• কবিতা

    কবিতা- অন্তরালে

    অন্তরালে
    – মঙ্গল মন্ডল

     

     

    রাত ভাঙা অন্ধকারে সূর্য উঁকি দিয়ে
    বলে- “আমি কি তোমার নই?”
    এপারে বসে থাকা নিশি চিৎকার করে
    – “তুমি তো আমাকে মিলায়েছো স্বচ্ছ বাতাসে ,
    কি করে আমি তোমার হই।”

    রবি করুণ কন্ঠে নিজেকে ভোরের আড়ালে রেখে
    আবার বলে উঠল শেষে- “যদি তুমি ভয় পাও,
    ও হে কেমন করে বেঁচে রও?
    তোমাকে আরো বাঁচতে হবে যে!”
    আঁধার কহে নিশিডাকের সুরে-
    “আমি তো বেশ আছি ওই আলো হারিয়ে,
    যদি তুমি আসতে চাও কাছে
    আমি পালাব চিরতরে, আর আসব না ফিরে।”

    দূরে প্রভাতের মলিন মৃদু বাতাসকে
    স্পর্শ করতে করতে বলে উঠল আদরে-
    “ও হে নিশি থাকো তবে একাই
    নিজেকে আড়াল করে,
    তবু দূর হতে একবার বলে দিও
    -আমি কি তোমার নই?
    কাছে না হয় নাইবা এলে!”
    যামিনী একবুক নিঃশ্বাস ফেলে সন্ধ্যার অশ্রুছলে বলে ওঠে-
    “আমি তবে আসি ,
    তুমি তো আছো থাকবে
    আমার ভাবনায় আপন হয়ে,
    জেনে রেখো-
    না পেয়েও আমি থাকি তোমারই অন্তরালে।”

  • কবিতা

    কবিতা- সাতরাঙা ইচ্ছে

    সাতরাঙা ইচ্ছে
    – মঙ্গল মন্ডল

    মেঘের দিকে দৌড়ে যাওয়া মনের দুটি চরণ
    হঠাৎ থমকে গেল, সে দেখে দূরে
    একটা চাঁদ উজ্জ্বল হয়ে মেঘ থেকে উঁকি দেয়
    আর লুকিয়ে যায়, থমকে যাওয়া মন ভাবে-
    এটা রাত না দিন?
    ক্ষণে ক্ষণে আলো আঁধারে ভরছে বারংবার!

    বিস্মৃত মন চিৎকারে জ্যোৎস্না ছুঁয়ে বলে যায় দূরে – ও চাঁদ,
    তুই এলি কেন? আমি তো রবিকে চাই মেঘের ভীড়ে।
    তুই এলি কেন? রামধনু তুই তো দিতেই পারবি নে যে!
    দৌড়ে ফিরে যা আর সূর্য ভরা আকাশকে ডেকে দে,
    আমি সাতরঙের সেই অর্ধবৃত্ত বেরি চোখে মাখতে চাই,
    তুই যা, ফিরে যা!
    ও হে শশী … ফিরে যা এখনই এই বেলা,
    আমি এখন মেঘেদের সাথে গল্প করি।
    সাদা বকের দল আবার উড়িয়ে দিয়ে
    মেঘ মাখা হৃদয়ে ছবি আঁকি,
    সেই ছোট ছোট আশা পূর্ণ করি মনের সাথে।

    ঘুম পাড়ানি মাসি পিসির সেই গান গেয়ে
    অন্ধকারকে ঘুম পাড়াব, ও চাঁদ তুই রবিরে ডেকে আন।
    রবিকে দিয়ে এক মুষলধারায় বৃষ্টি আনবো,
    আর রামধনুর রঙ যখন
    বৃষ্টির সাথে আমায় ছুঁয়ে মাটিতে মিশবে
    তখন রঙের নেশায় ডুবে আমি ঘুমিয়ে যাব
    আর নীল আকাশ আমায় শোনাবে
    রূপকথার পরী আর রঙিন প্রজাপতির গল্প।

  • কবিতা

    কবিতা- আবার দেখা হবে

    আবার হবে দেখা
    – মঙ্গল মন্ডল

     

     

