• কবিতা,  স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার

    কবিতা- রঙ

    ।। অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার।। 

     

    রঙ
    -সোহিনী সামন্ত

     

     

    অন্তর্নিহিত মন থেকে প্রেম কি কখন বাষ্পায়িত হয়!
    নাম না জানা রঙ লেপ্টে থাকে মনের দুর্গম কোণে,
    কত বহুরূপী রঙ খেলা করে চলে নির্ভেজাল অবয়বে…
    নতজানু হয়ে স্বীকার করি, রঙ যে হৃদয়ের একমাত্র প্রেম,
    তুলির টানে কত রূপ পায় হরেক বাহারি সৌন্দর্য,
    মনের রাস্তা এঁকেবেঁকে চলে যায় রঙের উজ্জ্বল দুনিয়ায়…
    যেখানে প্রেম আছে, যেখানে সুখ পাখি উড়ে চলে নতুন দিগন্তে…
    আহামরি যে কিছু চাই না, তবে রঙিন হতে চাই রঙের খেলায়…
    প্রাণ থাকতে, মন থাকতে, উজ্জ্বলতার খোঁজে ছুটে বেড়াই…
    এ বেড়ান বৃথা না, এর সুগন্ধি লেগে থাকে মন আধারে…
    রঙের প্রাণ আছে, রঙের সুগন্ধি আছে এক নিশুতি মনের মননে…
    তাই কলম ধরেছি, নানা রঙের গোধূলি লগ্নে মিলে যাব বলে…
    তোমরা কি দেখতে পাও, সুদূর জীবনে হাসি কান্নার খেলা…
    তাতেও যে রঙ আছে, তাই তো চাই সবাই মিলে রঙিন হয়ে উঠি।

  • কবিতা,  স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার

    কবিতা- মায়াবৃক্ষ

    ।। অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার ।।

     

    মায়াবৃক্ষ
    -সোহিনী সামন্ত

     

     

    কেউ কি পেয়েছো মায়াবৃক্ষের দেখা?
    যা কিনা কুড়ে খেয়েছে মনের পাটাতন,
    অদৃশ্য অশরীরীর মতন উবে গেছে মনের অভিলাষায়…
    মায়াবৃক্ষের ফলস্বরূপ বিবেক, খালি মনের দরজায় টোকা মেরে যায়…

    এঁকেবেঁকে ওঠা মায়াবৃক্ষের শাখা-প্রশাখায়, কত না আছে বেদনার আখ্যান..

    তুমি কি খোঁজ পেয়েছো সেই মায়াবৃক্ষের?
    যার গায়ে পাপ নামক পিঁপড়ের দল বাসা বেঁধেছে…
    পিঁপড়ের দল সেই বৃক্ষের ধমনীর রস আস্বাদন করেছে…
    পুণ্য বলে যদি কিছু থাকে, তাহলে তা বৃক্ষের মধ্যে পুনর্জীবনের আশা মাত্র…
    পৃথিবীর মায়ায় আমরা চিরন্তন উজ্জীবিত,
    মায়ার খেলায় বৃক্ষের শিকড় যথাযথ বন্দি,
    প্রেম পুষ্পের জাগরণ ঘটে মন বৃক্ষের উন্মোচনে,
    যত খেলা আছে, সবই অপূর্ণ থেকে যায়…
    খেলার দুনিয়া কেবল বিভীষিকাময়, বৃক্ষ যে হবে আন্দোলিত।

  • কবিতা,  স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার

    কবিতা- ঠিকানাহীন পথ

    ।। অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার।। 

     

    ঠিকানাহীন পথ
    -সোহিনী সামন্ত

     

     

    মন যে চলে যায় ঠিকানাহীন পথের খোঁজে…
    যে পথে কোন রেষারেষি নেই, নেই কোন বিদ্বেষ…
    এমনই যে পথ চাই, এমন নির্লিপ্ত মনে…
    কত বাহারি গাছের ছায়া পড়ে পথের চারিপাশে…
    যেমন করে পথিক নেয় বিশ্রাম শান্ত ছায়ার নিচে,
    তেমনভাবেই মন শীতল হবে অচেনা পথের দিশায়…
    সংকীর্ণ মন পথ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর রূপ নেবে…
    মনের মিলনে মানুষ জাতি ভেদ ভুলে গিয়ে এক হবে…
    এমনই যে ঠিকানাহীন পথ খুঁজে বেড়াই,
    পাব কি এমন পথ খুঁজে!
    শুধু অদৃষ্টই জানে।

