-
কবিতা- শরীরী পলির ছড়ে ব্রজের বন্দিশ
শরীরী পলির ছড়ে ব্রজের বন্দিশ
-অসীম দাস
এখনও বিরহে টান , বানপ্রস্থে যাবো কেন ?
আয়ুর ধৈর্য্য কম , পুড়ে যায় দ্রুত ।
অথচ মনের বৃন্তে যৌবনের পাখা
চনমনে বনবন , হয় না বিচ্যুত ।
অপ্রেমের কুরুক্ষেত্রে নয়
এ ব্রজজন্মে এই সবে জন্মালাম যেন !শরীরী পলির চরে কোথা থেকে
এক অনির্বাণ নদী জেগে ওঠে ।
বিকেল বেঞ্চে বসা ম্যাড়মেড়ে মোহানার দল
— বেশ আছি লড়ঝড়ে , ভেবে
খোঁজে না অন্য কোনও বন্য হদিশ ।
আমার সুশ্রুত স্রোতে বালিয়াড়ি ডুবে গিয়ে
বারবার ‘ মধুকর ‘ ফোটে ।
সাতসুরে বাঁধা আছি , বেঁধেছো নীলাম্বরী
তুমি ছাড়া আমি কী লিখতে পারি
খাপছাড়া ডিএনএ’র এমন বন্দিশ ! -
কবিতা- নিজেই নিজের খোঁজে
নিজেই নিজের খোঁজে
-অসীম দাস
ফিরছি নিজের কাছে
আমায় ছেড়ে নড়ছে নোঙর ইচ্ছে খেলো মাছে ।মাছ খেয়েছে স্মৃতি
মাছের পেটে লুকিয়ে আছে নামের আগে ইতি ।কী যেন সেই নাম?
ইতিই শুধু যাচ্ছে বোঝা, নাম গায়ে চুনকাম ।কোথায় যাবো এবার ?
পরিচিতির প্রমাণ দেবার সাধ্য যে নেই আমার ।উৎস ফেরায় মুখ
মাঝনদীতে কাটছি সাঁতার সাগর দেবে সুখ।সুখ পাওয়া কী সোজা?
আগুন জলের সন্ধি তলায় প্রেম হারিয়ে খোঁজা ।খুঁজছি অন্ধকারে
নিজের কাছে ফিরবো বলেও হারাই বারেবারে । -
কবিতা- বোধের ছায়া অশথ পাতায়
বোধের ছায়া অশথ পাতায়
-অসীম দাস
এ পথ ও পথ সে পথ ঘুরে
ঘুমের ঘুর্ণিপাকে ,
তাকিয়ে আছি ‘ বোধহয় ‘ চোখে
কালকে পাবো তাকে ।‘ তাকে’র মানে ‘ তুমি ‘ই কেন !
দৃশ্য হতে পারে ,
কিংবা গাভীন বোধের ছায়া
অশথ পাতার আড়ে ।সার বুঝেছি , সত্য না হোক
স্বপ্ন সুজন দামী ,
ভাটার শোকে উজিয়ে উড়ান
আসবে উজানগামী ।— উজান , উজান , উৎসে যাবো
সূর্য টলোমলো ,
আয়ুর আলো বিকেল ছুঁলো
সময় ফিরে চলো ।ফেরার নদী পেরিয়ে ফেরাও
আর এক জন্মদ্বীপে ,
নতুন জন্মে , নতুন দৃষ্টি
পাতবো নতুন ছিপে ! -
কবিতা- হিরণ্য হরিণ পায়ে পঙতির পাখা
হিরণ্য হরিণ পায়ে পঙতির পাখা
-অসীম দাস
পেয়েছি অক্ষর সুখ
ভাবনার রণে বনে জলে জঙ্গলে ,
কোথায় সাজাবো ?