    প্রথম প্রেমের পাতা শেষ,
    আবার তাকে শুরু করতে হবে নতুন করে,
    সাজানো মন কাঁচের মতো যখন ভাঙল,
    এদিক ওদিক তাকিয়ে সে দেখল, কেউ নেই !
    ভালোই হয়েছে ,
    কেউ শুনতে পায়নি ,
    নইলে কাঁচ ভাঙার শব্দে
    কত কথা শুনিয়ে দিত,
    কত দোষে হত সে চরম আসামী;

    তাকে কাঁচ কুড়িয়ে গলিয়ে আবার আকার দিতে হবে,
    আর একবার আয়না বানাতে হবে
    আবার হবে নতুন মুখশ্রীর চোখের সাজ;
    ভুলতে হবে
    অতীতের অভাগা আয়নার মতো পুরোনো মনকে,
    সে পারবে কি?
    নতুন বইয়ের পাতা এখনও সুগন্ধে ভরা,
    কিছু লেখা নেই ,
    নতুন করে কাহিনী হবে এক অটুট প্রেমের,
    একবার ভেঙে যদি আবার গড়া যায় তবে
    সে নতুনের ভাঁজে ভাঁজে ভাঙা দাগ থাকলেও
    যত্ন বাড়ে, পাছে না পড়ে যায়,
    পাছে না প্রতীক্ষা আবার বেড়ে যায়!
    ভালোবাসা অমর হতে পারে,
    জীবন নয়….!
    একজীবনে অমর হয়েই শতবার বাঁচতে হয় ,
    প্রেম যদি অবিনশ্বর হয় তবে দেহের কি দোষ ?

  • কবিতা

    কবিতা- পথের পথিক

    পথের পথিক
    – মঙ্গল মন্ডল

     

     

    পথ হারানো পথিক হয়ে
    দিশেহারা চোখ
    পথের ধারে রয়েছি পড়ে ,
    আমি ক্লান্ত দেহ নিয়ে
    বটবৃক্ষের ছায়ায় নিদ্রায় রয়েছি অঘোরে,
    পথের ওই শিশু কাঁদে খিদের ঘোরে ,
    আমি কান্নাগুলো শুনেছি শুধু
    থামাতে পারিনি তারে কোলে করে,
    আমি নির্বাক বোবা ঠোঁটে
    পঙ্গু অঙ্গের দেহ এ ধনী শরীরে,
    কুমারী মা ধিক্কারে মরে ,
    ঠকিয়েছে কে আর কাঁদছে কারা!
    আর মরছে কারা?

    পথহারা পথিক আমি
    খুঁজে চলি পাহাড়ের চেয়েও কিছু দামী,
    আমি দেখতে চাই সব কষ্টের অনুভবের সাগর ,
    পথশিশু, পীড়িত গৃহবধূ, গরীবের অন্নহারা কান্না,
    চাই শুধু সব অশ্রুর গহনা,
    ছেলেটার হতাশার চিতকারও শুনি কানের ভেতর!

    আমি অমানবিকের থেকেও বেশি পাষান,
    দেখি সব, ইচ্ছা রাখি প্রবল তবু বাস্তব হয় না গান,
    সেদিন এক অসহায় মা
    দু’হাত বাড়িয়ে ভিক্ষা চেয়েছিল যখন,
    এক-দু’টাকা যদিও হাতে সে পেল
    চোখে বাঁচার ভিক্ষাটা কেউ দেখেছিল?
    এখানে সকল স্থানই যেন জীবন্ত এক মরুভূমি আর শ্মশান।

  • কবিতা

    কবিতা- ভাবনায় আসুক ভারসাম্য

    ভাবনায় আসুক ভারসাম্য
    – মঙ্গল মন্ডল

     

     

    মেয়েটির ইচ্ছাগুলো
    কখনও কখনও একলা চলে আর হারিয়ে যায়,
    সে চায় না সংসার আর,
    ওখানে তার বন্দি দশার পরিহার।
    নতুন ঘর নতুন করে আবার শুরু নতুন কথা বলা,
    নতুন আচার বিচার, মানিয়ে নেওয়ার প্রথার পাহাড়;
    তবে তাকে তো যেতেই হবে সমাজের ওটাই আধার।

