্ধ তবে অতটা তীব্র নয়।খাবো?খেয়েই নি?প্রথম এক ঢোক মুখে ঢালতেই ভালো লাগলো।এ চেনা গোলাপ জল নয়।মাকে মাঝে মাঝে বিরিয়ানি তে দিতে দেখেছে।একবার বেশী পড়ে যাওয়ায় তো কেউ খেতেই পারেনি।কিন্তু এ জল।বেশ সুস্বাদু অনেকটা রুহ আফজার মত।
কিন্তু ওখানে এলো কি করে?এ জায়গাটা অবশ্য একেবারে অচেনা নয়।চেনা চেনা।হ্যাঁ তাইতো।এই রকম এক দেশের গল্প ই তো ও রাতে শোবার আগে পড়ছিল।ওটা পড়তে পড়তেই বোধহয় ঘুমিয়ে পড়ে।
ওখানেই তো এই রকম গোলাপি ঘরবাড়ি, হলুদ মাটি হলুদ গাছ,সোনালী ফুলের কথা লেখা ছিল।ও এক ভিন্ন গ্ৰহ হেভেনিয়া!কিন্তু ও এখানে কি করে?এতক্ষণে অদিতি বোঝে ও আসলছ স্বপ্ন দেখছে!জোরে চিমটি কাটে নিজের হাতে।উঁ….লাগছে যে! তাহলে এ স্বপ্ন নয়?
-
গল্প- “রইবো দোঁহায় মুখোমুখি”
“রইবো দোঁহায় মুখোমুখি”
-শম্পা সাহাআহা! বাঙালি রান্নার কথা বলবে, ভাববে, ভাবতে ভাবতে জিভে জল চলে আসবে, অথচ সেখানে ইলিশ নেই, তাও আবার হয় নাকি? এ যেন টক ছাড়া চাটনি, তেল ছাড়া তেল পটল!
যদিও ইষ্টবেঙ্গল মোহনবাগানের খেলা হলে এক দল ইলিশ ঝোলাতো আর অন্য দল গলদা চিংড়ি তা বলে রসনা রঞ্জনে কোনোটাই যে বাঙালি ব্রাত্য করে রেখেছে, তা বাঙালির অতি বড় শত্রুও বলতে পারবে না! যদিও এই মাগ্গিগন্ডার বাজারে ইলিশ, চিংড়ি খেলার মাঠে ঝোলানো হয় না, তা বলে ইলিশ দেখলে বাজার ঘোরতা বাঙালির নোলা যে নালেঝোলে হয় না , এ বদনাম দেয় কার হিম্মত! তাই ফাঁক পেলেই সুখেনের বিরাট আঁশবটির পাশে , চিৎ হয়ে শুয়ে “জলের রূপোলী” শস্যকে সুখে মিটিমিটি হাসতে দেখে, বুক পকেটে একটা ঘষা দিয়ে নোটের ধার ভার বুঝে সামন্তদা লুঙ্গিটা একটু উঁচু করে, সামনের কাদা জল বাঁচিয়ে থলে এগিয়ে দেয়,
-দে, ওইটা!
আঙুল দিয়ে দেখায় সেই মাছের রানীকে, যার গায়ে সকাল আটটার রোদ পিছল খাচ্ছে! সুখেন মনযোগ দিয়ে মাছ ওজন করে কাটতে যেতেই সামন্তদার প্রাণ ফাটানো চিৎকার,
-থাক, থাক কাটিস না। ও তোর বৌদি কাটবে খনে!
বলতে গিয়ে কি জিভটা একটু বেশি লালাসিক্ত!
সামন্ত গিন্নীর মাছ কাটায় বড্ড অনীহা। এখন বয়সের ভারে, ভারী শরীর নিয়ে মেঝেতে বসাই দুষ্কর, তাই অন্যান্য দিন সামন্তদা মাছটা কেটেই আনেন। কিন্তু আজ গল্পটা অন্য রকম। আদরে যত্নে ব্যাগের ভেতরকার মহার্ঘ্য বস্তুটি মোটেও অন্যান্য দিনের মত ডাইনিং স্পেসের সিংকের পাশে পড়ে থাকে না। আজ সামন্তদা, নিজে হাতেই একখানা বড় গামলা বের করে তাতে শোয়ান সে সুন্দরীকে। বৌদি,
– কি মাছ আনলে, দেখি?
