• কবিতা

    কবিতা- “মনোবীক্ষণ”

    “মনোবীক্ষণ”
    – রুনু ভট্টাচার্য

     

    আমার অনুসন্ধিৎসু মন খুঁজে বেড়ায় যত্রতত্র
    ভেতর-বাইরের ভাষা বোঝার মনোবীক্ষণ যন্ত্র;
    সর্পমণি’র খোঁজে যেমন বেদেরা করে বিচরণ।
    মহাবিশ্বের আয়োজনে নিখাদ এক বিশ্বস্ত বন্ধু
    বহুমৃত্যু প্রতিরোধে অমোঘ এক অদ্বিতীয় যন্ত্র;
    প্রাকৃতিক নয়, আমি আত্মিক মৃত্যুর কথা বলছি।
    ফিলোসফি পড়া শেষে, সাইকোলজি গেলা শেষে
    অতঃপর বুঝেছি- সবই কেবলই নিছক তত্ত্ব;
    হৃদয় ভেদ করার একটাই উপায়- মনোবীক্ষণ।
    আজও কোনো দেবতাই- আমাতে কভু তুষ্ট নয়
    তাই ইচ্ছে কবিতাবরে মনোবীক্ষণ শুধুই আকাশ কুসুম
    তবু নিরন্তর খুঁজে ফিরি; যদি পাই খোঁজ তারই!
    ভাবছ মনোবীক্ষণ কেবলই মনের কথাই বলে?ছ
    না, মনোবীক্ষণ ঠেকায় অপ্রত্যাশিত অপমৃত্যু
    মনোবীক্ষণ জানায় নির্মম প্রবঞ্চনার পূর্বাভাস।
    হতাশার আগেই বার্তা, আত্মিকতা নাকি কৃত্রিমতা
    ফোকাস তলে স্বচ্ছ দর্শন- মুখে মধু অন্তরে বিষ!
    উলুবনে মুক্তা নিক্ষেপণ- প্রতিরোধে মনোবীক্ষণ।
    অজ্ঞাতজনে স্পষ্টতা; বন্ধুতা নাকি মহা শঠতা!
    অভিনেত্রে প্রদর্শন- মুখের আড়ালে মুখোশের ছবি।
    তাই রণে-বনে, জলে-স্থলে আমার অহর্নিশ ভ্রমণ
    যদি কভু পাই মনোবীক্ষণ, মুহুর্মুহু আসবে না

  • গল্প

    মল্লিকা

    মল্লিকা
    -রুনু ভট্টাচার্য

     

    প্রতি সপ্তাহে একবার করে দেখা হয় মল্লিকা দেবীর। বছর 65 বয়স হবে, প্রতি শনিবার একবার করে এই বৃদ্ধাশ্রমেই ছেলের সাথে দেখা হচ্ছে প্রায় এক বছরের উপর। এখানে অনেক মানুষ তার মতো । কেউ বয়সে একটু বড় কেউ ছোট, তবুও তার মন মানতে চায় না । ছেলেকে মানুষ করার কোথাও কি ভুল ছিল? যে এত শিক্ষিত ছেলে সে নিজের কেরিয়ার নিজের ফেমেলি, স্টেটাস এগুলোকে মায়ের থেকে বড় করে দেখলো? মন মানতে চায় না একবার হিসেব টা মিলিয়ে নিতে মন চায়।
    প্রতি শনিবারের মতো এই শনিবার ও এসেছে অনুব্রত। এসে রুটিন প্রশ্ন -কেমন আছো মা? ওষুধগুলো ঠিক সময় মত খাচ্ছ তো? পায়ের ব্যাথাটা বাড়েনি তো? নিজের কর্তব্য মতো সমস্ত কাজ শেষ করে ঠিক যখন ফেরার পালা, তখনই বলে উঠলেন মল্লিক দেবী-আজ যদি কিছুক্ষন বেশি থাকো তোমার কাজের কি অনেক ক্ষতি হবে বাবা?
    নিজের ঘড়ির দিকে একনজরে দেখে অনুব্রত বলল -না না ক্ষতি হবে কেন?  কিছু কি বলবে মা?
    -আচ্ছা তুমি আমায় মিস কর না? আমার কথা মনে পড়ে না একবারও?
    উওরটা যেন বহুবছরের অপেক্ষায় ছিল, এক সেকেন্ডও দেরি হয়নি আসতে -“করে মা, তবে ছোটবেলার মতো না। যখন তোমার কাছে শোব বলে বায়না করতাম আর তুমি আমায় একা ঘরে ঘুম পারিয়ে আসতে তখন অনেকটা বেশি করতাম, রাতে বাথরুম যেতে পারতাম না জানো মা ভয় করতো। ঠাকুমার কাছেও শুতে দিতে না , বলতে যে ওনার আজগুবি গল্পেই নাকি আমার এইসব ভয়! এই নিয়ে কম ঝামেলা করেছ ঠাকুমার সাথে? ”
    উওরটা শেষ হওয়ার পর অনেক্ষণ শুধু সিলিং ফ্যানেটা কিছু বলছিল, কেউ যদিও খেয়াল করেনি। কিছুক্ষন চুপ করে থাকার পর মল্লিকাই বললেন -আর তোমার উন্নতি, এগুলোর জন্য আমি কিচ্ছু করিনি?
    -‘একি বলছো মা? তুমি ছাড়া আমি এই জায়গায় কোনোদিন পৌঁছতে পারতাম? এই যে প্রতি শনিবার আমি আসি এক মিনিট ও লেট করিনি মা, এটা তোমারই শেখানো মা
    Punctuality maintain করতে শেখ, এমনকি ঠাকুমার খুব শরীর খারাপ সেদিন ও তুমি আমায় বলেছিলে এটা নিয়ে ভাবতে হবে না math Class যাও late হয়ে যাচ্ছ, এসে শুনেছিলাম ঠাকুমা মারা গ্যাছেন, that day I was late, that day math becomes important that relationship, আর এই দ্যাখো আমার English বলা সেটাওতো তোমার শেখানো, আমি বাংলা গান গাইলেও তুমি বকতে, বলতে” always use English, even if u want to sing”

