-
কবিতা- ঋণী
ঋণী
-শংকর হালদারসৃজন তব- মোর দেহমন
বিবেক-বুদ্ধি- জ্ঞান,
সৃজন তব- এই চরাচর
সিদ্ধি হতে ধ্যান।অঞ্জলি মোর- তোমারই দান
আপন ভেবে হারা,
রূপ-রস-গন্ধ-সবই
আপন ভেবে সারা।মালিক সেজে বড়াই করি
অকিঞ্চন এক দানি,
তুমি-ই বিধি, তুমি-ই নিধি
তব নিকট ঋণী । -
কবিতা- পরিপূরক
পরিপূরক
-শংকর হালদারশান্ত সকালে তুমি আর আমি
শিশির মাখায় পায় ,
শীর্ণ শীতের পরাধীন রোদ
আলতো আবীর গায় ।একলা দুপুর তুমি আর আমি
বাউলের গান শুনি,
বেদনার মেঘ চারিদিক ছায়
আলোর দিনগুনি ।তুমি আর আমি শান্ত নদী
বহমান জীবন ধারা,
উতাল পাতাল বুকের ভিতর
গহন স্রোতে হারা ।তুমি আর আমি একে অপরের
মিলনের গান গাই,
বিরহ বেদনা আজও দেয় উঁকি
ছবি এঁকে যাই ।তুমি আর আমি জোয়ার ভাটা
জোয়ারে ফিরে আসি,
ভাটার টানে নিজেকে খুঁজি
একে অপরের ভালোবাসি ।তুমি আর আমি সন্ধ্যা প্রদীপ
দু’জনে জ্বালাই আলো,
যেখানে আঁধার উঠুক জ্বলে
একে অপরের বেসেভালো । -
কবিতা- রচিত জীবন
রচিত জীবন
-শংকর হালদারচাক্ষুস করিনি ভগবান
সৃজনের শুদ্ধ পাতায় মন
মুগ্ধতার এক গা জোচ্ছনা
দেবতা মনে হয়।রামধনুর আলপনা আর
নীল পাড় মেঘ,
আদর জমায় সবুজ পাতা
প্রেম নেই ঝরা ফুলে।জোনাকির খেলাঘর নিশীথ অরণ্য
শান্তির নীড় খোঁজে গৃহহীন,
টলটলে বেদনা ভুলে-
ছবি আঁকে সবুজ ঘাস।শান্ত নিবিড় বন
বৃক্ষের ভালোবাসা অগাধ
এখানে জনতার কালশিটে ঘুম নেই
ঈশ্বর খেলা করে অন্তরে অন্তরে।চঞ্চুতে পক্ষীর প্রাণ
ঘুম আনে কুড়ানো খাবার
বরাদ্দ জীবন তাঁরই হাতে
নিত্য আনাগোনা আপন খেয়ালে।খেলতে খেলতে খেলা শেষ
মোহিত জগৎ ছেড়ে, এপার থেকে ওপার …
গেয়ে ওঠে এক ঝাঁক বাউল …
আমার জীবনের গান।গ্রামের গেঁয়ো রুপ
অবিকল মায়ের মতো
আমার জন্মভূমি আমায় ডাকে ।শিকড় নিয়েছে বংশপরম্পরা
আমিও তাই …
বিনিসুতোয় জীবন রচনা করি
জন্মভূমির বুকে। -
কবিতা- শমন
শমন
-শংকর হালদার‘ও’ আসে আর যায়
বেদনায় ভেঙে দিয়ে বুক ,
কর্মের বন্ধনে শূরবীরও
বদ্ধ থাকে বন্ধনের মাপকাঠিতে ।স্নেহ-মায়া-মমতা নেই
ভেদাভেদ নেই ওর চোখে,
শুষ্কমরু ,সরসভূমি
তার অবাধ শাসনে কাঁপে ।আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সব-ই
কালের কবলে পায় ডাক ,