বলে, বাইরে বেরিয়ে অতখানি বড় নধরকান্তি ডিম ভরা ইলিশ দেখে অলস ধিক্কার জানিয়ে, বঁটি নিয়ে থেবড়ে বসেন মেঝেতে। হাঁক পড়ে,
– ও ময়নার মা, দেখ তো, নেপালের চায়ের দোকানে ছাই পাস নাকি? দুটো টাকা নিয়ে যাস।
এই গোটা এলাকায় একমাত্র নেপালেরই কয়লাতে চা হয়, আর বাকি সব দোকানগুলোতে তো গ্যাস সেই কবে থেকেই। তাও কি এই কাঠ কয়লা থাকতো নাকি, তন্দুরী চা না কি একটা বিক্রি করে , পঁচিশ টাকা করে দাম, তাই এখনো ওই মাটির উনুন টিকে রয়েছে। না হলে কবে সাফ্ হয়ে যেত! এই এলাকার সব বাড়িতে বিশেষ প্রয়োজনে ছাই সাপ্লায়ার একমাত্র নেপালই।
ছাই আসার আগে মাছ ভালো করে ধুয়ে সাফ হবে। কানকোর ভেতর আঙুল ঢুকিয়ে, ঘষে ঘষে ল্যালপ্যালে ব্যাপারটা ধুয়ে তারপর মাছ কাটা। সন্তর্পণে, যাতে একটুও বাড়তি ফেলা না যায় আঁশটুকু বাদে। কানকো, মাথা, মায় নাড়িভুঁড়ি পর্যন্ত রয়ে যায়, ভাজা হবে বলে। মাথাটা, লাউ দিয়ে জমে যাবে। তবে কত্তা গিন্নী দুজনেরই অম্বলের ধাত, তাই সর্ষে ভাপার লোভ ছাড়লেও খুব বেশি দুঃখ নেই! সামান্য কালো জিরে ফোড়ণ, গোটা কয়েক কাঁচা লঙ্কা আর কয়েক ফালি লম্বা করে কাটা কালো বেগুন। কর্তার আবার সুগার, না হলে আলু লম্বা করে কাটা, দুফালি দিলে বেশ জমতো ব্যাপারখানা! তা কি আর করা যাবে? দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবনা মতন হয়ে যায়, ইলিশের নাড়িভুঁড়ি আর তেলটুকু ভাজা। সাদা ধবধবে ভাত আর কাঁচা লঙ্কা, এক চিমটে নুন। যতই হাই প্রেশার থাক, একদিন খেলে কি আর হবে? তারপরে থকথকে মাছের মাথা দিয়ে লাউঘন্ট! ফোরণ শুধু সাদা জিরে আর তেজপাতা।ঝালের জন্য গোটা কয় কাঁচা লঙ্কা! বিরিয়ানি পোলাও মাৎ! শেষে বেগুন দিয়ে পাতলা করে ইলিশের পেটি, গাদার ঝোল। ল্যাজাটাও বা কি করে? সেও এদের সঙ্গেই কড়াতে! ব্যস, এই দিয়ে এক পেট ভাত খাবার পর, সামন্তদা যখন এসে বসেন খাটের ধারে, ফ্যানের হাওয়া, আর হাল্কা বর্ষা শেষের মেঘাচ্ছন্ন ভাব, গিন্নী হেলতে দুলতে এসে পাশে বসে বলেন, আজ মাছটা কিন্তু খুব স্বাদের ছিল, ডিমভরা হলে কি? তখন ডিম সহ পেটির স্বাদের সঙ্গে পঁয়ত্রিশ বছরের দাম্পত্য মাখো মাখো হয়ে সুগন্ধ ছড়ায়। এই দিনের জন্যেই বোধহয় রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন,”রইবো দোঁহায় মুখোমুখি মিলন আগ্ৰহে!” বাইরে তখন বৃষ্টি নেমেছে ঝিরঝিরিয়ে! -
মুক্তগদ্য- বাঁচুন তো!
বাঁচুন তো!