    -কিন্তু সেটা তো তোমার স্বপ্ন সফল করার জন্য!
    -স্বপ্ন? মনে আছে মা পড়া না করে আঁকছিলাম বলে আমার সব আঁকার খাতা তুমি কাগজওলাকে বিক্রি করে দিয়েছিলে? সেদিন অনেক স্বপ্নরা ওই কাগজের সাথে বিক্রি হয়ে গেছিল, আসলে তুমি রেজাল্টের কাগজ গুলোকে গুছিয়ে রাখতে তাই আঁকার কাগজগুলোর কোন দাম ছিলনা তোমার কাছে। তারপর দ্যাখো কোনদিকে মন দেইনি, কারুর দিকে ঘুরে তাকাই নি শুধু career….. কান্না টা এবার গলার কাছে ধাক্কা দিতে শুরু করেছে মল্লিকার ।
    -এত রাগ তোমার আমার ওপর? তাই বুঝি আমায় বৃদ্ধাশ্রমে পাঠালে?

    -না মা আসলে আমার বউ ও শুভকে অনেকটা তোমার মতো করে মানুষ করছে নতুন মেশিন, তাই আমি চাই না তোমার কোন guilty feeling ওকে দেখে আসুক মা, আর আমায় দেখে তুমি খুশি হও না মা? আমি তো তোমার ই projection তোমার স্বপ্ন, emotionless careerist ই তো বানাতে চেয়েছিলে মা?! এই গুলো নিয়ে ভেবো না মা, আজ আসি? পরের দিন না হয় শুভকে নিয়ে আসবো, আর জানো মা শুভ ও খুব ভালো আঁকে, তাই আমি কি করি জানো তো? ওর একটা করে খাতা শেষ হয়ে গেলেই লুকিয়ে রাখি, যাতে ওর ও স্বপ্নটা হারিয়ে না যায়।
    ছেলে চলে যাওয়ার পর অনেকক্ষণ বাইরের চেয়ারটায় বসে ছিলেন মল্লিকা, মাথায় একটা কথা বারবার ঘুরছে- আমি আর কোন দিন আঁকবো না মা খাতাগুলো বিক্রি করে দিও না ‘
    সেদিন খুব রাগ হয়েছিল মল্লিকার, সেদিন রেগে বলেছিলেন একটা কথা, কথাটা আজ বিড়বিড় করে নিজের মনে মনে বলে উঠলেন -‘এটাই তোমার শাস্তি ‘

  • অণু কবিতা

    অবুঝ

    অবুঝ
    -রুনু ভট্টাচার্য্য

     

    অদৃশ্য কিছু অনুভূতি নতুনের মাঝে
    পুরানোর স্মৃতিপট আজো লেখনী।
    হাসির মাঝে চোখের পাতায় ঝাপসা
    নতুনের অগোচরে অভিনয় ।
    কিছু অসহায়তা ভুলতে শাল মহুয়া দেশ
    সোঁদা মাটিতে তোমারই গন্ধ।
    এক রাজপুত্তুর আর এক রাজকন্নে
    অবাস্তব কাল্পনিক চরিত্র।
    ফোনালাপে দৈনন্দিন হাজারে ভালোবাসি
    ইন্টারনেটে ভালোবাসি,ভালোবাসি।
    যার প্রকাশ যত বেশি তার ভালোবাসা তত কম।
    রবিঠাকুর তবুও এরা অবুুুঝ।

