-
কবিতা- অসভ্য গরীব
অসভ্য গরীব
– সোমএই আধুনিক সভ্য যুগে,
গরীবেরা এখনো অসভ্য রয়ে গেল।
ওদের ঘরে কোনো টিভিই নেই,
ওরা বাহিরের কোনো খবর নিতে শেখেনি।গরীব সমাজে কোনো প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি নয়!
কাঁচা লঙ্কা আর আধপেটা পান্তা খেয়ে,
কেবল চাষ করতে শিখেছে;
মজুরি খাটতে শিখেছে।
গরীবরা বড়ই অসভ্য ম্লেচ্ছ নোংরা….
গায়ে ঘামের ভোটকা দুর্গন্ধ,
জামা কাপড়ে নোংরা ময়লা।
ঠিক করে গুছিয়ে কথা বলতে পারে না।
সভ্য বাবুদের গায়ে সুগন্ধি আতরের গন্ধ,
জামা কাপড় পরিস্কার চকচকে।
আর কথা বলার ধরনই তো আলাদা।গরীবরা হাসলে বিচ্ছিরি দেখায়,
সভ্য বড় লোকের হাসির মতো মিষ্টি দেখায় না।
কিন্তু, গরীবরা কাঁদলে….
কান্না তো গরীবের জীবন সাথী,
কাঁদলে ওদের বেশ মানায়!সভ্য বাবুদের মতো ও গরীবরা,
মাকে তুমি, আর বাবাকে আপনি বলতে শেখেনি।
ওরা বড়ই অসভ্য…
মাকে তুই আর বাবাকে তুমি বলে সম্বোধন করে।
এই অসভ্য বর্বর গরীবরা, টাকার অভাবে
বাবা মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাতে শেখেনি।
নিজেদের বুকের মধ্যে আঁকড়ে রাখতে শিখেছে!
অল্প একটু খাবার ভাগ করে খেতে শিখেছে।
ওরা বড়ই অসভ্য..! -
অণু কবিতা- পথের শিশু
পথের শিশু
– সোমকাঁদছে কত পথের শিশু
ঝরছে চোখে জল।
একমুঠো ভাত পাবার আশায়
জীবনটা নাজেহাল।ডাস্টবিনেতে খাবার জোটে
কুত্তার সাথে লোড়ে।
শীতের রাতে ঘুম আসে না
ছেঁড়া জামায় মুড়ে।স্বপ্ন ওদের চোখের পাতায়
একমুঠো ভাত খাবার।
দুঃখ চেপে হাসি মুখে
দিন পেরিয়ে যাবার! -
কবিতা- ইচ্ছেনদী
ইচ্ছেনদী
– সোমইচ্ছে নদীর দূ’কুল বেয়ে
উপচে পড়ে স্বপন।
ইচ্ছে নদীর রঙিন জলে
মিশিয়েছি এ মন।ইচ্ছে নদীর, পাড়ে আমার
এ মন বেঁধেছে ঘর।
ইচ্ছে নদী আপন যে মোর
আর সবাই হলো পর।ইচ্ছে নদীর বাঁধ মানে না
বান ভাসি যায় স্রোতে।
আপন মনে এঁকে বেঁকে
চলে নিজের পথে।ইচ্ছে নদীর বুকের মাঝে
ভাসাই স্বপ্ন ভেলা।
খামখেয়ালি বেড়াই ঘুরে,
নিত্য সারা বেলা। -
কবিতা- গ্রাম্য কথা
গ্রাম্য কথা
– সোমঐ যে দূরে আকাশ প’রে,
মেঘের আঁকিবুকি।
নীল রঙা ঐ শূন্য মাঝে,
উড়ছে শতেক পাখি।সবুজে সবুজ চারিদিক,
ঐ দিগন্ত রেখা।
গাঁয়ের শেষে রামধনু রঙ,
দিয়েছে আলোর দেখা।লাঙ্গল গরু নিয়ে ক্ষেতে,
চলেছে চাষির দল।
ঐ হৈচৈ চিৎকারে মাঠে,
খেলছে ছেলেরা বল।গাঁয়ের বধূ কলসী কাঁকে,
চলেছে নদীর কুলে।
গুন গুন রবে গান ধরেছে,
ভ্রমণ ফুলে ফুলে। -
কবিতা- “তবু মনে রেখো”
“তবু মনে রেখো”
– সোমজানিনা তোমার কতটা সুখ দিতে পেরেছি,
যতটা সম্ভব ভালোবাসার, ভালোবেসেছি।
কোনো একদিন যাবো আমি বহু দূরে চলে,
সত্যি সত্যিই এ ভুবন ছেড়ে তোমাকে না বলে।সেদিন জেনো জীবনের ডাইরিটা হবে ছারখার,
কবিতারা থাকবে না; ছিঁড়ে যাবে গিটারের তার।
সেদিন তুমি থেকো, স্মৃতির রাজ্যে মোর ছেড়ে একা!
