• কবিতা

    কবিতা- সমাজটা শেষের পথে

    সমাজটা শেষের পথে
    – সোম

     

     

    সমাজটা গেছে পচে…
    দুর্নীতি আর ধান্দাবাজে।
    সবাই যেন মীরজাফরের ভাই,
    দেশটা আজি কুরুক্ষেত্রের সাজে।
    বাতাসেও মিশে গেছে বিষ…
    কেমন করে নেব নিঃশ্বাস।
    তবু মানুষ আজও জীবিত,
    হয়ে জীবন্ত লাশ।

    চার বছরের শিশু কন্যা
    এ সমাজে সে হয়েছে ধর্ষিতা।
    এ রামের নয়, এ রাবণের রাজ্য
    কলঙ্কিত আজ সমাজে আছে যত সীতা।

    যে মেয়েটি ভিক্ষা করে তার নামও বাদ পড়েনি,
    এ কামুক নরপিশাচদের হিসাবের খাতায়।
    সেও সমাজের বুকে ধর্ষিতা,
    কলঙ্কিনীর কালো দাগ তারো মাথায়।

    “সমাজটা শেষের পথে” রাজনীতির হিংসায়,
    চুড়ান্ত সীমায় অরাজকতার রেষ।
    মানুষ রয়েছে বিপন্নে,
    ধীরে ধীরে দেশটা হচ্ছে শেষ!

  • কবিতা

    কবিতা- জীবন অপরাহ্ন

    জীবন অপরাহ্ন
    – সোম

    জীবন ইতিহাস ঠিক যেন একটা ঘড়ি,
    আপন মনে বয়ে চলেছে বয়সের বেলা।
    জন্ম লগ্নে হয়েছে সকাল, যৌবনে হয়েছে দুপুর।
    এখন বয়স বেড়েছে,
    বার্ধক্যের জীবনে ঠিক যেন অপরাহ্ন বেলা।

    প্রভাতে সূর্য ওঠে, পাখিরা ডাকে গাছে।
    সদ্য জন্মানো শিশুর মুখে খিলখিল হাসি,
    কখনো সে ক’কিয়ে কেঁদে ওঠে।
    যেমন করে সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়,
    তেমনি শিশুকাল কেটে যায়।
    সে যৌবনে কারো পিতা, কারো স্বামী,
    দু’চোখে কেবলি স্বপ্নরা বাসা বাঁধে…..
    এ জীবন হয় মধুময়, যেন বর্নালী রঙে রঙিন রয়।

    দুপুর গড়িয়ে আবার আসে বিকাল,
    কিচিরমিচির রবে পাখিরা ফেরে বাসায়।
    সে শিশু আজ হয়েছে বুড়ো,
    হাতে লাঠি, চোখ হয়েছে ঝাপসা,
    বুকে খুসখুসে কাশী।
    দু’হাত বাড়িয়ে, মৃত্যু দাঁড়িয়ে দুয়ারে,
    আর নয় অপেক্ষা, যেতে হবে একেলা…
    আজ সে হয়েছে বুড়ো,
    এই জীবনের অপরাহ্ন বেলা।

  • গল্প

    গল্প- মৃত্যুর ডাক

    মৃত্যুর ডাক
    সোম

     

    কাকাবাবুর অতি কষ্টের সংসার। তিনি নিজে ঝাড়ু নিয়ে ফেরি করেন আর কাকিমা গোরুর দুধ বিক্রি করে সংসার চালান। এই অভাবের মধ্যে দিয়ে তাঁর তিন মেয়ের বিয়ের কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন করেছেন। তখনও তাঁর দুই ছেলে লেখাপড়া করছে। বড় ছেলে সঞ্জয় মাধ্যমিকে এবং ছোট ছেলে সৌমেন সপ্তম শ্রেণীতে পড়ছে। ফাইনাল পরীক্ষার আর বেশি দেরি নেই, এবার ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে সে অষ্টম শ্রেণীতে পড়বে। সৌমেন ভালো করে জানতো যে, সে ছাড়া আর অন্য কেউ ফার্স্ট হতে পারবে না। কারণ পঞ্চম শ্রেণী থেকে সে ফার্স্ট হয়ে আসছে। এবারও সৌমেন ফার্স্ট অবশ্যই হবে। কিন্তু তবুও আরো ভালো করে রেজাল্ট করবার জন্য পরীক্ষার প্রস্তুতিটা একটু আগে থেকে শুরু করেছিল সৌমেন।

