• কবিতা

    কবিতা- প্রেমজ্বর

    প্রেমজ্বর
    -সোমা ধর ঘোষ

     

    আমি তখন সবে ষোলো
    তোমার সাথে দেখা হলো।
    গেলাম আমি হারিয়ে তোমাতে
    তোমায় দেখতাম নানা অজুহাতে,
    বুকের ভিতর হল শুরু
    ক্ষণে ক্ষণে গুরু গুরু।
    তাকালে তুমি আমার দিকে
    লজ্জা নামল আমার চিবুকে;
    একছুট্টে পালিয়ে গেলাম
    আমি শুধু তোমার হলাম;
    হঠাৎ জীবনে এল বসন্ত-
    আমি তখন কিশোরী দূরন্ত,
    খেলি এক্কা দোক্কা পরে স্কার্ট
    তোমায় লাগত বেশ স্মার্ট।
    তুমি আসতে বিকেল হলে
    বাজিয়ে বেল তোমার সাইকেলে,
    আমি হতাম রঙিন প্রজাপতি
    তুমি তখন অস্থির মতি,
    চোখে তোমার উড়ত ভ্রমর
    আমার তখন প্রেমজ্বর!
    তোমার সাথে দূরে ছুটি
    বেশ লাগত আমাদের জুটি।
    তোমার তখন গোঁফে রেখা
    আমার শুরু স্বপ্ন দেখা-
    মন জুড়ে শুধু তুমি তুমি
    কখনও অতিভুজ হতো ভূমি;
    তুমি ওড়াতে ঘুড়ি চাঁদিয়াল
    মনে উড়ত খুশীর পাল,
    তোমাতে আমাতে হতো খুনসুটি
    আমি তখন গোলাপ ফুটিফুটি।
    বেনি দুলিয়ে সাইকেল চড়ি
    তোমায় ভেবে বার বার মরি!
    আমি বলতাম, ‘দুপুরে ঘুমিও’
    তুমি বলতে, ‘হব রোমিও!’
    কথায় কথায় করতে অভিমান
    আমি বলতাম, ‘সরি জান!’
    তুমি বলতে, ‘হও আমার!’
    আমি বলতাম, ‘আমি তো তোমার!’
    কেটেছে কত দিবস নিশি
    আজ আমার হল আশি,
    কোথায় গেলে আমার বসন্ত?
    আমাদের প্রেমের নেই যে অন্ত!
    আজ আমি যদি হই ষোলো,
    তুমি আবার কিশোর হবে বলো?

  • কবিতা

    দুজনার দেখা

    দুজনার দেখা
    -রূপকথা ঘোষ

     

     

    -মনোমিতা কেমন আছো বল?
    -এই চলছে দিন কেমন তুমি বল?
    -একরকম অনেকদিন পর দেখা
    -হ্যাঁ,যদিও আজও আমি একা!
    -একা! তোমার আছে ঘর,বর,মেয়ে!
    -তা আছে, তবুও একা মন, জীবন একঘেঁয়ে
    -আমি তো ভাবতাম আমি শুধু একা
    -জীবনে ছিল নিয়তির এই লেখা।
    -মনে পড়ে মনোমিতা সেদিনের কথা?
    -হ্যাঁ, ভোলা কি যায় স্মৃতির কথকথা
    -ভেবেছিলাম তুমি হবে আমার
    -হাসালে মহুল, আমি তো তোমার।
    -আজও তুমি আমার আছো মনোমিতা?
    -বাঁধা পড়েছি সাতপাকে, মনে তোমার মিতা
    -হলাম খুশী ভীষণ আমি মনোমিতা
    -তোমায় কত ভালোবাসি মহুল জানো কি তা?
    -বুঝেছি মিতা জীবন আমার সার্থক
    -কেন তুমি বেদনায় জ্বলো অনর্থক?
    -মিতা আজ পেলাম আমি নিদারুণ শক্তি
    -বন্ধনহীনতায় আছে ভালোবাসার মুক্তি।

  • কবিতা

    অপার বিস্ময়

    অপার বিস্ময়
    -রূপকথা ঘোষ

     

     

    ব্যথার সজল মেঘ জমেছে মনের ঘরে,
    ঘনায় সন্ধ্যা ইমন রাগিনীর সুরে।
    সোঁদামাটির গন্ধ মনভূমি জুড়ে,
    মনের জানালা ধরে মনপাখি উড়ল সুদূরে।
    আকাশের ক্যানভাসে খেয়ালী মেঘপরীদের ছবি,
    অরূন্ধতী ডাক দিল, ‘এসো কবি,
    বল কত প্রেম আর কত বেদন
    বুকেতে থাকলে হয় কবির অমর সৃজন?
    বললাম,বড় কঠিন প্রশ্ন অরুন্ধতী,
    জানি না আমি সৃষ্টির জাগতিক রীতি।
    অরূন্ধতী হেসে বলল, সে কি কবি!
    কেমনে আঁকো তুমি জীবনের ধ্রুপদী ছবি?