  • কবিতা

    পঁচিশে বৈশাখ

    পঁচিশে বৈশাখ
    -রুনু ভট্টাচার্য

     

    আজ কবি রবি ঠাকুরের জন্মদিন
    ধরণীর বুকে বাজে তাই আনন্দের বীণ
    বাংলা সাহিত্যর প্রবাদ পুরুষ খ্যাত কবি
    জয় করল বিশ্ব কি যে মায়াময় ছবি।
    কত রচনা কত গানে গানে জাগরিত প্রান
    দিয়েছে মানবের পথের দিশা হয়ে অম্লান
    কত যে রূপ মাধুর্য আঁকা তার বদনে
    অমিয় সৃষ্টির বাণী ছিল মানবের কল্যাণে
    চির দিন বেঁচে থাকবে কবি সাহিত্য আসরে
    এসো আজ তাঁরে করি গো স্মরণ প্রাণ ভরে।

  • কবিতা

    কাল বৈশাখী ঝড়

    কাল বৈশাখী ঝড়
    – রুনু ভট্টাচার্য

     

    কাল বৈশাখী ঝড়
    ঈশাণ কোনে বাসা,
    তোমার মগজ জানি
    পাগলী তে ঠাসা।

     

    নিকষ-কালো মেঘ
    যেন সঞ্চিত আবেগ,
    তোমার সাথে মেঘের কেন
    নিবিড় ভালোবাসা।
    পেখম মেলে আসো
    সোনা-রোদে গা-ভাসিয়ে
    মিষ্টি ক’রে হাসি।

     

    থমথমে ভাব যেই দেখা যায়
    ‘এই বুঝি সে এলো’
    ঘন আঁধার নামলো হটাৎ
    ভাবনা এলোমেলো।

     

    হটাৎ নাভিশ্বাস
    একি সর্বনাশ !
    শিলা-বৃষ্টির ডানার নিচে
    করছে বসবাস ।

     

    জীর্ন কুটির,গাছ গাছালী
    কোলের শিশু,পক্ষী শাবক
    মাঠের কৃষাণ, মাঝি -মাল্লার
    গৃহ বধূ, মাঠের রাখাল
    গ্রাম- গঞ্জের পথিক যত
    ভয়ে কাঁপে সন্ধ্যা -সকাল
    সে খবর কী রাখো?

     

    রুদ্ররোষে তোমার গতি
    যখন হটাৎ থামে
    স্বস্তি এবং শান্তি ধারা
    বৃষ্টি হয়ে নামে।

  • কবিতা

    ক্যাকটাস

    ক্যাকটাস
    -রুনু ভট্টাচার্য

     

     

    দারুন আলাদা অভিমানী এই ক্যাকটাস।
    যেন কোন বোবা রমণীর সখী ছিল দীর্ঘকাল
    কিংবা আজন্ম শুধু দেখেছে আকাল
    এ রকম ভাব-ভঙ্গী তার।
    ধ্রুপদী আঙিনা ব্যাপী
    কণ্টকিত হাহাকার আর অবহেলা,
    যেন সে উদ্ভিদ নয়
    তাকালেই মনে হয় বিরাণ কারবালা।

    হয় তো কেটেছে তার মায়া ও মমতাহীন সজল শৈশব
    অথবা গিয়েছে দিন
    এলোমেলো পরিচর্যাহীন এক রঙ্গিন কৈশোর,
    নাকি সে আমার মত খুব ভালোবেসে
    পুড়েছে কপাল তার আকালের এই স্বদেশে।
    বোকা উদ্ভিদ তবে কি
    মানুষের কাছে প্রেম চেয়েছিলো ?
    চেয়েছিলো আর কিছু বেশি

  • কবিতা

    আমার আকাশ

    আমার আকাশ
    -রুনু ভট্টাচার্য
    তোমার আকাশে আলোর মিছিল
    আমার আকাশ জুড়ে নিকষ কালো
    তোমার আকাশে উড়ে শঙ্খচিল
    আমার শূন্য আকাশ লাগে ভালো।
    তোমার আকাশে জ্বলে ধ্রুবতারা
    আমার আকাশে চাঁদ সাথীহারা।
    তোমার আকাশ মায়াবী জোছনামাখা
    আমার আকাশ কালো মেঘে ঢাকা।
    তোমার আকাশে উড়ে শুভ্র মেঘ
    আমার আকাশ জুড়ে ঘণ কুয়াশা
    তোমার আকাশে স্বস্তির হিম আবেগ
    আমার আকাশে ঘনঘোর বরষা।
    তোমার আকাশে রংধনুর মায়া
    আমার আকাশে বিবর্ণ,ধূপ ছায়া।
    তোমার আকাশে পুর্ণতার সমাহার
    আমার আকাশে শূন্যতার হাহাকার।
  • কবিতা