    সেদিন ছিল তার ছোট দিদির বিয়ে।সকাল থেকে শুরু হয়েছিল সানাইয়ের সুর। সানাইয়ের মিষ্টি সুর মুগ্ধ করেছিল বাড়ির সবাইকে। বাড়িতে অনেক আত্মীয়-স্বজনের সমাগম। ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের চিৎকার চেঁচামেচি ও আনন্দ ফূর্তির উল্লাস দেখে মনে হলো, এ যেন এক বিশাল আনন্দের মেলা বসেছে। কেউ কেউ কনের গায়ে তেল-হলুদ মাখানো নিয়েই ব্যস্ত ছিল। আবার কেউ বরণডালা সাজাবার কাজে ব্যস্ত। রান্নার শাল থেকে গলগল করে কুণ্ডলী পাকিয়ে ধোঁয়া উড়তে আরম্ভ করেছে, দেখে মনে হলো –রান্নার ঠাকুর রান্নার কাজটা শুরু করে দিয়েছেন। এদিকে আবার প্যান্ডেলের লোকজন বর আসন তৈরী করে দিয়ে, খাওয়ার প্যান্ডেলে সুন্দর করে কাপড় লাগাচ্ছেন।আমি তখন ফুল দিয়ে সুন্দর করে বর আসন সাজাচ্ছিলাম। কাকাবাবু ও কাকিমা বাড়ির অন্য কাজে নিযুক্ত ছিলেন। তাই কেউ তখন খোঁজ রাখলেন না সৌমেনের। সে তখন একা একা পড়ার ঘরে বসে অবিরাম বইয়ের সাথে লড়াই করে চলেছে। ছোট দিদির বিয়ে বলে কথা! কিন্তু সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ মাত্র নেই। তার পড়াশোনায় এতো আগ্রহ যে, দিদির বিয়ের দিন পর্যন্ত বন্ধ রাখলো না তার প্রতিদিনের অনুশীলন l
    দেখতে দেখতে সূর্য্য রক্তিম হয়ে, ধীরে ধীরে মেঘের সাথে বন্ধুত্ব করে পশ্চিম আকাশে ডুবে গেল। তারপর কয়েক মুহূর্তেই চারিদিক থেকে ঘন-অন্ধকারে গ্রামটাকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে ঢেকে দিল।
    তারপর কিছুক্ষণের মধ্যে জেনারেটরের আলোয় ঝলমল করে উঠল বিয়ে বাড়ি। ইতিমধ্যে শোনা গেল বর এসে গেছে। বাড়ির সবাইয়ের মধ্যে কেমন একটা তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল। শঙ্খের ধ্বনিতে ও উলুর ধ্বনিতে আমার হৃদয়টা আনন্দে নেচে উঠল। হঠাৎ সেই সময় মনে পড়ে গেল সৌমেনের কথা। আমি তখন দ্রুত পায়ে এগিয়ে চললাম, তার পড়ার ঘরের দিকে। যেতে-যেতে দেখতে পেলাম, সৌমেন এই মাত্র ঘর থেকে বেরিয়ে ছাদনাতলার দিকে আসছে। আমাকে দেখামাত্রই সে হাসতে হাসতে বলল, দাদা তু্ই এখানে, চল দেখবি চল l ছোট দিদির বর এসেছে!
    আমি আনন্দে বললাম, বর কেমন দেখতে রে?
    সঞ্জয় আসে বলল, খুব সুন্দর দেখতে। তুই এখানে দাঁড়িয়ে কী করছিস ছোটদা? চল, বাবা তোকে ডাকছে।
    আমি সেখান থেকে প্রস্থান করে কাকাবাবুর আদেশ অনুসারে বর যাত্রীদের খাওয়াবার ব্যবস্থা করতে আরম্ভ করলাম।

    ছোট বড় সব ছেলে মেয়েরা বরকে ফুল মারছে আর হাসি-ঠাট্টা ও আনন্দে ফুর্তিতে মেতে উঠেছে। সৌমেন একপাশে একখানি চেয়ারের উপর বসে, সেই দৃশ্যখানি দেখতে দেখতে আনন্দ উপভোগ করছিল। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ সে চেয়ার ছেড়ে উঠে মাথার দু’পাশে জোরে হাত চেপে ধরে মায়ের কাছে ছুটে এসে বললো-মাগো, আমার ভীষণ মাথার যন্ত্রণা করছে!
    মা কোন কিছু না ভেবে বললেন– সারাদিন এক জায়গায় বসে পড়ছিলিস, তাই হয়তো অমন হচ্ছে। আজ তোর ছোট দিদির বিয়ে, সবাই আনন্দ করছে! যা- তুইও গিয়ে ওদের সঙ্গে আনন্দ কর, দেখবি কিছুক্ষণ পর মাথার যন্ত্রণা ভালো হয়ে যাবে। এই বলে তিনি ঘরের ভিতরে চলে গেলেন।

