অণু কবিতা

  • অণু কবিতা

    হিসেব

    হিসেব
    -তপন কুমার মাজি

     

    কর্ষিত হচ্ছে মানবমাটি লক্ষ লক্ষ বুলেটে,
    বারুদবীজ হচ্ছে‌ বোনা মগজের গিঁঠে গিঁঠে !

    আসছে টাকা হাওয়ায় ভেসে,
    উড়ছে টাকা হাওয়ায়,
    মাটি কামড়াচ্ছে ভুখা মানুষ
    চরমতম ক্ষিধায় !

    পাল্টে যাওয়ার সংবিধানে যাচ্ছে পাল্টে
    ক্ষমতার সীমারেখা,
    ঘুর্ণায়মান পৃথিবীর সাথে ঘুরে যাচ্ছে
    ইতিহাসেরও চাকা!

    ঘুরতে ঘুরতে সুতোটা যেদিন হয়ে যাবে ঢিলে,
    সেদিন টুকরো টুকরো হয়ে যাবে সবই হিসেবের গরমিলে!

  • অণু কবিতা

    মধ্যরাতের কবি

    মধ্যরাতের কবি
    -শংকর হালদার

     

    মায়াবী কাজল আঁচল মোড়কে মুড়ে
    সৃজনের ভাষা খোঁজে মধ্যরাতের কবি ।
    নিশীথের সংলাপ, মিছিলের রেষারেষি
    প্রকৃতির রদ-বদল,
    সাতকথার আর্জিতে কলম নিবের আলিঙ্গন।
    সৃজন তরঙ্গ উপচে পড়ে নগ্ন বারান্দায় ,
    ঝিঁঝির আর্তনাদ, তমসার বৈরাগ্য চেতনার উম্মেষ ,
    গা ভাষায় কলমের কালির বমিতে ।
    যামিনীর উদযাপন, তন্দ্রার অঞ্জলি লেখনির ভূমিতে ,
    একে একে জন্ম নেয় মধ্যরাতে কবির হাত ধরে ।

  • অণু কবিতা

    নতুন প্রেম

    নতুন প্রেম
    – সোহিনী সামন্ত

    কচি পাতার মতন গজিয়ে ওঠা নতুন প্রেম,
    নতুন কাগজের গন্ধ খোঁজে অজান্তে।
    হাত ধরাধরি খেলায় উন্মাদনা বেড়ে ওঠে,
    সিক্ত স্পর্শের চুম্বনের রিক্ত ঠোঁটে।
    লাভ বার্ডরা খুনসুটি করে বিরক্ত জঙ্গলে,
    খেলাখেলির মাঝে প্রেমের পরশ লাগে নিঝুম অঞ্চলে।
    রাত বাতি নিভে যায় নিশুতি আলিঙ্গনে,
    তমোঘ্ন নিঃশেষে অদ্ভুত নিশীথের গভীর প্রলোভনে।

  • অণু কবিতা

    পাপ

    পাপ
    -বিভূতি ভূষন বিশ্বাস

     

     

    পাপের কথা বলিলেই মনে হয়,
    চরিত্রের অপচয়।
    প্রাকৃত ভৌতিকবাদই হলো,
    পাপের পরিচয়।

    যেমন ম্যালেরিয়ার পরিচয়,

    মারাত্বক জ্বর।
    প্রকৃতির কবলিত ভোগবিলাসে,
    পাপিষ্ঠ সব নর।
    পুণ্য,রাজ সিংহাসনে বসলে,
    পাপ হয় তার চর।

  • অণু কবিতা

    অসহায়

    অসহায়
    -সোহিনী সামন্ত

     


    পাখি উড়ে চলে ভ্রান্ত দেশে ঠিকানাবিহীন চেতনায়…

    রং রেঙে ওঠে ক্যানভাসের মূর্তিমান পাটাতনে…

    দিন আনা দিন খাওয়া শ্রমিকের দল হেঁটে চলে,

    ক্লান্ত পথের উদাসীনতায়…।।

    ভিখারীর শুষ্ক কেশ পেতে চায় শান্ত দিনান্তের গন্ধ…

    তবে দিক্বিদিকের কষ্ট আছে তাতে নিবদ্ধ…

    সুখ ও অসুখের বিভ্রান্তির সীমারেখায় অসীম সূর্যের অবহেলা…

    সুখের বালুকারেখায় যন্ত্রণার আবেশ মিশে যায় অসহায়তায়…।।

  • অণু কবিতা

    শব্দহীনতা

    শব্দহীনতা
    -সীমা চক্রবর্তী

     

