• কবিতা

    কবিতা- অন্তক্ষরা

    অন্তক্ষরা

    -জিৎ সাহ

     

     

    (১)
    এক নদী বয়ে যায়,
    হৃদয় হতে নীল শোণিত ধারায়
    শিরায় উপশিরায়।
    আরেক নদী বয়ে যায় আমার মনের বিস্মৃত ধারায়,
    এখনও ভাবনায়, অনুধাবনায়…
    আর আমি এক দিগভ্রান্ত নাবিকের মত পাল তুলে দিয়ে গাঙুরের জলে ভেসে চলেছি ,
    হায় !


    (২)
    আমার জন্য তোর চোখে জল ।
    — কেন ?
    আমি তো তোর কেউ নই !
    হ্যাঁ, মানছি
    তোর বুকের ভেতর এখনও জমে আছে অভিমানের মেঘ।
    তবুও আমার জন্য তোর দু’চোখে বর্ষা কেন নামবে ?
    আমার জন্য তোর কোনো কূলে , কোনো কালেও তো কোনো উচ্ছ্বাস দেখা যায় নি…
    (৩)


    এক নদী মাঝ গঙ্গা।। উত্তাল উচ্ছ্বাসে ভরা।।
    এক নদী যমুনা।। যার সাথে কোনকালেই কোন সম্পর্ক ছিল না।।
    আর এক নদী তুই।— সরস্বতী।।
    নিঃশব্দে আজও বয়ে চলেছিস আমার ভবে অনুভবে,
    অনুভাবনায় ।।
    তোকে কি নামে ডাকি বলতো!
    — অন্তক্ষরা নাকি চোরাস্রোতা ?


    (৪)
    আজ চরৈবেতি মন্ত্র বুকে,
    পাল্টে গেছে সব।
    তুই ভাবছিস আমি আছি সুখে,
    আমি ভাবছি তুই…
    এক বরষায় উচ্ছ্বাসে ভরো ভরো এক নদী
    বড্ড দুঃখ দেয় যদি,
    অকারনেই বাঁক নেয় কোনো এক মোহনায়…
    হায় !

     

  • কবিতা

    কবিতা- কে কার?

    কে কার?
    – জিৎ শাহ 

     

     

    কে আমি! আমিই বা কার…
    যে যার, সে তারই।
    – ইহ জনমে হোক, বা পর জনমে।
    একটি ছোট্ট আলাপন,
    যদি আলাদা করে নিতে পারে এ শরীর হতে মন!
    তবে তা শরীর হতে আত্মাকে কেড়ে নেওয়ার সামিল।
    নাই বা থাকুক মিল মনের সাথে মনে,
    তাই বলে এ দেহত্যাগ প্রাণে!
    ..কেমন আছো মন ?
    মনের জানালায় উঁকি দিয়ে অতি সন্তর্পণে জিজ্ঞেস করলাম।
    মন বলল – তুমি যা করছো, তা নেহাতই পাগলপন!
    কেন মন?
    তুমি আমার এ দেহে বেঁধেছো যে ঘর,
    তবে কি তা নয় অবিনশ্বর !
    মন বলল- তোমার সব হয়েছে আপন, এখন আমিই হয়েছি শুধু পর…
    জানি না মন;
    কি হয়েছে তোমার, কিই বা তোমার অ-সুখ,
    মুখ ফুটে যদি বলতে আকুলতায় ফেটে যায় যে বুক।
    ভেবেছিলাম, আবার শুরু থেকে করে শুরু করবো-
    বেঁচে থাকার লড়াই!
    মানিয়ে নিয়ে বেঁচে থাকার সংজ্ঞাটাকে উদ্দীপ্ত কন্ঠে করেছিলাম যার বড়াই।
    জানি না কি ছিল ভুল…

  • কবিতা

    কবিতা- বিষাক্ত ভালোবাসা

    বিষাক্ত ভালোবাসা
    – জিৎ শাহ্

     

     