    সৌমেন সপ্তম শ্রেণীতে পড়লে কি হবে, বয়সের দিক দিয়ে বেশ অনেকখানি ছোট ছিল। তাই সে মায়ের কথায় কোন প্রশ্ন না করে, ভাবলো মা যা বলেছেন তা হয়তো বা ঠিক। তারপর বেশ কিছুক্ষণ কেটে গেল, আবার শুরু হলো সৌমেনের মাথার যন্ত্রণা। এবার সে আর সহ্য করতে না পেরে, শেষটায় বাপের কাছে কেঁদে পড়লো। সৌমেন ছিল কাকাবাবুর চোখের মণি। তাই তার কিছু হলে, তিনি সহ্য করতে পারতেন না। ছেলের কান্না দেখে কাকাবাবু জিজ্ঞেস করলেন- কি হয়েছে, মাথার যন্ত্রণা করছে? কখন থেকে শুরু হয়েছে?
    এইরকম নানা প্রশ্ন করতে করতে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে তাড়াতাড়ি ডাক্তারখানায় আসলেন। ডাক্তারবাবু সব কিছু শোনার পর আর একটুও সময় নষ্ট না করে সৌমেনকে কয়েকটা ট্যাবলেট খাইয়ে দিলেন। কিন্তু তাতে কিছুমাত্র যন্ত্রণা কমলো না। তাই ডাক্তারবাবু সেই রাত্রিটা ওকে ডাক্তারখানায় রাখার ব্যবস্থা করলেন।

    একদিকে মেয়ের বিয়ের আনন্দ আর অন্য দিকে ছেলের মাথার যন্ত্রণা। এই দুই দিকের টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে ভোলানাথ বাবুর কোনো রকমে দুঃখানন্দ ভাবে রাত্রিটা কেটে গেল।

    রাত্রির সেই কালো অন্ধকার এখন আর নেই। কালো অন্ধকার কেটে পূর্ব আকাশে পরিস্কার সোনার থালার মতো একখানি উজ্জ্বল সূর্য্য জ্বলজ্বল করে উদিত হলো। সূর্য্যের আলো দেখে কাকাবাবুর হৃদয় কেঁপে উঠলো, এবার বুঝি ছোট মেয়ে মধুরিমাকে তাঁর বুক থেকে কেড়ে নিয়ে যাবে। সত্যি সত্যিই নববধূর সাজে বাড়ির সকলকে কাঁদিয়ে, বাপ-মায়ের ভালোবাসা ত্যাগ করে কাঁদতে কাঁদতে সে শ্বশুর বাড়িতে চলে গেল।

    তারপর মাসখানেক কেটে গেল। সৌমেন তার মাথার যন্ত্রণার কথা ভুলে, আবার সে তার প্রতিদিনের রুটিন অনুযায়ী পাঠে মন দিলো। কাকাবাবু ভাবলেন তা হলে, সৌমেনের আর হয়তো মাথার যন্ত্রণা হবে না। এই ভাবে আরো দিন পনেরো কেটে গেল। সৌমেনের মাথার যন্ত্রণার কথা কারো মনে রইলো না।

    একদিন ক্লাসের মধ্যে তার ভীষণ ভাবে মাথার যন্ত্রণা শুরু হলো। সে তখন বেঞ্চের উপর পড়ে ছটফট করতে লাগলো। কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী অফিস রুমে হেড মাস্টার মশাইকে খবরটা জানালো। মাস্টার মশাইরা ও ছাত্র-ছাত্রীরা ধরাধরি করে ডাক্তার খানায় নিয়ে আসলো সৌমেনকে। কাকাবাবু ও কাকিমা খবর পেয়ে একেবারে পাগলের মতো অবস্থায় দ্রুত ছুটে আসলেন ডাক্তারখানায়। প্রথমে ছেলেকে দেখে কাকাবাবু ও কাকিমা হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললেন, কিন্তু সৌমেন বাপের কান্না সহ্য করতে পারে না। তাই সে বাপকে সান্ত্বনা দিয়ে গলা জড়িয়ে ধরে বললো- বাবা এই দ্যাখো, আমি বেশ ভালো আছি ! তুমি কাঁদছো কেন?
    কাকাবাবু সৌমেনের কথার কোন উত্তর না দিয়ে, তাকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফিরলেন।

    এই ভাবে আরো বেশ কিছুদিন কেটে গেল। কিন্তু সৌমেনের মাথার যন্ত্রণা কোন ডাক্তার কমাতে পারলেন না। তার যন্ত্রণা কেবল বেড়ে চলেছে, অবশেষে কাকাবাবু ছেলের এই অসহ্য যন্ত্রণা আর সহ্য করতে না পেরে কোলকাতায় একটি বড়ো সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করলেন। কিন্তু সেখানে তিনি কোনো সুফল না পেয়ে, সেই হাসপাতাল থেকে নিয়ে আবার একটি নার্সিং হোমে ভর্তি করলেন। সেখানে সৌমেনের ব্রেনের সমস্ত রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর রিপোর্ট পেলেন যে, তার ব্রেন ক্যান্সার হয়েছে। ডাক্তারবাবু সৌমেনের সামনে কিছু না বলে, কাকাবাবুকে ডেকে ঘরের বাইরে নিয়ে গেলেন এবং সান্ত্বনা দিয়ে বললেন- ভোলানাথ বাবু আপনি চিন্তা করবেন না, আপনার ছেলে ভালো হয়ে যাবে। তবে কিন্তু প্রচুর টাকার দরকার।
    – কত টাকা?
    – তা ধরুন প্রায় পঞ্চাশ হাজার!
    – পঞ্চাশ হাজার টাকা!
    – হ্যাঁ, পঞ্চাশ হাজার টাকা! তাতেও ভালো নাও হতে পারে!
    কাকাবাবু কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন, কি হয়েছে আমার সৌমেনের?
    ডাক্তার একটু মাথা নিচু করে বললেন, আপনার ছেলের ব্রেন ক্যান্সার হয়েছে!
    এই কথা শোনামাত্র কাকাবাবু আতঙ্কে ছুটে ঘরের ভিতরে এসে ছেলের বিছানার পায়ের কাছে হতবুদ্ধির মতো চুপচাপ অচৈতন্য অবস্থায় দাঁড়িয়ে ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। আর তাঁর দু’চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে চোয়াল বেয়ে !