    তবে আমি যদি বলি ছেলেটির কথা,
    যে কথাগুলো বলতে কেউ চায় না বোধহয়,
    ছেলেদের তো প্রতিষ্ঠা করতেই হয়,
    তাকে রোজগার করতে হয়
    ঘরবাড়ি গাড়ি গড়তে হয়
    ছেলেদের তো ওটা করতেই হয়।
    চাকরি করার যুদ্ধ চলে
    নাহলে ছেলেটাকে কেউ সমাজে ভালো চোখে দেখবে না;
    বেকার বলে গলা ফাটাবে,
    তার ভালোবাসার কোনো অধিকার হয়ে ওঠে না,
    প্রতিষ্ঠা যদি না হয় সমাজ তাকে মেনে নেবে না।

    আর যাদের নেই কিছু ,
    কেউ কি এমন ভেবে তার হাত ধরতে পারবে, যে-
    তার দু’ বাহুর মাঝে জড়িয়ে ধরে আকাশ পারি দেবে?
    ছেলেটারও স্বপ্ন থাকে,
    ইচ্ছা থাকে
    কেউ তাকে বুঝতে চায় না,
    শুধু বলে বসে, অনেক বয়স তো হল- এবার বিয়েটা কর!
    কেউ বলে বসে, তোর দ্বারা কিছু হবে না;
    তারা কি জানে তার মনের ঠিকানা!
    অনেকে বলে, লোকের কথায় কি যায় আসে?
    যদি বলি- আসে, ওই ছেলেটার কানে শোনার ক্ষমতা আছে,
    কিন্তু তার মনের ব্যথার সীমা পেরিয়ে যায় প্রতিবার।

    যদি পারো ছেলেটির মন আচার বিচার দেখে এসো,
    ঘরবাড়ি গাড়ি তো সংসার সুখী করে না,
    প্রতিষ্ঠা তো দুজনেই না হয় একসাথে করলে নিজেদের।

    চিন্তা পাল্টালেই জীবন পাল্টাবে হয়তো,
    তুমি আমি সবাই এক, তবে কেন এত যুক্তি দ্বন্দ্ব।

    এটা জেনে রেখো সবে,
    ছেলে যেমন তোমার কথা ভাবে
    তুমিও মেয়ে হয়ে ছেলেটার কথা ভেবে দেখো,
    দৃষ্টি কোণ যখন রাস্তা পাবে পৃথিবীতে আর এক জগত হবে।

  • গল্প

    গল্প- বাস্তব দর্শন

    বাস্তব দর্শন
    – মঙ্গল মন্ডল

     

     

    “…আমি গহন অরণ্য খুঁজে চলি যতবার
    ভাবি হারাবার স্বাদ ওখানে মেটাবো এবার,
    ততবার সময় আমায় মুক্ত করে রাখে মরুতে মরীচিকা করে যেন সবাই ভ্রমে দেখতে পায় আমায়।”