  • কবিতা,  স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার

    কবিতা- বড় একা লাগে

    ।। অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার।।

     

    বড় একা লাগে
    -সোহিনী সামন্ত

     

     

    বড় একা লাগে…
    হ্যাঁ, হ্যাঁ বড় একা লাগে…
    যখন সেই চেনা
    পাখি আর আসে না,
    কিচিরমিচির করে ভুবন ভরিয়ে তোলে না,
    তখন বড় একা লাগে…
    যখন পরিচিত মানুষ অনেক দূরে চলে যায়, চাইলেও আর তার দেখা পাওয়া যায় না…
    তখন বড় একা লাগে…
    যখন বন্ধুত্বের অটুট বন্ধন ভেঙে যায়,
    চাইলেও আর বন্ধুত্ব ফিরে
    পাওয়া যায় না… তখন বড় একা লাগে…
    যখন গাছে ফুল ধরে না,
    চাইলেও ফলের স্বাদ পাওয়া যায় না…
    তখন বড় একা লাগে…
    যখন কোকিল সুরে গান ধরে না,
    চারিদিক যখন শান্ত, বর্ণহীন, নিঃশব্দ…
    তখন বড় একা লাগে…
    একা লাগার যে পরিভাষা হয় না… উপলব্ধি শুধু থেকে যায় সুপ্ত মনে‌।

  • অণু গল্প

    গল্প- রাধার জিত

    রাধার জিত
    – সোহিনী সামন্ত

     

     

    দশ বছর হল রাধার বিয়ে হয়েছে। রাধার স্বামীকে কর্মক্ষেত্রের জন্য মাঝে মধ্যেই বাইরে যেতে হয়। তার বড় নিঃসঙ্গ মনে হয়। রাধার শাশুড়ি সেকেলে মনের মানুষ। রাধা আগে গান, নাচ শিখতে যেত। কিন্তু তাতে শাশুড়ির বড় আপত্তি। আর বাইরে কোন ছোট প্রোগ্রাম করলে তো রেগে যা না তাই বলেন।

    “কি গো বৌমা কোথায় গেলে? দুপুর তো বয়ে গেল কখন খেতে দেবে?” বলে উঠলেন মালিনী দেবী। মালিনী দেবী রাধার শাশুড়ি মা। রাধা একটু অপ্রতিভ হয়ে বলল, “এই তো যাচ্ছি মা, এখনি আমরা খেতে বসব..” যেই বলা সেই কাজ। রাধার রান্নার হাত বড় ভাল। মালিনী দেবীর তো খুব আনন্দ। ইলিশের ভাপা আর চিংড়ির মালাইকারী একেবারে জিভে জল নিয়ে এসেছে। রাধার নিঃসঙ্গ জীবনের একমাত্র সঙ্গী হল তার শাশুড়িমা। তবে তার সাথে মনের মিল করা সম্ভব হয় না। উনি বউমার পছন্দ বুঝতে চান না। রাধা খেতে খেতে হঠাৎ বলে উঠল, “মা বলছি কি, আমার মা একবার ফোন করেছিল। যেতে বলেছে আমাকে। আপনার যদি আপত্তি না থাকে তাহলে যাব।”
    -“তা আর বলতে। তোমার আপন মা যখন ডেকেছে যেতে হবে বইকি। তবে বেশিদিন থাকা চলবে না। নাতি নাতনির ঝামেলা নেই সে বুঝলাম। কিন্তু হঠাৎ করে যদি ছেলে বাড়ী চলে আসে?”
    -“মা ও নিয়ে ভাবছেন কেন? ওঁর সাথে ফোনে কথা বলেই যাব।”
    -“ঠিক আছে। বেয়ানকে আমার শুবেচ্ছা ও প্রণাম জানিও।”
    -“হ্যাঁ, মা..”বলে রাধা নিজের বাড়ীর কাজে মগ্ন হয়ে গেল। কিছুদিন হল তার স্বামী রাকেশ একটা ফোন উপহার দিয়েছে।মোবাইলে নানা আঁকা ছবি দেখতে রাধার খুব ভাল লাগে। তার আঁকা শেখার খুব ইচ্ছে তবে শাশুড়িকে বললে ঝামেলা বাঁধিয়ে দেবে। তাই আর সাহস পায় না।

    বাপের বাড়ী যাওয়ার দিন এগিয়ে আসে। মালিনী দেবীকে প্রণাম করে রাধা যাত্রা শুরু করে। পৌঁছিয়ে মা’কে দেখে নিজের আবেগ আর ধরে রাখতে পারে না।

    মাকে জড়িয়ে ধরে রাধা কাঁদতে থাকে। রাধার মা মৌসুমীদেবী বলেন, ‘কি হল রে এমন ফুঁপিয়ে কাঁদছিস কেন?”