    তিনি ছেলেকে নিয়ে বুকে গভীর আশা বেঁধে ছিলেন, ছেলে বড়ো হয়ে মানুষের মতো মানুষ হলে, তাঁর সমস্ত দুঃখ-কষ্ট মুছে যাবে। তিনি মনে মনে আরও ভেবেছিলেন, ছেলে একজন মস্ত বড়ো ডাক্তার হয়ে গরীব গ্রামবাসীদের পাশে এসে দাঁড়াবে। আর গ্রামবাসীগণ তাঁকে দেখে বলবে ডাক্তার সৌমেনের বাবা ভোলানাথ বাবু। তখন তাঁর বুকটা গর্বে ভরে উঠবে। কিন্তু ভগবানের নিষ্ঠুর বিচারের ফলে তাঁর সেই আশা আকাঙ্ক্ষা চিরদিনের জন্যে শেষ হয়ে গেল।

    সৌমেন বাপের হাত চেপে ধরে বললো, বাবা তুমি অমন চুপ করে দাঁড়িয়ে আছো কেন? ডাক্তারবাবু কি বলেছেন? তাহলে কি আমি আর বেশিদিন বাঁচবো না?
    এই রকম কঠিন কঠিন প্রশ্ন করতে থাকে। কাকাবাবু এতক্ষণে চৈতন্য ফিরে পেয়ে, বললেন, তুই খুব তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাবি! হ্যাঁ রে সৌমেন তুই ভালো হয়ে যাবি!
    এই বলে ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললেন। তিনি ভাবলেন ছেলে হয়তো বুঝতে পারলো না যে, তার এতো বড়ো একটা মৃত্যু সম্মুখীন রোগ হয়েছে। বাপ সৌমেনকে তার রোগের কথা বলেনি ঠিক কথা, কিন্তু তাঁর চোখের জল পরিস্কার বুঝিয়ে দিয়েছেন, সে আর বেশি দিন বাঁচবে না!

    এই বৃহৎ পৃথিবীতে আলো বাতাস, মা-বাবার ভালোবাসা ছেড়ে কিছুতেই মরতে ইচ্ছা করলো না তার। কিন্তু কিছু করার উপায় নেই। জন্মালে মরতে হবে, এই কঠিন চিরসত্য কথাটি অতি সহজে মেনে নিলো।

    সময় আর কিছুতে কাটতে চায় না। তাই সৌমেন একখানি খাতা আর পেন নিয়ে একটি কবিতা লিখলো। সে তার কবিতার মাধ্যমে প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীকে বোঝাতে চেয়েছে, শুধু লেখাপড়া নয়, আন্তরিক ভালোবাসার দ্বারা এই পৃথিবীর সব কিছুকে জয় করা যায়। তাই সৌমেন কবিতার নাম করণ করলো “লেখাপড়া”।
    লিখতে হবে পড়তে হবে,
    লেখাপড়া শিখতে হবে ভাইরে।
    লেখাপড়া বিনা উচ্চ-সম্মান
    বিশ্ব মাঝে আর কিছুতে নাইরে।
    খেলবো আমি নানান খেলা,
    দেখবো টিভি পড়ার ফাঁকে।
    গান গেয়ে আবৃত্তিতে —
    হারিয়ে দেবো অন্য সব্বাইকে।
    চুপটি করে থাকবো নাতো,
    পড়বো জোরে জোরে।
    লেখাপড়া শিখলে তবে,
    বাসবে ভালো মোরে।
    সবার সেরা সবার ভালো,
    হবো আমি যেন !
    প্রথম ছাড়া দ্বিতীয় আমি
    হবো না কক্ষনো !

