চৈত্র শেষে

চৈত্র শেষে-নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত   সলতে নিঃশেষিত। প্রদীপের বুক পুড়ে যায়। চৈত্র, তোমাকে তেমনি এক তীব্র দহনের শেষেরেখে যাই শূন্য ধানখেতে।বাড়ির চিলেকোঠায়হিংসাদ্বেষ রিরংসার বীজসব পুঁটুলিতে বেঁধে রেখে দিয়ে যাই।যদি কখনো এ অর্বাচীন দেশেমানুষ হারায় পথ।যদি মৃত্যু এসে দাবি করেঅকাল বর্ষণ কিংবা ঝড়ের বিস্তর পিপাসাঅথবা মনুষ্যত্ব বিমূঢ়তায় কেঁদে কেঁদে মরেমানুষ হারায় পথ আপনার হৃদয়ের দোষেযদি দেখে পথ […]

কথা ও কবিতা

কথা ও কবিতা-নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত   হৃদয়-ফুসফুসের অলিন্দে থাকা এক দলা কথাসমস্ত বাঁধা পেরিয়ে যখন খই হয়ে ফোটেআননগ্রন্থের কৃপায় হয়তো তা কবিতা হয়ে ওঠে। যদিও কবিতার নাম শুনলেইআমার হৃদয়ের পায়ে ঘুঙুর বাজেকিন্তু ফুসফুস উশখুশ করেখুশখুশে কাশিতে সে জানিয়ে দেয় তীব্র অসন্তোষতবু আমি কবিতার যত ফন্দিফিকির,যত অলিগলি, মায় নিষিদ্ধ পল্লীতকঢুঁ মেরে দেখি—কবিতা হতে কথার আর কত কি.মি. […]

আমিও মূর্তি ভাঙতে চাই

আমিও মূর্তি ভাঙতে চাই-নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত   আমিও মূর্তি ভাঙতে চাই।আমার কোনো অনুরক্তি নাইদুঃখ নাই,ক্ষোভ নাই কোনোদীর্ঘস্থায়ী দীর্ঘশ্বাস নাইকেবল নৈঃশব্দ আছেআছে বিষণ্ণতার অশরীরী ভয়যখন বেণুবনে অন্ধকারে ডেকে ওঠে পেঁচানিষ্ঠুর কর্কশ গর্জনে কাঁপে হরিণ-হৃদয়। খসে যাক ঝরে যাক পাতা কিংবা ফলঝলসে যাক স্বপ্নগুলো সবশুধু পাঁকে পাঁকে অথবা সিঞ্চিত ঝাড়ির জলেঘাসে ঘাসে ফুটে থাক ফুল–আমি জ্যোৎস্নার শরীর থেকে […]

মা এক তপস্যার নাম

মা এক তপস্যার নাম-নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত   মা শুধু জননী নয়, মা এক সুদীর্ঘ ভ্রমণমা এক প্রাগৈতিহাসিক পার্বত্যগুহাবাসী মনমা এক কামনা বাসনা প্রার্থনার বিশাল ভিয়েনযেখানে স্নেহ নির্গত হয় হৃদয়ের প্রচণ্ড উত্তাপে। মা মানে রান্না-বান্না ঝাড়পোঁছ জ্বরে জলপটিমা মানে সুঁই-সুতো কাথাকানি কাচাকাচি রোদসংসারের বাঁধাদাসী বিশ্রাম ও বেতনরহিতদেবী নয়, বেদী নয়,এক অমর্ত্য গৃহকোণ। মা এক প্রাণীর নাম, যার […]

একুশের মঞ্চে

একুশের মঞ্চে-নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত     আমি তো নিশ্চিত জানিহপ্তা খানেক পরেই একুশে ফেব্রুয়ারি।সে দিকেই যাবো বলে পথে বেরিয়েছি। চিরচেনা পথটাও আজ কেমন অচেনা লাগেযদিও জানি মাঝে মাঝে বহুরূপী সাজাতার পুরোনো অভ্যেস। এই পথটা বই-বাজার হয়ে বউ বাজারের দিকে গেছেপথিমধ্যে ঝলমলে সাজে বই আছে,বউ আছেগয়নাগাটি, সবজি- বেগুন,মায় ফরেন লিকার সব আছে।আছে নানান প্রযুক্তির খেলা–কৌশলে তাজারাখা সাতদিনের […]