    – বুঝলি রতন যত ভাবি বিপদ থেকে দূরে গিয়ে শান্তি পাবো, ততই বিপদ আমায় চেপে ধরছে!
    – কি বলিস মনীষ, হল কি আবার তোর? আবার বুঝি সেই মেয়েটা!
    – না না ওর কোনো দোষ নেই, আমিই তো বেশি ভালোবেসে ফেলেছি রে, ও তো আমায় চায় না, পছন্দ করে না বোধহয়, তবু আমি! যাক ছাড়..
    – ছাড় মানে কি হয়েছে বল, বিপদ বললি!
    – ওর বাবা মা এসে বাড়িতে বলে গেল আমি নাকি তার মেয়েকে বিরক্ত করছি, আরো দু’ চারটে কথাও শুনিয়ে গেল আমার পরিবারকে। আচ্ছা রতন তুই বল- একটা বন্ধুত্ব পাওয়া কি এতটাই কঠিন! তাহলে কয়েক পলক দেখে মনের ভালোবাসা এত সহজে কি করে হয়ে যায় বল?
    – আরে তুই যেটা ভালোবাসা বলছিস ওটা ভালোলাগা, ভালোবাসা নয়।
    – না রে ভাই, গরীব আর জাতের দৃষ্টি কোণ যখন চোখে দেখে মানুষ, তখন কেউ আসতে চায় না। ভালোবাসা তখন কেবল পুঁথি বদ্ধ। যতই মানুষ বলুক বন্ধুত্বের মানে এই ওই, বাস্তব তো আমি তেইশ বছর পর্যন্ত দেখতেই পাচ্ছি। যাক ছাড়… তোর চাকরিটা হল কি?
    -না রে ভাই জীবন কেটে যাচ্ছে পড়াশোনা করতে করতে। অনেকেই বলে পড়াশোনার কোনো বয়স হয় না, কিন্তু আবার এদিকে “বেকার” বলতেও ছাড়ে না। রেজাল্ট আসবে হয়তো তাড়াতাড়ি। ততক্ষণ ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে আর কি। আর ওই বেকার শব্দটার অক্ষরগুলো কানে শুনতে হবে।
    -তা ঠিক বলেছিস, মানুষ তো বদনাম হোক আর না হোক শিরোনাম কিছু দেওয়ার অপেক্ষায় ওত পেতে বসে থাকে।
    – যা বলেছিস। আর তোর বাড়িতে কি বললো তারপর?
    – তারপর মা বাবাও দুটো কথা শুনিয়ে দিল আমাকে, আর ওই যে তুই বললি ‘বেকার’ সাথে ওই কথাটাও জুড়ে বলে দিল ।
    -এতে বিপদ কি হল ? কান দিয়ে শুনবি আর এড়িয়ে যাবি আর কি‌! কিছু না কিছু ব্যবস্থা হয়ে যাবে সময়ের সাপেক্ষে।
    – না রে ভাই, ওরা বলেছে পুলিশ কেস করবে।
    না হলে পাড়ার ক্লাবের ছেলেদের বলবে। শুধু শুধু একটা বদনাম করে দিতে চাইছে ওর পরিবার। এর চেয়ে বিপদ আর কি হয় বল?
    – তুই ভুলে যা মেয়েটাকে। যে চায় না, বোঝে না প্রকৃত প্রেম, তাকে সারাজীবন পাশে পাবি তা কি করে বিশ্বাস করিস?
    এখনকার সময়ে মেয়ে ও তার পরিবার সব সময় অর্থের বুনিয়াদে দাঁড়ানো স্থাপত্য চায়, যা সুদৃঢ় ভাবে গড়া আছে। তারা কখনই পাশে থেকে তাকে গড়তে দেখতে চায় না।
    – ঠিক বলেছিস ভাই, তুই আমার চোখে বাস্তব দর্শন করালি, রতন তুই সত্যি মানসিকতার রত্ন। তবে প্রকৃতির কোনো কিছুর প্রতি মন থেকে ভালোবাসা যখন হয়ে যায়, কেন জানি না যেন বার বার হৃদয় তাকে চাই বলে কেঁদে যায়।

    “..প্রকৃতিতে মনের মানুষের প্রেম আর
    বেঁচে থাকার জন্য খাবার
    তার জন্য লড়াই চারিধারে ,
    যে পায় সে বেঁচে যায়, আর যারা পায় না
    তারা মরে দিনে দিনে গ্রামের শহরে..”

  • কবিতা

    কবিতা- অন্ধকারে আলোর খোঁজ

    অন্ধকারে আলোর খোঁজ
    – মঙ্গল মন্ডল

     

     

    সব শুনতে পাই, সব দেখতে পাই
    ওই তো আবার চিৎকার করে কারা বলছে,
    জবাব চাই জবাব দাও ….
    কাদের জন্য কি জবাব চাই তা জানা হল না,
    কিন্তু পথের শিশুটা এখনও কাঁদে,
    তবে অনাথ যখন কেঁদে আসে যায়,
    কে তার জবাব চায়?

    আমি শুনতে পাইনি কত বাক্যের নির্মম পরিণতি,
    তারা নীরবেই বিদায় নিয়ে চলে গেল,
    তুমি তো বোবা আমি অন্ধ ও কালা,
    রাজনীতি যখন পা চাঁটতে বলে
    সবাই সুস্থ হয়ে ওঠো নির্লজ্জভাবে,
    আর তখনই তারা খুঁজে বের করে
    বনে জঙ্গলে পড়ে থাকা লাশ;
    হয়ে যায় রাজনীতির ব্যবসা মরা দেহটা।

    জনগণেরা তো মিথ্যা চিৎকারেই
    উত্তেজনায় রেগে ফুঁসে ওঠে;
    মেয়েটা অন্ধকার দেখে ভয় পায়,
    তা তাদের ভ্রুক্ষেপ নেই,
    খবরের কাগজ সাধারণ জনগণ ততক্ষণ চুপ,
    কেউ তাকে আলো দেখাতে সময় পায় না।
    সবাই ব্যস্ত জড়তায়।