ভুলেও হয়’না ভ্রম কভুও
আগে পরে নিয়তির হাত ।সীমানা ছাড়িয়ে তাঁরই বিচরণ
অস্ত্রের মাদকতা ক্ষমতাই তুচ্ছ,
মিথ্যে দম্ভ অহংবোধ
পলকেই ঘটে শেষ দৃশ্য ।অর্থ-প্রাচুর্য পোশাকি বাহার
ক্ষণিকে ঢেকে যায় তমসায়,
মিথ্যে পাঞ্জাখেলি সংসারে
শমন কখন কার দ্বারে !পরাজিত রক্তে- মাসে নর
গন্ধর্ব-যক্ষ-কীট-কিন্নর ,
দেব-দৈত্য-রথি-মহারথি
মধুময় পৃথিবীর এই ধুলিতে । -
কবিতা- ভালো আছো…
ভালো আছো…
-শংকর হালদারভিড় ঠেলে বেড়িয়ে আসে একটা স্বর
চংমং চিত্র আঁকি বহু লোকের ভিড়ে
কল্পনা মনে হয় …
কি জানি, অতিপরিচিত মনে হয় সে ডাক
শোঁ-শোঁ বাতাসের গায়
তার বুলানো হাত
আর মেলানো সুর
বারবার কাছে মনে হয়
কাছের মনে হয়
হয়তো কোনো সংলাপ
ছবি এঁকে বারংবার বলতে চায়
ভালো আছো … -
কবিতা- আশ্রয়
আশ্রয়
-শংকর হালদারশব্দের খেলা শুধু শব্দ-ই নয় –
কারও মনের দুঃখ,কারও জীবন কাহিনি,
কারও সুখের ঠিকানা ।
চাঁদ নেই মনে হয়-
স্বপ্ন হারানো পথে তমসা’র আগমন।
মাথার উপর ছাদ নেই-
মেঘ ভাঙা বৃষ্টি আমা’কে ভাসায় ।
শিশির ভেজা মায়া মুক্ত আজ
কেবল ছায়া’র কবলে,
ছায়া মাখি আশ্রয় ভেবে।
এখানে কোনো গুরু নেই,
মন্ত্র হারিয়ে ফেলেছে তার ভারসাম্য ।
গড়ানো বেলা…
গড়িয়ে গড়িয়ে রবি মাথায় ।
ভ্রমণ শেষে দেখি একফালি চাঁদ
মায়া বিছায় আমার দেহ মন জুড়ে।
মেঠো ঘাসে মাথা রেখে তারাগুনি – ঊর্ধ্বগগনে ।
মনে পড়ে মায়ের ঘুম পাড়ানি গান
ভেসে আসে মোল্লা’র আজান
পতঙ্গের গুঞ্জন আর বাতাসের শোঁ-শোঁ ভাবনায়
আমি ভাবুক …
বিজলীর পদচারণ নেই এ -গাঁয়ে
আশ্রয় খুঁজি মেঠো গাঁ’র পথে
নির্ভেজাল জোছনার ছাউনি…
একটা ছাদ পেলে আলোয় পায়ে পায়ে
পথ হাঁটা যেত আরো …একটা আশ্রয় পেলে…
-
কবিতা- তখন থেকে …
তখন থেকে …
-শংকর হালদারতখন থেকে নিষ্ঠুর নখে বুকটি –
বিদীর্ণ করছি ,
অধীর চঞ্চলতায় কেবল রেখা টেনে ।সাম্যের স্বাধীনতা ভুলে, আপন জন্মভূমি ভুলে
স্বার্থের আঙিনা রাঙিয়ে উষ্ণ বালু-ই…তীব্র আসক্তি-
ছায়া দেখে দৈর্ঘ্য মাপি ,
স্বার্থের পরিধি ক্রমশ বাড়তে বাড়তে নিজের…মোহ জড়ানো তীক্ষ্ণ দৃষ্টি
গিলে খায় এক এক আত্মা ।কী দিয়েছি ! এতকাল…
স্বাধীন ভারতবর্ষ আজ অগ্নিগর্ভ…
