• কবিতা

    কবিতা- সংসার হলো না

    সংসার হলো না
    -মৌসুমী সাহা মহালানাবীশ

    আজকাল আর তোমার কাছে কিছু চাইতে ইচ্ছে করে না,
    কোনো প্রত্যাশা নেই!

    তুমি ঘুমিয়ে পড়লে তোমার ঘুমন্ত শরীরটার দিকে তাকিয়ে থাকি এক দৃষ্টিতে,
    আগে একটা মায়া ছিল তোমার চোখে মুখে আর আজ কতোটা আমার প্রতি তোমার বিরক্তি তা তোমার মুখে বেশ স্পষ্ট!

    আমাদের আর সংসার করা হলো না।
    শুধুমাত্র চার দেওয়ালে বন্দি ঘরে থাকা হলো কয়েক যুগ!

    আমাদের আর প্রেম করা হলো না আজীবন,
    প্রতিশ্রুতিগুলো আজ সব থিতিয়ে পড়েছে,

    কতো কথা ছিল তোমার আমার
    আজ সব মিলিয়ে গেছে ক্লান্ত নদীর বুকে!

    আমার এখন অসুখ ধরেছে জানো!
    একাকিত্বের অসুখ!

    আমাদের বিয়ে হলো!
    সন্তান হলো, কিন্তু…
    সংসার হলো না!

  • কবিতা

    কবিতা- আরও একবার আদর করিস

    আরও একবার আদর করিস
    – মৌসুমী সাহা মহালানাবীশ

    অপেক্ষাটা থাকুক শুধু তোর জন্যই তোলা
    চেষ্টা করে দেখ তো দেখি, যায় কি সে রাত ভোলা?
    বিছানার চাদর জুড়ে আদুরে কতো স্মৃতি
    শরীর খেলায় মগ্ন সে প্রেম, ভুলে সকল ভীতি।
    গভীর রাতে চুরির আওয়াজ খনখনিয়ে বাজে,
    নতুন বউয়ের মুখখানা ভরল যে কোন লাজে।
    তোর ছোঁয়া ওই সিঁথির সিঁদুর তোর নামেতেই রেখে
    আজও মেয়েটি যত্ন করে রাখে সে রঙ ঢেকে।
    সাক্ষী ছিল তোর বিছানা, তুই আর তোর মন
    স্পর্শ চেনায় মেতেছিল নিবিড় আলাপন।
    আঙুল ফাঁকে আঙুল যখন কুরুশকাঁটা বুনে
    চুম্বন তখন ছেদ করে যায় শরীর এবং মনে।
    মিলন যখন পূর্ণতা পায় ভালোবাসার বুকে
    জড়িয়ে ধরে থাকে সে মেয়ে, কি জানি কোন সুখে!
    কোন খেয়ালে পায়ের নূপুর দিয়ে গেল সাড়া
    পুরুষ তুই এমনি থাকিস, এমনি পাগলপাড়া।
    এমন করেই যত্নে রাখিস প্রতিটি পদক্ষেপে
    এমন করেই চলতি পথে, সুখগুলো দিস মেপে।
    এমন করেই প্রেম নামুক, আবার কোনো রাতে
    আবার মেয়েটি জাপটে ধরুক লাজুক পূর্ণতাতে।
    আবার তুই দরজাটাকে দিস বন্ধ করে
    আরেকবার আদর করিস ঘন অন্ধকারে।
    আরেকবার আদর করিস একলা সে তোর ঘরে।

  • কবিতা

    কবিতা- অনুভবে

    অনুভবে
    -মৌসুমী সাহা মহালানাবীশ

     

    কোথাও একটা ভাঙছে শহর
    চাপা পড়লেই ইতিহাস!
    বন্ধক ছিল তাঁর কাছে প্রাণ
    আজকে স্মৃতি গলার ফাঁস!

    কোথাও একটা ছিঁড়ছে সুতো
    লাটাই থেকে অনেক দূর!
    হারিয়ে গেল নীল ঘুড়ি’টা
    থাকত বুকে সমুদ্দুর!

    কোথাও একটা প্রেম পুড়েছে
    নিরুত্তর থাকতে হয়!
    প্রেমিক যেদিন আসবে ফিরে
    সেদিন যেন মৃত্যু হয়!

    কোথাও একটা অভিমানী চোখ
    নদী এঁকেছে! শুনছে শ্রোতা,
    কালকে সুখ উঠোনে ছিল
    আজকে খুশী কেবল চিতা!