    এই কবিতাখানা পড়ে আনন্দে কাকাবাবুর হৃদয় কেঁদে উঠলো। তাঁর এতো দিনের স্বপ্ন বুঝি এবার শেষ হয়ে যাবে। তিনি ভালো করে জানতেন, একবার যদি কারো ক্যান্সার হয়, তাহলে সহজে তাকে ভালো করা যায় না। কিন্তু তিনি নিজের মনকে কোন ভাবে সান্ত্বনা দিতে পারলো না। তাই তিনি তাঁর শেষ সম্বল গরুটিকে বিক্রি করে এবং অতি সুদে হাজার কুড়ি টাকা জোগাড় করে আনলেন, ছেলেকে ভালো করবার জন্য।

    এদিকে তখন সৌমেন মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে। কাকাবাবুকে সে ক্ষীণ গলায় বললো– বাবা, তুমি আর আমার জন্য টাকা ব্যয় করো না। আমি তোমার সমস্ত আশা আকাঙ্ক্ষা শেষ করে, তোমাকে পথে বসিয়ে চলে যাচ্ছি। মৃত্যু আমাকে বারবার হাতছানি দিয়ে ডাকছে ! এবার তোমার কোলের উপর আমার মাথাটা রেখে আমি শান্তভাবে মরতে চাই বাবা ! মৃত্যু আমাকে ডাকে…………

    কাকাবাবু আকাশ ফাটা চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বললেন– আমার সব শেষ হয়ে যাক, তবুও আমি তোকে বাঁচাবো রে সৌমেন! আমি তোকে বাঁচাবো!
    ডাক্তার- নার্স সবাই ছুটে আসে, ততক্ষণে সৌমেন, বাবা-মা ও এই পৃথিবীর সবাইকে ছেড়ে সে মৃত্যুর পথযাত্রী হয়ে চলে গেছেন— স্বর্গপূরীতে !

    -সমাপ্ত-

  • কবিতা

    কবিতা- এ কোন দেশ

    এ কোন দেশ
    -সোম

     

    এ কোন দেশ? বিনয় বাদল দীনেশ
    নেতাজি ভগৎ রবি ঠাকুরের দেশ?
    না অন্য কোনো দেশ? যেখানে যৌনব
    পিপাসার মায়ের রক্ত চুষে করে শেষ!
    এ কোন দেশ? ভায়ের হাতে রাখি
    পরায়ে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন অটুট রাখার দেশ।
    না অন্য কোনো দেশ? যেখানে ভাই
    ভায়ের রক্তে মেটায় জ্বালা হিংসা বিদ্বেষ।
    এ কোন দেশ? দু’শো বছরের রক্ত মাখা
    স্মৃতি জড়ানো তেরঙা পতাকার দেশ।
    না অন্য কোন দেশ? যেখানে রাজনীতির
    বিভিন্ন রঙের পতাকায় সমাজ করেছে শেষ।
    এ কোন দেশ? অভূতপূর্ব ইতিহাস সৃষ্টিকারী
    জন্মভূমি ভারতবর্ষ মোদের মহান দেশ।
    না অন্য কোন দেশ? যেখানে মানহীনতায়
    অন্যরা চিৎকারে আওয়াজ তোলে বেশ বেশ।

  • কবিতা

    কবিতা- দাবি

    দাবি
    -সোম

     

    ওরা কেন ধনী ,আর আমরা কেন গরিব ?
    ওরা মানুষ আমরা মানুষ,তবে কিসের ধনী-গরিব!
    আমরা চাষি আমরা শ্রমিক মুটে মজুরের দল,
    আমরা চালাই ঠ্যালা গাড়ী আমরা চালাই কল!
    ধনী থাকে রাজপ্রাসাদে আমরা কুঁড়ে ঘরে,
    দুঃখ নিয়ে বিশ্বমাঝে রব কেমন করেl
    ওসব কথা মানিনা আজ মানতে হবে দাবি,
    নয়তো মোরা ছিনিয়ে নেব ধন-সিন্দুকের চাবিl
    ধনীর মতো গরিবের ও আছে বাঁচার অধিকার,
    তবে ক্ষিদের জ্বালায় গরিব কেন করবে চিৎকার?
    ধনী মোদের আর কত রক্ত চুষে খাবি?
    এবার ফিরিয়ে দিতে হবে দীনের ন্যায্য দাবী
    এ নয়তো মোদের চিৎকার, এ নয়তো আর্তনাদ;
    এ গরিবের দাবি, এ দরিদ্রের প্রতিবাদ !

  • কবিতা

    কবিতা- অভিমান

    অভিমান
    – সোম

     

    যেদিন আমি থাকবো না এই বিশ্ব ভুবন মাঝে,
    মৃত্যু কোলে পড়বো ঢোলে পুষ্প চন্দনেরি সাজে!
    তোমার স্বপ্ন চোখে ভাসবে কেবল আমার প্রতিচ্ছবি,
    স্মৃতি কথা বারে বারে পড়বে মনে সবি।
    বুঝবে সেদিন বুঝবে
    আমায় শুধুই খুঁজবে!

    যেদিন মোরে তুলবে কাঁচা বাঁশের সাজানো খাটিয়ায়,
    মনটা তোমার কেঁদে কেঁদে বলবে হায় হায়।
    হরির ধ্বনি করবে যখন খই ছড়িয়ে পথে,
    যাবো আমি তোমায় ছেড়ে ঐ ছোট্টো রথে।
    বুঝবে সেদিন বুঝবে
    মুখের হাসি ঘুঁজবে!