কবিতার প্রচ্ছায়া উঁকি মেরে
ভেসে যায় সরযূর জলে ।যদি বলো আজীবন ঘুমহীন থেকে যাবো
হিরণ্য হরিণ ।
সুস্বাদু আয়ু জ্বেলে পড়শীর পিদিমের
রিমঝিম আলো হতে পারি ।
অমূল্য এ সংশয়ী নিউরণ দান করে
শ্যামাপোকা বোকা হয়ে
শব্দের উৎসবে নির্জনে পুড়ে যাবো , বলো !আরও কতো রাত গোহারাণ হবো !
আরও কতো জন্মপাত করে গেলে
অন্তত একটা পঙতির পাখা প্রথম গজাবে ! -
কবিতা- সময়ের ঝড়ে তরতাজা ভালোবাসা
সময়ের ঝড়ে তরতাজা ভালোবাসা
-অসীম দাস
সব পাওয়াই বাসি হয় একদিন সময়ের ঝড়ে ,
শুধু ভাগশেষ ভালোবাসার
তরতাজা ফুল ফোটে প্রতিটি দিনের অন্দরে ।দূরের দিগন্ত বাড়িতে খিল এঁটে ঘুমোলেও
শেকড় শয্যার সহবাস সুখ
ঘুমের ফাঁক গলে স্বপ্নকান্ডের কাঁধে
পরাগের পাল হতে চাইবেই ।সরে যাওয়া এবং ফিরে আসার
ছুঁই ছুঁই ইচ্ছের মধ্যে যে ফাঁকখনি
শুয়ে আছে শরীর স্মৃতির জিনে ,
একদিন অতীতের আকরিক টানগন্ধে
জেগে উঠে বলবে
— চলো চলো অমৃতের সন্তান হই আবারও আবার । -
কবিতা- ভিন্ন কবিতার অভিন্ন পাণ্ডুলিপি
ভিন্ন কবিতার অভিন্ন পাণ্ডুলিপি
-অসীম দাস
সমুদ্রের বালির মতো পিছলে যাচ্ছে অনুভূতির মুখ ।
টালমাটাল পাহাড়ের দলমাদল ভোরে
একদিন ঝলমলে মেঘের মঞ্জিরা
বাজিয়েছিলাম , উদ্যমী কৈশোর ।
ওয়েলার ঝড়ের আগে আগে ছুটিয়েছিলাম
ঘরে ফেরার আলোক আকাঙ্খা , যৌবন ।অভিজ্ঞ অভিজ্ঞতার যৌগিক চুনে
পুড়ে যাচ্ছিলো মৌলিক পরমায়ুর পা ।
শেষ দুপুরের ভাতঘুম ধপাস্ করে
গড়িয়ে পড়লো গোধূলির দিগন্ত গুহায় ।
অন্ধকার ধড়মড় করে উঠে বসে বললো
— সূর্যের বাগান খোঁজো আগামীর স্বপ্নশালায় ।জীবনের অবশিষ্ট খাঁজে লিখতে বসলাম
আর এক ভিন্ন কবিতার অভিন্ন পাণ্ডুলিপি । -
কবিতা- দুরু দুরু ভাবনা ভাসাই
দুরু দুরু ভাবনা ভাসাই
-অসীম দাস
আলাপ করতে করতেই বিকেল হয়ে এলো ।
ইচ্ছে থাকলেই কি আর বিস্তারিত হওয়া যায় ?খনিজ আসক্তি ছেড়ে পাহাড়িয়া তর্জনী ফুঁড়ে
এগিয়ে চলেছে রথ পর্যটকী পথে ।
আমি তো কুয়োতে পিছলে -পড়া চাঁদ তুলে
রাত্রি কপালে আয় আয় টিপ দিতে জানি ।
অথচ আমারই অর্ধেক বয়সী নৌকা
শত শত স্রোতের আগুনে পুড়ে
অভিজ্ঞ সেতু হয়ে গেলো !সামর্থ্যহীন ইচ্ছে- হিমে মেঘের উপত্যকায়