    বিষ ছিল হয়তো আমার ভালোবাসায়!
    বিষ ছিল আমার কথায়, বারতায়।
    বিষ আর অবিশ্বাস,
    হয়ত দুই-ই ছিল আমায় ভরসায়….
    হয়ত বিষ ছিল আমার অমলিন দুই ওষ্ঠের উষ্ণ আদরে!
    তবে বিশ্বাস কর—
    বিষবৃক্ষ আমি কখনই আমি রোপন করি নাই আমার হিয়ার মাঝে।
    ভেবেছি শুধু তোর কথা সকাল সাঁঝে।
    শ্রীরাধা পূর্বরাগে যেমনে শ্যামেরে খোঁজে কালো মেঘে !
    ঠিক তেমন করে খুঁজেছি তোকে দিনে রাতে…
    সাঁঝের আকাশে একলা বসে ছাদে।
    জানিস খুব মিস করি আজও তোকে…
    বুক ফেটে যায় কষ্টে,
    কাঠ ফাটে যেমনে তপ্ত ভাদরে।
    হয়ত বিষ ছিল আমার উত্তপ্ত দুই ওষ্ঠের আদরে,
    তবু বিশ্বাস ঘাতকতা ছিল না কখনই আমার রক্তে।
    তোর প্রতি রিক্ততা হয়তো ছিল;
    আজ বুঝি সেটাই আমার কাল হয়েছে ভালোবাসা তিক্ততায়..
    অবুঝের মত তোর কল্পনায় কাল্পনিকতা হয়তো আমার একটু বেশীই ছিল- তোকে নিয়ে কত পথ হেঁটেছি ভাবনায়,
    কত পাতা ঝরা বসন্তকে সাক্ষী রেখে, নির্জন ফুটপাথে এক আনমনা ব্যস্ততায়।
    তোকে আবিষ্কারের নেশায় অচেনা কত পথ হেঁটেছি ছেঁড়া ডায়েরীর পাতায় পাতায়….
    অগোছালো কত ছন্দে,
    কত কবিতায়।
    আজও পথ হাঁটি সেই পূর্ণিমার চাঁদ,
    আর ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শুনে শুনে,
    সেই নির্জন রাতের মায়াবী ফূটপাথ ধরে আনমনে….
    আমি জানি,
    আমার ভালোবাসায় বিষ,
    বিষ আমার কথায়; বারতায়।
    আমার দুই-ঠোঁটের উষ্ণ আদরে বিষ।
    তবুও তোকে ভালোবাসার স্বত্বাধিকার চুপিসারে বলতে পারিস শুধু আমায় কেন দিস?
    কেনই বা আজও খোঁজে তোর অবচেতন মন আমায় অহর্নিশ!
    – অনেক ভালোবাসিরে তোকে,
    নাই বা বললাম সেই ভালোবাসার কথা মুখে…
    ভালো থাকিস।
    এক নিঃস্বর্গ ভালোবাসা তোকে দিলাম।বিষটা না হয় আমার ছিল, থাক না আমারই কন্ঠে।
    শুধু তুই ভালো থাকিস ভালোবাসার বৈকুন্ঠে…

  • অণু কবিতা

    অণু কবিতা- এক ছাদ। ভিন্ন ক্রিকেট।

    এক ছাদ। ভিন্ন ক্রিকেট।
    – জিৎ সাহ 

     

    এক আকাশ ছাদের নীচে ক্রিকেট হাজার খানেক টীম।
    রাতের আঁধার ভেদ করে কান ভাঙানী হ্যারিকেনের আলো করে ঢিম!
    পক্ষ-প্রতিপক্ষ মিলেমিশে একাকার।বোঝার উপায় নেই, শুধু খাবার টেবিলেই
    হয় যত মোকাবিলা…
    যত হা-পিত্যেশ শুধু দর্শক হয়ে যারা বুক চাপড়ায়।
    হায়!
    …শুধু তাদের।
    আম্পায়ার তো নির্বিকার, ঠিকঠাক খেলা পরিচালনায়।

  • অণু কবিতা

    অণুকবিতা- সহাবস্থান

    সহাবস্থান
    – জিৎ শাহ

     

     

    ..অথচ এই আমরাই ভাঙি বাঁধ! সহিষ্ণুতার।
    আমরা করি আর্তের সেবা।
    আমরাই মেলাই কাঁধেতে কাঁধ,
    আর
    আমরাই জন্ম দিই উষ্ণতার….
    আমরা হাতে হাতে মিলায়ে রচি মানবতার সেতুবন্ধন, এই আমরাই ,
    অমানবাধিকারে যোগাই ইন্ধন!

  • কবিতা

    কবিতা- শুকপাখি

    শুকপাখি

    -জিৎ সাহ 

    —আজ তুই চুপ কেন?
    ভিজে কেন তোর দুই আখি…
    কিসের অভিমানে,
    আজ মেঘ জমেছে তোর মনের ঈশান কোনে!
    বৃষ্টি নামবে বুঝি?
    শুকপাখি রে__
    যার স্বপনে আজ তুই বিভোর,
    সেই কি বিঁধেছে তির তোর
    মেঘ ভার-ভার মনে?
    শুকপাখি রে—
    স্বপ্ন দেখ,
    স্বপ্ন দেখা ভালো।
    আজও আমি এই দু’চোখ ভরে স্বপ্ন আঁকি।
    শুকপাখি–
    তোর স্বপ্নেই বিভোর আমি লয়েছে ছিনে মোর ঘুম।
    রাত নির্ঘুম
    রাত নিঝুম
    __বৃষ্টি বাদল,
    বৃষ্টি বাদল।
    মেঘ গুরু গুরু
    বুক দুরু দুরু।
    বৃষ্টি বাদল,
    অকালে মাদল
    ___আজি কে বাজাইল রে!
    একান্ত নির্বিকারে।
    শুক পাখিরে
    তুই বুঝবি এখন
    তোর মেঘ ভারে ভার ভার মন,
    কে করিছে রে…

  • কবিতা

    কবিতা- তুই রোদ্দুর, আমি তোর ছায়া..