    যেদিন আমার জ্বলবে চিতা পুড়ে যাবো আমি,
    নীরব হয়ে দূর থেকে দেখবে দাঁড়িয়ে তুমি।
    বুকের ভিতর জ্বলবে আগুন হৃদয় করবে জ্বালা,
    কোনো কথা শুনবে না কান সে হবেই হবে কালা,
    বুঝবে সেদিন বুঝবে
    কান্নায় চোখ ভিজবে!

  • কবিতা

    কবিতা- আজ বাংলা

    আজ বাংলা
    – সোম

     

    কাঁদিস নে কাঁদিস নে,
    মুছে ফ্যাল চোখের জল!
    এটাই পশ্চিমবঙ্গ, বঙ্গভূমি;
    যার বতর্মান নাম বাংলা।
    নারীকে এরা সম্মান জানায়,
    আবার নারীর প্রতি এরাই বড় হ্যাংলা।
    পেপার খুললেই–
    ধর্ষণ, খুন মার্ডার রাহাজানি।
    এ রোজকার ঘটনা,
    আমরা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ সবাই জানি।

    এই মেয়েটা, ওঠ কাঠগড়ায়।
    বলতো– কি হয়েছিল তোর?
    কান্না চেপে বললো- মেয়েটা!
    অন্ধকারে টেনে হিঁচড়ে গায়ের কাপড়…
    আমি বাঁধা দিতে পারিনি, ওরা করেছে জোর।
    স্ব চক্ষে দেখেছেন আমাদের উনি..
    বাধা দেওয়ায় মরণ হলো তাঁর,
    বন্দুকের একটি গুলির ঘায়ে!
    জর্জসাহেব– তুমি ওদের কঠিন সাজা দিও,
    ফাঁসিকাঠে ঝুলিয়ে মেরো ;
    তোমার বিচার-রায়ে।

    কাঁদবো না কাঁদবো না,
    আমি আর কাঁদবো না।
    এখানে দোষীর সাজা সাধুর মাথায়,
    টাকার বশে উল্টে যায় মামলা।
    এটাই পশ্চিমবঙ্গ, বঙ্গভূমি ;
    যার বর্তমান নাম বাংলা।

    অর্ডার– অর্ডার, টেবিল চাপড়ে বললেন– জর্জ।
    ড্যাস_ তারিখে হবে এই বিচার পুনরায়!
    স্বামীহারা কলঙ্কিনী দিন গোনে, মাস গেল, বছর গেল……
    কেবল দোষীদের শাস্তির অপেক্ষায়!

  • গল্প

    গল্প- সঞ্জু ও টুসি

    সঞ্জু ও টুসি
    – সোম

     

    হায়-হায়, ইলিশ মাছ ভাজাটা খেয়ে নিলো গো! তিনশো টাকা কেজি দরে মাছটা কিনে ছিল। তুই কি না মাছটা খেয়ে নিলি? তোর একদিন কি আমার একদিন। এই বলে একটা মোটা লাঠি নিয়ে তেড়ে গেল।

    রান্নাঘর থেকে একটা কালো ছিট-ছিটে বিড়াল ম্যাঁও করে লাফিয়ে পড়লো মশলা রাখার তাকের উপর। মশলার তাকটা গেল উল্টে। এবার রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বড়মা মোটা লাঠিটা ছুঁড়ে দিলো বিড়ালটার দিকে, কিন্তু ব্যাটার ভাগ্য বড় জোর। লাগলো না, পালিয়ে গেল। বড়মা দাঁত খিঁচুনি দিয়ে বললো– পালিয়ে যাবি কোথায়? তোকে একবার ধরতে পারি, তারপর দেখবি। এই শান্তবালার কত রাগ!

    শান্তবালা হলেন সঞ্জুর জ্যেঠিমা। সঞ্জু এনাকে বড়মা বলেই ডাকে। বড়মার নামটা শান্তবালা হলে কি হবে, ইনি কিন্তু মোটেই শান্ত মহিলা নন। প্রচণ্ড বদরাগী। একবার যে কথা বলে, সেই কাজ করে তবেই শান্ত হন।

    সঞ্জু মামার বাড়ি থেকে একটা বিড়ালের বাচ্চা এনেছে। এটা সেই বিড়ালটা নয়তো? না- না, সেটা কালো ছিট-ছিটে নয়। সেটা ধপধপে সাদা রঙের বিড়াল। সে খুব শান্ত স্বভাবের, সঞ্জু আদর করে তার নাম রেখেছে টুসি !