-শম্পা সাহাজীবনে আমরা সব সময় ভালো হতে চাই সবার কাছে। আমার এক পরিচিতা দিদি আছেন, যিনি শিক্ষিকা শুধু নন এক সফল শিক্ষিকা এবং সফল মা ও ঘরণীও বটে। যার সব সময় ভাবনা, কি ভাবে পারফেক্ট হওয়া যায়! ঘর সব সময় একদম গুছানো, সিলেবাস স্কুলে সব্বার আগে শেষ, শুধু কাজের ক্ষেত্রই নয় পারিবারিক ক্ষেত্রেও তিনি একেবারেই পারফেক্ট। সব সময় কি একটা ওনাকে তাড়িয়ে নিয়ে যায়! সব সময় টেনশনে থাকেন, খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠেন, যাতে সব কাজ সময়ে, শুধু সময়ে নয় যেন সময়ের আগেই করা যায়।
এর ফলে, সবাই ওনার থেকে সার্ভিসটা নিয়েছেন কিন্তু তার জন্য বাড়তি কিছু ওনার ভাগ্যে জোটেনি। বরং যাদের জন্য উনি এত টেনশন করতে করতে উচ্চ রক্তচাপের শিকার, তারাই বলেন, “তোমার সবটাতেই এত বাড়াবাড়ি কেন?” এতে করে উনি কখনো শান্তি পাননি! সর্বক্ষণ পারফেক্ট হতে গিয়ে, কখন যেন সবাইকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে, নিজেকেই গুরুত্ব দিতে ভুলে গেছেন।
আমরা সবার কাছে ভালো হতে গিয়ে নিজের কাছে ভালো হতে ভুলে যাই, নারীপুরুষ নির্বিশেষে! সবার জন্য করতে গিয়ে নিজের জন্য করতে ভুলে যাই। সবার প্রতি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এটাও ভুলে যাই যে আমি নিজেও একজন মানুষ। আমার নিজের প্রতিও দায়িত্ব আছে! নিজেকে ভালো রাখার দায়িত্ব, আমিই না নিই, কার দায় পড়েছে আমাকে ভালো রাখবার? কী দরকার এত পারফেক্ট হয়ে? এত ভালো হয়ে বাড়তি কি পাবো? এখুনি বলে বসবেন না যে, অপরের জন্য করাতেও আনন্দ! যদি তাই হতো তাহলে, একসময় তিনি টেনশনে ভুগতেন না। আনন্দ আর টেনশন নিশ্চয়ই এক নয়!
একটু থামুন, দাঁড়ান, লোকের কাছে ভালো হবার লোভ ছাড়ুন। জানবেন দিনের শেষে আমরা ঈশ্বরেরও সমালোচনা করি, “ঈশ্বর কেমন তোমার বিচার? আমাকে এত কষ্ট কেন দিয়েছো?” তাহলে আপনি তো কোন ছাড়। তাই বাঁচার আনন্দে বাঁচুন, সবার জন্য বাঁচুন সঙ্গে সঙ্গে নিজের জন্যেও। -
কবিতা- পুরুষ বিদ্বেষী
পুরুষ বিদ্বেষী
– সৌদামিনী শম্পাআর কত যোনি ছেঁড়া খিদে?
আর কত মাংস আদর?
আর কত লালা মাখা চোখ?
আর কত রক্ত চাদর?আর কত যোনি খেলে বল,
মিটবে তোদের দেহ খিদে?
“ভালোবাসি” টোপ ফেলে রোজ
কজনাকে ফেলছিস ফাঁদে?আর কত যোনি ছেঁড়া খিদে?
আর কত মাংস আদর?
রাতের নিশুতি যত নামে,
দৃঢ় তোর দেহের ভাদর!কুকুরের দোষ দিস তোরা!
ভোগে সব যৌনতা তৃপ্ত!
লিঙ্গ দন্ড উত্থাপনে,
প্রকাশিত পৌরুষ দৃপ্ত!যৌন দন্ডে বুঝি বীরগাথা?
যৌন দন্ড বুঝি প্রেম তোর?
আমার যোনিতে নয় হৃদয়ে,
গাঁথা আছে ভালোবাসা, প্রেম ডোর!এক দলা থুতু দিই উগড়ে,
এক রাশ ঘৃণা তোর জন্য!
দৃপ্ত কন্ঠে বলি,”ঘেন্নাই
আছে ,আর বাকি সব শূণ্য”!আমি বড় পুরুষের বিদ্বেষী
আমি বড় নারীবাদী হিংসুক!