  • কবিতা

    বেহিসাবী প্রেম

    বেহিসাবী প্রেম
    -রূপকথা ঘোষ

     

     

    চাঁদিয়াল উড়ছে উদার আকাশে-
    সে তো তুমি,
    খেয়ালী হাওয়ার চকিতে
    এলোচুলে দোলা-
    সে তো তুমি,
    ভাবনারা নীল বাতাসে আঁকে ত্রিমাত্রিক ছবি-
    অলীকবিক্ষণে তুমি!
    জলপাইরঙা সন্ধ্যায় ফুটেছে নিশিগন্ধা-
    সে তো তুমি,
    আলমারির শাড়ির ভাঁজে ন্যাপথলিনের গন্ধ-
    সে তো তুমি,
    স্নানের শেষে লাগানো ওডিকোলনের
    সুবাস সারা শরীরজুড়ে-
    সে তো তুমি,
    আয়নায় দেখা আমার প্রতিবিম্বের পাশে
    সে তো তুমি,
    অস্তরাগমাখা প্রেমিক বিকেল-
    সে তো তুমি
    উদাসী বাতাসে ভেসে আসা
    বাতাবী ফুলের গন্ধ-
    সে তো তুমি,
    শরতের প্রকৃতিতে কেমন তুমি তুমি আবেশ,
    চোখের পাতায় ভীড় করে রঙের জাদু
    সে তো তুমি!
    আমি হলুদ বাতাসে ওড়া এক প্রেমের পাখি,
    কেন তুমি নার্সিসাস!

  • কবিতা

    দ্বিপ্রহর

    দ্বিপ্রহর
    -রূপকথা ঘোষ

     

    শুনশান চারিধার, দ্বিপ্রহরের বেহিসাবী সময়ে
    বাজে তালপাতার বিবাগী একতারা, দিনমনি
    মধ্যগগনে; গাছেদের চুপ কথা,ছায়ার নীরবতা,
    পেয়ারাশাখে কাঠবেড়ালীর দুরন্তপনা;
    ঘুঘুর মন কেমন করা কূজন প্রতিধ্বণিত হচ্ছে
    প্রান্তরে,কাকের কর্কশ ডাকে নিস্তব্ধতা ভাঙছে
    নৈসর্গের আবহে। খেয়ালী বাতাসের চকিতে ঘরে
    আনাগোনা-স্বপ্ন বপন ক্ষণিকে,জাগতিক ভাবনারা
    বিদায় নিয়েছে সাময়িক ভাবে ; দ্বন্দেরা গেছে দূরে।
    বারান্দার পৈঠাতে বেওয়ারিশ নিদ্রামগ্ন সারমেয়;
    গলিরাস্তায় পসরা মাথায় বাসনওয়ালীর হাঁক-
    তন্দ্রাভগ্ন নিমেষে। অর্ধ ঘুমন্ত অর্ধ জাগ্রত নাগরিক
    জীবন।বাতাসে বইছে মাধবীলতার সুরভি-মন
    ভরেছে মধুরতায়, শরীরজুড়ে অকারণ আলস্য।
    ঘুম ঘুম চোখ পড়ছে খবরের কাগজের কলাম,
    বিছানার প্রান্তে পড়ে উপন্যাসের খোলা পাতা
    ঘুমপরীর জাদু- চোখের পাতায় ঘুমের সঞ্চার-
    অবচেতনের ভাবনাগুলি স্বপ্নে সাজায় রূপকথা।

  • কবিতা

    পল্লীগ্রাম

    পল্লীগ্রাম
    -রূপকথা ঘোষ

     

     