স্বাধীনতার শিখরে ঝুলছে ফাঁসির রাজদন্ড ।এখনও ধ্বনিত হয় কাতর প্রার্থনা –
পথ-প্রান্তরে ।দীর্ঘ পথের গুমোট অধ্যায়-
জীবনের কোনো ইতিহাস নয় । -
কবিতা- রোদ্দুর
রোদ্দুর
-শংকর হালদারপড়ন্ত বিকেলের গায় এখনও বন্ধুত্ব
ভাগ করে নেয় পার্থিব সমাজ
ভরিয়ে তোলে তাজা চুম্বনে ।আমার প্রাঙ্গণ জুড়ে খেলা করে
নিতান্ত শিশুর মতো, সে দাতা ।প্রভাতী আলো খুশির বার্তা বাহক
মধ্যাহ্নে মেলে ধরে যৌবন
অপরাহ্নে ঝরে পড়ে মাতৃ স্নেহে ।ফেলে আসা পথের বাঁকে স্মৃতির আলপনা
শৈশব হতে বার্ধক্যে অবোধ শিশুর মতো
তার আচরণ ।ক্ষিতি, অপ, অন্তরীক্ষে বাড়ে তার সখ্যতা
প্রকৃতির ছায়াপথ জুড়ে বিছানো স্নেহের আঁচল
চিবুকে আলতো প্রেম, ঠোঁটে লোটকানো অনুভূতি ।রোদ্দুর হও, উষ্ণ মায়ায় নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারি
জাগতিক মোহ ভুলে । -
কবিতা- বর্ণপ্রেম
বর্ণপ্রেম
– শংকর হালদারসবাই যখন ঢলে পড়ে রাতের আঁচলে মুখ ঢেকে
তখন মৃদু আলোয় ভাব হয় খাতার পাতায়
টুকরো টুকরো ভালোবাসা’ জমা করি
বিধবার বুকে,
হৃদয়ের জি.টি.রোড ধরে আসা সূক্ষ্ম অনুভূতি
সংসার পাতে আমার অধীনে
আমাকে ভালোবেসে…
প্রেম ডোরে আবদ্ধ করি কলম নিবে
ছড়িয়ে থাকা পরিবেশে কত শব্দ, বাক্য
পড়ে থাকা নীরব যন্ত্রণা,
উপচে পড়ে জানলার ফাঁকে…
গভীর রাতে ঘর বাঁধে আমার কুঁড়ে ঘরে। -
কবিতা- হার-জিত
হার-জিত
– শংকর হালদারবানানো কথার জালে তুমি জিতে গেলেও
সত্যের আলপথ ধরে আমি হারিনি ।
ক্ষুদ্র বলে তুচ্ছতা নয় কেউ
বাঁকা পথ, পথ-ই হয়ে থাকে
স্বপ্ন মরেনা কখনও …সবুজ ঘাসে স্বপ্নন আঁকে ভোরের কুয়াশা
আবিরে রাঙানো তোমার ইতিহাস
মৌন ব্রত পালনে রত ,
কচুপত্রের লৌকিক ভদ্রতা তোমাকে আড়াল করলেও …
মানবতার মানদন্ডের শির
আজও শিখর ন্যায় …তুমি জিতে গেলেও আমিও হারিনি । হালদার
বানানো কথার জালে তুমি জিতে গেলেও
সত্যের আলপথ ধরে আমি হারিনি।
ক্ষুদ্র বলে তুচ্ছতা নয় কেউ
বাঁকা পথ, পথ-ই হয়ে থাকে
স্বপ্ন মরেনা কখনও …সবুজ ঘাসে স্বপ্নন আঁকে ভোরের কুয়াশা
আবিরে রাঙানো তোমার ইতিহাস
মৌন ব্রত পালনে রত ,
কচুপত্রের লৌকিক ভদ্রতা তোমাকে আড়াল করলেও …
মানবতার মানদন্ডের শির
আজও শিখর ন্যায় …তুমি জিতে গেলেও আমিও হারিনি ।