    আর অন্ধকারটা তাকে ছিঁড়ে খেয়ে
    বাতাসে চিৎকারের শব্দগুলো মিশিয়ে বিলীন করে
    তখন জনগণ নিদ্রায় আচ্ছন্ন,
    তুমিও তখন কানে তুলো দিয়ে নাক ডাকতে ব্যস্ত।

    তবে রাজনেতাদের এক একটি ভন্ডামীতে
    যখন অগণতি লাশের একটা লাশ
    ভোটব্যাঙ্ক হয়ে ওঠে
    তখন তুমি রেগে ওঠো,
    ভাবো সত্যি কত অন্যায়,

    রাগ তো তোমার স্বাভাবিক।
    তুমি দোষী নও,
    তোমার ঘুম-টা বড্ড দোষের,
    মেয়েটা আজও অন্ধকার দেখে বড্ড ভয় পায়;
    সে রোজ আলো খোঁজে।

  • কবিতা

    কবিতা- দেহ দাহ

    দেহ দাহ
    – মঙ্গল মন্ডল

    আমি অজ্ঞাত থাকার সত্যেও
    কলম ধরেছি জ্ঞানের খাতায়,
    সামান্য স্মৃতি নিয়ে সম্পূর্ণ ব্রহ্মান্ডের পরিসীমায়
    ঘুরে পর্যবেক্ষণে লেগেছি, বিশাল দৃষ্টি কোণ নিয়ে,
    অধরা তথ্যগুলোকে একটা বাক্সে
    ভরার চেষ্টায় নিদ্রা ভুলেছি;

    তবু আমি এখনও অজ্ঞানী ,
    তবু আমার পরিধি সীমিত অতিসামান্য ,
    পাখির ডানা যদি একবার পেতাম ,
    ঈগল হওয়ার বায়না করতাম,
    সর্বাধিক ওপরে উঠে
    মেঘের দলের সাথে গল্প করতাম,
    শুনতাম, তাদের কিসের এত ব্যথা,
    কিসের এত চিৎকার, কিসের এত রাগ?..

    প্রতিদিন আকাশে উড়ে নীল সমুদ্রে
    দুটো ডানা মেলে
    এ পার থেকে ওপারে চলে যাব,
    সমস্ত মহাসাগর মহাদেশ ঘুরে ঘুরে
    হব এক উৎকৃষ্ট যাযাবর;
    আর ফিরব না আর ডানা দেবো না ফিরিয়ে,
    মিশে যাব কাশ বন আর শরত মেঘের ভীড়ে;

    হারাব পুরোনো অস্তিত্ব ,
    পাবো এক ব্রহ্মান্ডের খোঁজ
    যেখানে আমি আগে নেতিবাচক কামনা ধুয়ে
    ইতিবাচক বাসনায় ভরব রক্তমাংসের এ দেহতে।
    দেহ আমার হবে বৈরাগী দেহ আমার হবে সন্নাসী,
    এ দেহেই থাকবে তোমাদের সমস্ত ধর্মের ঈশ্বর,
    আমি চিৎকার করে বলতে পারব যে,
    -এই দেখো সবাই, তুমি-আমি যেমন একই মানব দেহ,
    তেমনি এক তোমাদের ভিন্ন মতের ওই ভিন্ন রূপী ঈশ্বর।

    দেহ জানে না ধর্ম, দেহ বোঝে না রাজনীতি
    বোঝে না সে মানুষের ষড়যন্ত্র ,
    সে বোঝে খিদে …
    খাবারের রূপ দেহ জানতে চায় না,
    সে শুধু উদরে থাকা ফাঁকা খাদ্য ভান্ডার পূর্ণ চায়।
    কখনও ভর করে বাহ্যিক কামনা বাসনা ইচ্ছা,
    তবে সেগুলো দেহের প্রকৃত চাওয়া নয়,
    সে চায় শুধু অন্ন
    দুহাতের মুঠিতে ভরা অন্ন
    যেন মুখের মাঝে ঢেলে দিতে চায় শুধু,
    ক্ষুধার্ত তৃষ্ণার্ত ঠোঁটের হাসি টাও মিষ্টি করতে চায়।