    একটি ভাবনা তোমাকে নিয়ে

    একটি ভাবনা তোমাকে নিয়ে 
    -রুনু ভট্টাচার্য্য

     

     

     

    যখন ঐ সুপ্রসারিত নীল আকাশ
    দূরের মৃত্তিকাকে চুম্বনে ব্যস্ত,
    আর পাশাপাশি রেললাইন দুটি,
    সীমাহীন ভাবে ছুটে চলেছে অজানার স্রোতে।
    তখন আমি জানালার পাশে,
    ঘাপটি মেরে পড়ে আছি ভীষণ জ্বরে।
    আর তোমার কথা মনে পড়ছে
    ‌‌ ‌‌ মুহূর্তে কয়েকশো বার।
    যখন সুচারু চিত্রকুশলী তার দক্ষ হাতে,
    স্নেহময়ী মোনালিসা’র জীবন
    একে চলে ঘন্টার পর ঘন্টা।
    আর পাহাড়ের চূড়া থেকে ‘জ্যাক এণ্ড জীল’
    এর মতো পা পিছলে পঙ্গু হয়ে যায়
    ‌ জীবনের যত স্বপ্ন।
    তখন আমি বদ্ধ কফিনে চির নিদ্রায়
    প্রস্তুতি নিতে তৈরী।
    আর তোমার মনে পড়েছে নিমেষে হাজার মাইল।
    যখন একঝাঁক দৈত্যাকার মেঘ
    নির্দ্বিধায় ঝাঁপিয়ে পড়ে চাঁদের ওপর।
    আর লুট করে নিতে চায় তার সবকিছু।
    ঠিক তখন যদি দুঃস্বপ্ন ছেড়ে,
    জানালার বাইরে দেখো ধূধূ অন্ধকার
    যেন আমি চির নিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছি।
    আর এখনও তোমাকে মনে করছি লক্ষ কুইন্টাল।

  • কবিতা

    প্রতিশ্রূতি

    প্রতিশ্রূতি
    -রুনু ভট্টাচার্য্য

     

    অসহায় নাগরিকের অর্থে আবারও কেনা হবে
    নীরব, ললিতের হুইস্কির বোতল, বিদেশের টিকিট
    প্রতিশ্রূতি কালো, সাদা, না কালো অর্থ আসছে
    আবারও দেখবো সদ্য বিবাহিত মেয়ের পোড়া দেহ
    কৃষি ঋণের ফসলে কৃষকের ঝুলন্ত শরীর
    প্রতিশ্রূতি কালো, সাদা, না কালো অর্থ আসছে।
    এম.এ, বি.এ, পাশ কিছু বেকার চাকুরির ক্যানসারের আক্রান্ত
    পোড়া বিড়ির মুখে ওরা এখন স্বপ্ন দেখে সিগারেটের
    প্রতিশ্রূতি কালো,সাদা, না কালো অর্থ আসছে।
    সারদা থেকে নারদা আজ সবাই সাহেব,
    CBI নাকি অন্যের গোলাম !
    অন্ধকারে ছোট্ট ঘরে আজও নিরপরাধী বসে আছে মুক্তির আশায়
    প্রতিশ্রূতি কালো,সাদা, না কালো অর্থ আসছে‍‍‌।
    আবাস যোজনার এখন গরীবের স্বপ্ন পূরন
    পঞ্চায়েত ও নেতা বাবুর লক্ষ টাকার এনফিন্ড
    প্রতিশ্রূতি কালো, সাদা, না কালো অর্থ আসছে !

  • কবিতা

    প্রতীক্ষা

    প্রতীক্ষা
    -রুনু ভট্টাচার্য্য

     

    মধ্যরাত্রে তোর ভাবনায় নির্বাসন
    পাশে রাখা মোবাইলে ভেসে উঠে স্মৃতি।
    আজো কল লিষ্টে তোর নাম্বারে প্রশ্ন সংকেত
    হঠ্যৎ বুকের ভিতর অদ্ভুত অনুভূতি বেজে উঠে রিংটোন।
    হাজারে কথার মাঝে বলতে চাওয়া ভালোবাসি
    বোবারা যে ভাবে বুঝিয়েছে এতদিন।
    আজ ডাইরির পাতায় কবিতা আমাকে ছুটি দিয়েছে
    স্মৃতিরা চেয়েছে মুক্তি।
    খুঁজেতে গিয়েছিলাম রিংটোনের মধ্যে কবিতার সংলাপ
    বাজতে বাজতে অসহায় পড়ে মোবাইল।
    স্মৃতিরা বাঁকা চোখে মৃদু হেসে নিশ্চিন্তে ঘুমায়
    আমি আজো উত্তরের প্রতীক্ষায়…।

You cannot copy content of this page