এ ঘর ও ঘর বৃথাই খুঁজবে, আমাকে পাবে না দেখা।ফেলে আসা স্মৃতিগুলো, তুমি মনের ভুলে দেখো।
জানি, তোমার থাকবে না মনে, “তবু মনে রেখো!” -
কবিতা- আয়রে আয় বৃষ্টি
আয়রে আয় বৃষ্টি
– কবি সোমআয়রে আয় ঝমঝমিয়ে
এক পশলা বৃষ্টি।
ঝাপটা দিয়ে বিশ্ব বুকে
কর না শীতল সৃষ্টি।ফাগুন মাসে আগুন দহে
গ্রীষ্ম দুপুর রোদে।
ঝলসে যাওয়া পোড়ামাটির
জীব জগৎ যে কাঁদে।আকাশ পানে চেয়ে চেয়ে
হারিয়েছে মন দৃষ্টি।
আয়রে আয় ঝমঝমিয়ে
এক পশলা বৃষ্টি।পুকুর নদী খালে বিলে
শুকিয়ে গেছে জল।
ওরে বাদল আয়না চলে
করিসনে আর ছল। -
কবিতা- বিষণ্ণতায়
বিষণ্ণতায়
– সোমযখন তুমি আছ বন্ধ ঘরে
আমি তোমায় ছেড়ে অনেক দূরে।বিষন্নতায় কেঁদে ওঠে মন,
কেবল তোমায় পেতে চায় এ হৃদয় সারাক্ষণ।অশ্রু বরিষায় ভিজে যায় আমার দু’নয়ন,
এ ভগ্ন হৃদয়ে ভালোবাসার স্পর্শ কবে হবে চয়ন?যদি আবার আসি তোমায় পাশে ফিরে,
জড়িয়ে রেখো হৃদয় মাঝে প্রেমের স্মৃতি ঘিরে।অল্প হলেও আমায় ভালোবেসো,
ইচ্ছে না হলেও অনিচ্ছায় প্রেমের হাসি হেসো।রেখো আমায় ভালোবেসে তোমার বাহুডোরে,
দেহের ছোঁয়ার উষ্ণ পরশ দিওগো মোরে।তোমার ঠোঁটের স্পর্শ পেতে জানি প্রবল ইচ্ছে হয়,
এ হৃদয়ে তুমি বিনা আমি তো আর আমার নয়! -
কবিতা- লজ্জা করে
লজ্জা করে
– সোমলজ্জা করে..
নিজেকে পুরুষ বলতে!
পতিতা বা বেশ্যা নামে
যে মূর্তিটা আছে সমাজে।
না কোনো নারী নয়,
তার কারিগর এই পুরুষ নিজে।লজ্জা করে..
নিজেকে পুরুষ বলতে!
যে মেয়েটা খিদের জ্বালায় দেহ ব্যাচে,
এ সমাজ তাকে নষ্টা বলে।
কামের নেশায় যে পুরুষ গিয়েছে ও বেশ্যার কাছে,
সে পুরুষ নষ্টা নয়, ও ভালো ছেলে।লজ্জা করে…
নিজেকে পুরুষ বলতে!