    -“ভালো লাগে না। বড় একা লাগে মা। শাশুড়ি মা তো আমার সব স্বাধীনতা কেড়ে নিল।” ফুঁপিয়ে ওঠে রাধা।

    -“কি হয়েছে পরিষ্কার করে বল?”

    -“কি আর বলব– নাচ, গান, আঁকা কিছুই উনি পছন্দ করেন না”।

    -“উফ চল আর কান্নাকাটি করতে হবে না। ফ্রেশ হয়ে কিছু মুখে দিয়ে জিরিয়ে নে, তারপর কথা হবে”।
    বিকেল হতে রাধা বাজারে যায়। নিজের কিছু কেনাকাটা করে ফিরে আসে।
    মায়ের বিছানার কাছে বসে কি যেন ভাবতে থাকে।
    মৌসুমিদেবী বলেন, “শোন তোর সমস্যার সমাধান আমি করে দিচ্ছি। পাশের বাড়ীর মাণিক বড় আঁকার মাস্টারমশাই। তার সাথে কথা বলেছি। তুই সময় পেলে এখানে চলে আসবি। আমি মানিককে বলে রাখব, ও এসে তোকে আঁকা শিখিয়ে যাবে। টাকা পয়সার কথা চিন্তা করতে হবে না। আর তোর শাশুড়ি মাকে এ ব্যাপারে জানাতে হবে না।”

    মায়ের কথা শুনে রাধা যেন মনে শক্তি পেল। নতুন করে বাঁচার পথ খুঁজে পেল।

    এমন করেই দিন কাটতে লাগলো। মাঝে মাঝেই সে বাপের বাড়ী যেত, আঁকা শিখে আসতো। রাধার নিজের উপর আত্মবিশ্বাস বাড়তে লাগল। একদিন সে বড় শিল্পী হবেই এমন স্বপ্ন সে দেখতে লাগল।

    কিছুদিন আঁকা শেখার পর মাণিক বাবু বললেন, “রাধা, আমাদের এখানে আঁকার প্রদর্শনী হবে, তুমি আঁকা দিও।”

    রাধার চোখে আনন্দে জল চলে এল। এমন সুযোগ সে হাতছাড়া করতে চায় না।

    প্রদর্শনীর দিন চলে এল । রাধার তার আঁকা জমা দিয়েছে। সারি সারি কত ছবি লাগানো আছে। আজ রাধা এসেছে, কিন্তু সে একা আসেনি, সঙ্গে করে মা ও শাশুড়ি মা’কেও নিয়ে এসেছে। শাশুড়ি মা একদম আশ্চর্য হয়ে বলল, “কে মা আমাকে এত সুন্দর করে এঁকেছে? এতে তো তোমার নাম লেখা!! তুমি এত সুন্দর আঁকতে পারো। মুগ্ধ আমি মুগ্ধ। এবার থেকে তুমি আঁকা শিখবে; আমি কোন বাঁধা দেব না। অনেক বড় হও তুমি। অনেক আশীর্বাদ।”
    এই কথা শুনে রাধা কেঁদে ফেলল। আজ থেকে তার সুখের দিন যাপন শুরু হল।

  • কবিতা

    কবিতা- ভাঙ্গা–প্রেম

    ভাঙ্গা – প্রেম
    – সোহিনী সামন্ত

    ঠুনকো প্রেমের সিন্দুকে জমানো যত ইমোশানের কাগজ বন্দী চিঠি বুঝিয়ে,

    দেয় জীবনের রঙ্গমঞ্চের নানান হতবাক বিস্ময়কর স্মৃতিভাণ্ডার…

    ক্লান্ত ভাঙ্গা-প্রেম ভাঙা হৃদয় নিয়ে কাঁচের সামনাসামনি ,

    প্রতিলিপির মতন মনের দরজায় তোলে শুধুই হাহাকার…

    ভেঙে যাওয়া কাঁচের মতনই মন জোড়া লাগে না,

    তবুও আশার আলো এঁকে বেঁকে ছুটে আসে কেবল ভালবাসার তাগিতে,

    শেষ প্রেমের মড়কে বাঁধান অদৃষ্টের লীলা খোঁজ করে চলে,

    শেষ জীবন পথের আসক্তিহীন গতিতে…

    মূর্ছা যাওয়া ভালবাসার পটভূমিতে আষ্টেপৃষ্টে গুণ ধরা,

    প্রেমের জানলা বন্ধ হয়ে যায় নিদারুণ অবহেলায়…

    রেলিং বেয়ে আসা ফাল্গুনী প্রেমের মালা,

    ছিঁড়ে যায় ক্ষান্ত নিশানায়…।

  • কবিতা

    কবিতা- মাঙ্গলিক নাকি অমাঙ্গলিক?