যে পুরুষ যোনি চায় প্রতি ক্ষণে,
তার প্রতি ঘৃণাতেই ইচ্ছুক! -
কবিতা- পাগলা ঝোরা
পাগলা ঝোরা
-শম্পা সাহাআমি তো এক পাগলা ঝোরা আথার পাথার ঝরেই যাই,
কক্ষণো বা মাটির বুকে বৃষ্টি হয়ে পড়েই যাই।
ঝড় হয়ে যাই এ দেশ সে দেশ উড়িয়ে নিয়ে স্থায়িত্ব
ঘূর্ণিঝড়ের তীব্র মাতন, সব ভাঙা তার দায়িত্ব।লক্ষ্মী তো নই নই তো ভালো এক্কেবারেই বিচ্ছিরি
বৌ হবো না মেয়ে হবো না, হবো না তো ইস্তিরি
দরকার কি নিজে পুড়ে অপরকেও পুড়িয়ে যাই?
আমি তো এক পাগলা ঝোরা ইচ্ছে মতন ঝরেই যাই।ঘোমটা মাথায় কপালে টিপ শান্ত অতি সুভদ্র
ওসব বড় বেঢপ কথা ভালো হবার সুমন্ত্র
ভালোয় আমার অসুখ করে, খুব ভালো তে অ্যালার্জী
উড়ণচন্ডী উল্টোপাল্টা সব কাজেতেই এনার্জি!আদুর গায়ে শরীর দেখাই, মেয়ে পুরুষে নেই তো ভেদ
সমাজ আমায় খারাপ বলে, তাতেও মোটেই নেই যে খেদ
সবাই যখন সবার মতন ভেড়ার পালে নাম লেখায়
আমি নামক পাগলা ঝোরা আপন সুখে ঝরেই যায়!! -
কবিতা- দুঃসাহস
দুঃসাহস
-শম্পা সাহাআজও আমরা চাকরি পেলে তোমরা এক কোপে আমাদের হাত কেটে নেবে!
“ভালোবাসি তোমায়”,বলে আগলে রাখার ভান করে আমার যোনি ছিন্নভিন্ন করবে নানান উপায়ে,
তারপর ,যে ঠোঁট দুটো কপাল স্পর্শ করেছিল স্নেহে ,তাতেই উচ্চারিত হবে,”খানকি!”
আজও আমাকে বুক ঢেকে রাখতে হবে সযত্নে,না হলেই আমার গোপনাঙ্গে সবার অধিকার জন্মাবে স্বাধিকার বলেই যেন!
আজও আমি কারো সঙ্গে যৌনতায় লিপ্ত হলে,আমার ভার্জিনিটি হারাবে!তোমার নয়।
আমি বহুবক্ষলগ্না হলে চরিত্রহীনা, আর তুমি সেই চরিত্রের শুদ্ধতা মাপবে তোমার নিক্তিতে!
এখনো পুরুষ মানে বাঘ,নারী হরিণী।খাদ্য খাদক সম্পর্ক যেন!পরিপূরক নয়!
এখনো পণের জন্য ফাঁসিকাঠে ঝুলবো আমি!
এখনো উলঙ্গতা প্রদর্শনের দায়ে আমার দিকে আঙ্গুল তুলে সহজেই আমাকে দাঁড় করাবে তোমরা কাঠগড়ায়!
আর যারা চোখ দিয়ে চাটলো সে উলঙ্গতা,তারা?তারা বুঝি সদ্য ধোয়া তুলসীপাতা?
আজও বেশ্যা মানেই নষ্টা,আর যে পুরুষ রোজ তাকে নষ্ট করে তাকে সমাজ কি তকমা দেবে ,জানতে বড্ড ইচ্ছে করে!
এখনো যৌন চাহিদায় শুধুই তোমাদের একপেশে অধিকার আর আমরা?
যৌনদাসী মাত্র! বিছানায় শরীর পেতে তৃপ্ত করা ছাড়া আর কোন ভূমিকা দিতে চাও আমাদের?
দাসী!
কখনো যৌনতায়, কখনো গৃহস্থালীতে আবার কখনো বা মেকি পৌরুষ পূরণে!
সমাজের একটা চাকা ভেঙে দিয়ে ভাবছো সমাজ এগোবে দুর্বার গতিতে?
ভারী দুঃসাহস তো তোমাদের! -
কবিতা- মানুষ বড় বোকা!