    তুই রোদ্দুর, আমি তোর ছায়া..

    -জিৎ সাহ 

     

     

    বুকে আছে ভাষা, অন্তহীন…
    নিংড়ে নিচ্ছে রোদ্দুর
    আমার কবি হওয়ার যত আশা !
    খরস্রোতা বহে চুপিসারে
    অন্তসার শূন্যতার পিছে পিছে একান্ত নির্বিকারে।।
    বয়ে যায় সময় সময়ের অমোঘ নিয়মে,
    যেমনে রোদ্দুর আসলে এসে পড়ে ছায়া।
    যেমনে ভালোবাসলে তোকে রয়ে যায় মায়া।।
    রয়ে যায় কাগুজে আলাপ !
    আর…
    আমার ডায়েরীর দুই মলাটের সমাধি হতে থেকে থেকে ডুকরে ওঠা কলমে বিলাপ ,
    যার লাগি মুছে যায় একদিন তোকে না পাওয়ার ব্যথা।
    তবুও…আজও বুকে বাঁধি আশা
    মুখে নাই বা বললাম, কাগজে কলমে বেঁচে থাকুক এই ভালোবাসা..

  • কবিতা

    কবিতা- আবার যদি দেখা হয়…

    আবার যদি দেখা হয়

    -জিৎ সাহ

    (1)
    এলোমেলো ছন্নছাড়া কিছু শব্দের কোলাজে,
    ঠাওরে ওঠা ভীষন দায়;
    —হায় !!
    তুই আমার কতটা আপন ছিলি,
    আর কতটাই বা পর।
    জানি, এখন তুই অন্য কারোর সাথে বেঁধেছিস ঘর !!**
    তবুও , ভয় হয়!! তুই তো আমার কেউ নয়, বলতে পারিস!
    মেঘলা আকাশ দেখলে পরে শিরশিরানি বাতাস এসে,
    ফিস্ ফিসিয়ে কানে কানে কেনো যে শুধু তোরই কথা কয় ?
    আচ্ছা ! –সত্যি করে বলতো আমায়,
    আজও কী তুই রাত্রি জেগে আমার কথাই ভাবিস ?
    নিঝুম রাতে একাদশীর চাঁদ যেমনে জেগে রয় ।
    ভয় হয়। আসলে তুই তো আমার কেউ নয়।।
    (2)
    আবার যদি দেখা হয় দু’জনার তোর সাথে আমার,
    অচেনা কোন এক পথের বাঁকে এমনই এক বৈশাখে ।
    কোন এক কবিতার শহরে অচেনা কোন শব্দের কোলাজে …
    যে শব্দের কোলাজে/বন্ধনী হতে মুখ ফিরায়ে নিয়েছিলি , কথা দিলাম।।
    সেই শব্দের বাঁধনেই বাঁধবো তোরে নিশ্চয় একদিন …
    এ জীবন বড়ই ক্ষীণ ,
    —কারো কাছে রঙীন
    আবার কারো কাছে বড় দীন-প্রানহীন যেন !
    যে যার, সে তারই রবে—

