-
এক পশলা শীতের সকাল
এক পশলা শীতের সকাল
-পলি ঘোষশহরের বুকে এক পশলা কুবের বৃষ্টি ঝাঁকিয়ে নিয়ে আসে শীত।
আজ ছাদহীন রাস্তার মানুষগুলো রোদে জেগে উঠে।
আগে উনুন ধরিয়ে তাপ নেয়।
শীত প্রচন্ড শীত থরথর কাঁপন দেওয়া শীত।
লাল নীল হলুদ কমলা কাঁথা লেপ কম্বল জ্যাকেট
চাদরে মাপলারে জড়ানো শীত।
কাপ থেকে লকলকে আঁকাবাঁকা ধোঁয়ায়
নিজেকে হারিয়ে যাওয়া এক ভীষণ শীত।
হৃদয়ের মখমলে জমানো শিশির ভেজা এক শীত।
গাছের ফাঁকে মিষ্টি দোয়েল শিষটি তোলে আপন মনে।
মনের আবেগে ইচ্ছেগুলো সাজিয়ে তুলি নানান ঢঙে।
মায়ের ছোট্ট খুকু পাঠিয়ে দেবো রোদের খামে মিস্টি এক চিঠি।
আমার উঠোনের কোনে গন্ধে ভরা সুবাসমাখা শিউলিতলা।
আমোদ ছোঁয়া পাগল করে এক পশলা শীতের সকাল। -
মানবতা
মানবতা
-পলি ঘোষযত জটিলতা তে পা রেখেছআমি ততই বিপদসীমাকে ছুঁয়েছি আমি
যতই অন্যের আয়নাতে মুখ দেখেছি আমি
ততই আমি রূপের রানী হয়েছি ।মায়ের কোলে যখন এলাম ছোট্ট এক খুকু হয়ে
তখন আমি কি ভেবে ছিলাম এই
ভাবে উড়ে উড়ে করব আমার জীবন যাপন ।পেতে পেতে না পাওয়ার সুখ
আমার হারিয়ে গেলো নতুন ঘরেগিয়ে ।তাই তো আমি চাঁদের গায়ে লেপ্টে থাকি সকল কিছূ ভুলে ।
তখন আমি শুধুই ভাবি মনে নিমাই যেদিন সন্যাসে যায়
বিষ্ণুপ্রিয়া তখন অঘোর ঘুমায়
আমি তাই সেই দেখে বেরিয়ে পড়লামআমার স্বপ্নের পথেরসঠিক ঠিকনা খুঁজতে ।
-
চোখের জল
চোখের জল
-পলি ঘোষ“চোখের জলের হয় না কোনো রঙ ”
কতো রঙের স্বপ্ন শুধুই আঁকা ।
স্বপ্নগুলো সত্যি করে আজ আমার কাছে
অনেক কিছু শিখিয়ে দিল এসে।
আপন আজ হয় না কখনো আপন।
সবাই আসে স্বার্থ নিয়ে।
আজ দুনিয়ার খেলা বোঝাই বিপদ।
জানিনা এখনও কি আছে আমার কপালে ।
স্নেহের জড়ানো অনাগত দিনগুলি মোর।
আলোর পথে চলতে চলতে বার বার ঠোকর খাই।
এ কেমন ভোরের শিশির কণা রোদের আলো
আসতেই সব শুকনো মরিচ গুঁড়ো আধা কাপ।
আশার আলো ঠিকরে পড়া আভা।
ভোরের আবছা আঁধার ঠিক যেন
কাঁচা পাকা প্রাচীর ভেঙ্গে কাশফুল ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছা।চিন্তার শরীর যে ভাবে সজোরে ধাক্কা মারে।
চেয়ে থাকি নিষ্পাপ সহাস্য সজাগ চাহনীতে।
ঝর ঝর চাঁদের নির্যাস ঝরে পরে অবিরাম।
আমার নিরন্তর পথচলা যেখানে জোছনার স্বার্থেই নীরব নিস্তব্ধ।
আজ আমার ভোরের আবছা আঁধার আলোয়
আমি এখন চোখের জলের সাথে যোগাযোগ করুণ এক নকশী কাঁথা। -
রাত
রাত
-পলি ঘোষঅমর একুশে চোখ বন্ধ করে দেওয়া অনু পরমাণু বোমা ।
অমিত আহমেদের আঁকা বাঁকা চাঁদ উঠেছে
ফুল ফুটেছে তার জন্য অপেক্ষা ।
আজ আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয়
একজন মানুষকে অনেক কিছু কথা
বলে জেনে শুনে খুশি হলাম ।
এখন দেখি মুগ্ধ হয়ে চাঁদের আলো।
মনে হচ্ছে আমার স্মৃতিগুলো আমায় উপহার
দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছে বারবার।
আমি সাগর পানে চেয়ে চেয়ে রই সারা নিশি রাতে।
আমি তখন কাব্য লিখি অনুরাগের আঁচে
জ্বলছে সেই আগুনে পুড়ে পরশ পাথর হয়ে
নিজেই নিজেকে নিজের কাছে খুব খুশির দিন ধরে রাখতে পারি।
আজ আকাশে বাতাসে লাশের গন্ধ পাই
দেখা যায় ভালোবাসার টানে তুলির টানে
নতুন রঙে রাঙিয়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা।
আমি আজ আমার মনের দুয়ারে দুয়ারে এসে
তোমার অপেক্ষায় রইলাম একা একা বসে।
আজ মনের মাঝে দেখছি আমি তাই
নতুন করে কালবৈশাখী নাচন।
রাত জেগে থাকা সত্ত্বেও ব্যক্তিগত ভাবে মনে হচ্ছে
আমার মনের ভিতর চাপা কষ্ট বুকে চেপে ধরে
পুজো করে মৃদু হাসির জন্য অপেক্ষা আছি।
আজ তুমি প্রিয় আসবে বলেই ঈশান গগনে
অমৃত বাণী নিভৃতে অভিমানে কেঁদে কেঁদে
চোখের জলে ভেজা গোলাপের পাপড়িগুলো
শুভেচ্ছার জন্য রেখে গেলাম। -
অলস দুপুর
অলস দুপুর
-পলি ঘোষনির্জন এক দুপরের নিঝুম অরণ্যের ছায়ার অন্তরালে
তুমি কি দেখছো অবাক হরিণীর টান টান নয়নে?
কে জানে বিকালের কাছে ঝলসে যাওয়া দুপুরের কান্না-
তোমারই ছোঁয়া লাগছে কিনা !
হঠাৎ করেই তুমি এলে দুপুরের বৃষ্টি হয়েআমার মনের গভীর জালে ;
দেখি পাখির ডাকে কলরব করে
দু’টি ডানা মেলে তারা উড়ে উড়ে চলে দূর গগনের পরে
দুপুরের কোলে ডাক দিয়ে বলে যায় কানে কানে-
ঘুমের ঝাঁপিতে আয় না তবে দুপুরের অস্থির খরতাপে
ভাবনাগুলো কেন জানি না সব কেমন যেন এলোমেলো করে দেয় ।
শুধুই তাই আজ আমি হয়েছি এক উদাস অলস দুপুরের-
প্রিয় সঙ্গিনী । -
গোধূলি
গোধূলি
-পলি ঘোষসূর্য ডুবো ডুবো উদোম আকাশ
মৃদু বায়ে বয়ে যায় দক্ষিনা বাতাস
গোধূলির আলো মেখে সন্ধ্যা বেলায়
পাখিরা উড়ে যায় দূর গগনের পরে
ছড়িয়ে আছে অনেক ঝরাপাতা
হৃদয় ভাসে নানা সুখের কথা কিংবা
দুঃখভরা বার্তা মেশানো ভালোবাসার অভিমান
অযান ধ্বনি সন্ধ্যা তারা সুধার ধারা
চলছে বিশ্ব জগতময়
এমনই প্রতিচ্ছবি আঁকছি মনজুড়ে
ঐ বালুকা যায় রে দেখা সন্ধ্যা আকাশ জুড়ে
কেবলই ছুঁয়ে গেলো হৃদয়ে মোর গোধূলি সময়
নিঃশব্দ গ্রাস করেছে দেখো নাগরিকবাসীদের হৃদয়ে আজ কেমন করে
স্মৃতির মলাটে জমেছে ধুলোমাখা স্তর
সুনীল সগরের শ্যামল কিনারে দেখেছি
পথে পথে যেতে তুলোনহীনারে ।
এ কথা কভু আর পারি না ভুলতে
আছে সে মোর হৃদয়ে মাধুরী রুচিতে -
অভিমান
অভিমান
-পলি ঘোষসেদিনও ছিলো সেই আষাঢ়ের গভীর দুপুর
আমার হৃদয় এসেছিলে বৃষ্টি নিয়ে প্রিয়
তুমি আসবে বলে প্রিয়
আমি গোলাপ ফুল চুলে গুঁজে ছিলাম ।
নিজের মনে একটা গান লিখে ছিলাম ।
কিন্তু প্রিয় তবুও তুমি এলে না এলে না ।
কথা দিয়ে ও কথা রাখলে না প্রিয় তুমি ।
আজ তুমি জেনে নাও
ভালোবাসা না দাও প্রিয়
শুধুই ভালবাসা নাও ।
আর কিছুই এ জীবনে চাই না আমি –