মানুষ বড় বোকা!
-শম্পা সাহামানুষ বড় বোকা!
বার বার ডোবে তবু খড়কুটো ধরে ভেসে থাকতে চায়।
জানে ওর মেয়াদ ক্ষণিকের।
তারপর খড়কুটো ভেসে যাবে সময়ের তোড়ে, যেদিকে স্রোত অথবা স্রোতের বিপরীতে।
যারা কথা দিয়েছিল, সারা বেলা, জীবনের সন্ধ্যেতেও থাকবে হাতে হাত দিয়ে,
রাতের শেষ প্রহরে যখন সাদা কাপড়ে ঢাকা মানব শরীর,
তখনও সে হাত আলগোছে মাথায় বুলিয়ে যাবে এই ভেবে,
আহা! ঘুমোক! সারা জীবন ঘুমোতে পারেনি।
তারাও আসলে আসে কেড়ে নিতে আসে কষ্টার্জিত রাতের ক্ষনিকের উপশম।
অজুহাত, দোষারোপ, আর অদল বদল ঘেন্নার ছড়াছড়ি!
ভালোবাসা কুন্ঠায় এককোণে দাঁড়িয়ে প্রত্যক্ষ করে,
যারা ভালোবাসি বলেছিল, তারা কেমন এক নিমেষেই বদলে নিয়েছে শব্দবন্ধ!
কেউ খোঁজে শরীর, কেউ নিজের শান্তি, কেউ প্রাণের আরাম!
এ জীবনে সবাই নিতে আসে কেউ দিতে আসে না ধন্যাত্বক কিছু!
যাবার সময় পেছু ফেলে যায় লোনা জল, ঘেন্না আর কিছু প্রতিশ্রুতির মৃতদেহ!
মানুষ বড় বোকা!
এর পরেও যদি কেউ চোখ তুলে বলে, “ভালোবাসি”!
মানুষ আবার হাঁটা দেয় সর্বনাশের পথে, ফেরবার, আবার নিঃস্ব রিক্ত হতে! -
কবিতা- চলি তবে
চলি তবে
-শম্পা সাহাতুমি চেয়েছিলে বলে গুটিয়ে নিয়েছি পরিপাটি সংসার,
যেদিন বলেছো, আমাকে তোমার আর নেই দরকার।পুরোনো আঁচলে তেল হলুদের গন্ধ নিয়েছি মুছে,
এক ঠিকানায় সব স্মৃতিগুলো যত্নে রেখেছি খুঁজে।বাঁদিকের তাকে চিনির কৌটো, তারই পাশে দেখো চা,
ভুল করে ফের চিনির বদলে নুন দিয়ে ফেলো না।ওষুধও দেখো হিসেব মত রেখেছি গুছিয়ে সব
দেখো মানিপ্ল্যান্ট, জল দিও রোজ, রোদে দিও ওই টব।বেশি রাত জেগে টিভির নেশায় ঘুমোতে ভুলো না,
জানি ভুলে যাবে, তবুও জাগাতে, আমি তো থাকবো না।যাই তবে এইবার, কাগজের কাজ সারা,
সব স্মৃতিগুলো গুছিয়ে নিয়েছি, এক শুধু তুমি ছাড়া! -
কবিতা- তোমার কি দয়ামায়া নেই?
তোমার কি দয়ামায়া নেই?
-শম্পা সাহাআমি ভালো থাকবো!
ভালো থাকাটা আমার অধিকার!
যতবার বুকের আঁচল কেড়ে নিয়ে দেগে দিয়েছো,”বেশ্যা!”
ততবার আমি ভেবেছি,”তোমাদের অতৃপ্তিই আমাকে আঁচল ছাড়া করেছে!”
যতবার মাথার ছাদ কেড়ে পথে নামিয়েছো!
ততবার আমি ভেবে নিয়েছি, তুমিও এক ঘর হারা অভাগা!
যতবার ভালোবাসতে গিয়ে বিক্রি হয়েছি অন্ধকার কানা গলিতে,
ততবার ভেবেছি,”আহা! ওর টাকার দরকার ছিল!”
আলপথে ছিন্নভিন্ন দেহ পড়ে থেকেও ভেবেছি,”আহারে বড় খিদে ছিল”!