    এই টুসিকে নিয়েই যত ঝামেলা। একবার মা বকা দেয়, তো একবার বাবা। বকা দেবে না কেন বলো? ঠিক মতো খাওয়া নেই, নাওয়া নেই; সারাক্ষণ এই বিড়াল বাচ্চাটাকেই নিয়ে ব্যস্ত থাকে সঞ্জু। তাকে খাইয়ে দেওয়া ঘুম পাড়ানো, যেন কত কাজ তার।

    রবিবার ছুটির দিন। সঞ্জুর আনন্দের আর সীমা থাকে না। সে সারাদিন টুসিকে নিয়ে খেলতে থাকে, এমনকি রাতে ওকে নিয়ে ঘুমাতে যায়। যত্ন করে খাটের উপর শুইয়ে গায়ে হাত বুলিয়ে দেয়, আর বিড়াল বাচ্চাটা কি সুন্দর সঞ্জুর কথা শুনে চুপচাপ শুয়ে থাকে। টু-শব্দটিও করে না। থ্রি ক্লাসে পড়া এই ছোট্ট ছেলে সঞ্জু আর এই টুসি নামে ছোট্ট প্রানীটি যেন এক মায়ের পেটের দু’টি সন্তান। এদের ভালোবাসা অন্তহীন। কেউ কাউকে ছেড়ে একটা দিনের জন্য ও থাকতে পারে না।

    সেদিন টুসি ম্যাঁও ম্যাঁও করে ডাকতে ডাকতে সঞ্জুর বাবার কোলের মধ্যে ঢুকে পড়েছিল। বাবা প্রথমে তাড়িয়ে দিতে চেয়েছিল, কিন্তু বিড়াল বাচ্চাটা কিছুতেই যেতে চাইলো না। সে তাঁর কোলের মধ্যে গুটিশুটি মেরে শুয়ে পড়লো। বাবা উপরে উপরে রাগ দেখালে কি হবে, মনে মনে বিড়ালটাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছিল। তাই টুসির গায়ে হাত বুলাতে বুলাতে ডাক পড়লো– সঞ্জু, টুসিকে কিছু খেতে দে, মনে হয় ওর খিদে পেয়েছে।
    এই কথা শুনে মা ঘর থেকে বেরিয়ে এসে, বাটিতে করে খাবার এনে টুসিকে খেতে দিলো।

    এ বাড়িতে সঞ্জু ছাড়া আর কেউ টুসিকে ভালোবাসতো না। এই টুসির জন্যে সঞ্জুকে বাবা-মার কাছে কত না বকা খেতে হয়েছে! কিন্তু এখন আর তাঁরা বকা দেয় না, কারণ এক মাস পূর্ণ না হতেই টুসি এ বাড়ির প্রত্যেকের ভালোবাসা আদায় করে নিয়েছে।
    সে সবার কাছে খুব প্রিয় হয়ে উঠছে। বাবা-মা এখন দু’জনে তাকে খুব ভালোবাসে।

    সেদিন ছিল শনিবার। সঞ্জু স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে তার আদরের বিড়াল বাচ্চাটাকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না। সে বাড়ির আশে পাশে সবদিক খুঁজে দেখলো, কোথাও পাওয়া গেল না। পাশের বাড়ির পানু এসে বললো- তোর বিড়ালটা আমি বড়মাদের বাড়ির দিকে যেতে দেখেছিলুম। চল না, একবার বড়মাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করি।
    চল-চল, এই বলে দু’জনে বড়মার বাড়িতে গেল। বড়মা দু’জনকে দেখে যেন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। বললো- কি চাই কি, এ্যাঁ?
    -আমাদের টুসিকে খুঁজে পাচ্ছিনা বড়মা।
    -তা আমি কি করবো? আমি তাকে মেরেছি নাকি, যে তোরা আমার বাড়িতে খুঁজতে এলি।
    যা দেখিনি এখান থেকে।
    এই বলে ঝাঁটা নিয়ে উঠান ঝাঁট দিতে আরম্ভ করে দিলো। কি জানি, সঞ্জু বড়মার কথায় কি বুঝেছে। সে বাড়িতে এসে মায়ের কাছে কেঁদে বললো- মা মনে হয়, বড়মা আমাদের টুসিকে মেরে ফেলেছে!
    তাই আবার হয় নাকি? মা কথাটা বিশ্বাস করলো না, বললো–ভালো করে খুঁজে দেখ, আশেপাশে কোথাও আছে হয়তো!

    দেখতে দেখতে বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে এলো। কাজে থেকে বাবা বাড়ি ফিরেছে। মা বসার জন্য মোড়াটা দিয়ে, এক গ্লাস জল এনে বললো- দুপুর থেকে টুসিকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সঞ্জু খুব কাঁদছে! জল খেয়ে একবার খুঁজে দেখবে, বিড়ালটা কোথায় গেল?
    এই কথা শোনার পর বাবা ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে টুসিকে খুঁজতে বেরিয়েছে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তারা বাড়ি ফিরলো। কিন্তু টুসিকে কোথাও পাওয়া গেল না। তাহলে সত্যি কি, বড়মা টুসিকে মেরে ফেলেছে? তা উনি যা বদ মহিলা, মেরেও ফেলতে পারে!

