• কবিতা

    কবিতা-ঋতুবতী

    ঋতুবতী

    -নীলোৎপল সিকদার

     

    এখনো অন্ধ দুচোখে আলোর রোশনাই
    রূপ যার মধ্যরাতের মত আঁধার সুন্দর
    জৌসুলভরা অঙ্গে অঙ্গে চাঁদের জ্যোৎস্নাদ্যুতি,
    ছেঁড়া পাতার মত মর্মর গান
    বুক থেকে যখনই নেমে আসে গলা বেয়ে
    তখনই এ পৃথিবী ঋতুবতী হয়
    তবুও অন্ধ দুচোখ…

    যারা সব চলে গেছে যৌবন বেলায়
    নটী রঙ্গের প্রমোদ কাননে
    ঝরাজল শুকিয়ে চোখের কোণায়
    কাজলে ঢেকে রেখে চোখ
    দেহ ভেঙ্গে রন্ধ্রে রন্ধ্রে
    মিটিয়ে জীবনের লেনা দেনা পৃথিবীর খাতায়
    তারপর পাটভাঙা শাড়ীর আঁচলে বেঁধে
    অর্জিত কষ্ট
    হেসে হেসে তারাও একদিন বলে
    আহা কি ভালোই না পৃথিবীর জীবন…

  • কবিতা

    অবিনশ্বর

    অবিনশ্বর

    -নীলোৎপল সিকদার

     

     

    এখনো হয়নি ভোর এ মৃত্যুচরাচরে
    সূর্য উঠার ঢের আঁধার রয়েছে বাকী
    প্রাণ প্রবাহ ছুঁয়ে আসবে রোদ্দুর
    বন্ধু উৎকন্ঠাহীন উদ্বেগে কাটুক এ প্রহর
    রাঙা আলোয় একদিন ভোরবেই
    এ প্রাণের শহর…

    অনন্ত অসীম প্রাণ উল্কাসম আসে
    অজস্র প্রাণের ছোঁয়ায় আলোড়িত হয়
    কাম কামনা লোভ মোহ
    মন আকাশে ক্রমে উদিত হয়
    ভুলে যায় অমৃত সমুদ্র উৎসবে
    অকৃত্রিম আনন্দে ভেসে থাকার বার্তা
    অবিনশ্বর প্রাণ নিয়ে বসে থাকে
    নশ্বর যতো ঠুনকো জীবনের পথে…

    এ সাজানো অমরাবতীসম
    পৃথিবীর সুখ দুঃখ কাননে
    কাটিয়ে কিছুটা সময়
    পুঁতিগন্ধময় দেহ ছেড়ে
    হাওয়ার রথে হাওয়ায় উড়ে যায়
    প্রাণ যেমন তবু প্রাণই রয়…

  • কবিতা

    বরবাদ

    বরবাদ

    -নীলোৎপল সিকদার

     

     

    রাত্রি আঁধারে আমি শুনেছি
    শ্মশানের গল্প মৃতদের কন্ঠে
    হাজার চিতাকাঠ জ্বলে জ্বলে
    শোনায় অন্ধকারে আলোর গান
    প্রাণে তাই জাগে ভয়
    কি হয় কি হয়…

    আমি তো করেছি বরবাদ
    খেয়ে পড়ে জীবনের অমুল্য সময়
    ক্ষয়ে ক্ষয়ে খসে গেছে
    বোধের বিশুদ্ধ বৈভব,
    শ্মশান তাই চিতাকাঠ নিয়ে
    সাথে সাথে চলে অবিরাম…

    এখন সময় কান্নার রসাতলে যাওয়ার
    তবু কত জেদ পাল্লা
    গতানুগতিক কাহিনী শোনায়!
    বেলা অবেলায় পথে বেরিয়ে
    পিছিয়ে পড়ি উত্তম পথে যাওয়ার…

  • কবিতা

    সময় রাজা

    সময় রাজা

    -নীলোৎপল সিকদার

     

     

    সময় রাজা করেছে আমায়
    একলা একা ডুবিয়ে আপন হাতে
    সময় জলে ডুবে থাকি একা একা
    আমার কেবল একলা লাগে…

    ডুবার আগে দেখেছিলাম উদার আকাশ
    তারায় তারায় চন্দ্র উদয় জোছনা বুকে
    আকাশ এখন আর দেখি না
    সে যে মুখ ফিরিয়েছে দারুন অবহেলায়
    জোছনা ঢেকে তারারা সব আড়াল করে
    আমার কেবল একলা লাগে…

    ডুবতে যাওয়ার পথের পাশে
    দেখেছিলাম জল বুকে
    নদীটিরে বয়ে যেতে
    দূরে ঐ নদীর পাড়ে দাঁড়িয়েছিলো
    মাথা তুল মস্ত পাহাড় আকাশ তলে,
    মন্দির এক জেগেছিলো নদীর ধারে
    বাজিয়ে তার কাঁশর ঘন্টা,
    সবই ছিলো চারপাশে পূর্ণিমা ছাওয়া
    নদী তবু বাঁক পেরিয়ে
    চলেই গেলো অচিন দেশে
    আমার আমি ডুবিয়ে দিলো
    সময় রাজা আপন হাতে
    আমার কেবল একলা লাগে…