যতবার প্রেমিক সেজে, আমাকে চোখে হারাতে হারাতে আশ্রয়হারা করেছো,
আমি সান্ত্বনা দিয়েছি নিজেকে,
“প্রথমে সত্যিই ভালোবাসতো! অনেকদিন তো হলো, তাই! আসলে….!”
শকুনের মত মাংস ছিঁড়ে নিলেও, দুঃশাসনের মত পোশাক খুলে নিলেও, প্রেমিকের মতো যন্ত্রনায় ঠেলে দিলেও,আমি তোমাকে ক্ষমা করেছি বারবার, অসংখ্যবার!
“হে পুরুষ, তবু কেন ঠকাতে চাও?
তোমার কি দয়ামায়া নেই?” -
কবিতা- চাওয়া পাওয়া
চাওয়া পাওয়া (কথোপকথন কবিতা)
-শম্পা সাহা-আমি তো তোমার থেকে কিছু চাইনি?
-সত্যিই চাওনি? তাহলে আসো কেন রোজ আমার কাছে?
-তোমার সময়টুকুই চাই
-ও, সে সময়ের বুঝি মূল্য নেই?
-টাকা পয়সা, এসব কিছু তো চাইনি!
-ও, তাহলে ভালোবেসে এগুলোও চাওয়া যায়, তুমি জানো!
-না জানার কি আছে?
-না, আমি ভাবলাম তোমার কাছে ভালোবাসা মানে, শুধু ভালোবাসা চাওয়া আর ভালোবাসাই পাওয়া! তুমি ভালোবাসা বলতে তাই বোঝো!
-কথাকে জটিল কোরো না। আমি শুধু তোমার সময় চেয়েছি!
-আর দিয়েছ? সময়?
-আমি তো ব্যস্ত থাকি!
-তুমিই তো বলতে, শত ব্যস্ততার মধ্যেও প্রিয় মানুষটার জন্য সময় বের করাই ভালোবাসা!সে সংজ্ঞা তো তোমার বানানো।
-তুমিও তো আজকাল সময় দাও না।
-কেন দিই তো! কাজের ফাঁকে ফাঁকে! আমারও তো কাজ থাকে।
-কিন্তু বলেছি না, যে তোমার সন্ধ্যেটা শুধু আমার।
-তাহলে যদি আমি বলি, তোমার দুপুরটা শুধু আমার!
-তা কি করে হবে? তখন তো আমার অফিস?
-তাহলে সন্ধ্যাতে আমার কি করে হবে? তখন তো আমারও কিছু কাজ থাকে।
-তুমি চাইলেই সেটা তাড়াতাড়ি পারো।
-আর তুমি বুঝি চাইলে পারো না?
-তুমি বুঝছো না, ওটা প্রাইভেট সেক্টর
-আর তুমি বুঝছো না, এটা পরিবার, যার সব দায় আমার একার কাঁধে। বাবার ওষুধ, মায়ের বাতের মালিশ, বোনের পড়া দেখিয়ে দেওয়া। রান্নাবান্না সব।
-তুমি কি চাইলেই পারো না, সব তাড়াতাড়ি মেটাতে, যাতে আমরা একটু কথা বলতে পারি?
-আচ্ছা বলো তো, সব পারা কেন আমাদেরই পারতে হবে? সম্পর্কে, পরিবারে, সব সমঝোতা কেন আমাদেরই করতে হবে? আর একটা কথা, তুমি আমার থেকে কি কিছুই নাওনি?
-না! কি নিয়েছি বলো?
-কেন আমার স্পর্শ, আমার আদর, আমার আবেগ, আমার ভালোবাসা, আমার শরীর, আমার অভিমান, আমার হাসি, আমার কান্না? যেগুলো শুধু তোমাকেই উদ্দেশ্য করে!তার কি কোনোরকম মূল্য নেই তোমার কাছে?
-সে কি তোমাকেও দিইনি, আমি?
-হ্যাঁ, দিয়েছ। কিন্তু আমি কখনো দাবি করিনি যে, তোমার থেকে আমি কিছু চাইনি। দাবিটা তুমি করেছ! আর তাই এগুলো মনে করিয়ে দিতে হলো।
-স্যরি, রাগ কোরো। না,ভুল হয়ে গেছে।
-একবার ভুল, ভুল! বারবার ভুল অন্যায়।ভুলের ক্ষমা হয়, অন্যায়ের নয়।