    আমি বেড়িয়ে ছিলাম ব্রহ্মান্ড জানতে
    ইচ্ছা হয়েছিল ডানা মেলতে
    দেহ যেন বার বার বলে ওঠে,
    “আমি আর পারছি না ..
    এবার বিসর্জন দাও আমায়,
    আমি আবার প্রকৃতির বাতাস জল মাটিতে
    ফিরে যেতে চাই
    জড়তা আমার আসল প্রকৃতি…”

  • কবিতা

    কবিতা- খিদে

    খিদে

    -মঙ্গল মন্ডল

     

     

    শিশু টা আর বলে না ,- “খিদে পেয়েছে”,
    তার বোবা পেটে আর অনুভূতি আসেনা,
    রাস্তার চারিধারে কত সুন্দর প্রকৃতি
    তার চোখে ধরা দেয় না।
    দেয় না ধরা পথের ধারে ফোঁটা ফুলের সুগন্ধি ,
    তার ইন্দ্রিয় নিষ্ক্রিয় হয়েছে
    বিকল হয়েছে ইচ্ছা, ভাবনা আর প্রাপ্তির আশা,
    তাকে আর ও পথে হেঁটে চলতে দেখা যায় না,
    মনে হয় শিশুটার খোঁজ আর কেউ রাখে না;
    পাঁজর রয়েছে তবে হৃৎপিণ্ডটা
    থমকে থমকে চলছে অগোছালো স্পন্দনে,
    সেদিনও কেউ বোঝেনি , আজ তাকে কে বা বুঝবে?

    আমার কানে বেজেছে তার মৃদু কন্ঠস্বর
    দৌড়ে গিয়েছিলাম শুনে
    চারিদিক ‌চোখ পেতে খুঁজেছিলাম তাকে,
    দেখি, সে এক নিবিড় ঘুমে আচ্ছন্ন
    চোখে শুকানো অশ্রুধারায়
    এক লুপ্ত অশ্বখুরাকৃতি নদী দেখা যায়,
    মনে হয় স্থায়ী রোদনে সব অঙ্গ শান্ত হয়েছে,
    সে শিশুটা আর বলে না ,- “মা, খিদে পেয়েছে…”।

    সবার চোখে স্বার্থের নেশা , সময় বড় অভাব,
    যতই তারা অতিরিক্ত খাবার নষ্ট করুক ,
    করুক ব্যয় অতিরিক্ত টাকা অপচয়ে ,
    মানসিকতায় শিশুটি স্থান পায় না ওদের।
    ওদের চোখে সময় নেই ফিরে তাকানোর
    শিশুর যতই কান্নায় ফাটুক শিরা,
    ওরা অট্টালিকা জানে
    ওরা বড়লোকের আশির্বাদ নিতে চায় ;

    শ্বাস নেই তার ,
    নিরব পৃথিবী আজ জড়তা আনল দরজায়
    আমি দেখে অসহায় ,
    আমিও তো পারিনি
    তাই আমিও হয়েছি মানবিকতার ধিক্কার।

  • কবিতা

    কবিতা- জাগো

    জাগো
    – মঙ্গল মন্ডল

     

     

    পথের ধারে বিধাতা পড়ে আছে,
    হেঁটে যাওয়া পথিক হাঁটছে ঘুমিয়ে,
    কপালে পরিশ্রমের ঘাম আর আসে না তার,
    আসে দুশ্চিন্তার ভাঁজ,
    যখন তখন তাই ঘুমিয়ে পড়ে ,
    ওই দেখো পথের ধারে
    ধূলিমাখা বিধাতা আছে পড়ে;
    তুলবে কে?
    আমি যাই দৌড়ে,
    একা তোলা যায় না তারে,
    পথিক দিলে হাত তবেই হবে সম্ভব,
    ও ঘুমন্ত পথিক….এসো একবার ,
    তোমার দুর্বল হাতটুকুই দাও আমায়,
    বিধাতা আছে লুটিয়ে;
    ঘুম ভাঙো এবার নাহলে দেরি হয়ে যাবে,
    বিধাতা হারালে কপাল যাবে হারিয়ে;
    ধন্যবাদ হে পথিক
    একবার সাহস করে চোখ খুলে পাশে যে দাঁড়ালে,
    এবার হয়তো তুমিও জাগবে
    আর পাবে না ঘুম তোমার
    বিধাতা যে উঠেছে এবার,
    পরিশ্রম হবে সার্থক
    খুলবে জাগরণের দ্বার।

You cannot copy content of this page