    শুধু তোর এই নীরবতা যেন আল্টামিরার চালচ্চিত্রের মত
    না বলা কথা না জানি কবে কত !
    যা পারি নাই কেহ
    না আমি, না তুই–কেহ পারে নাই।
    শুধু বসন্ত আসে বসন্ত যায়,
    নির্জন ফুটপাথ, ঝরা পাতা
    এই অসুখের শহরে কে বা রাখে কার বার্তা ?
    সেই নিঃস্তব্ধ দুপুর, পাতা ঝরা বসন্ত
    নির্জন ফুটপাথ ধরে তোর একলা হেঁটে যাওয়া
    একান্তে বিরহের গান শোনাবে তোর পায়ের নূপুর।।
    আবেগে ভাসবে আবারও আমার কাব্যের শহর…
    হয়তো আবারও একটা সুনামি এসে
    অথবা কালবৈশাখীর বেশে
    তছনছ করে দিয়ে যাবে সমস্ত কবিতা কাব্য আর কাব্যিকতাকে..
    হয়তো আবারও আকুল হবে ব্যাকুল হৃদয় ।
    শুধু ভয় হয়—
    আবার যদি দেখা হয় দু’জনার তোর সাথে আমার,
    কোন এক পথের বাঁকে এমনই এক বৈশাখে ।
    —কে শুধাবে কাকে, কেউ কি নেবে কারও খবর ?
    আমি জানি এখন তুই অন্য কারোর সঙ্গে বেঁধেছিস ঘর !*
    তবুও কেমন আছিস ?
    কে শুধাবে তোরে
    নাকি, ভালো আছি বলে
    দু’চোখ বেয়ে নেমে আসা মেঘ লুকাবে তোর মেঘমুক্ত নীল আকাশের আঁচলে ?
    —সেই আমার তুই !!
    (4)
    তুই ঠিকই বলেছিস–
    এই ব্যর্থতা শুধুই আমার !
    শেষবেলায়, আমিই তোকে ঠেলে দিয়েছি দূরে।
    এই অসুখের শহরে,
    ভালোবাসা আজকাল সত্যিই দুর্লভ।
    সব ভালোবাসা সবাই শেষ অবধি ভালোবেসে যেতে পারে নাই
    হয়ত আমিও তাই !
    ভালো থাকিস। বৈশাখী শুভেচ্ছা রইল,
    আর পারলে ক্ষমা করে দিস।
    —এই কাব্যের শহরে হয়ত আবার দেখা হবে তোর সাথে আমারই কোন এক ছন্নছাড়া কবিতার অসম্পূর্ণ শব্দের কোলাজে সম্পূর্ণতার অঙ্গীকার নিয়ে….

  • কবিতা

    কবিতা- তুই ভাবছিস পরকীয়া..

    তুই ভাবছিস পরকীয়া

    -জিৎ সাহ 

     

     

    তুই ভাবছিস পরকীয়া !
    —আমি ভাবছি আমার একলা থাকার আলেখ্য তুই ।
    আমি একলা থাকি যখন,
    তুই আমার সেই একলাপনার অলঙ্করন ।
    আমি ভাবছি আমার মত
    তুই ভাবছিস তোর মত–

    কেউ ভেবেছি কি এই হাজার মানুষের ভিড়েও কারো একলা থাকার যাতনা কত !
    “যে যার,
    সে তারই হবে—ইহ জনমে হোক বা পরজনমে।”
    যদি তুই এই শব্দের কোলাজেই মূর্চ্ছা যাস,
    তাহলে আমার পড়ার ঘরে ধূলো জমতে থাকা ছেঁড়া ডায়েরীর দুই মলাটের মাঝে
    যারা নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে,
    একবারও কি ভেবে দেখেছিস তাদের কথা,
    বুকের ভেতর কি অসহ্য ব্যথা
    নিয়ে আজও নীরবই থেকেছে…
    ___তুই ভাবছিস পরকীয়া,
    আমি ভাবছি ,
    এই বৈতরণী পারের তুই যে আমার শেষ খেয়া…

  • কবিতা

    কবিতা- বসন্ত এসেও থমকে গেছে..

    বসন্ত এসেও থমকে গেছে

    -জিৎ সাহ

     

     

    এবার বুঝি ফাগুন এসেও থমকে গেছে যেন।।

    আগুনপাখির গানে গানে লাগেনি রঙ মনের গহীনে,
    শয়নে স্বপনে জাগরণে
    যার কথা ভাবতেও ভালো লাগতো একা একা—
    সেই হলুদ মাঠ, হলুদ পাখি,
    তুই আমি আর সেই বাঁকা মেঠো পথ।
    গাছ গাছালি ভরে উঠেছে যদিও ফুলে ফুলে
    আগুন লেগেছে আবারও কিংশুক বনে,
    তবু এই ভর বসন্তে স্কুলপাড়ার সেই পাগলা কোকিলটাও বুঝি-

    ভুলে গেছে গাইতে গান ফাগুনের চেনা সেই সুরে
    জানি না কিসের অভিসারে।।
    পাতা ঝরা বসন্তে পাতায় পাতায় ঝরে অশান্ত হৃদয়
    দাঁতে দাঁত চেপে সই
    নিস্তব্ধ দুপুরের চেনা নির্জন ফুটপাথ ধরে তোর একলা হেঁটে যাওয়া
    যেন খসখস বাতাসের সুরে তোর বিরহ বন্দনা ! বন্ধ চোখ- 
    রুদ্ধ শ্বাস—কঠিন হয় অবিশ্বাসে অবিচল নিঃস্তব্ধ প্রায়… হায় !!

You cannot copy content of this page