    তরুলতা ঘেরা সারি সারি কুটির-
    পটচিত্র দিগন্তজুড়ে, সরসীর জলে
    ভাসে কলমী ফুল,কুমুদ; কাচপোকার
    জলে আবর্তন পুষ্করিণীজুড়ে।বাউল
    বাতাসের দূরে হারানো রাঙামাটির পথে
    আনাগোনা,কুটির প্রাঙ্গণপ্রান্তে পুঁইমাচা,
    আরোহী লাউ, বকুলশাখে পিউকাঁহার
    বিরহী গীতের প্রতিধ্বনি- মন কেমনের
    আবেশ,পাগল হাওয়ায় বাজে
    তালপাতার নূপুর। তালদিঘীর পথে
    গাগরী কাঁখে চলেছে পল্লীবধূ দুলকি চালে;
    দিঘীর সবজে জলে হংস হংসীর সোহাগ
    আপনমনে,ছেলে-ছোকরাদের দুরন্ত সাঁতার-
    জীবনের তরঙ্গধারা; আম্রকুঞ্জে বেজে ওঠে
    মন উদাস করা রাখালের বেনু- গোরুর পাল হয়
    বিমনা,পল্লীবধূর অবগুণ্ঠন সরে যায়- মোহিত
    মনে স্বপ্ন সঞ্চার হয় ক্ষণে।দইওয়ালার হাঁকে
    ওপাড়া থেকে খোকাখুকু আসে ছুটে,সবুজ ধানের
    ক্ষেতে দোলে কাক তাড়ুয়া।পল্লীপ্রান্তে গাঙে
    ভেসে চলেছে ডিঙিনৌকা উজান স্রোতে। মাঝির
    সারি গানে মুখরিত নৈসর্গ,শূন্যতার সখ্যতা গাঙের
    সাথে।সারি সারি গাঙচিল উড়ছে স্বপ্ন- অজানায়,
    বেলা গড়িয়ে বিকেল- বাতাসের আলস্য গীতি মূলতানী
    সুরে,দিনমনি ঢলেছে পশ্চিম পাটে-সিঁদুরে মেঘে
    রেঙেছে নব পরিণীতা আকাশ।কৃষ্ণকলি মলয়ের
    মিতালী- সুন্দরী উষসীর
    দর্শন ধরাতলে। মঙ্গল শঙখধ্বনি আর
    আজানের আধ্যাত্মিক সুরে ভরেছে পল্লী-
    অনন্তের বন্দনায় প্রাণ সঁপেছে নরনারী।

  • কবিতা

    বঁধু

    বঁধু
    -রূপকথা ঘোষ

     

     

    তুমি আঁধারে মোমের আলো,

    নিশীথে তারা হয়ে জ্বলো।

    পূর্ণিমার সোনা বিধু,

    অন্ধকারে জোনাকি শুধু।

    তোমার চোখে আছে কি জাদু!

    বলবে কি তা আমায় বঁধু?

    তুমি যে গন্ধপুষ্পের মধু,

    হৃদয়-কাননে ঝরো শুধু।

    হয়েছ মন বিরহ বিধুর,

    চলে এসো কেটে যাক সুদূর।

    জাগালে স্বপ্ন কতশত,

    দুটি চোখ প্রেমস্নাত।

    তুমি যে গো আমার হবে,

    বল না একবার সেদিন কবে?

    চাঁদ হাসবে,ফুল ফুটবে,

    কাটবে নিশি, অলি জুটবে।

    দিলাম তোমায় রজনীগন্ধা,

    দিনশেষে রাতের তন্দ্রা।

  • কবিতা

    দুই আমি

    দুই আমি
    -রূপকথা ঘোষ

     

    বাইরের আমি ব্যস্ত
    ঊষা থেকে নিশি অবধি
    সচল জীবনের ধারায়।
    তারই মাঝে জেগে ওঠে
    অন্তরের আমি।
    জীবনের ছন্দে ছন্দে
    সৃষ্টির ছন্দ মিলে যায়।
    ক্লান্তিকর একঘেঁয়ে
    মুহূর্তে অন্তরে বেজে ওঠে
    ললিতে রাগিনী,
    তানসমূহ ঝরে পড়ে
    মানসে,ভাবনা শুরু করে সৃষ্টি।
    গুমোট দুপুরে মানসে বয়
    ফাগুন হাওয়া।
    মানস-নদে দোলা লাগে
    কবিতার নাও বহে যায়।
    ব্যস্ত সাঁঝে মানসে
    জ্বলে ওঠে অগুনতি আলো,
    বহে চলে স্বর্ণগঙ্গার ধারা-
    ঝরে চুপিচুপি আলোর
    রূপকথা মানসভূমিতে,
    নান্দনিক কাব্য সৃষ্টি হয়।
    নিশুতি রাতে মানসে জ্বলে
    ঝিলমিল তারারা,
    ছায়াপথ ধরে
    ছুটে চলে কবিসত্তা।
    হৃদয় লেখনী লেখে
    জীবনের কবিতা।

You cannot copy content of this page