    মাঙ্গলিক নাকি অমাঙ্গলিক?
    – সোহিনী সামন্ত

     

    বিয়ের বন্ধন আজ রুদ্ধ শ্বাসে হাঁফিয়ে ,
    উঠেছে ক্লান্ত মনের বিড়ম্বনায়…
    সমাজের বিচারগুলো কাঁটার মতন,
    বিঁধে চলেছে উন্নত জীবের মন বালুকায়…
    আজ সামনাসামনি দ্বন্দ্বে পড়েছে,
    হাতের রেখার বিশ্লেষণ আর মন মিলনের সম্ভাষণ…
    জ্ঞান-অজ্ঞান-বিজ্ঞান-মনবিজ্ঞান সবই আজ,
    ঠিকুজির গরলগ্রাসে চৈতন্যের খোঁজ করে চলে,
    এটাই আজকালকার নতুন বিশেষণ…
    পৃথিবী নিজ কক্ষ পথে ঘুরে চলে,
    তবে সময় এসেছে মনে প্রশ্ন তোলার…
    জীবনটা কি ঠিকুজির জ্যামিতিতে বাঁধা?

  • অণু কবিতা

    নতুন প্রেম

    নতুন প্রেম
    – সোহিনী সামন্ত

    কচি পাতার মতন গজিয়ে ওঠা নতুন প্রেম,
    নতুন কাগজের গন্ধ খোঁজে অজান্তে।
    হাত ধরাধরি খেলায় উন্মাদনা বেড়ে ওঠে,
    সিক্ত স্পর্শের চুম্বনের রিক্ত ঠোঁটে।
    লাভ বার্ডরা খুনসুটি করে বিরক্ত জঙ্গলে,
    খেলাখেলির মাঝে প্রেমের পরশ লাগে নিঝুম অঞ্চলে।
    রাত বাতি নিভে যায় নিশুতি আলিঙ্গনে,
    তমোঘ্ন নিঃশেষে অদ্ভুত নিশীথের গভীর প্রলোভনে।

  • কবিতা

    আংটি

    আংটি
    -সোহিনী সামন্ত

     


    কল্কা কাটা আংটির অবসাদ লুকিয়ে থাকে অনামিকার অহংকারে…

    প্রেমের বন্ধনের চিহ্নরুপে থেকে গেছে আংটি দুই হৃদয়ের মাঝামাঝি…

    বিবাদী মেঘ জুড়ে এসে গ্রাস করে সুখের সংসারে,

    ত্রিকোণী ভালবাসা সর্পফণা তুলে নেচে বেড়ায় ব্যর্থ আলিঙ্গনে।

    রহস্যময়তা বেড়ে ওঠে নিশুতির ধারে কাছে, কালসর্পের ছোঁয়ায়

    আংটি ময়লার স্তূপে থেকে যায় নির্মম নিঃশব্দতায়…

    অবহেলায় হীরের গায়ে কালো কালশিটে পড়ে, নির্মম প্রেমের অবসন্নতায়।

    দিনের পর দিন যায়…এক রাতের দুর্বলতায় আংটি আবার মনের

    মাধুরীতে ফিরে আসে…দুই আঙ্গুলের খেলাখেলি অবস্থায়।।

  • অণু কবিতা

    অসহায়

    অসহায়
    -সোহিনী সামন্ত

     


    পাখি উড়ে চলে ভ্রান্ত দেশে ঠিকানাবিহীন চেতনায়…

    রং রেঙে ওঠে ক্যানভাসের মূর্তিমান পাটাতনে…

    দিন আনা দিন খাওয়া শ্রমিকের দল হেঁটে চলে,

    ক্লান্ত পথের উদাসীনতায়…।।

    ভিখারীর শুষ্ক কেশ পেতে চায় শান্ত দিনান্তের গন্ধ…

    তবে দিক্বিদিকের কষ্ট আছে তাতে নিবদ্ধ…

    সুখ ও অসুখের বিভ্রান্তির সীমারেখায় অসীম সূর্যের অবহেলা…

    সুখের বালুকারেখায় যন্ত্রণার আবেশ মিশে যায় অসহায়তায়…।।

You cannot copy content of this page