বাংলার ঘরে ঘরে আজ নষ্টা মেয়ে
বেহুলা সীতা দৌপদী।
পুরুষের কখনো কি জন্ম হতো?
ও নষ্টা মেয়ে না থাকতো যদি।লজ্জা করে..
নিজেকে পুরুষ বলতে!
যে নারীর গর্ভে জন্মেছে পুরুষ, সে নারীর..
নষ্টা হতে বাধ্য করেছে প্রতি রাতে।
মা বোন বৌ মেয়ে সবাই,
এ সমাজে নষ্টা আজ পুরুষের সাথে। -
কবিতা- নষ্টা মেয়ে
নষ্টা মেয়ে
– সোমদু’চোখে যতোই থাক ঘর বাঁধার স্বপ্ন-আশা
ওরে বেশ্যা তোর প্রেম ভালোবাসা।
সিনেমার গল্পে কিংবা থিয়েটারে,
কখনো বাস্তবে নয়, নয় কারো ঘরে।তুই কেবল কাম মেটাবার রক্ত মাংসের একটা যন্ত্র।
সবাই কিনতে চায় শরীর,
কেউ কেনে না ভাঙা হৃদয়, তোর পোড়া মন।
অল্পকিছু অর্থে বেচে দিস দেহ, করিস নিশীযাপন।
এ সমাজের সভ্য মানুষ কাম মেটাতে,
হয় তোর ক্ষনিকের আপন।তোর গায়ের গন্ধ মেখে, কামের নেশায় বিভোর হয়ে,
যদি কোনো চরিত্রহীন মহাপুরুষ তোর দেহে খুশি হয়,
তাহলে কিছু টাকা উপহার দেয়,
না না ভালোবেসে নয়, নয় আদরে।
সময়ে ও টাকা শোধ নেবে মহাপুরুষ,
হিসাব কোষে ঠিক শোধ নেবে তোর গায়ে গতরে।এ পুরুষ শরীরের ঐ নরম মাংসপিণ্ড পেতে চায়,
তোকে নয়, সবার লক্ষ্য তোর নধর দেহ।
এ সমাজে তুই নষ্টা মেয়ে, তুই পতিতা বেশ্যা;
সমাজে কোনো স্থান নেই, তুই নগন্য তুই হেও। -
কবিতা- পঙ্গু মানবতা
পঙ্গু মানবতা
-কবি সোমবিবেক দিয়েছে বন্ধক আজ, মানবতা গেছে ভুলে;
অরাজকতায় সামিল হয়েছে মানুষ যে সক্কলে।মানবিক মূল্যবোধ আজ হয়েছে বড়ো মূল্যহীন,
খুন-ধর্ষন-ছিনতাই বেড়ে চলেছে অহরহ দিন দিন।কখনো বোমা কখনো বন্দুক রাজনীতি আর দন্দ্বে,
এ সমাজ অসহায় দেশটা ভরেছে বারুদের গন্ধে।মরছে মানুষ মরুক প্রতিবাদ নয় এটাই হলো নীতি,
গুলিতে বাপটা গেছে মরে মুছেচে মায়ের সিঁথি।ওৎ পেতে বসে কাম পিপাসু হায়নার দল, মেটাবে কাম;
জন্ম দিলো যে মা, ধর্ষণে বাদ যায়নি সে মায়ের নাম।চার বছরের কন্যা শিশু এ সমাজে সে ধর্ষিতা,
কলঙ্কিত কলির বেহুলা ও সীতা।চারিদিকে জ্বলছে আগুন কোথাও কারো চোখে নেই ঘুম,
জল্লাদে সবার করবে শিরচ্ছেদ মানতে রাজার হুকুম।সে বিচার সে নীতি নেই রাজ্যে, আজ পঙ্গু মানবতা;
দেশটা শেষের পথে বেঁচে আছে শুধু অরাজকতা।