    এইভাবে দু’দিন খোঁজাখুঁজির পর বিড়াল বাচ্চাটা অবশেষে পাওয়া গেল, পানুদের ছাই গাদাতে। মাথাটা তার একেবারে থেঁতলানো অবস্থায় পড়ে আছে। সঞ্জু একটু দূর থেকে দেখতে পেয়েই দৌড়ে গেল, সেই ছাই গাদার কাছে। গিয়ে দেখে, হ্যাঁ সত্যি সত্যি এটাই তো তার সেই বিড়াল বাচ্চাটা। সঞ্জু আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলো না, দু’হাত দিয়ে তাকে জড়িয়ে সে কি কান্না। কান্না আর কিছুতেই থামে না, কেবলই তার দু’চোখ দিয়ে টপ টপ করে জল ঝরে পড়ছে। জল তো ঝরবারই কথা। কতো দিনের ভালোবাসা এক নিমিষে কি ভোলা যায়? ওই নিরীহ প্রাণীটা এমনকি অপরাধ করেছে, যে তাকে এভাবে মারতে হবে? কেইবা তাকে মারলো? এই নিয়ে সবার মনে একটা ভাবনা জন্মে গেল। না, ভাববার আর কোনো কারণ নেই! এটা নিশ্চয়ই বড়মারই কাজ। সেদিন রান্না ঘরের ঐ বিড়ালটাকে মারতে না পেরে, ওনার রাগটা অনেক খানি বেড়েই ছিল। এই টুসিকে মাথাটা থেঁতলে, সেই রাগটা মিটিয়ে নিলো। সত্যি ধনী মহিলা বটে।

    বাড়িতে ফিরতেই মা ওকে কোলে তুলে কান্না থামাবার চেষ্টা করে বললেন- আর কাঁদিসনে বাবা! সামনের পূজার ছুটিতে মামার বাড়ি থেকে অমন আর একটা বিড়াল বাচ্চা আনবি ক্ষণ। সঞ্জু কাঁদতে কাঁদতে মাথা নেড়ে বললো- না, আমি আর কোনো বিড়াল বাচ্চা চাই না..

     

  • কবিতা

    কবিতা- আমি বাঙালি

    আমি বাঙালি
    – সোম

     

    আমি বাঙালি………..
    এ বাংলা আমার ঘর !
    বাংলায় আমি ভেসে বেড়াই,
    বাংলাতে করি ভর।
    বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ,
    এ বাঙালি, আনন্দে সদা ভরপুর।
    সাহিত্যে নোবেল জয়ী বিশ্বকবি !
    তিনি বাঙালি; রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

    আমি বাঙালি…………..
    তাই গর্ব করি অনুভব !
    বেহালার ছেলেটা ও বাঙালি,
    তিনি বিখ্যাত ক্রিকেটার সৌরভ।
    ধন্য হয়েছে ডাক্তারী, তিনিও বাঙালি ;
    ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায়।
    তাই বাঙালির হৃদয় মাঝে,
    বাঙালিয়ানার গর্ব বোধ হয়।

    আমি বাঙালি…………
    বাংলা ভাষা মোর প্রাণ।
    আমি বাংলাতে করি তিরস্কার,
    আমি বাংলাতে গাই গান।
    বিনয়-বাদল-দীনেশ নেতাজি সুভাষ,
    কত বাঙালি বিসর্জন দিয়েছেন প্রাণ
    এ বাংলা মোদের মাতৃসম, স্নেহের বন্ধন
    হেথা চিরকাল রবে বাঙালির সম্মান।

    আমি বাঙালি, মোর ইচ্ছা শক্তি হোক ;
    প্রজ্জ্বলিত রবি, কিংবা শান্ত শশী
    দুঃখতে ভরে ভরুক দু’চোখে জল,
    তবু খুশিতে ফোটে, এ বাঙালির মুখে হাসি।
    মাঠে মাঠে শস্য শ্যামল শাখায় পুষ্প ভরা
    এ মোর জন্মভূমি, আমি বাংলাকে ভালোবাসি।
    হে ঈশ্বর, পরজন্ম যদি থাকে আবার,
    জন্মে যেন, আমি বাঙালি হয়ে আসি !!!

  • কবিতা

    কবিতা- ভাঙন

    ভাঙন
    – সোম

     

    মধুময় চলন্ত প্রেম
    সুখের পরিপূর্ণ আলোকরশ্মি
    দু’জোড়া চোখে ঘর বাঁধার স্বপ্ন…

    তবে পাকা মেঝে-
    কাঁচের গ্লাস ভাঙার শব্দ শুনেছি!
    দু’জনের ছোট্ট বিবাদে
    উঠে এলো ডিভোর্স পেপারে সাইন।

    প্লেসিকের পেনটির অজানা,

    দম্পতির নিবিড় প্রণয়ের কথা!
    সে খস খস শব্দে লিখে দিলো
    ডিভোর্স পেপারে..

    দু’জনে আর এক নয়,অদূরে দাঁড়িয়ে স্ত্রী
    পতি অব্যক্ত যন্ত্রনা বুকে স্থির, পাথরসম নীরব-
    মুখে কোন কথা নেই, মনভাঙার শব্দ নেই

    শুধু চোখের কোণায় একবিন্দু জল!

<p>You cannot copy content of this page</p>