আর কিছুই চাই না আমি
হাসিমুখে ব্যথা দিলে তুমি ।
জানি তুমি আমার কাছে একদিন ঠিক ফিরে আসবেই ।
মরণের আগে নয় তো বা মরণের পরে কোনো একদিন ।
যদি তুমি ফিরে আসো আমার কাছে ।
কোনো এক শ্রাবন সন্ধিক্ষণে ।
হয়তো প্রিয় সেদিন আমায় পাবে না তো ।
তোমার পাশে থাকবে আমার স্মৃতিটুকু । -
বাস্তব
বাস্তব
-পলি ঘোষআজ দেখো তুমি দূরবীন ছাড়া দূর আকাশটাকে
মনে হচ্ছে যেন নদীর জলে নীল আকাশ ভেঙে পড়েছে।
আজ তাই কাছে গেলে বোঝা যায় কে আপন, কে পর।
জীবন হয়ে গেছে এমন ই এক আশ্চর্য অভিনয়।
দেখি আমি উদাস হয়ে তাকিয়ে বই এর মলাট টাকে ।
আজ মলাট দেখে মনে হয়
কি দারুণ সুখে আছে।
যদি পারো দেখো বই এর পাতা উল্টে পাল্টে ।
কাঁচের গ্লাস ভেঙে গেলে যেমন জোরে না।
আজ ঠিক আমার মন ও ভেঙে চুরমার।
কি ভাবে জোরা লাগাবে।
আমার মনের অন্তরালে লুকাইয়া সকল কথা
একলা উঠান জুড়ে আছো তুমি আছো
শুধু উদাসি হৃদয় জুড়ে জোছনা হয়ে। -
তোমায় ভালবেসেছি বলে
তোমায় ভালবেসেছি বলে
-পলি ঘোষতোমায় ভালবেসেছি বলে ;
তাই আমি আজ কলম ধরেছি ।তোমায় ভালবেসেছি বলে ;
তাই আমি বিরহের জ্বালা ভুলেছি ।
তোমায় ভালোবেসেছি বলে ;
তাই আমি চোখের জল মুছেছি ।তোমায় ভালবেসেছি বলে ;
তাই আমি প্রভাতের সূর্য ওঠা দেখেছি ।তোমায় ভালবেসেছি বলে ;
তাই আমি গঙ্গার বুকে প্রদীপ জ্বেলে ভাসিয়েছি ।তোমায় ভালবেসেছি বলে ;
তাই আমি নতুন করে বাঁচতে শিখেছি ।তোমায় ভালবেসেছি বলে ;
তাই আমি নিত্য নতুন শব্দের
আবিষ্কার করতে পেরেছি ।তোমায় ভালবেসেছি বলে ;
তাই আমি খুশিতে আপন মনে পথ চলেছি ।তোমায় ভালবেসেছি বলে ;
তাই আমি নিজের অজান্তে নতুন
এক জগত সৃষ্টি করেছি ।তোমায় ভালবেসেছি বলে ;
তাই আমি কবিতার ভুবনে
নিজেকে মেলে ধরেছি ।তোমায় ভালবেসেছি বলে ;
তাই আমি নিজেকে নতুন
করে সৃষ্টি করে চলেছি ।তোমায় ভালোবেসেছি বলে ;
তাই আমি অজানা কে
জানতে নতুন করে শিখেছি ।তোমায় ভালবেসেছি বলে ;
তাই আমি হৃদয়ের মাঝে
সুখের এক নীড় বেঁধেছি । -
তুমি আমার পূজার ফুল
তুমি আমার পূজার ফুল
-পলি ঘোষআকাশে বাতাসে ভাসছে কেবল সুরের প্রতিধ্বনি।
আমার ভাবনাগুলো মিশছে কেবল মেঘমালার দেশে।
তাই চলতে পথে দেখছি দুচোখ ভরে ধূসর সাদা পেঁজা তুলোর ভেলা।ভাবছি তাই আপন মনে যেতে ছুটছে তারা কিসের অভিযানে ।
আমি আমার পথে পাই না ভেবে এত স্রোতের টানে
খুশির জোয়ার উথলে কেনো উঠে আপন বেগে।
তাই তো আমি চলতে পথে শুনি আগমনীর প্রতিধ্বনি।
চলতে পথে ঘাসের উপর দেখি দুলছে কাশফুলের ই গাছ।
ঘাসের উপর পা ফেলতে দেখি শিশির ভেজা শিউলি যত ডাকছে আমায় হাতছানি দিয়ে।
শিউলি যেন বলছে আমায় আঁধার কেটে ফুটছে দেখ আলো ।
সকাল নয়ন মেলে দেখি গাছের ডালে নীলকণ্ঠ পাখি এসে বলছে
গানের সুরে পুজোর ঢাক বাজবে এবার কানে কানে।