  • কবিতা

    কবিতা- আজ আর কাল

    আজ আর কাল
    -মৌসুমী সাহা মহালানাবীশ

     

    আজকে যার উপর এত অভিমান কাল তাকে নিজের কাছে ধরে রাখতে পারবি তো?
    আজ যাকে দেখার জন্য এতো অপেক্ষা কাল তাকে কখনও রাস্তায় দেখলে চিনতে পারবি তো ?
    আজ যার জন্য সারাটা রাত অন থাকিস, বার বার চেক করিস সে অন কিনা কাল তার আইডি প্রোফাইল টা মনে রাখতে পারবি তো ?
    আজ যার কথাতে নিজের রুটিন বদলাস, চুলের আর্ট বদলাস কাল তার কথায় একবার নিজেকে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে দেখতে পারবি তো ?
    আজ যাকে দিয়ে রাতের খাবার পছন্দ করাস কাল রাতে খাবার মুখে তোলার আগে একবার তার কথা ভাববি তো ?
    আজ যে কাঁদলে তোর বুক ভাঙে কাল তার জন্য তোর বুকে একটু জায়গা হবে তো ?
    আজ যার প্রতিটা পদক্ষেপে খোঁজ খবর রাখিস কাল তার জ্বর হলে প্রার্থনা করবি তো ?
    আজ তুই যার উপর নির্ভরশীল কাল যখন কেউ তোর উপর নির্ভরশীল হবে তখন তাকে ভরসা করবি তো ?
    আজ যেটা বর্তমান কাল যখন অতীত হব তখন ভবিষ্যতে তুই আনমনে অতীতে ফিরে যাবি তো ?
    তখন এই আমি’টাকে মনে পড়বে তো ?

  • কবিতা

    কবিতা- পাগলামিটাও কি ভালোবাসা না!

    পাগলামিটাও কি ভালোবাসা না!
    মৌসুমি সাহা মহালানাবীশ

    আমার জীবনে তোমার উপস্থিতি অনিবার্য!
    আমি উপলব্ধি করেছি বরংবার
    কখনও মনে,কখনও শরীরে
    কখনও বা আমার ঘরে,
    সোহাগী ফুলের বাসরে,,,!
    তুমি আছো আমার দৃষ্টি জুড়ে
    খেলার ছলে তোমাকে ডেকেছি বহুবার
    আমার আবেগী উঠোনে,
    আমার মনে,আমার প্রাণে
    প্রতিটি ক্ষণে!
    তুমি এর পরেও বলবে ?
    এটা ভালোবাসা না !
    শুধুই কি পাগলামি আমার!
    আচ্ছা, বলবে!
    এই পাগলামিটাও কি ভালোবাসা না?

  • কবিতা

    কবিতা – তুমি ভালো নেই

    তুমি ভালো নেই

    – মৌসুমী সাহা মহালানাবীশ

    আমাদের বন্ধুত্বটা ছিল হঠাৎ
    কোনো এক ক্লান্ত বিকেলে তোমার আগমন ঘটে ছিল এই মনে,

    ধীরে ধীরে ভালোবাসা
    ঘরপোড়া স্বপ্ন!
    অবাক হলে তাই না?

    আচ্ছা, কি আর বলতে পারি বলো তো!
    আমাদের মিলন হবে না,তা তো তুমিও জানতে!
    মানতে না এটা ঠিক, তাতে তো আর বাস্তবতা বদলায় না বলো!

    চাওয়া আর পাওয়াটা হিসেব করে যদি ভালোবাসা হতো

    তবে প্রেম মুখ লুকোত স্বার্থপরতার চাদরে।

    দুরত্ব হোক না আলোকবর্ষ,
    আমি তো আছি তোমার দেখা একই আকাশের নিচে,

    ভাগ্য তো সব কিছুতেই লাগে,
    তোমায় ছুঁতে!
    কিন্তু ভেবে দেখেছ ?

    যে বাউল বাতাস তোমায় একটু আগেই ছুঁলো,
    সে তো তোমার কথা আমায় স্পর্শ করে বলে গেল,
    আমিও জানলাম “তুমি ভালো নেই”।

  • কবিতা

    কবিতা-বড্ড দায়!

    বড্ড দায়!
    -মৌসুমী সাহা মহালানাবীশ

     

    ভালো থাকাটা জরুরী, বড্ড দায়।বেঁচে থাকার ছল।

    জীবনের কাছে ঋণী মরণ আছে বলে। পার্থক্যটা এপার ওপার।

    জীবনের সখ, আহ্লাদ একটা বলিদান।

    অন্ধকার কূপ, হারিয়ে যাওয়ার প্রবল ঝড় চলে ভেতরে।

    হার মানি প্রতিটা দিন। রাতের পর রাত চোরাবালির স্বপ্ন বুনে ভোরে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা যেন বড় দায়।

    থিতিয়ে যাওয়া বিষয়ে আবার ঘুলিয়ে দেওয়ার কি খুব প্রয়োজন?