বিস্তীর্ণ বৃষ্টি হওয়া যায় না ।
গুরু গুরু ধামারের ধান ভানতে ভানতে
তাই , লঘু প্রতিভার সুরে
দুরু দুরু ভাটিয়ালি ভাবনা ভাসাই । -
কবিতা- নিয়তির শতাব্দী বুদবুদে সন্ধি
নিয়তির শতাব্দী বুদবুদে সন্ধি
-অসীম দাস
যদিও বিকেল বীচে সকালের সমুদ্র শিশির
ভুলভীড়ে গাদাগাদি গোধূলির ঝুলটবে
নির্মেদ নীল ভোরে মখমল রোদের মমতা
অবশেষ রাতের নাড়ির নালে
নরম্যান্ডি দুপুরের যৌবন ধ্বণিতবুও যুদ্ধ বানে ভেসে যায় সভ্যতার সেতু
পৃথিবীর শোক শ্বাস শুঁকে শুঁকে
বাতাসেরও জ্বর আসে ধুম্বর্ণ হরফ বয়ে ইলিয়াডনদী হতে পারে
ভাবনার পাখি তা-এ পাথরের পাখা
তোমার চিল্কা চিবুক ছুঁয়ে
শ’ মাইল প্রেমের পতাকাশতাব্দীর কান্না মোছে লজ্জিতা প্রকৃতির তালু
যদিও তবুও শব্দ রাত জাগে সীমানার পাড়ে
মানবের সন্ধিকামী কবিতার কূল
ক্ষমতায় কিন্তু অসহায় -
কবিতা- ধুলো ধুয়ে পুতুল বানাই
ধুলো ধুয়ে পুতুল বানাই
-অসীম দাসতোমাকে সম্পূর্ণ পাই না বলেই
পড়শী শব্দ আসে কবিতার পাশে ।
মাছেদের আলপনা ঝিম-ধরা মাঝির গলুয়ে ।
প্রেমিকার হাতঘড়ি কেবলই পায়চারি করে
ভুলোমন প্রেমিকের পথে ।
রাহুলের মুষ্টি- মায়া ছিঁড়ে
নিশি ডাকে — আয় আয় , আয় রে গৌতম !
সীমান্ত -শীতে প্রতিদিন ভোর দেখি উলঙ্গ চোখে ।
বিড়ম্বিত লুকোচুরি টুকি দিয়ে বলে
— এসো এসো সুখী সুখী জীবনের অতৃপ্ত ঘামে ।ঝুরঝুরে নিষিদ্ধ দেওয়াল পড়োপড়ো হলে
শুধু অন্য গৃহে যাওয়ার পরিকল্পনা করি ।
একদিন সে প্রাচীর সত্যিই ধূলিসাৎ হলে
সর্বস্বান্ত হবার ভয়াবহ ভয় থেকে
মুক্তি পাওয়ার আনন্দে
শুয়ে থাকা ধুলো ধুয়ে পুতুল বানাই ! -
কবিতা- আর মুগ্ধ করো না আমাকে
আর মুগ্ধ করো না আমাকে
-অসীম দাস
নিরুপায় তোমার ফেলে যাওয়া বাতাসের পালে
ভাসতে ভাসতে আমি মুগ্ধ ময়ূরপঙ্খী হয়ে যাই ।তুমি চোখ তুললেই আমার সমুদ্র স্নান
ঠোঁট নাড়ালেই শরৎশাখায় জ্যোৎস্না পান ।
তোমার হরিনাভি কন্ঠের মাঝদরিয়ায়
আমার নীলপদ্মের গান ,
তোমার হংসধ্বণি হাসির ব্যাটে
ছয় বলে ছত্রিশ রান ।মুহুর্মুহু ম্যাজিকের মদে আমি
বেগতিক মাতাল হয়েছি ।
আর মুগ্ধ করো না আমাকে
আমি পরজীবী পুতুল- সূত্র হয়ে যাবো !