     

    যখন ভাবি লিখবো এক দীর্ঘ কবিতা
    তখনই শব্দ জগতে অদ্ভুত এক নিঃসীম নিস্তব্ধতা।
    নীরব শব্দকে সরব করি কোন সুপ্ত সাধনায়
    শব্দিত বহু শব্দ – বিম্ব পলাতক আয়নায়।
    সংযত কতো কল্প – শব্দর গোপনে অভিসার
    শব্দবিনা হয় না লিখন সৃষ্টি, শব্দঅনিবার।
    শব্দেরা আজ বিশৃঙ্খল, বিপন্ন শব্দ – বিন্যাস
    শব্দহীনতার শব্দে কবিতার, নিঃশব্দে দীর্ঘশ্বাস।

  • অণু কবিতা

    গতযুবতী চাঁদ

    গতযুবতী চাঁদ
    -রাখী সরদার

     

     

    বহুবার ব্যবহৃত হতে হতে
    গতযুবতী চাঁদ
    নবযৌবনা
    কেননা আজ দোলপূর্ণিমা।

    চন্দ্রভগ্নাংশ জোড়ের খেলার সময়

    আদিম রোমশ গাছের প্রতিটা
    রোমসন্ধি থেকে ঠুকরে ঠুকরে
    তুলে নাও উষ্ণতা,

    আমি খুলে ফেলি কৌশলের কাঁচুলি
    পাতায় জমছে গভীর রাত

    চলুক না গোপন স্রোতের মতো
    দীর্ঘস্থায়ী দুষ্টুমি…

  • অণু কবিতা

    প্রেমকবি

    প্রেমকবি
    -রিতম কর

     

     

    আমি বেলা শেষে ভীন দেশী বেশে,ডাকবো নামটি ধরে।
    তুমি খুঁজে নিও,আর বুঝে নিও,একটু খেয়াল করে।
    আজ মৃগাঙ্গ ধরা দিল ওই,সোনালি ধানের ক্ষেতে।
    পিদিমের শিখা জ্বলে একাএকা,আতশ উঠেছে মেতে।
    নব অহনায় রূপোলি ডিঙায়,আসবে আমার কাছে?
    পুকুরের কাছে স্বপ্নে বানানো জলটুঙি রাখা আছে।
    ওহে অঙ্গনা,দিওনা যাতনা ফাগুনের ভরা কালে।
    কিংশুকে মোরা উপহার দেব,চুমে দেব কপালে।

  • অণু কবিতা

    অমানুষ

    অমানুষ
    -তমালী বন্দ্যোপাধ্যায়

     

    এখনও অনেকটা পথ চলতে হবে তোমায়-
    পথে পড়বে- হিংসার উপত্যকা,
    অবিশ্বাসের পাহাড়,
    মিথ্যের ঝর্ণা।
    প্রলোভনের সমুদ্র,
    অবহেলা,অসম্মানের নদী।

    তোমাকে হতে হবে ধনী,স্বার্থপর, অমানুষ।
    ভোগবাদই হবে তোমার জীবনের একমাত্র পথ।
    যা অতি সহজেই ভুলিয়ে দেবে,তোমার মানবতাকে।
    তুমি হয়ে উঠবে কাণ্ডজ্ঞানহীন,
    নিষ্ঠুর এক অমানুষ।
    আর এই পৃথিবীটা হবে —
    লালসার পৃথিবী,
    ভোগের পৃথিবী,
    বঞ্চণার পৃথিবী,
    খুন-ধর্ষণের পৃথিবী।।

  • অণু কবিতা

    অন্য জীবন

    অন্য জীবন
    -সঞ্জয় দাশগুপ্ত

     

     

    ওখানে শীর্ণ নদীর কায়ায়
    সময় থমকে গেছে,
    ঝুরি বুনে বুনে জটাধারী বট
    ওখানে দাঁড়িয়ে আছে…

    পাথরে-ফাটলে জেরবার
    ওই রুগ্ন অগ্রগতি,
    তবু চরাচরে ওখানেই কেউ
    কষছেনা লাভ-ক্ষতি…

    ওখানে একলা মুথা-ঘাস
    তার শিকড়ের সংগ্রামে;
    সাক্ষী কেবল রোদে পুড়ে যাওয়া
    আকাশ, দিবস-যামে…

    তবু সেখানেই বটের ঝুরিতে
    বাবুই-এর বাসা বাঁধা –
    নিবিড় মমতা করে চলে সেথা
    জীবনের মুসাবিদা…

You cannot copy content of this page