    “একাকীত্বের আর্তনাদ” শুনেছ কখনো? চিৎকার শুনেছ আহত স্মৃতির ? না শুনে থাকলে আর শুনতেও চেও না।

    অগুনতি লাশের গন্ধে বাঁচতে চেও না।
    প্রতিটা বাঁচায় আমি নিরুপায়।
    লাশগুলো যে বইতে’ই হবে। অবাধ্য হতে পারবো না! পারবো না জেনো—

  • কবিতা

    বসন্তের বেলা

    বসন্তের বেলা

    -মৌসুমী সাহা মহালানাবীশ

     

    দেখেছ রবিঠাকুর,
    আজ তোমার শান্তি নিকেতন কেমন ধারায় সেজে উঠেছে
    কেমন ধারায় বাতাস বইছে
    কেমন ধারায় গান গাইছে সকলে গলা তুলে
    তোমার পায়ে পলাশ রাখতে তারাও যায়নি ভুলে
    বসন্ত ছুঁলেই কৃষ্ণচূড়া আসে
    আসে পলাশ, শিমুল …আসে দোল
    খোয়াই নদীও বড্ড উতাল
    আকাশে বাতাসে হলুদ সবুজ…
    গোলাপি, লাল… ছুঁয়েছে অষ্টাদশীর গাল
    আজ তোমায় ভীষণ মনে পড়ছে
    ইচ্ছে করছে ,সোনাঝুরির বুকে মাদলের তালে তালে
    তার হাত ধরে গেয়ে উঠি
    ভালোবাসি ভালোবাসি
    এই সুরে, কাছে দূরে,
    জলে স্থলে বাজায় বাঁশি …ভালোবাসি ভালোবাসি। 

  • কবিতা

    অবুঝ থাকাটাই তো ভালো!

    অবুঝ থাকাটাই তো ভালো!

    -মৌসুমী সাহা মহালানাবীশ

     

     

    আর্তনাদ জড়ানো মালায় শুকনো বাসর মাখা সোহাগী ফুলের গন্ধ ম্লান।

    সে তখনও বোঝেনি,আজও বুঝবে না!ধ্বংসলীলা অবশ্যম্ভাবী।

    মানা না মানা তো কাল্পনিক পাখির ডানা।

    কতোটা গভীর ক্ষত হলেই জীবন পদ্ম পাতার জলের ফোঁটায় ভাসে ?
    কতোটা নির্লজ্জ হলে বদতমীজ মন ফেরে অনায়াসে ?

    বলতে পারো বকুল!
    ভালোবাসার পদধ্বনি কখন অসহ্য,ঘৃণ্য কর্কশ স্বরে জন্মগ্রহণ করে ?
    জানি,ও সব বুঝবে না !
    আমিও দায় ঝেড়েছি বহু কাল আগেই।

    তোমার ডাগর চোখের গভীরতায় রঙিন খাদ! স্বপ্ন আকাশ ছোঁয়া!

    মানসিকতার সুখ খুঁজেছো চিরতরে।

    উড়ে চলেছে বিষাক্ত ধূলিকণা প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাসে- 

    ক্ষয়িষ্ণু তোমার পদাঘাতে আমার যাপন!

    নীরবে, গোপনে, অনাহারে। 

  • কবিতা

    শরীর পিপাসী

    শরীর পিপাসী

    -মৌসুমী সাহা মহালানাবীশ

    দুর্গা তুই আসিস না মা! ফিরে যা তোর ঘরে
    এই শহরে যখন তখন নরখাদক আঁচড়ে পড়ে!

    পড়নে তোর শাড়ি হোক,বয়স কম বা বেশি
    মন তাদের বোঝেনা সে সব তারা যে শরীর পিপাসী!

    উলঙ্গ তাদের মানসিকতা,লাজ নেইকো মনে
    যেথায় দেখবে নারী শরীর,ছুটবে চাহিদা পূরণে!

    নিরাপত্তা এই সমাজে বোবা পিচের রাস্তা
    পিশাচ ভাবে মেয়ে মানুষের শরীর ভারি সস্তা!

    নগ্ন ওদের সমাজ চেতনা,কাম রসেতে পূর্ণ
    ‘ধর্ষক’ নামে পাষণ্ডদের জীবন বুঝি ধন্য!

    জানতে চায় আমার এ মন,রক্ত কেন ঝরে ?
    একবারও তাদের মা-বোন’কে মনে কেন না পড়ে ?

    লক্ষ্মীকে আনিস না মা! সরস্বতী থাকনা বাড়ি
    একবার যদি ঠাওর পায়,তবে নেইকো ছাড়াছাড়ি!

    কোথায় লুকোবি চাঁদপানা মুখ? ওমন ফুলের হাসি!
    যতই হোক না মাটির শরীর,ওরা যে শরীর পিপাসী!!

You cannot copy content of this page