রোষের কারণ

রোষের কারণ-নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত     কবিতা লিখতে বসে আমার হয়েছে যতো জ্বালাকথারা কুকুরছানা –হৃদয়ে দংশনবাসনাঅবিরাম ঘেউ ঘেউ, সকলের কান ঝালাপালা।রোষে ফোঁসে নার্সিং পড়ুয়া যার হস্টেল ঠিকানা।   আমার কবিতায় তাই মিল নাই শুধুই বিদ্রোহছন্দ মেলাতে গিয়ে অনর্থক বেড়ে যায় দেনাজুতসই শব্দের খোঁজে তোলপাড় আখর সমুদ্রদিশা নাই ঠকে যাই,একরত্তিও মেলেনা ব্যঞ্জনা।   কবিতা লিখতে বসে আমার […]

সব বৃথা

সব বৃথা-নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত     একটি সুরেলা সকাল নষ্ট হয়ে গেছেউবে গেছে শিশিরসিক্ত রোদকুঁড়েমির চিহ্নগুলো শুধুবাসি বিছানায় পড়ে আছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। একটি দুপুর অনর্থক বসে ছিলে কুলিকের ঘাটেযে নৌকো ছাড়ার কথা ছিলো আজগতকালই ছেড়ে চলে গেছে যাত্রীবিহীনযাদের আসার আশায় ছিলো আষাঢ়ের নদী। বড়শিতে টোপ গেঁথে বিকেলের সোনালি রোদ্দুরেতুমি মাছেদের ডেকে বলেছিলে :এসো খেলি।ভ্রান্তিবিলাস।মাছেরা ঘাই মেরে […]

চেষ্টা জারি আছে

চেষ্টা জারি আছে-নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত     চেষ্টা জারি আছে।শ্বাসকষ্ট সহ সমস্ত কষ্টের হাত থেকেমুক্তির চেষ্টা জারি আছে। কাঁটার আঘাত সয়ে ফুলের সুঘ্রাণগ্রহণের মরিয়া চেষ্টাও জারি আছে। বিশ্বাসঘাতকতা সয়ে বিশ্বাস করারদুর্লভ শক্তি মানুষের মনে আজও জেগে আছে। চেষ্টা ও ইচ্ছার যুগল মিলনেচেষ্টা অব্যাহত রাখার ইচ্ছাশক্তিধানক্ষেতে মুক্তি আনে কাস্তের ঘর্ষণে। অথচ কবিতা আটকে আছেজ্যামে–শ্যামবাজার চৌরাস্তার মোড়ে।কোথায় নাকি […]

চৌকাঠ

চৌকাঠ-নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত     গতকাল সে এসে বলেছিল: চলো!মুহূর্তে কেঁপে উঠেছিলাম শঙ্কায়তবু চৌকাঠ পেরোলাম অবলীলায়। সামনেই দীর্ঘ এক পথযদিও তা দানবের পদপিষ্টনেই তাতে মুক্তির শপথ। তবু পথ তো পথই হয়ধুলোবালি পাথর নুড়ি জলঘাস মাটি উদ্ভিদ শ্বাপদ সরীসৃপসহগমনের লক্ষ্যে অবিচল। এরই মধ্যে মৃণাল সেনের শরীর পুড়ে ছাই। একাত্তরের পরে তো ভাইসে কোলকাতা আর নাই। তবু আমি […]

গোষ্ঠীদ্বন্ধ

গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব-নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত     বৃন্দাবন খুড়োর বয়স চারকুড়ি পেরোয়নি এখনোখুব বেশি পাকও ধরেনি তার চুলেযদিও পুরোপুরি দন্তহীন–ফোকলা যাকে বলে।তার প্রিয় খাদ্য –ভিজে নয়,ভাজা নয়,আস্ত গোটা চিড়ে।আমি জানতে চাই,”খুড়ো,এটা সম্ভব কী করে?”“ওরে,চিড়েরা নিজেরাই চ্যাপ্টা হয়ে থাকেআর আমাদের মুখে আছে এক শক্তি বৈনাশিকযা সবকিছু গ্রাস করে থাকে।”খুড়োর এসব ঘোলাটে কথার মানে বুঝি না সঠিক।বোঝার চেষ্টাও করি নেবন্যার […]