  • কবিতা

    পথ

    পথ

    -নীলোৎপল সিকদার

     

     

    কারা যেন যেতে যেতে পথ আঁকে
    চেতনা ক্ষয় করে চিহ্ন রেখে যায়,
    বুকের কখান হাড় পুড়িয়ে
    ভালোবেসে তারা আলো জ্বেলে রেখেছে,
    চির ফলপ্রসূ বোধের সে পথে
    ভুল মানুষেরা তবু ভুলে ভুলে
    অনুপ্রাণীত অনুরাগে অবিরাম হাঁটে
    এক কণা আলোর সন্ধানে…

    আমারও হয়েছে কত দোষ
    ভুল করে ভুলেও হয়নি হাঁটা
    সে পথ বেয়ে বেলায় বেলায়
    পথে পড়ে রই তবু পথ পাইনে খুঁজে…

    মৃত্যুর মত তুফান তরঙ্গে ডুবে যাবে
    জানি আমার পৃথিবী অতল তলে
    যদি প্রচেষ্টা সাধনায় বেঁচে থাকা সময়ে
    পেরিয়ে যেতে না পারি অঙ্কিত পথ
    তবে কি হবে পথ আর তার চিহ্ন ছুঁয়ে!
    এ জীবন মসি লিপ্ত হয়ে রয়েই যাবে
    চিরদিন অন্ধকার আড়ালে
    আসছে জনমে আবার না হয় হবে
    পথ চেয়ে পথে পথেই ঘোরা…

  • কবিতা

    একটু হেসো

    একটু হেসো

    -নীলোৎপল সিকদার

     

     

    প্রজাপতির পাখায় রংধনু দেখে
    রংচটা জিন্সে‌র প্যান্টে
    অগণিত পকেট রেখেছি
    সাতটি রঙের মধ্যে বাসন্তী রং
    যত্নে আদরে তুলে রাখবো বলে,
    তুমি একটু হেঁটে এসো
    চৌরাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে
    একটু হেসো…

    বেলা পড়ে এলে গা ধুয়ে এলোচুলে
    হারমোনিয়ামে শিল্পীত আঙুল রেখো
    আমি সুর ছন্দে বিভোর মনে
    বাসন্তী রঙে গড়া অঙ্গরীয়
    তোমার আঙুলে পরিয়ে দিবো
    একটু ধ্রুপদী সুরে হেসো…

    সাঁঝ পেরিয়ে গেলে জোনাকির নূপুর
    পরিয়ে দিবো মমতার সোহাগ হাতে
    ধবল পটে আঁকা রেশম রেশম পায়ে
    নৃত্যের ছন্দে কিছু হাসির টুকরো
    রাতের গায়ে ছড়িয়ে দিও,
    আমি দ্বিতীয় মৃত্যুর পূর্বে
    বুক ভরে আনন্দে ভাসতে বাসতে
    মরণের পার আহ্লাদে ছুঁয়ে দিতে পারবো
    একটু হেসো…

  • কবিতা

    টের পাই

    টের পাই

    -নীলোৎপল সিকদার

     

     

    এখনও বেশ টের পাই বুকের ধুকপুকানি
    চলছে শ্বাসে প্রশ্বাসে অচেনা তরী
    ঘাটের সন্ধানে নোঙর করবে বলে
    টের পাই,,,

    এবুকে রাতের আকাশে পান্ডুর চাঁদ
    হলুদ জোছনায় ভিজায় প্রান্তর
    মেয়েলীগন্ধ ভেসে আসে মৃদু সমীরণে
    টের পাই…

    ভীষন স্রোতে ভেঙেছে কতবার
    মননদীর পাড় দুরন্ত প্রেম আকর্ষণে
    কত দীঘল রৌদ্র পুড়া পথ
    লুটিয়ে পড়েছে দুর্দম ছুটে চলা পায়ে
    তবু পা জ্বলে জ্বলে এগিয়ে গেছে অকুতোভয়ে
    কোন এক নদীর গান শুনতে বাহির হাওয়ায়
    টের পাই…

    কোথায় নদী সেখানে যে দেখি গহীন বালুচর
    কেন ঢেউয়ে ঢেউয়ে দেহের দোলায় দুলি
    শূন্য পড়ে থাকা ধূধূ বালির বিস্তার
    ঝড় নেই তবু বালিঝড়ে আচ্ছন্ন
    বালিতে মুখ গুঁজে জীবন ঝড় কাটাই
    শূন্য বালিচর– টের পাই…

  • কবিতা

    পাগলপনা

    পাগলপনা

    -নীলোৎপল সিকদার

     

     

    এক টুকরো প্রেম ছিলো তরুণীর
    কমলা লেবুর কোয়ার মত লাল ঠোঁটে
    সে লালে একদিন অন্ধ হয়েছিলো চোখ
    কি আশ্চর্য তখন অন্ধ চোখ
    স্বর্গের লাল পথ দেখেছিলো অনিমেষ
    সেই আমার স্বর্গের খোঁজ পাওয়া…

     

    যুবতী দেহের রংমহলে কত ঝাড়বাতি
    কি মনোরম অনুজ্জ্বল আলো
    মোহন বাঁশি আমার কত সুরে বাজলো
    তবু যুবতীর মন আবিষ্ট করতে পারেনি
    সে যে রঙিন পাল তোলা বিচিত্র তরী
    ঘাটে ঘাটে শুধু ফেরী করে যায়
    আমি আজ চোখে দেখি অন্ধ নই
    তবু তার মন চিনতে এতো ভুল হলো!

     

    মন পারাবারে ডেকে ডেকে কত বলি
    হে রমনী ভালো কি বাসো আমায়
    সে হেসেই বাঁচে না বলে কেন বাসবো
    তুমি কে তোমাকে তো আমি চিনি না
    আর তোমাকে ভালোবাসার চেয়ে
    আরো ঢেড় বড় কাজ পড়ে আছে
    আমার জীবন যৌবনে শতধারায়
    আমাকে বিরক্ত করো না…

    এতো বয়স হলো
    তবু আমার পাগলপনা সারলো না…

  • কবিতা

    মিছিল

    মিছিল

    -নীলোৎপল সিকদার

    এই যে কত কত আমজনতার
    কতবার কত রূপে রাজপথ
    কাঁপিয়ে দুরন্ত দাবী আদায়ের মিছিল
    এগিয়ে যায়
    এই যে জ্বালাও পোড়াও রক্ত মিছিল
    তা কতটুকু আদর্শ নীতি নৈতিকতা মেনে চলে
    কতটুকু পরিস্কার ধারণা সম্মত

    আজ প্রতিটি মানুষের বিবেক
    কঠিন প্রশ্ন তুলেছে- এ মিছিল কি
    ব্যক্তিস্বার্থে না সার্বজনীন দাবী আদায়ের!

    প্রশ্ন উঠেছে এই স্থুল কামনা বাসনা পুরণে
    কতটুকু শান্তি নেমে আসবে পৃথিবীতে
    কতটুকু মুক্তি দিবে অসহায় শোষিত
    নির্যাতিত অধিকারহীন মানুষকে
    প্রশ্ন উঠেছে…

    প্রশ্ন উঠেছে নীতি আদর্শ মুল্যবোধ মর্যাদা বোধ
    মিছিলকারীদের মনে কতটুকু আছে
    কতটা পারবে তারা নৈতিকতায়
    ফিরিয়ে আনতে মানব জীবন ব্যবস্থা
    প্রশ্ন উঠেছে…

    অতীত আন্দোলন সংগ্রামে অর্জিত স্বার্থ সম্পদ
    কয়টি মানুষ ভোগ করছে
    কয়টি মানুষ সুবিধা পাচ্ছে
    প্রশ্ন উঠেছে
    না কিছু মহান মানুষের রক্তের বিনিময়ে
    আদায়কৃত সুফল কতিপয় স্বার্থবাদী সুবিধাবাদী
    পরম আহ্লাদে অন্যদের দেখিয়ে দেখিয়ে
    কৌশলে ভোগ করছে
    এই সব প্রশ্ন আজ দেখা দিয়েছে…

    তাই মনে হয় যতদিন সুশিক্ষায়
    নীতি নৈতিকতায় মানুষের বোধ
    গড়ে না উঠবে
    যতদিন উন্নত সৎ মানুষ না হবে
    ততদিন কোন মিছিল আন্দোলনে
    প্রাপ্ত সুফল সকলে সমান ভোগ করতে পারবে না…

  • কবিতা

    এলোচুল

    এলোচুল

    -নীলোৎপল সিকদার

    কখনো কখনো সময়
    তোমার মত হেঁটে আসে
    এলোচুল বাতাসে উড়িয়ে
    খোলা চুলের মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে
    তখন জীবন সূর্য গালভরে হাসে
    মিষ্টি একটা গন্ধ মেখে…

    ডুবু ডুবু জীবন তরী তবু ডোবে না
    নোনা সমুদ্রের জল কেটে জেগে ওঠে
    তরতর গতিতে আবার বয়ে যায়
    ঠিক তোমার খোলাচুলে
    চঞ্চল হেঁটে যাওয়ার মত
    বিশ্বাস আস্থা ভালোবাসায়…

    এখানে এ মাটির পৃথিবীতে
    তুমি আছ আমি আছি
    আর সব কাছাকাছি তবু কত দূরে
    প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে থাকি পাশাপাশি
    তারা সব আছে তবু যেন নেই
    শুধু তুমি আমি আছি সুখে দুঃখে
    আনন্দ বেদনায় ভালোলাগা ভালোবাসায়
    আপনের চেয়ে আপন এক অভিন্নতায়
    তোমার মুখের সুষমা ভরা দ্বীপ্তির মত…

You cannot copy content of this page